০৪:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের সম্পত্তি প্রভাবশালীদের দখলে

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০২:৫৭:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর ২০২২
  • / ২০
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মতলব (উত্তর) সংবাদদাতা

ষাট কিলোমিটার নিয়ে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প। এ প্রকল্পের হাজার হাজার একর সরকারি সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নিয়মতান্ত্রিক নানা জটিলতায় এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বছরের পর বছর পর্যন্ত অপেক্ষার প্রহর গুণতে হচ্ছে।

মূলত উচ্ছেদ কার্যক্রম প্রক্রিয়ার এহেন জটিলতার সুযোগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেহাত হয়ে যাওয়া সম্পত্তির পরিমাণ দিনদিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। বর্তমানে এই দখল পরিস্থিতি মতলব উত্তর উপজেলা এলাকায় ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ক্ষমতাশালী ও প্রভাবশালী মহলের ব্যাপক চেষ্টা-তদবির এবং চাপে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে মারাত্মক হিমশিম খাচ্ছেন।

প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাজার হাজার একর সম্পত্তি দখলের মহোৎসবে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিবর্গ, শাসকদলের লোকজন কেউই বসে নেই। যে যার যার সুযোগ মতো দখল করে নিয়েছে। স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে বাণিজ্য করে যাচ্ছে।

এনায়েতনগরে ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়ি বাঁধের পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন কামরুল ইসলাম নামে এক প্রভাবশালী। এছাড়া অবৈধভাবে আনন্দবাজার, বেলতলী, দুর্গাপুর বাজার, ছেঙ্গারচর বাজারের আশপাশসহ বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাট নির্মাণ করে বাণিজ্য করছেন এক শ্রেণীর প্রভাবশালী মহল।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের চাঁদপুর কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৮৮ সালে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের মূল বেড়িবাঁধটি নির্মিত হয়। এই বাঁধের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭০ কিলোমিটার। প্রকল্পটির অধীনে ২১৮ কিলোমিটার সেচ খাল আছে। কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ও সেচ খালের জায়গা দখল করে সেখানে অবৈধ স্থাপনা ও দোকান নির্মাণ করেছেন স্থানীয় লোকজন।

সম্প্রতি মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাঁধের এনায়েতনগর, মমরুজকান্দি, সুজাতপুর, এখলাশপুর, বকুলতলা, মোহনপুর, বেলতলী, চান্দ্রাকান্দি, কালিপুর, ষাটনল, ছেংগারচর, বদরপুর, রামদাসপুরসহ আরও কয়েকটি এলাকার বেশ কিছু জায়গা অবৈধভাবে দখল করে দোকান ও ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এতে বাঁধটি হুমকিতে রয়েছে।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের জমি দখল করে দোকান নির্মাণ করেছেন উপজেলার ষাটনল এলাকার আবুল কাশেম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু খালি জায়গা পেয়ে দোকান দিয়েছেন। পাউবোর অনুমতি নিতে হয় কি না, তা তিনি জানেন না।

চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী মো. ফখরুল আমিন সিদ্দিকী জানান, এ প্রকল্পের প্রায় ৪শ’ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য মামলা করা হয়েছে। বর্তমানে সকল ধরনের লিজ বন্ধ। তাছাড়া পুরনো লিজও নবায়ন করা হচ্ছে না। চলতি বছর মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের মতলব ব্রীজ থেকে জনতা বাজার পর্যন্ত এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম জানান, পাউবোর বিধিবদ্ধ আইনের বর্তমান সীমাবদ্ধতা অনুযায়ী আমরা আর আগের মতো তাৎক্ষণিকভাবে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারি না। পূর্বে আমরা অভিযোগ পাওয়া মাত্র উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসন থেকে যথাক্রমে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ ফোর্স নিয়ে সাথে সাথে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারতাম। বর্তমানে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ সুপারের কাছ থেকে পুলিশ ফোর্স নিতে হলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পাউবো’র বেদখল হওয়া সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য উচ্ছেদ কার্যক্রমের তালিকা প্রস্তুত করে পাঠাতে হয়। এভাবেই বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হতে সময় লাগে। যে কারণে অবৈধ দখলকৃত সম্পত্তি উদ্ধারে কিছুটা সময় লাগে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের সম্পত্তি প্রভাবশালীদের দখলে

আপডেট সময় : ০২:৫৭:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর ২০২২
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মতলব (উত্তর) সংবাদদাতা

ষাট কিলোমিটার নিয়ে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প। এ প্রকল্পের হাজার হাজার একর সরকারি সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নিয়মতান্ত্রিক নানা জটিলতায় এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বছরের পর বছর পর্যন্ত অপেক্ষার প্রহর গুণতে হচ্ছে।

মূলত উচ্ছেদ কার্যক্রম প্রক্রিয়ার এহেন জটিলতার সুযোগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেহাত হয়ে যাওয়া সম্পত্তির পরিমাণ দিনদিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। বর্তমানে এই দখল পরিস্থিতি মতলব উত্তর উপজেলা এলাকায় ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ক্ষমতাশালী ও প্রভাবশালী মহলের ব্যাপক চেষ্টা-তদবির এবং চাপে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে মারাত্মক হিমশিম খাচ্ছেন।

প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাজার হাজার একর সম্পত্তি দখলের মহোৎসবে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিবর্গ, শাসকদলের লোকজন কেউই বসে নেই। যে যার যার সুযোগ মতো দখল করে নিয়েছে। স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে বাণিজ্য করে যাচ্ছে।

এনায়েতনগরে ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়ি বাঁধের পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন কামরুল ইসলাম নামে এক প্রভাবশালী। এছাড়া অবৈধভাবে আনন্দবাজার, বেলতলী, দুর্গাপুর বাজার, ছেঙ্গারচর বাজারের আশপাশসহ বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাট নির্মাণ করে বাণিজ্য করছেন এক শ্রেণীর প্রভাবশালী মহল।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের চাঁদপুর কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৮৮ সালে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের মূল বেড়িবাঁধটি নির্মিত হয়। এই বাঁধের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭০ কিলোমিটার। প্রকল্পটির অধীনে ২১৮ কিলোমিটার সেচ খাল আছে। কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ও সেচ খালের জায়গা দখল করে সেখানে অবৈধ স্থাপনা ও দোকান নির্মাণ করেছেন স্থানীয় লোকজন।

সম্প্রতি মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাঁধের এনায়েতনগর, মমরুজকান্দি, সুজাতপুর, এখলাশপুর, বকুলতলা, মোহনপুর, বেলতলী, চান্দ্রাকান্দি, কালিপুর, ষাটনল, ছেংগারচর, বদরপুর, রামদাসপুরসহ আরও কয়েকটি এলাকার বেশ কিছু জায়গা অবৈধভাবে দখল করে দোকান ও ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এতে বাঁধটি হুমকিতে রয়েছে।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের জমি দখল করে দোকান নির্মাণ করেছেন উপজেলার ষাটনল এলাকার আবুল কাশেম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু খালি জায়গা পেয়ে দোকান দিয়েছেন। পাউবোর অনুমতি নিতে হয় কি না, তা তিনি জানেন না।

চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী মো. ফখরুল আমিন সিদ্দিকী জানান, এ প্রকল্পের প্রায় ৪শ’ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য মামলা করা হয়েছে। বর্তমানে সকল ধরনের লিজ বন্ধ। তাছাড়া পুরনো লিজও নবায়ন করা হচ্ছে না। চলতি বছর মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের মতলব ব্রীজ থেকে জনতা বাজার পর্যন্ত এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম জানান, পাউবোর বিধিবদ্ধ আইনের বর্তমান সীমাবদ্ধতা অনুযায়ী আমরা আর আগের মতো তাৎক্ষণিকভাবে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারি না। পূর্বে আমরা অভিযোগ পাওয়া মাত্র উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসন থেকে যথাক্রমে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ ফোর্স নিয়ে সাথে সাথে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারতাম। বর্তমানে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ সুপারের কাছ থেকে পুলিশ ফোর্স নিতে হলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পাউবো’র বেদখল হওয়া সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য উচ্ছেদ কার্যক্রমের তালিকা প্রস্তুত করে পাঠাতে হয়। এভাবেই বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হতে সময় লাগে। যে কারণে অবৈধ দখলকৃত সম্পত্তি উদ্ধারে কিছুটা সময় লাগে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন