১২:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

তিস্তা’র বালুচরে কৃষকের চাষাবাদ সোনা মিষ্টি কুমড়া

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৯:১৯:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ৬১

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট:

লালমনিরহাটে তিস্তার বালুচরে মিষ্টি কুমড়া চাষবাদ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মছফুর আলী। চাষ করতে জানলে বালুচরেও সোনা ফলানো যায় তা প্রমাণ করেছেন তিস্তাপাড়ের চাষিরা। বালুচরে ফলানো মিষ্টি কুমড়া যেন কৃষকের কাছে সোনা।
জানা গেছে, বর্ষাকালে তিস্তা নদীতে খরস্রোত থাকলেও হেমন্তেই তিস্তা’র বুকে জেগে ওঠে অসংখ্য বালুচর। বর্ষায় নদীর দুকূল উপচিয়ে বন্যায় প্লাবিত হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। একই সঙ্গে ভাঙনের মুখে পড়ে বিলীন হয় ফসলি জমি বসতভিটাসহ স্থাপনা। বর্ষার বিদায় বেলায় ধূ-ধূ বালুচরে পরিণত হয় তিস্তা নদী।
তিস্তা আর ধরলা নদীবেষ্টিত জেলা লালমনিরহাটে রয়েছে প্রায় অর্ধশত চর। বন্যা আর ভাঙনের সম্পদহারা চরাঞ্চলের মানুষ জীবন জীবিকার তাগিদে জেগে ওঠা বালুচরেই ফসল বুনেন। ধূ-ধূ বালুতে ফসল ফলানো বেশ কষ্টসাধ্য। পেটে দুমুঠো ভাত জোগাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে বালুচরে ফসলের চাষাবাদ করেন নদীপাড়ের মানুষ। তবে চরাঞ্চলের জমিতে খিরা, তরমুজ, বাদাম চাষ হলেও মিষ্টি কুমড়ার কদর বেশি। চরাঞ্চলের বালুতে মিষ্টি কুমড়ার চাষাবাদে খরচ কম এবং ফলন বেশি হওয়ায় এই ফসলে বেশি আগ্রহ চাষিদের।
চাষিরা জানান, বালুচরে গর্ত করে বালু সরিয়ে সেই গর্তে অন্যস্থান থেকে আনা পলিমাটি দিয়ে গর্ত পূরণ করে দেওয়া হয়। প্রতিটি গর্তে জৈবসার দিয়ে মিশ্রণ করে ৩/৪টি করে মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করতে হয়। এরপর চারা গাছ বড় হলে পানি সেচ আর একটু পরিচর্যা করলে ফুল-ফল আসতে শুরু করে। বালুচরে গাছ বিচরণ করে তাই খরচ করে মাচাং দিতে হয় না। প্রতিটি গাছে প্রায় ৮/১০টি করে কুমড়া আসে। প্রতিটি কুমড়া ৩/৪ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। বর্ষা আসার আগেই মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ করে বিক্রি করেন চাষিরা। প্রতি কুমড়া ক্ষেতেই ৫০/৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের পাঙ্গাটারী গ্রামের কৃষক মছফুর আলী জানান, তার নিজের কোনো জমি নেই। সংসার চালাতে চাষাবাদের বিকল্প নেই। তাই তিস্তা নদীর বুকে জেগে ওঠা বালুচরে এক হাজার মিষ্টি কুমড়ার চারা লাগিয়েছেন। তার ক্ষেতে ফল আসতে শুরু করেছে। মাত্র ১০ হাজার টাকা খরচে এ ক্ষেত থেকে নুন্যতম ৪০ হাজার টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি’র আশা এ কৃষকের।
একই এলাকার কৃষক আবু মিয়া বলেন, নদীতে সব জমি ভেঙে গেছে। একটা লাউ গাছ লাগানোর মত জমি নেই। চরের বালুময় জমিতে গর্ত খুড়ে ৫শ মিষ্টি কুমড়ার চারা লাগিয়েছি। দূর থেকে পাইপে করে পানি সেচ দিতে হয়। প্রতিটি গাছে ৭/৮টি করে কুমড়া এসেছে। আশা করছি তিন মাসের এ চাষাবাদে ২০ হাজার টাকা আসবে।
তিস্তা চরাঞ্চলের চাষি মজিবর রহমান বলেন, বালুতে গাছের চারাগুলো বিচরণ করে। তাই কোন মাচাং দিতে হয় না। এজন্য খরচ কম। উৎপাদনও ভালো হয়। কম খরচে অধিক লাভ করতে চরাঞ্চলের বালু জমিতে মিষ্টি কুমড়ার বিকল্প নেই। সরকার প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা প্রণোদনা দেন। কিন্তু চরাঞ্চলের চাষিরা তা পান না। এ সুযোগ পেলে ব্যাপক হারে চাষাবাদ করা যেত পরিত্যাক্ত এসব বালুচরে। যদি আগাম বন্যা না আসে তো ৪০/৫০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রির আশা এ কৃষকের।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

তিস্তা’র বালুচরে কৃষকের চাষাবাদ সোনা মিষ্টি কুমড়া

আপডেট সময় : ০৯:১৯:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট:

লালমনিরহাটে তিস্তার বালুচরে মিষ্টি কুমড়া চাষবাদ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মছফুর আলী। চাষ করতে জানলে বালুচরেও সোনা ফলানো যায় তা প্রমাণ করেছেন তিস্তাপাড়ের চাষিরা। বালুচরে ফলানো মিষ্টি কুমড়া যেন কৃষকের কাছে সোনা।
জানা গেছে, বর্ষাকালে তিস্তা নদীতে খরস্রোত থাকলেও হেমন্তেই তিস্তা’র বুকে জেগে ওঠে অসংখ্য বালুচর। বর্ষায় নদীর দুকূল উপচিয়ে বন্যায় প্লাবিত হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। একই সঙ্গে ভাঙনের মুখে পড়ে বিলীন হয় ফসলি জমি বসতভিটাসহ স্থাপনা। বর্ষার বিদায় বেলায় ধূ-ধূ বালুচরে পরিণত হয় তিস্তা নদী।
তিস্তা আর ধরলা নদীবেষ্টিত জেলা লালমনিরহাটে রয়েছে প্রায় অর্ধশত চর। বন্যা আর ভাঙনের সম্পদহারা চরাঞ্চলের মানুষ জীবন জীবিকার তাগিদে জেগে ওঠা বালুচরেই ফসল বুনেন। ধূ-ধূ বালুতে ফসল ফলানো বেশ কষ্টসাধ্য। পেটে দুমুঠো ভাত জোগাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে বালুচরে ফসলের চাষাবাদ করেন নদীপাড়ের মানুষ। তবে চরাঞ্চলের জমিতে খিরা, তরমুজ, বাদাম চাষ হলেও মিষ্টি কুমড়ার কদর বেশি। চরাঞ্চলের বালুতে মিষ্টি কুমড়ার চাষাবাদে খরচ কম এবং ফলন বেশি হওয়ায় এই ফসলে বেশি আগ্রহ চাষিদের।
চাষিরা জানান, বালুচরে গর্ত করে বালু সরিয়ে সেই গর্তে অন্যস্থান থেকে আনা পলিমাটি দিয়ে গর্ত পূরণ করে দেওয়া হয়। প্রতিটি গর্তে জৈবসার দিয়ে মিশ্রণ করে ৩/৪টি করে মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করতে হয়। এরপর চারা গাছ বড় হলে পানি সেচ আর একটু পরিচর্যা করলে ফুল-ফল আসতে শুরু করে। বালুচরে গাছ বিচরণ করে তাই খরচ করে মাচাং দিতে হয় না। প্রতিটি গাছে প্রায় ৮/১০টি করে কুমড়া আসে। প্রতিটি কুমড়া ৩/৪ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। বর্ষা আসার আগেই মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ করে বিক্রি করেন চাষিরা। প্রতি কুমড়া ক্ষেতেই ৫০/৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের পাঙ্গাটারী গ্রামের কৃষক মছফুর আলী জানান, তার নিজের কোনো জমি নেই। সংসার চালাতে চাষাবাদের বিকল্প নেই। তাই তিস্তা নদীর বুকে জেগে ওঠা বালুচরে এক হাজার মিষ্টি কুমড়ার চারা লাগিয়েছেন। তার ক্ষেতে ফল আসতে শুরু করেছে। মাত্র ১০ হাজার টাকা খরচে এ ক্ষেত থেকে নুন্যতম ৪০ হাজার টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি’র আশা এ কৃষকের।
একই এলাকার কৃষক আবু মিয়া বলেন, নদীতে সব জমি ভেঙে গেছে। একটা লাউ গাছ লাগানোর মত জমি নেই। চরের বালুময় জমিতে গর্ত খুড়ে ৫শ মিষ্টি কুমড়ার চারা লাগিয়েছি। দূর থেকে পাইপে করে পানি সেচ দিতে হয়। প্রতিটি গাছে ৭/৮টি করে কুমড়া এসেছে। আশা করছি তিন মাসের এ চাষাবাদে ২০ হাজার টাকা আসবে।
তিস্তা চরাঞ্চলের চাষি মজিবর রহমান বলেন, বালুতে গাছের চারাগুলো বিচরণ করে। তাই কোন মাচাং দিতে হয় না। এজন্য খরচ কম। উৎপাদনও ভালো হয়। কম খরচে অধিক লাভ করতে চরাঞ্চলের বালু জমিতে মিষ্টি কুমড়ার বিকল্প নেই। সরকার প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা প্রণোদনা দেন। কিন্তু চরাঞ্চলের চাষিরা তা পান না। এ সুযোগ পেলে ব্যাপক হারে চাষাবাদ করা যেত পরিত্যাক্ত এসব বালুচরে। যদি আগাম বন্যা না আসে তো ৪০/৫০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রির আশা এ কৃষকের।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন