০৩:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪

সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী ইপিজেডকে অশান্ত করছে জনপ্রতিনিধিরা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৬:৫০:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ১৫
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি :

সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেডে ঠিকাদারী ব্যবসার আধিপত্য বিস্তার করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জনপ্রতিনিধি ও তাদের লালিত সন্ত্রাসীরা। এদের ইন্দন দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতারা। ইপিজেডে সন্ত্রাসীদের অবাধ বিচরণ ও প্রবেশ নিয়ে জনমনে উঠেছে নানা প্রশ্ন। দীর্ঘদিন ধরেই ইপিজেডে একক আধিপত্য বিস্তার করে আছেন এক জনপ্রতিনিধি ও তার পালিত সন্ত্রাসীরা। ওই জনপ্রতিনিধিকে বিতারিত করে ইপিজেডে ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে অন্য তিন জনপ্রতিনিধি।এতে ইপিজেড অশান্ত হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে ঘটে গেছে মারামারির ঘটনা। হয়েছে পাল্টা পাল্টি মামলা। যেকোন সময় ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষসহ প্রাণহানির ঘটনা।
জানা গেছে, সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিত আদমজী জুট মিল বন্ধ হওয়ার পর গড়ে তুলা হয় ইপিজেড। দেশের অর্থনৈতিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা অসংখ্য রপ্তানি মুখী শিল্পকারখানা গড়ে উঠে ইপিজেডে। ফলে এসব কারখানায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহসহ বিভিন্ন ব্যবসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ইপিজেডে ব্যবসা করার জন্য ঠিকাদারের সংখ্যাও কম না। তবে সব ঠিকাদার ব্যবসা করতে পারছেন না কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের কারণে।
অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আদমজী ইপিজেডে আধিপত্য বিস্তার করেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহবায়ক মতিউর রহমান মতি ও তার আত্নীয়স্বজনসহ পালিত সন্ত্রাসীরা। নাসিক ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর ইপিজেডে একক আধিপত্য বিস্তার করেন মতি। একই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মন্ডলের পালিত সন্ত্রাসীরা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ব্যবসা করলেও মতি বাহিনীর জন্য সুবিধা করতে পারছেনা। ইপিজেডে ব্যবসা নিয়ন্ত্রনকে কেন্দ্র করে মতি ও সিরাজ বাহিনীর মধ্যে কিছু দিন পর পরই হতো সংঘর্ষ। এসব ঘটনায় থানায় একাধিক মামলা হয়েছে।
তবে দাঙ্গা-হাঙ্গামা এড়িয়ে সিরাজুল ইসলাম মন্ডল কূট-কৌশল করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কাউন্সিলর মতি ও তার স্ত্রী রোকেয়া রহমানকে আটকিয়ে ফেলে দুদকের জালে। সম্প্রতি দুদকের করা মামলায় মতি ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এতে চরম বেকায়দা পড়ে গেছেন দাপটি মতি। কারণ,আদালতের রায় তার বিপক্ষে হলে, যেতে হতে পারে জেলে, হরাতে হতে পারে কাউন্সিলর পদ। বহু দৌড়ঝাপ, দলীয় ক্ষমতা ও অর্থের জুরেও দুদকের জাল থেকে ছুটতে না পারায় সাধারণ তাঁতীলীগের লিটন ওরফে গুজা লিটনের মত লোকও মতিকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্ল ও ভেঙ্গ করে কথা বলে। পরিস্থিতি যাই হোক ইপিজেডের নিয়ন্ত্রন হাত ছাড়া করতে চাচ্ছেন না মতি। সক্রিয় করে তুলছেন তার বাহিনী।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাধর প্রভাবশালী মতি দুদকের জালে আটকা পড়ায় তাকে ইপিজেড থেকে বিতারিত করতে একজোট হয়েছেন, নাসিক ১০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইফতেখার আলম খোকন, ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর উদ্দিন ও ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল। পর্দার আড়ালে রয়েছেন নাসিক ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মন্ডল। নারায়ণগঞ্জ জেলা শহরের এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর আশির্বাদে ইফতেখার আলম খোকন জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে সূত্রটির দাবি। তিন কাউন্সিলর জোটের সন্ত্রাসীরা গত ২৫ জানুয়ারি ইপিজেডে মোহড়া দিতে গেলে মতি বাহিনীর অন্যতম সন্ত্রাসী আক্তার হোসেনের নেতৃত্বে হামলা করা হয়। এঘটনায় দুই পক্ষের লোকজন আহত হয়। থানায় পাল্টা পাল্টি মামলা হয়েছে। এতে ইপিজেড সাময়ীক শান্ত থাকলেও যে কোন সময় আশান্ত হয়ে উঠতে পারে। ঘটতে পারে রক্ষক্ষীয় সংঘর্ষ ও প্রাণ হানির ঘটনা।
স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, ইপিজেড একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এখানে সর্বসাধারণের প্রবেশে বিধি নিষেধ রয়েছে। এমনকি গণমাধ্যম কর্মীরা প্রবেশ করতে হলে কর্তৃপক্ষেক অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু সেই ইপিজেডে সন্ত্রাসীদের প্রবেশ ও অবাদ বিচরণে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা রহস্যজনক। শুধু প্রবেশই নয় ইপিজেডের ভেতরে প্রায়ই ঘটছে মারামারির ঘটনা। অথচ যারা মারামারি করছে তারা বহিরাগত। এসব সন্ত্রাসীরা ইপিজেড থেকে বিভিন্ন মালামাল চুরি করে সহজেই বাইরে বের করে নিচ্ছে। কিছুদিন আগেও শিল্প পুলিশ সন্ত্রাসী আক্তারের চুরি করা মালামাল উদ্ধার করেছেন। কোটি কোটি টাকার মালামাল কাস্টমস ফাঁকি দিয়ে চুরি করে বের করা রহস্যজনক।
আধিপত্য বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, কোন বিরোধ নেই। সবাই শান্তিমত ব্যবসা করছেন। কাউন্সিলর ইফতেখার আলম খোকন, নূরউদ্দিন ও বাদলের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী ইপিজেডকে অশান্ত করছে জনপ্রতিনিধিরা

আপডেট সময় : ০৬:৫০:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৩
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি :

সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেডে ঠিকাদারী ব্যবসার আধিপত্য বিস্তার করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জনপ্রতিনিধি ও তাদের লালিত সন্ত্রাসীরা। এদের ইন্দন দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতারা। ইপিজেডে সন্ত্রাসীদের অবাধ বিচরণ ও প্রবেশ নিয়ে জনমনে উঠেছে নানা প্রশ্ন। দীর্ঘদিন ধরেই ইপিজেডে একক আধিপত্য বিস্তার করে আছেন এক জনপ্রতিনিধি ও তার পালিত সন্ত্রাসীরা। ওই জনপ্রতিনিধিকে বিতারিত করে ইপিজেডে ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে অন্য তিন জনপ্রতিনিধি।এতে ইপিজেড অশান্ত হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে ঘটে গেছে মারামারির ঘটনা। হয়েছে পাল্টা পাল্টি মামলা। যেকোন সময় ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষসহ প্রাণহানির ঘটনা।
জানা গেছে, সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিত আদমজী জুট মিল বন্ধ হওয়ার পর গড়ে তুলা হয় ইপিজেড। দেশের অর্থনৈতিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা অসংখ্য রপ্তানি মুখী শিল্পকারখানা গড়ে উঠে ইপিজেডে। ফলে এসব কারখানায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহসহ বিভিন্ন ব্যবসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ইপিজেডে ব্যবসা করার জন্য ঠিকাদারের সংখ্যাও কম না। তবে সব ঠিকাদার ব্যবসা করতে পারছেন না কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের কারণে।
অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আদমজী ইপিজেডে আধিপত্য বিস্তার করেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহবায়ক মতিউর রহমান মতি ও তার আত্নীয়স্বজনসহ পালিত সন্ত্রাসীরা। নাসিক ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর ইপিজেডে একক আধিপত্য বিস্তার করেন মতি। একই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মন্ডলের পালিত সন্ত্রাসীরা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ব্যবসা করলেও মতি বাহিনীর জন্য সুবিধা করতে পারছেনা। ইপিজেডে ব্যবসা নিয়ন্ত্রনকে কেন্দ্র করে মতি ও সিরাজ বাহিনীর মধ্যে কিছু দিন পর পরই হতো সংঘর্ষ। এসব ঘটনায় থানায় একাধিক মামলা হয়েছে।
তবে দাঙ্গা-হাঙ্গামা এড়িয়ে সিরাজুল ইসলাম মন্ডল কূট-কৌশল করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কাউন্সিলর মতি ও তার স্ত্রী রোকেয়া রহমানকে আটকিয়ে ফেলে দুদকের জালে। সম্প্রতি দুদকের করা মামলায় মতি ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এতে চরম বেকায়দা পড়ে গেছেন দাপটি মতি। কারণ,আদালতের রায় তার বিপক্ষে হলে, যেতে হতে পারে জেলে, হরাতে হতে পারে কাউন্সিলর পদ। বহু দৌড়ঝাপ, দলীয় ক্ষমতা ও অর্থের জুরেও দুদকের জাল থেকে ছুটতে না পারায় সাধারণ তাঁতীলীগের লিটন ওরফে গুজা লিটনের মত লোকও মতিকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্ল ও ভেঙ্গ করে কথা বলে। পরিস্থিতি যাই হোক ইপিজেডের নিয়ন্ত্রন হাত ছাড়া করতে চাচ্ছেন না মতি। সক্রিয় করে তুলছেন তার বাহিনী।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাধর প্রভাবশালী মতি দুদকের জালে আটকা পড়ায় তাকে ইপিজেড থেকে বিতারিত করতে একজোট হয়েছেন, নাসিক ১০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইফতেখার আলম খোকন, ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর উদ্দিন ও ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল। পর্দার আড়ালে রয়েছেন নাসিক ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মন্ডল। নারায়ণগঞ্জ জেলা শহরের এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর আশির্বাদে ইফতেখার আলম খোকন জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে সূত্রটির দাবি। তিন কাউন্সিলর জোটের সন্ত্রাসীরা গত ২৫ জানুয়ারি ইপিজেডে মোহড়া দিতে গেলে মতি বাহিনীর অন্যতম সন্ত্রাসী আক্তার হোসেনের নেতৃত্বে হামলা করা হয়। এঘটনায় দুই পক্ষের লোকজন আহত হয়। থানায় পাল্টা পাল্টি মামলা হয়েছে। এতে ইপিজেড সাময়ীক শান্ত থাকলেও যে কোন সময় আশান্ত হয়ে উঠতে পারে। ঘটতে পারে রক্ষক্ষীয় সংঘর্ষ ও প্রাণ হানির ঘটনা।
স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, ইপিজেড একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এখানে সর্বসাধারণের প্রবেশে বিধি নিষেধ রয়েছে। এমনকি গণমাধ্যম কর্মীরা প্রবেশ করতে হলে কর্তৃপক্ষেক অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু সেই ইপিজেডে সন্ত্রাসীদের প্রবেশ ও অবাদ বিচরণে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা রহস্যজনক। শুধু প্রবেশই নয় ইপিজেডের ভেতরে প্রায়ই ঘটছে মারামারির ঘটনা। অথচ যারা মারামারি করছে তারা বহিরাগত। এসব সন্ত্রাসীরা ইপিজেড থেকে বিভিন্ন মালামাল চুরি করে সহজেই বাইরে বের করে নিচ্ছে। কিছুদিন আগেও শিল্প পুলিশ সন্ত্রাসী আক্তারের চুরি করা মালামাল উদ্ধার করেছেন। কোটি কোটি টাকার মালামাল কাস্টমস ফাঁকি দিয়ে চুরি করে বের করা রহস্যজনক।
আধিপত্য বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, কোন বিরোধ নেই। সবাই শান্তিমত ব্যবসা করছেন। কাউন্সিলর ইফতেখার আলম খোকন, নূরউদ্দিন ও বাদলের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন