০১:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪

মৃত্যুর সময় যা বলেছিলেন বিখ্যাত সাহাবি আমর ইবনুল আস (রা.)

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০২:৩৪:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৭৪
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আমর ইবনুল আস মক্কার কোরাইশ বংশের বনু সাহম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ইসলামের আবির্ভাবের সময় তিনি ছিলেন মক্কার তরুণ সর্দারদের একজন। তাকে অত্যন্ত তীক্ষ্ণধী মানুষ মনে করা হতো। ইসলামের আবির্ভাবের পর কোরাইশের বেশিরভাগ নেতার মতো তিনিও ইসলামের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হয়ে ওঠেন।

৮ম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের আগে আমর ইবনুল আস (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন। আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওফাতের পর শুরু হওয়া যুদ্ধে মুসলিম সেনাবাহিনীতে একজন অধিনায়ক হিসেবে তিনি কৃতিত্বের সাক্ষর রাখেন। মুসলমানদের দ্বিতীয় খলিফা ওমরের (রা.) শাসনকালে তিনি মিশর বিজয়ে নেতৃত্ব দেন এবং মিশরের শাসনকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মৃত্যুর আগে মুমূর্ষু অবস্থায় আমর ইবনুল আস (রা.) কী বলেছিলেন তা বর্ণনা করেছেন শামাসা আল মাহরি (রহ.)। তিনি বলেন, আমর ইবনু আসের (রা.) তখন মুমুর্ষ অবস্থা। আমরা তাকে দেখতে উপস্থিত হলাম। তিনি দেয়ালের দিকে ফিরে কাঁদছিলেন। তার ছেলে তাকে তার সম্পর্কে আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দেওয়া বিভিন্ন সুসংবাদের কথা উল্লেখ করে তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন যে, বাবা! আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি আপনাকে এই সুসংবাদগুলো দেননি?

তিনি ছেলের দিকে ফিরে বললেন, আমার সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’-এর সাক্ষ্য দেওয়া। আমি আমার জীবনের তিনটি পর্যায় অতিক্রম করেছি। এক সময় আমি এমন ছিলাম যে আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিরুদ্ধাচরণে আমার চেয়ে কঠোর কেউ ছিল না। আমার সবচেয়ে প্রিয় ভাবনা ছিল, আমি যদি তাকে কবজায় পেয়ে হত্যা করতে পারতাম! সে অবস্থায় আমার মৃত্যু হলে নিশ্চিত আমাকে জাহান্নামে যেতে হতো।

এরপর আল্লাহ যখন আমার অন্তরে ইসলামের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি করে দিলেন, তখন আমি আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে উপস্থিত হয়ে অনুরোধ জানালাম যে, আপনার ডান হাত বাড়িয়ে দিন, আমি বায়াত হতে চাই। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার ডান হাত বাড়িয়ে দিলে আমি আমার হাত টেনে নিলাম। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমর, কী ব্যাপার? আমি বললাম, আগে আমি শর্ত দিয়ে নিতে চাই। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন, কী শর্ত দেবে? আমি উত্তর দিলাম, আল্লাহ যেন আমার সব গুনাহ মাফ করে দেন। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমর! তুমি কি জানো না ইসলাম পূর্ববর্তী সব গুনাহ মিটিয়ে দেয়, হিজরত আগের সব গুনাহ মিটিয়ে দেয়, হজও আগের সব গুনাহ মিটিয়ে দেয়।

এ পর্যায়ে আমার কাছে আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চেয়ে বেশি প্রিয় কেউ ছিল না। আমার চোখে তার চেয়ে মহান কেউ ছিল না। অপরিসীম শ্রদ্ধার কারণে আমি তার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেও পারতাম না। আজ যদি আমাকে তার দেহ আকৃতি বর্ণনা করতে বলা হয়, তাহলে আমার পক্ষে তা সম্ভব হবে না। কারণ পূর্ণ দৃষ্টিতে আমি কখনো তার দিকে তাকাতে পারিনি। ওই অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হতো, তবে অবশ্যই আমি জান্নাতি হওয়ার আশা করতাম।

পরে আমরা নানা বিষয়ে জড়িয়ে পড়েছি। জানিনা এতে আমার অবস্থান সঠিক ছিল কি না! আমি যখন মারা যাব, তখন যেন কোন বিলাপকারিনী অথবা আগুন আমার জানাজার সাথে না থাকে। আমাকে দাফন করার পর আমার ওপর আস্তে আস্তে মাটি ফেলবে। দাফন সেরে একটি উট জবাই করে তার মাংস বণ্টন করতে যতক্ষণ সময় লাগে, ততক্ষন আমার কবরের পাশে অবস্থান করবে। যেন তোমাদের উপস্থিতির কারণে আমি আতঙ্কমুক্ত অবস্থায় চিন্তা করতে পারি যে আমার রবের দূতদের কী জবাব দেব।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

মৃত্যুর সময় যা বলেছিলেন বিখ্যাত সাহাবি আমর ইবনুল আস (রা.)

আপডেট সময় : ০২:৩৪:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৪
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আমর ইবনুল আস মক্কার কোরাইশ বংশের বনু সাহম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ইসলামের আবির্ভাবের সময় তিনি ছিলেন মক্কার তরুণ সর্দারদের একজন। তাকে অত্যন্ত তীক্ষ্ণধী মানুষ মনে করা হতো। ইসলামের আবির্ভাবের পর কোরাইশের বেশিরভাগ নেতার মতো তিনিও ইসলামের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হয়ে ওঠেন।

৮ম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের আগে আমর ইবনুল আস (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন। আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওফাতের পর শুরু হওয়া যুদ্ধে মুসলিম সেনাবাহিনীতে একজন অধিনায়ক হিসেবে তিনি কৃতিত্বের সাক্ষর রাখেন। মুসলমানদের দ্বিতীয় খলিফা ওমরের (রা.) শাসনকালে তিনি মিশর বিজয়ে নেতৃত্ব দেন এবং মিশরের শাসনকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মৃত্যুর আগে মুমূর্ষু অবস্থায় আমর ইবনুল আস (রা.) কী বলেছিলেন তা বর্ণনা করেছেন শামাসা আল মাহরি (রহ.)। তিনি বলেন, আমর ইবনু আসের (রা.) তখন মুমুর্ষ অবস্থা। আমরা তাকে দেখতে উপস্থিত হলাম। তিনি দেয়ালের দিকে ফিরে কাঁদছিলেন। তার ছেলে তাকে তার সম্পর্কে আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দেওয়া বিভিন্ন সুসংবাদের কথা উল্লেখ করে তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন যে, বাবা! আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি আপনাকে এই সুসংবাদগুলো দেননি?

তিনি ছেলের দিকে ফিরে বললেন, আমার সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’-এর সাক্ষ্য দেওয়া। আমি আমার জীবনের তিনটি পর্যায় অতিক্রম করেছি। এক সময় আমি এমন ছিলাম যে আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিরুদ্ধাচরণে আমার চেয়ে কঠোর কেউ ছিল না। আমার সবচেয়ে প্রিয় ভাবনা ছিল, আমি যদি তাকে কবজায় পেয়ে হত্যা করতে পারতাম! সে অবস্থায় আমার মৃত্যু হলে নিশ্চিত আমাকে জাহান্নামে যেতে হতো।

এরপর আল্লাহ যখন আমার অন্তরে ইসলামের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি করে দিলেন, তখন আমি আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে উপস্থিত হয়ে অনুরোধ জানালাম যে, আপনার ডান হাত বাড়িয়ে দিন, আমি বায়াত হতে চাই। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার ডান হাত বাড়িয়ে দিলে আমি আমার হাত টেনে নিলাম। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমর, কী ব্যাপার? আমি বললাম, আগে আমি শর্ত দিয়ে নিতে চাই। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন, কী শর্ত দেবে? আমি উত্তর দিলাম, আল্লাহ যেন আমার সব গুনাহ মাফ করে দেন। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমর! তুমি কি জানো না ইসলাম পূর্ববর্তী সব গুনাহ মিটিয়ে দেয়, হিজরত আগের সব গুনাহ মিটিয়ে দেয়, হজও আগের সব গুনাহ মিটিয়ে দেয়।

এ পর্যায়ে আমার কাছে আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চেয়ে বেশি প্রিয় কেউ ছিল না। আমার চোখে তার চেয়ে মহান কেউ ছিল না। অপরিসীম শ্রদ্ধার কারণে আমি তার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেও পারতাম না। আজ যদি আমাকে তার দেহ আকৃতি বর্ণনা করতে বলা হয়, তাহলে আমার পক্ষে তা সম্ভব হবে না। কারণ পূর্ণ দৃষ্টিতে আমি কখনো তার দিকে তাকাতে পারিনি। ওই অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হতো, তবে অবশ্যই আমি জান্নাতি হওয়ার আশা করতাম।

পরে আমরা নানা বিষয়ে জড়িয়ে পড়েছি। জানিনা এতে আমার অবস্থান সঠিক ছিল কি না! আমি যখন মারা যাব, তখন যেন কোন বিলাপকারিনী অথবা আগুন আমার জানাজার সাথে না থাকে। আমাকে দাফন করার পর আমার ওপর আস্তে আস্তে মাটি ফেলবে। দাফন সেরে একটি উট জবাই করে তার মাংস বণ্টন করতে যতক্ষণ সময় লাগে, ততক্ষন আমার কবরের পাশে অবস্থান করবে। যেন তোমাদের উপস্থিতির কারণে আমি আতঙ্কমুক্ত অবস্থায় চিন্তা করতে পারি যে আমার রবের দূতদের কী জবাব দেব।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন