১০:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪

বাগেরহাটে চুরির অপবাদ দিয়ে যুবককে ২২ ঘণ্টা আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ১২:১৩:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩
  • / ১০
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বাগেরহাট প্রতিনিধি:

বাগেরহাটের রামপালে ইজিবাইক চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে শেখ আব্দুল্লাহ (২৮) নামের এক যুবককে প্রায় ২২ ঘণ্টা আটকে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানুষিক নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে ইজিবাইকযোগে বাগেরহাট আসার পথে রামপাল উপজেলার চাকশ্রী নামক স্থান থেকে জোরপূর্বক শেখ আব্দুল্লাহকে তুলে নিয়ে যায় ব্রিচাকশ্রি এলাকার শেখ হাসান আলী ও ইউপি চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহর ভাগ্নে আবু সালেহসহ কয়েকজন।
মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে প্রায় ২২ ঘন্টা মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানুষিক নির্যাতনের পর শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ছেড়ে দেওয়া হয় শেখ আব্দুল্লাহকে। এদিকে ঘটনার চারদিন অতিবাহিত হলেও এ ঘটনায় কোনো মালালা হয়নি। তবে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পরে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ প্রশাসন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক। নির্যাতনের শিকার আব্দুল্লাহ বাগেরহাট সদর উপজেলার মুনিগঞ্জ এলাকার শেখ গফুরের ছেলে। নির্যাতিতা বর্তমানে বাগেরহাট জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
নির্যাতনের শিকার আব্দুল্লাহ বলেন, পূর্ব পরিচিত এবং সু-সম্পর্কের কারণে ব্রিচাকশ্রী এলাকার শেখ হাসান আলীকে আমি ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা ধার দেই। কিন্তু সে আমাকে টাকা না দিয়ে আজকাল বলে ঘোরাতে থাকে। পরবর্তীতে টাকার পরিবর্তে শেখ হাসান আলী তার নিজ মালিকানাধীন ইজিবাইকটি আমার কাছে বিক্রি করে দেয়। প্রতিদিন ২শত টাকা ভাড়ায় সে আমাকে দেয়া ইজিবাইকটি চালাতে থাকে। কিন্তু কয়েকদিন টাকা দেওয়ার পরে সে টাকা দেয়া বন্দ করে দেয়। সে কারণে আমি জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে তার কাছ থেকে ইজিবাইক নিয়ে বিক্রি করে দি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এসব বিষয় নিয়ে তার সাথে আমার আর কথা হয়নি।হঠাৎ বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে ইজিবাইকযোগে রামপাল থেকে বাগেরহাট আসার পথে চাকশ্রী নামক স্থান থেকে শেখ হাসান আলী ও চেয়ারম্যানের ভাগ্নে আবু সালেহসহ কয়েকজন মিলে জোর করে আমাকে ধরে নিয়ে যায়।

ব্রিচাকশ্রী এলাকায় শেখ হাসান আলীর বাড়িতে নিয়ে আমাকে নির্যাতন শুরু করে। ওই দিন সন্ধ্যার দিকে আমার বন্ধু প্রাইভেটকার চালক আল আমিনকে চাকশ্রী আসার জন্য আমাকে দিয়ে ফোন করায়। পরে আল আমিন আমার কাছে গেলে তাকেও বেধে রাখে হাসান ও আবু সালেহরা। সারারাত আমাকে অমানুষিক নির্যাতন করেছে আবুল সালেহ ও হাসানসহ কয়েকজন। বেধড়ক মারপিটের সঙ্গে শরীরে সিগারের ছ্যাকা ও আঙ্গুলের মধ্যে খেজুরের কাটা ঢুকিয়েছে। চোখ উঠিয়ে ফেলার কথা বলেছে।
আব্দুল্লাহ আরও বলেন, সারারাত এভাবে অত্যাচারের পরে দুপুরে বাইনতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহর কাছে নিয়ে যায় আমাকে ও আমার বন্ধু আল আমিনকে। তিনি কোনো কথা না শুনে আমাদের চোখ তুলে ফেলতে বলেন। পরে ফাকা স্ট্যাম্পে আমার এবং আমার মায়ের স্বাক্ষর করিয়ে ৩ লাখ টাকা দেওয়ার স্বীকারোক্তি রেখে ছেড়ে দেয়। আমার উপর হামলাকারীদের কঠিন বিচার চাই।
শেখ আব্দুল্লাহর মা খালেদা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে যেভাবে নির্যাতন করেছে তা মানুষে করে না। চেয়ারম্যানের কাছে যেয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। আমি আমার ছেলেকে নির্যাতনের বিচার চাই।
প্রত্যক্ষদর্শী শেখ আব্দুল্লাহর বন্ধু প্রাইভেটকার চালক আল আমিন বলেন,আব্দুলার ফোন পেয়ে চাকশ্রী বাজারে গেলে, হাসান ও আবু সালেহ আমাকে ও বেঁধে রাখে। সারারাত আব্দুল্লাহকে নির্যাতন করে। শুক্রবার দুপুরে আমাদের ছেড়ে দেয়।
এবিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহ বলেছেন, তার সামনে কোনো নির্যাতন হয়নি। এমনকি আবু সালেহ তার ভাগ্নে নয়।
বাগেরহাট জেলা হাসপাতালের তত্তাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার বলেন, নির্যাতনের শিকার যুবক আব্দুল্লাহর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলা-জখম রয়েছে। মারাত্মক ইনজুরি রয়েছে কিনা সে বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যাবে।
পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক বলেন, ভিডিওটি আমরা দেখেছি। বিষয়টি তদন্ত চলছে। অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ভাইরাল হওয়া ২ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়- একটি ঘরের পেছনে আম গাছের সঙ্গে বেঁধে এক যুবককে মারধর করছে কয়েকজন যুবক। পরে মাটিতে শোয়ায়ে এক পা পাড়ায়ে ধরে আরেক পা উপড়ে উঠিয়ে গালিগালাজ করা হচ্ছে। এক পর্যায়ে দুই পায়ের তলায় মোটা লাঠি দিয়ে পেটাতে দেখা যায় আবু সালেকে। এবং ওই যুবক মাগো বাবাগো বলে চিৎকার করছিল।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

বাগেরহাটে চুরির অপবাদ দিয়ে যুবককে ২২ ঘণ্টা আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন

আপডেট সময় : ১২:১৩:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বাগেরহাট প্রতিনিধি:

বাগেরহাটের রামপালে ইজিবাইক চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে শেখ আব্দুল্লাহ (২৮) নামের এক যুবককে প্রায় ২২ ঘণ্টা আটকে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানুষিক নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে ইজিবাইকযোগে বাগেরহাট আসার পথে রামপাল উপজেলার চাকশ্রী নামক স্থান থেকে জোরপূর্বক শেখ আব্দুল্লাহকে তুলে নিয়ে যায় ব্রিচাকশ্রি এলাকার শেখ হাসান আলী ও ইউপি চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহর ভাগ্নে আবু সালেহসহ কয়েকজন।
মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে প্রায় ২২ ঘন্টা মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানুষিক নির্যাতনের পর শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ছেড়ে দেওয়া হয় শেখ আব্দুল্লাহকে। এদিকে ঘটনার চারদিন অতিবাহিত হলেও এ ঘটনায় কোনো মালালা হয়নি। তবে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পরে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ প্রশাসন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক। নির্যাতনের শিকার আব্দুল্লাহ বাগেরহাট সদর উপজেলার মুনিগঞ্জ এলাকার শেখ গফুরের ছেলে। নির্যাতিতা বর্তমানে বাগেরহাট জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
নির্যাতনের শিকার আব্দুল্লাহ বলেন, পূর্ব পরিচিত এবং সু-সম্পর্কের কারণে ব্রিচাকশ্রী এলাকার শেখ হাসান আলীকে আমি ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা ধার দেই। কিন্তু সে আমাকে টাকা না দিয়ে আজকাল বলে ঘোরাতে থাকে। পরবর্তীতে টাকার পরিবর্তে শেখ হাসান আলী তার নিজ মালিকানাধীন ইজিবাইকটি আমার কাছে বিক্রি করে দেয়। প্রতিদিন ২শত টাকা ভাড়ায় সে আমাকে দেয়া ইজিবাইকটি চালাতে থাকে। কিন্তু কয়েকদিন টাকা দেওয়ার পরে সে টাকা দেয়া বন্দ করে দেয়। সে কারণে আমি জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে তার কাছ থেকে ইজিবাইক নিয়ে বিক্রি করে দি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এসব বিষয় নিয়ে তার সাথে আমার আর কথা হয়নি।হঠাৎ বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে ইজিবাইকযোগে রামপাল থেকে বাগেরহাট আসার পথে চাকশ্রী নামক স্থান থেকে শেখ হাসান আলী ও চেয়ারম্যানের ভাগ্নে আবু সালেহসহ কয়েকজন মিলে জোর করে আমাকে ধরে নিয়ে যায়।

ব্রিচাকশ্রী এলাকায় শেখ হাসান আলীর বাড়িতে নিয়ে আমাকে নির্যাতন শুরু করে। ওই দিন সন্ধ্যার দিকে আমার বন্ধু প্রাইভেটকার চালক আল আমিনকে চাকশ্রী আসার জন্য আমাকে দিয়ে ফোন করায়। পরে আল আমিন আমার কাছে গেলে তাকেও বেধে রাখে হাসান ও আবু সালেহরা। সারারাত আমাকে অমানুষিক নির্যাতন করেছে আবুল সালেহ ও হাসানসহ কয়েকজন। বেধড়ক মারপিটের সঙ্গে শরীরে সিগারের ছ্যাকা ও আঙ্গুলের মধ্যে খেজুরের কাটা ঢুকিয়েছে। চোখ উঠিয়ে ফেলার কথা বলেছে।
আব্দুল্লাহ আরও বলেন, সারারাত এভাবে অত্যাচারের পরে দুপুরে বাইনতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহর কাছে নিয়ে যায় আমাকে ও আমার বন্ধু আল আমিনকে। তিনি কোনো কথা না শুনে আমাদের চোখ তুলে ফেলতে বলেন। পরে ফাকা স্ট্যাম্পে আমার এবং আমার মায়ের স্বাক্ষর করিয়ে ৩ লাখ টাকা দেওয়ার স্বীকারোক্তি রেখে ছেড়ে দেয়। আমার উপর হামলাকারীদের কঠিন বিচার চাই।
শেখ আব্দুল্লাহর মা খালেদা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে যেভাবে নির্যাতন করেছে তা মানুষে করে না। চেয়ারম্যানের কাছে যেয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। আমি আমার ছেলেকে নির্যাতনের বিচার চাই।
প্রত্যক্ষদর্শী শেখ আব্দুল্লাহর বন্ধু প্রাইভেটকার চালক আল আমিন বলেন,আব্দুলার ফোন পেয়ে চাকশ্রী বাজারে গেলে, হাসান ও আবু সালেহ আমাকে ও বেঁধে রাখে। সারারাত আব্দুল্লাহকে নির্যাতন করে। শুক্রবার দুপুরে আমাদের ছেড়ে দেয়।
এবিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহ বলেছেন, তার সামনে কোনো নির্যাতন হয়নি। এমনকি আবু সালেহ তার ভাগ্নে নয়।
বাগেরহাট জেলা হাসপাতালের তত্তাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার বলেন, নির্যাতনের শিকার যুবক আব্দুল্লাহর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলা-জখম রয়েছে। মারাত্মক ইনজুরি রয়েছে কিনা সে বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যাবে।
পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক বলেন, ভিডিওটি আমরা দেখেছি। বিষয়টি তদন্ত চলছে। অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ভাইরাল হওয়া ২ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়- একটি ঘরের পেছনে আম গাছের সঙ্গে বেঁধে এক যুবককে মারধর করছে কয়েকজন যুবক। পরে মাটিতে শোয়ায়ে এক পা পাড়ায়ে ধরে আরেক পা উপড়ে উঠিয়ে গালিগালাজ করা হচ্ছে। এক পর্যায়ে দুই পায়ের তলায় মোটা লাঠি দিয়ে পেটাতে দেখা যায় আবু সালেকে। এবং ওই যুবক মাগো বাবাগো বলে চিৎকার করছিল।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন