০৫:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪

খেজুরের গুড়ে চিনিতে সয়লাব

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ১২:৫১:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ১৫
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মোঃ আব্দুস সালাম:

শীতের আগমনের পরপরই রাজশাহী ও নাটোরসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন গাছিরা খেজুরের রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর খেজুর রস সংগ্রহ করে গুড়ের পাটালি খুরি বা সারা কিনবা নালি বা ঝুলা গুড় তৈরি করেন অনেকেই। গ্রামের ঘরে-ঘরে পিঠা পুলি তৈরিতে ব্যাস্ত থাকেন গৃহিণীরা । মেহমান আপ্যায়ন উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরি হয় ।
তবে অধিক মুনাফা লাভের আশায় এক ধরনের অসাধু গাছীরা খেজুরের গুড়ের সৌন্দর্য বাড়াতে রাসায়নিক দ্রব্য ও লাভবান হতে গণহারে চিনি মেশাচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নেই কোনো তদারকি।
খেজুর রস উৎপাদন ও পাটালি গুড় তৈরিতে উত্তরবঙ্গের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। তুলনামূলক লাভজনক ও চাষ পদ্ধতি সহজ হওয়ায় খেজুর গাছ লাগানোর দিকে এগিয়ে এসেছে অনেকেই। এ ছাড়া ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে এক জেলার লোক অন্য জেলায় এসেও খেজুর গাছ বর্গা নিয়ে রস সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন অনেক চাষি।
উল্লেখ্য রাজশাহী জেলার বাঘা,মনিগাম,বাকরা,নন্দনগাছি,আড়ানী,বাউসা, বানেশ্বর, ঝলমলিয়া, তাহেরপুর ও নাটোর জেলার লালপুর, বড়াইগ্রাম, বাগাতিপাড়া, নলডাঙ্গা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খেজুর গাছের চাষ হয়।
অত এলাকায় সর জমিনে ঘুরে দেখা গেছে অর্থলোভী গুড় উৎপাদনকারীরা এ অঞ্চলের সুস্বাদু গুড়ের ব্যাপক চাহিদাকে পুঁজি করে খেজুর রসের সাথে চিনি মিশিয়ে ভেজাল খেজুর গুড় তৈরি করে তা অবাধে বাজারজাত করছেন। এসব চিনি মেশানো ভেজাল গুড় এখন জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। এ ছাড়া এই ভেজাল গুড় স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র জায়গায় ।

এসব এলাকার গুড়ের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি পাটালি খেজুর গুড় বিক্রি হচ্ছে ১১০টাকা থেকে ১২০ টাকা দরে। এদিকে গুড়ের দাম বেশি চিনির দাম কম হওয়ায় অধেক গুড়ে অর্ধেক চিনি মিশিয়ে বাজার জাত করা হচ্ছে ।
গুড়ের সৌন্দর্য বাড়াতে রসের সাথে মেশানো হচ্ছে হাইড্রোজ, ফিটকারী, চুন ,সরিসার তৈল এমনকি খাবার সোডা পর্যন্ত । এ ছাড়া রস পরিষ্কার করতে দেয়া হচ্ছে বন ঢেঁড়সের নির্যাস, ফিটকারি এবং পাথর চুন। স্বাস্থ্যের জন্য এসব গুড় খতি করক ।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন এসব চিনি, ভেজাল ও কেমিক্যাল মিশ্রিত গুড় শিশুদের লিভার ক্যান্সার ছাড়াও ডায়রিয়া এবং ভবিষ্যতে হৃদরোগসহ মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করতে পারে। গাছিরা ভোরবেলা গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে আসছেন। এরপর মাটির বানানো বিশেষ চুলায় সংগ্রহ করা রস জ্বাল দেয়া হচ্ছে। পাশেই রয়েছে বস্তা বস্তা চিনি। কড়াইয়ে রস জ্বাল দেয়ার পর তা লাল বর্ণ হলেই তাতে চিনি মেশানো হচ্ছে বস্তা ভরা চিনি। কেউ কেউ মেশান সুগার মিল থেকে সংগ্রহ করা চিটাগুড়। চিনিগুলো রসের সাথে মিশে তৈরি হচ্ছে গুড়। এরপর ওই গুড়ে হাইড্রোজ ও ফিটকারি মিশিয়ে গুড়ের রঙ উজ্জ্বল করা হচ্ছে।
গাছিরা স্থানীয় মালিকদের কাছ থেকে খেজুর গাছ লিজ নিয়ে অবাধে এসব ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর ধরেই তারা শীত মওসুমে এসব এলাকায় এসে ভেজাল গুড় তৈরির ব্যবসায় করছেন। চিনি জ্বাল দিলে তা পরিমাণে অনেক বেড়ে যায়। আর শুধু খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করলে পরিমাণে গুড় কম হয়। সে জন্যই অধিকাংশ গুড় উৎপাদনকারী গাছি খেজুরের বেশি লাভের আশায় রসের সাথে চিনি মেশান। চিনি মিশ্রিত গুড় শক্ত এবং কেমিক্যালের কারণে উজ্জ্বল হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা বেশি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান ভেজাল মিশ্রিত গুড় দিয়ে কোনো খাদদ্রব্য তৈরি করে খেলে পেটের পীড়াজনিত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ওই গুড় দিয়ে শিশুদের কোনো খাদ্য তৈরি করে খাওয়ালে শিশুরা ডায়রিয়া, কিডনি, হার্ট, ব্রেন ও লিভার ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

খেজুরের গুড়ে চিনিতে সয়লাব

আপডেট সময় : ১২:৫১:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৩
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মোঃ আব্দুস সালাম:

শীতের আগমনের পরপরই রাজশাহী ও নাটোরসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন গাছিরা খেজুরের রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর খেজুর রস সংগ্রহ করে গুড়ের পাটালি খুরি বা সারা কিনবা নালি বা ঝুলা গুড় তৈরি করেন অনেকেই। গ্রামের ঘরে-ঘরে পিঠা পুলি তৈরিতে ব্যাস্ত থাকেন গৃহিণীরা । মেহমান আপ্যায়ন উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরি হয় ।
তবে অধিক মুনাফা লাভের আশায় এক ধরনের অসাধু গাছীরা খেজুরের গুড়ের সৌন্দর্য বাড়াতে রাসায়নিক দ্রব্য ও লাভবান হতে গণহারে চিনি মেশাচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নেই কোনো তদারকি।
খেজুর রস উৎপাদন ও পাটালি গুড় তৈরিতে উত্তরবঙ্গের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। তুলনামূলক লাভজনক ও চাষ পদ্ধতি সহজ হওয়ায় খেজুর গাছ লাগানোর দিকে এগিয়ে এসেছে অনেকেই। এ ছাড়া ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে এক জেলার লোক অন্য জেলায় এসেও খেজুর গাছ বর্গা নিয়ে রস সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন অনেক চাষি।
উল্লেখ্য রাজশাহী জেলার বাঘা,মনিগাম,বাকরা,নন্দনগাছি,আড়ানী,বাউসা, বানেশ্বর, ঝলমলিয়া, তাহেরপুর ও নাটোর জেলার লালপুর, বড়াইগ্রাম, বাগাতিপাড়া, নলডাঙ্গা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খেজুর গাছের চাষ হয়।
অত এলাকায় সর জমিনে ঘুরে দেখা গেছে অর্থলোভী গুড় উৎপাদনকারীরা এ অঞ্চলের সুস্বাদু গুড়ের ব্যাপক চাহিদাকে পুঁজি করে খেজুর রসের সাথে চিনি মিশিয়ে ভেজাল খেজুর গুড় তৈরি করে তা অবাধে বাজারজাত করছেন। এসব চিনি মেশানো ভেজাল গুড় এখন জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। এ ছাড়া এই ভেজাল গুড় স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র জায়গায় ।

এসব এলাকার গুড়ের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি পাটালি খেজুর গুড় বিক্রি হচ্ছে ১১০টাকা থেকে ১২০ টাকা দরে। এদিকে গুড়ের দাম বেশি চিনির দাম কম হওয়ায় অধেক গুড়ে অর্ধেক চিনি মিশিয়ে বাজার জাত করা হচ্ছে ।
গুড়ের সৌন্দর্য বাড়াতে রসের সাথে মেশানো হচ্ছে হাইড্রোজ, ফিটকারী, চুন ,সরিসার তৈল এমনকি খাবার সোডা পর্যন্ত । এ ছাড়া রস পরিষ্কার করতে দেয়া হচ্ছে বন ঢেঁড়সের নির্যাস, ফিটকারি এবং পাথর চুন। স্বাস্থ্যের জন্য এসব গুড় খতি করক ।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন এসব চিনি, ভেজাল ও কেমিক্যাল মিশ্রিত গুড় শিশুদের লিভার ক্যান্সার ছাড়াও ডায়রিয়া এবং ভবিষ্যতে হৃদরোগসহ মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করতে পারে। গাছিরা ভোরবেলা গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে আসছেন। এরপর মাটির বানানো বিশেষ চুলায় সংগ্রহ করা রস জ্বাল দেয়া হচ্ছে। পাশেই রয়েছে বস্তা বস্তা চিনি। কড়াইয়ে রস জ্বাল দেয়ার পর তা লাল বর্ণ হলেই তাতে চিনি মেশানো হচ্ছে বস্তা ভরা চিনি। কেউ কেউ মেশান সুগার মিল থেকে সংগ্রহ করা চিটাগুড়। চিনিগুলো রসের সাথে মিশে তৈরি হচ্ছে গুড়। এরপর ওই গুড়ে হাইড্রোজ ও ফিটকারি মিশিয়ে গুড়ের রঙ উজ্জ্বল করা হচ্ছে।
গাছিরা স্থানীয় মালিকদের কাছ থেকে খেজুর গাছ লিজ নিয়ে অবাধে এসব ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর ধরেই তারা শীত মওসুমে এসব এলাকায় এসে ভেজাল গুড় তৈরির ব্যবসায় করছেন। চিনি জ্বাল দিলে তা পরিমাণে অনেক বেড়ে যায়। আর শুধু খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করলে পরিমাণে গুড় কম হয়। সে জন্যই অধিকাংশ গুড় উৎপাদনকারী গাছি খেজুরের বেশি লাভের আশায় রসের সাথে চিনি মেশান। চিনি মিশ্রিত গুড় শক্ত এবং কেমিক্যালের কারণে উজ্জ্বল হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা বেশি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান ভেজাল মিশ্রিত গুড় দিয়ে কোনো খাদদ্রব্য তৈরি করে খেলে পেটের পীড়াজনিত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ওই গুড় দিয়ে শিশুদের কোনো খাদ্য তৈরি করে খাওয়ালে শিশুরা ডায়রিয়া, কিডনি, হার্ট, ব্রেন ও লিভার ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন