১১:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪

বোরকা সৌন্দর্য বৃদ্ধি বা ফ্যাশান শো নয়, ইসলামের বিধান অনুযায়ী বোরকা ব্যবহার করতে হবে

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০১:৪০:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৩৫
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

প্রতিদিনের নিউজ:

ইসলামী বিধি মোতাবেক প্রতেক মুসলিম নারীকে পর্দা করতে হবে। পর্দা করা বা বোরকা পরা ফরজ। কিন্তু বর্তমানে বোরকা ফ্যাশান শো হিসেবে পরিনিত হয়েছে। এমন সট ও টাইট ফিট বোরকা পরে,তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সম্পর্কে সব কিছু বুঝা যায় ।
বোরকা পরা হয় তাঁর সৌন্দর্য বৃদ্ধি বা পুরুষকে আকৃষ্ট করার জন্য নয়অ বরন সমাজে বখাটে, লোমপট, উচ্ছৃঙ্খল ও ইপটিজিন হাত থেকে রেহাই পাওয়া জন্য নিজের রুপ লাব্যন পর্দার আড়ালে লুকিয়ে রাখা হয় । ফলে অনেক নারী ধর্ষণ হাত থেকে বেঁচে যায়।
সম্প্রতি সমাজে পরিলক্ষিত হয় এক শ্রেণীর নানি -দাদি ,মা -বোনেরা ধর্ম ভিরু হয়ে পর্দা করে । আর যবুতী নাতনী ও মিয়েকে অবাদে খোলা মেলা চলাফেরা করতে দেয় । বলুন তো? একজন ধর্ষন কারী ঐ বুড়ো দাদি-নানি বা মাকে ধরবে, না ঐ রুপসি মিয়ে ও নাতনিকে ধরবে? বর্তমান সমাজে বোরকাকে অবমান্য করা হচ্ছে। কারন বোরকার ভিতর মাদক দ্রব্য চৌরাচালান , বোরকার ভিতর পরিক্ষার হলে নকল বাজি, বোরকার ভিতর বিনোদন কেন্দ্র গুলোতে তরুন তরুণীর প্রেম বিনোদন, বোরকার ভিতরে যৌন কর্মীদের দৈহিক ব্যবসা ইত্যাদি ।পদার সম্পর্কে প্রথমেই যা বুঝতে হবে তা হচ্ছে, এটি সৌন্দর্য প্রকাশের জন্য নয়; সৌন্দর্য আবৃত রাখার জন্য। এমন বোরকা ব্যবহার করতে হবে, যা এই উদ্দেশ্য পূরণ করে।

আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে বলেছেন-
হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদের, তোমার কন্যাদের ও মুমিনদের নারীদের বলে দাও, তারা যেন তাদের চাদরের একাংশ নিজেদের (মুখের) উপর নামিয়ে দেয়।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-

আল্লাহ তাআলা মুমিনদের নারীদের আদেশ করেছেন তারা যেন কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় মাথা থেকে চাদর টেনে সম্পূর্ণ মুখমন্ডল আবৃত করে, শুধু (চলার জন্য) এক চোখ খোলা রাখে।
ইসমাঈল ইবনে উলাইয়্যা জিলবাবের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একটি চাদর নিলেন এবং ঘোমটার মতো পরে মাথা মুখ ঢেকে ফেললেন। কপাল, নাক ও বাম চোখও ঢাকলেন। ডান চোখ খোলা রাখলেন। এরপর বললেন, এভাবে আমাদেরকে চাদর পরে দেখিয়েছেন ।
‘জিলবাব’ অর্থ এমন বড় চাদর, যা দ্বারা মুখমন্ডল ও পূর্ণ দেহ আবৃত করা যায়।
বোরকার দ্বারা জিলবাবের উদ্দেশ্য উত্তমরূপে পূরণ হয়।]
দ্বীনদার নারীরা আগে থেকেই বোরকায় অভ্যস্ত। নতুনদের মাঝে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা যায় তার কিছু এই-
১. কেউ কেউ এত আঁটোসাটো বোকরা পরেন যে, দেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গের আকার ফুটে উঠে। বলাবাহুল্য, এর দ্বারা বোরকার উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। বরং এ জাতীয় বোরকাও ঐসব পোষাকের
অন্তর্ভুক্ত, যা পরিধান করেও নারী অনাবৃত থাকে।
হাদীস শরীফে এক শ্রেণীর নারীকে খুব কঠিন ভাষায় সাবধান করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, ‘তারা জান্নাতের সুবাস পর্যন্ত পাবে না।’ এরা হচ্ছে ঐ সকল নারী, যারা পোষাক পরেও নগ্ন, যারা (পরপুরুষের প্রতি) আকৃষ্ট ও (পরপুরুষকে) আকষর্ণকারী।। যারা বুখতী উটের হেলানো কুঁজের মতো মাথা বিশিষ্ট।
যারা এত মিহি কাপড় পরে যে, শরীর দেখা যায় কিংবা সংক্ষিপ্ত পোষাক পরিধান করে, যা শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আবৃত করে না তারাই হচ্ছে ‘পোষাক পরিহিতা নগ্ন নারী। তদ্রূপ যারা এত আঁটোসাঁটো কাপড় পরে যে, অঙ্গ-সৌন্দর্য কাপড়ের উপর ফুটে থাকে তাদেরও ভয় আছে এই সাবধান বাণীর মধ্যে পড়ে যাওয়ার। তো কেউ যদি বোরকার নামে এমন পোষাক পরিধান করে, যার উদ্দেশ্য নারীদেহের সৌন্দর্য ও অঙ্গ-সৌন্দর্য প্রদর্শন করা তাহলে এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে?
২. কেউ কেউ শুধু বোরকার নীচের অংশটি পরেন। মাথা ও মুখমন্ডল সম্পূর্ণ অনাবৃত থাকে। আর মাথায় স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহার করলেও মুখমন্ডল খোলা রাখার রেওয়াজ তো ব্যাপক। অনেকে একেই মনে করেন শরীয়তের নিয়ম। এই ভুল ধারণার ব্যাপক বিস্তারের পিছনে প্রধানত দায়ী কিছু প্রতিষ্ঠান ও প্রচার-মাধ্যম। অথচ মুখমন্ডল হচ্ছে দেহের সুন্দরতম অঙ্গ। এটিই যদি পর পুরুষের সামনে আবৃত রাখা না হয় তাহলে পর্দার উদ্দেশ্য কীভাবে পূরণ হবে?
মুখমন্ডলের পর্দা সম্পর্কে গবেষক আলেমগণ বিশদ আলোচনা করেছেন। এখানে সহজ ভাষায় কয়েকটি কথা আরজ করছি।
তার অর্থ আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. ও মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রা., আবীদা সালমানী রাহ. চোখ ব্যতীত পুরো চেহারা ঢেকে রাখা।
ইমাম আবু বকর রাযী আলজাসসাস রাহ. এই আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন- এই আয়াত থেকে প্রমাণ হয়, বাইরে বের হওয়ার সময় পর পুরুষের দৃষ্টি থেকে নারীর মুখমন্ডল আবৃত রাখা এবং পর্দানশীন পবিত্র নারীর বেশ গ্রহণ করা অপরিহার্য। যাতে দুষ্ট লোকেরা তাদের ব্যাপারে উৎসাহী না হয়।
২. হাদীস শরীফে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ইহরামের হালতে মেয়েরা যেন নেকাব ও দস্তানা ব্যবহার না করে।
এ থেকে বোঝা যায়, সাহাবায়ে কেরামের যুগে মেয়েরা তাদের হাত ও মুখ আবৃত রাখতেন। এ কারণে ইহরামের সময় নেকাব ও দস্তানা না পরার আদেশ করতে হয়েছে।
৩. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. তাঁর হজ্বের বিবরণে বলেছেন, সফরের হালতে ইহরামের কারণে তারা নেকাব খোলা রাখতেন, কিন্তু যখন পুরুষরা নিকট দিয়ে অতিক্রম করত তখন তারা মুখমন্ডল আবৃত করে ফেলতেন। তারা চলে যাওয়ার পর নেকাব তুলে ফেলতেন ।
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন-সঠিকতর সিদ্ধান্ত এই যে, নারীর জন্য পরপুরুষের সামনে দুই হাত, দুই পা ও মুখমন্ডল খোলা রাখার অবকাশ নেই ।
এসব বিবরণ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, পর পুরুষের দৃষ্টি থেকে মুখমন্ডল আবৃত রাখতে হবে। ইবনুল কাইয়েম রাহ. বলেন, নারী নামায আদায়ের সময় দুই হাত ও মুখমন্ডল খোলা রাখতে পারেন, কিন্তু এভাবে বাজারে ও লোকের সমাগমস্থলে যাওয়ার অবকাশ নেই।
বর্তমান সময়ের আরব শায়খদের মাঝে শায়খ ইবনে বায রাহ, শায়খ উছাইমীন ও শায়খ ইবনে জিবরীনও একই ফতোয়া দিয়েছেন।

বোরকা যেহেতু বাইরে বের হওয়ার সময়ই পরা হয় তাই বোরকা এমনভাবে পরা চাই যা দ্বারা মুখমন্ডল আবৃত থাকে।
৪. অনেকে কালো কাপড়ের কোট পরেন এবং মাথায় স্কার্ফ ব্যবহার করেন। এই কোটগুলো সাধারণত আঁটোসাটো হয় এবং এর সাথে নেকাব পরা হয় না। তাই এই পোষাক দ্বারাও বোরকার উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। বোরকার দ্বারা পূর্ণ দেহ ও মুখমন্ডল আবৃত করতে হবে। হাত-পাও অনাবৃত রাখা যাবে না।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে মেয়েরা লম্বা ঝুলওয়ালা জামা পরিধান করতেন, এর উদ্দেশ্য ছিল পায়ের পাতা আবৃত রাখা।
এক হাদীসে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পুরুষদের সম্পর্কে বললেন, যারা অহঙ্কার বশত মাটিতে কাপড় টেনে টেনে চলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না। তখন উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রা. মেয়েদের কাপড়ের ঝুল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মেয়েদের ঝুল এক বিঘত লম্বা হতে পারবে। উম্মুল মুমিনীন আরজ করলেন, এতে তো (চলাফেরার সময়) পায়ের পাতা বের হয়ে যাবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে এক হাত ঝুলিয়ে দিবে। এর বেশি নয়।
আলিমগণ বলেছেন, কাপড়ের ঝুল দীর্ঘ রাখার উদ্দেশ্য মোজা দ্বারা পূরণ হয়। এজন্য মোজা ব্যবহার করলে ঝুল দীর্ঘ রাখার প্রয়োজন নেই। পর্দানশীন নারীদের উচিত বাইরে বের হওয়ার সময় মোজা ও দাস্তানা ব্যবহার করা।
৪. কেউ কেউ এত জাকজমকপূর্ণ বোরকা ব্যবহার করেন, যা অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করে। এটা ঠিক নয়। বোরকা সাদাসিধা হওয়া চাই। যে পোষাক নারীর রূপ সৌন্দর্যের আবরণ তাই যদি হয় অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণকারী তাহলে তা কি বোরকার উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়?
আল্লামা আলুসী রা. বলেন, আমি মনে করি, কুরআন মজীদে সৌন্দর্য প্রদর্শনকে নিষিদ্ধ করে যে বিধান দেওয়া হয়েছে এ সময়ের অধিকাংশ বিলাসী নারীদের পোষাক তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তারা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এমন ঝলমলে রেশমের ও সোনা-রূপার কারুকাজ করা বোরকা পরিধান করে, যা মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। এটা তাদের স্বামী ও অভিভাবকের গায়রতহীনতা যে, এভাবে তাদেরকে বাইরে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে থাকে। এটা এখন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।

সারকথা এই যে, আমরা যারা আল্লাহর বিধান পালনের জন্য পর্দা করি তাদেরকে অবশ্যই পূর্ণ পর্দা করতে হবে। হিজাব-নিকাবের যে বিধান কুরআন-সুন্নাহয় আছে তা সমর্পিত চিত্তে মেনে চলতে হবে। এক্ষেত্রে নিজস্ব খেয়ালখুশির কোনো সুযোগ নেই।
সবশেষে এ পর্দার বিষয়ে আমাদের পূর্বসূরীদের একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে আলোচনা সমাপ্ত করব।
উম্মে খাল্লাদ নাম্নী একজন সাহাবিয়ার পুত্র জিহাদে গিয়ে শহীদ হলেন। তার সংবাদ জানার জন্য শহীদ জননী আল্লাহর রাসূলের দরবারে হাজির হলেন। বলাবাহুল্য, মায়ের জন্য সন্তানের মৃত্যুর চেয়ে কঠিন বিষয় আর কিছু নেই। কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলেন, এই কঠিন অবস্থায়ও তিনি পর্দার বিষয়ে পূর্ণ সচেতন। পরপুরুষের সামনে নেকাব দ্বারা মুখমন্ডল আবৃত রাখতে ভুলেননি। জনৈক সাহাবী বিস্ময় প্রকাশ করলে ঐ সাহাবিয়া জবাব দিলেন, আমি আমার পুত্র হারিয়েছি, তবে আমার লজ্জা হারাইনি। আল্লাহ রাববুল আলামীন আমাদের সকলকে লজ্জা হারানোর বিপদ থেকে রক্ষা করুন আমীন।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

বোরকা সৌন্দর্য বৃদ্ধি বা ফ্যাশান শো নয়, ইসলামের বিধান অনুযায়ী বোরকা ব্যবহার করতে হবে

আপডেট সময় : ০১:৪০:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৩
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

প্রতিদিনের নিউজ:

ইসলামী বিধি মোতাবেক প্রতেক মুসলিম নারীকে পর্দা করতে হবে। পর্দা করা বা বোরকা পরা ফরজ। কিন্তু বর্তমানে বোরকা ফ্যাশান শো হিসেবে পরিনিত হয়েছে। এমন সট ও টাইট ফিট বোরকা পরে,তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সম্পর্কে সব কিছু বুঝা যায় ।
বোরকা পরা হয় তাঁর সৌন্দর্য বৃদ্ধি বা পুরুষকে আকৃষ্ট করার জন্য নয়অ বরন সমাজে বখাটে, লোমপট, উচ্ছৃঙ্খল ও ইপটিজিন হাত থেকে রেহাই পাওয়া জন্য নিজের রুপ লাব্যন পর্দার আড়ালে লুকিয়ে রাখা হয় । ফলে অনেক নারী ধর্ষণ হাত থেকে বেঁচে যায়।
সম্প্রতি সমাজে পরিলক্ষিত হয় এক শ্রেণীর নানি -দাদি ,মা -বোনেরা ধর্ম ভিরু হয়ে পর্দা করে । আর যবুতী নাতনী ও মিয়েকে অবাদে খোলা মেলা চলাফেরা করতে দেয় । বলুন তো? একজন ধর্ষন কারী ঐ বুড়ো দাদি-নানি বা মাকে ধরবে, না ঐ রুপসি মিয়ে ও নাতনিকে ধরবে? বর্তমান সমাজে বোরকাকে অবমান্য করা হচ্ছে। কারন বোরকার ভিতর মাদক দ্রব্য চৌরাচালান , বোরকার ভিতর পরিক্ষার হলে নকল বাজি, বোরকার ভিতর বিনোদন কেন্দ্র গুলোতে তরুন তরুণীর প্রেম বিনোদন, বোরকার ভিতরে যৌন কর্মীদের দৈহিক ব্যবসা ইত্যাদি ।পদার সম্পর্কে প্রথমেই যা বুঝতে হবে তা হচ্ছে, এটি সৌন্দর্য প্রকাশের জন্য নয়; সৌন্দর্য আবৃত রাখার জন্য। এমন বোরকা ব্যবহার করতে হবে, যা এই উদ্দেশ্য পূরণ করে।

আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে বলেছেন-
হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদের, তোমার কন্যাদের ও মুমিনদের নারীদের বলে দাও, তারা যেন তাদের চাদরের একাংশ নিজেদের (মুখের) উপর নামিয়ে দেয়।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-

আল্লাহ তাআলা মুমিনদের নারীদের আদেশ করেছেন তারা যেন কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় মাথা থেকে চাদর টেনে সম্পূর্ণ মুখমন্ডল আবৃত করে, শুধু (চলার জন্য) এক চোখ খোলা রাখে।
ইসমাঈল ইবনে উলাইয়্যা জিলবাবের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একটি চাদর নিলেন এবং ঘোমটার মতো পরে মাথা মুখ ঢেকে ফেললেন। কপাল, নাক ও বাম চোখও ঢাকলেন। ডান চোখ খোলা রাখলেন। এরপর বললেন, এভাবে আমাদেরকে চাদর পরে দেখিয়েছেন ।
‘জিলবাব’ অর্থ এমন বড় চাদর, যা দ্বারা মুখমন্ডল ও পূর্ণ দেহ আবৃত করা যায়।
বোরকার দ্বারা জিলবাবের উদ্দেশ্য উত্তমরূপে পূরণ হয়।]
দ্বীনদার নারীরা আগে থেকেই বোরকায় অভ্যস্ত। নতুনদের মাঝে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা যায় তার কিছু এই-
১. কেউ কেউ এত আঁটোসাটো বোকরা পরেন যে, দেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গের আকার ফুটে উঠে। বলাবাহুল্য, এর দ্বারা বোরকার উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। বরং এ জাতীয় বোরকাও ঐসব পোষাকের
অন্তর্ভুক্ত, যা পরিধান করেও নারী অনাবৃত থাকে।
হাদীস শরীফে এক শ্রেণীর নারীকে খুব কঠিন ভাষায় সাবধান করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, ‘তারা জান্নাতের সুবাস পর্যন্ত পাবে না।’ এরা হচ্ছে ঐ সকল নারী, যারা পোষাক পরেও নগ্ন, যারা (পরপুরুষের প্রতি) আকৃষ্ট ও (পরপুরুষকে) আকষর্ণকারী।। যারা বুখতী উটের হেলানো কুঁজের মতো মাথা বিশিষ্ট।
যারা এত মিহি কাপড় পরে যে, শরীর দেখা যায় কিংবা সংক্ষিপ্ত পোষাক পরিধান করে, যা শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আবৃত করে না তারাই হচ্ছে ‘পোষাক পরিহিতা নগ্ন নারী। তদ্রূপ যারা এত আঁটোসাঁটো কাপড় পরে যে, অঙ্গ-সৌন্দর্য কাপড়ের উপর ফুটে থাকে তাদেরও ভয় আছে এই সাবধান বাণীর মধ্যে পড়ে যাওয়ার। তো কেউ যদি বোরকার নামে এমন পোষাক পরিধান করে, যার উদ্দেশ্য নারীদেহের সৌন্দর্য ও অঙ্গ-সৌন্দর্য প্রদর্শন করা তাহলে এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে?
২. কেউ কেউ শুধু বোরকার নীচের অংশটি পরেন। মাথা ও মুখমন্ডল সম্পূর্ণ অনাবৃত থাকে। আর মাথায় স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহার করলেও মুখমন্ডল খোলা রাখার রেওয়াজ তো ব্যাপক। অনেকে একেই মনে করেন শরীয়তের নিয়ম। এই ভুল ধারণার ব্যাপক বিস্তারের পিছনে প্রধানত দায়ী কিছু প্রতিষ্ঠান ও প্রচার-মাধ্যম। অথচ মুখমন্ডল হচ্ছে দেহের সুন্দরতম অঙ্গ। এটিই যদি পর পুরুষের সামনে আবৃত রাখা না হয় তাহলে পর্দার উদ্দেশ্য কীভাবে পূরণ হবে?
মুখমন্ডলের পর্দা সম্পর্কে গবেষক আলেমগণ বিশদ আলোচনা করেছেন। এখানে সহজ ভাষায় কয়েকটি কথা আরজ করছি।
তার অর্থ আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. ও মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রা., আবীদা সালমানী রাহ. চোখ ব্যতীত পুরো চেহারা ঢেকে রাখা।
ইমাম আবু বকর রাযী আলজাসসাস রাহ. এই আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন- এই আয়াত থেকে প্রমাণ হয়, বাইরে বের হওয়ার সময় পর পুরুষের দৃষ্টি থেকে নারীর মুখমন্ডল আবৃত রাখা এবং পর্দানশীন পবিত্র নারীর বেশ গ্রহণ করা অপরিহার্য। যাতে দুষ্ট লোকেরা তাদের ব্যাপারে উৎসাহী না হয়।
২. হাদীস শরীফে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ইহরামের হালতে মেয়েরা যেন নেকাব ও দস্তানা ব্যবহার না করে।
এ থেকে বোঝা যায়, সাহাবায়ে কেরামের যুগে মেয়েরা তাদের হাত ও মুখ আবৃত রাখতেন। এ কারণে ইহরামের সময় নেকাব ও দস্তানা না পরার আদেশ করতে হয়েছে।
৩. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. তাঁর হজ্বের বিবরণে বলেছেন, সফরের হালতে ইহরামের কারণে তারা নেকাব খোলা রাখতেন, কিন্তু যখন পুরুষরা নিকট দিয়ে অতিক্রম করত তখন তারা মুখমন্ডল আবৃত করে ফেলতেন। তারা চলে যাওয়ার পর নেকাব তুলে ফেলতেন ।
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন-সঠিকতর সিদ্ধান্ত এই যে, নারীর জন্য পরপুরুষের সামনে দুই হাত, দুই পা ও মুখমন্ডল খোলা রাখার অবকাশ নেই ।
এসব বিবরণ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, পর পুরুষের দৃষ্টি থেকে মুখমন্ডল আবৃত রাখতে হবে। ইবনুল কাইয়েম রাহ. বলেন, নারী নামায আদায়ের সময় দুই হাত ও মুখমন্ডল খোলা রাখতে পারেন, কিন্তু এভাবে বাজারে ও লোকের সমাগমস্থলে যাওয়ার অবকাশ নেই।
বর্তমান সময়ের আরব শায়খদের মাঝে শায়খ ইবনে বায রাহ, শায়খ উছাইমীন ও শায়খ ইবনে জিবরীনও একই ফতোয়া দিয়েছেন।

বোরকা যেহেতু বাইরে বের হওয়ার সময়ই পরা হয় তাই বোরকা এমনভাবে পরা চাই যা দ্বারা মুখমন্ডল আবৃত থাকে।
৪. অনেকে কালো কাপড়ের কোট পরেন এবং মাথায় স্কার্ফ ব্যবহার করেন। এই কোটগুলো সাধারণত আঁটোসাটো হয় এবং এর সাথে নেকাব পরা হয় না। তাই এই পোষাক দ্বারাও বোরকার উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। বোরকার দ্বারা পূর্ণ দেহ ও মুখমন্ডল আবৃত করতে হবে। হাত-পাও অনাবৃত রাখা যাবে না।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে মেয়েরা লম্বা ঝুলওয়ালা জামা পরিধান করতেন, এর উদ্দেশ্য ছিল পায়ের পাতা আবৃত রাখা।
এক হাদীসে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পুরুষদের সম্পর্কে বললেন, যারা অহঙ্কার বশত মাটিতে কাপড় টেনে টেনে চলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না। তখন উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রা. মেয়েদের কাপড়ের ঝুল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মেয়েদের ঝুল এক বিঘত লম্বা হতে পারবে। উম্মুল মুমিনীন আরজ করলেন, এতে তো (চলাফেরার সময়) পায়ের পাতা বের হয়ে যাবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে এক হাত ঝুলিয়ে দিবে। এর বেশি নয়।
আলিমগণ বলেছেন, কাপড়ের ঝুল দীর্ঘ রাখার উদ্দেশ্য মোজা দ্বারা পূরণ হয়। এজন্য মোজা ব্যবহার করলে ঝুল দীর্ঘ রাখার প্রয়োজন নেই। পর্দানশীন নারীদের উচিত বাইরে বের হওয়ার সময় মোজা ও দাস্তানা ব্যবহার করা।
৪. কেউ কেউ এত জাকজমকপূর্ণ বোরকা ব্যবহার করেন, যা অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করে। এটা ঠিক নয়। বোরকা সাদাসিধা হওয়া চাই। যে পোষাক নারীর রূপ সৌন্দর্যের আবরণ তাই যদি হয় অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণকারী তাহলে তা কি বোরকার উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়?
আল্লামা আলুসী রা. বলেন, আমি মনে করি, কুরআন মজীদে সৌন্দর্য প্রদর্শনকে নিষিদ্ধ করে যে বিধান দেওয়া হয়েছে এ সময়ের অধিকাংশ বিলাসী নারীদের পোষাক তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তারা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এমন ঝলমলে রেশমের ও সোনা-রূপার কারুকাজ করা বোরকা পরিধান করে, যা মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। এটা তাদের স্বামী ও অভিভাবকের গায়রতহীনতা যে, এভাবে তাদেরকে বাইরে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে থাকে। এটা এখন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।

সারকথা এই যে, আমরা যারা আল্লাহর বিধান পালনের জন্য পর্দা করি তাদেরকে অবশ্যই পূর্ণ পর্দা করতে হবে। হিজাব-নিকাবের যে বিধান কুরআন-সুন্নাহয় আছে তা সমর্পিত চিত্তে মেনে চলতে হবে। এক্ষেত্রে নিজস্ব খেয়ালখুশির কোনো সুযোগ নেই।
সবশেষে এ পর্দার বিষয়ে আমাদের পূর্বসূরীদের একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে আলোচনা সমাপ্ত করব।
উম্মে খাল্লাদ নাম্নী একজন সাহাবিয়ার পুত্র জিহাদে গিয়ে শহীদ হলেন। তার সংবাদ জানার জন্য শহীদ জননী আল্লাহর রাসূলের দরবারে হাজির হলেন। বলাবাহুল্য, মায়ের জন্য সন্তানের মৃত্যুর চেয়ে কঠিন বিষয় আর কিছু নেই। কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলেন, এই কঠিন অবস্থায়ও তিনি পর্দার বিষয়ে পূর্ণ সচেতন। পরপুরুষের সামনে নেকাব দ্বারা মুখমন্ডল আবৃত রাখতে ভুলেননি। জনৈক সাহাবী বিস্ময় প্রকাশ করলে ঐ সাহাবিয়া জবাব দিলেন, আমি আমার পুত্র হারিয়েছি, তবে আমার লজ্জা হারাইনি। আল্লাহ রাববুল আলামীন আমাদের সকলকে লজ্জা হারানোর বিপদ থেকে রক্ষা করুন আমীন।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন