১০:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০২৪

গোদাগাড়ীতে জনপ্রিয় হচ্ছে পারিবারিক ‘পুষ্টি সবজি বাগান’

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৫:৩৪:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২২
  • / ১৯
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

রাজশাহী (গোদাগাড়ী) সংবাদদাতা

রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার প্রত্যন্ত এক গ্রাম পালপুর। এ গ্রামের কৃষক মো. সাহাবুদ্দিন ১.৫ শতক জমিতে ‘পারিবারিক সবজি পুষ্টি বাগান’ গড়ে তুলেছেন। দেখে মন জুড়িয়ে যায়। তার পারিবারিক সবজি পুষ্টি বাগানে বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ, লালশাক, সবুজ শাক, ওল, কলমিশাক, মিষ্টি আলু শাক, ঢেড়স এবং মাচায় চিচিংগা, বরবট্টি, করলা, শসা, শিম সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেছে।

কৃষক মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, তার বাগানের সবজি একদিকে যেমন তার পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরন করছে অপর দিকে প্রতিবাসিদের মাঝে সবজি বিতরন করে প্র্রতিবেশিদের পুষ্টির চাহিদা তিনি পূরন করছেন। এমনকি অতিরিক্ত শাক সবজি বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তিনি।

চাষি মো. সাহাবুদ্দিনের দেখাদেখি অন্য সব চাষিরাও সবজি বাগান স্থাপন করে নিজের ও পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করছেন। সাহাবুদ্দিনের মতো অনেকেই এই গ্রামে বাড়ির পাশে পতিত জমিতে গড়ে তুলেছেন পরিবারের পুষ্টি চাহিদা সবজি বাগান।

কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি সবজি চাষ শুরু করেন। ঈশ্বরীপুর গ্রামের আবু বাসার দুলাল বলেন, আমার বাড়ির পাশে কিছু জায়গা অনেক দিন যাবৎ পতিত ছিল। সেই পতিত জায়গায় আমি কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সবজি বাগান করেছি। এই বাগান করার পর থেকে আমি বাজার থেকে কোনো শাক-সবজি কিনি নাই। বরং অতিরিক্ত সবজি বাজারে বিক্রি করেছি। আমার সবজি বিষমুক্ত হওয়ায় বাজারে চাহিদাও অনেক বেশি। আমার বাড়ির আশপাশের লোকজনও বাড়ি এসে সবজি কিনে নিয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, আমাদের মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার অতনু সরকার কৃষকদের এই বাগান স্থাপন ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে সব সময় সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের মাধমেই অত্র উপজেলা আজ সবজিতে ভরপুর হতে চলেছে। শুধু উৎপাদন করেই শেষ নয়, নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সুষম সার ব্যবহার, জৈব সার, ছাই, জৈব বালাই নাশক, সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ ফাঁদ ও রাসায়নিক সারের সীমিত ব্যবহারের মাধ্যমে এখানকার কৃষি এগিয়ে চলেছে দূর্বার গতিতে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় জনপ্রিয় হচ্ছে পারিবারিক পুষ্টি বাগান। অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের আওতায় ও ব্যক্তি উদ্যোগে কৃষকরা বাড়ির উঠান ও বাড়ির পাশের খালি জায়গায় সবজি চাষে ঝুঁকছেন। এতে করে একদিকে জোগান দিচ্ছে পারিবারিক পুষ্টির, আরেক দিকে সবজি বিক্রি করে সচ্ছল হচ্ছে দরিদ্র পরিবারগুলো।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না। সেই লক্ষে ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান’ স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করেছে কৃষি বিভাগ। এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রদর্শনী পর্যায়ক্রমে স্থাপন করার কাজ চলছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, প্রত্যেক পরিবারকে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের সবজির বীজ, সার, ফলের চারা, নেট, বীজ সংরক্ষণের পাত্র, বাগানে পানি দেওয়ার ঝাঝরিসহ অন্য সকল উপকরণ বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। পরিত্যক্ত জমিতে কৃষকরা মৌসুমের শুরুতে মুলা, লালশাক, পাটশাক, পুঁইশাক, লাউ, পালংশাক, শিম, ডাঁটা, ধনিয়া ও গিমা কলমি শাকসহ নানা প্রজাতির সবজি চাষ করছেন।

সরকারের বিনামূল্যে সবজি বীজ পেয়ে কৃষকরা বাড়ির উঠান ও বাড়ির পাশের খালি জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির সবজি চাষ করে পরিবারের প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পরও বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয় করছেন।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার অতনু সরকার বলেন, এক ইঞ্চি জমিও খালি রাখা যাবে না। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যারা আছি, যাতে এক ইঞ্চি জমিও খালি পড়ে না থাকে সেই লক্ষ্যে পারিবারিক পুষ্টি বাগান গড়ে তুলতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

যাদের বাড়িতে এক শতাংশ জমি খালি আছে, সেখানে আমরা সবজি বাগান স্থাপন করে দিচ্ছি। তাদের সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এতে কৃষকের নিজের যে পুষ্টি দরকার, তাদের বাগানে উৎপাদন করে সে পুষ্টি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে অধিক যে শাক-সবজি উৎপাদন করছে, সেটা বিক্রি করে বেশকিছু মুনাফাও পাচ্ছে। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকের পাশে সব সময় আছি।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

গোদাগাড়ীতে জনপ্রিয় হচ্ছে পারিবারিক ‘পুষ্টি সবজি বাগান’

আপডেট সময় : ০৫:৩৪:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২২
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

রাজশাহী (গোদাগাড়ী) সংবাদদাতা

রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার প্রত্যন্ত এক গ্রাম পালপুর। এ গ্রামের কৃষক মো. সাহাবুদ্দিন ১.৫ শতক জমিতে ‘পারিবারিক সবজি পুষ্টি বাগান’ গড়ে তুলেছেন। দেখে মন জুড়িয়ে যায়। তার পারিবারিক সবজি পুষ্টি বাগানে বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ, লালশাক, সবুজ শাক, ওল, কলমিশাক, মিষ্টি আলু শাক, ঢেড়স এবং মাচায় চিচিংগা, বরবট্টি, করলা, শসা, শিম সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেছে।

কৃষক মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, তার বাগানের সবজি একদিকে যেমন তার পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরন করছে অপর দিকে প্রতিবাসিদের মাঝে সবজি বিতরন করে প্র্রতিবেশিদের পুষ্টির চাহিদা তিনি পূরন করছেন। এমনকি অতিরিক্ত শাক সবজি বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তিনি।

চাষি মো. সাহাবুদ্দিনের দেখাদেখি অন্য সব চাষিরাও সবজি বাগান স্থাপন করে নিজের ও পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করছেন। সাহাবুদ্দিনের মতো অনেকেই এই গ্রামে বাড়ির পাশে পতিত জমিতে গড়ে তুলেছেন পরিবারের পুষ্টি চাহিদা সবজি বাগান।

কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি সবজি চাষ শুরু করেন। ঈশ্বরীপুর গ্রামের আবু বাসার দুলাল বলেন, আমার বাড়ির পাশে কিছু জায়গা অনেক দিন যাবৎ পতিত ছিল। সেই পতিত জায়গায় আমি কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সবজি বাগান করেছি। এই বাগান করার পর থেকে আমি বাজার থেকে কোনো শাক-সবজি কিনি নাই। বরং অতিরিক্ত সবজি বাজারে বিক্রি করেছি। আমার সবজি বিষমুক্ত হওয়ায় বাজারে চাহিদাও অনেক বেশি। আমার বাড়ির আশপাশের লোকজনও বাড়ি এসে সবজি কিনে নিয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, আমাদের মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার অতনু সরকার কৃষকদের এই বাগান স্থাপন ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে সব সময় সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের মাধমেই অত্র উপজেলা আজ সবজিতে ভরপুর হতে চলেছে। শুধু উৎপাদন করেই শেষ নয়, নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সুষম সার ব্যবহার, জৈব সার, ছাই, জৈব বালাই নাশক, সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ ফাঁদ ও রাসায়নিক সারের সীমিত ব্যবহারের মাধ্যমে এখানকার কৃষি এগিয়ে চলেছে দূর্বার গতিতে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় জনপ্রিয় হচ্ছে পারিবারিক পুষ্টি বাগান। অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের আওতায় ও ব্যক্তি উদ্যোগে কৃষকরা বাড়ির উঠান ও বাড়ির পাশের খালি জায়গায় সবজি চাষে ঝুঁকছেন। এতে করে একদিকে জোগান দিচ্ছে পারিবারিক পুষ্টির, আরেক দিকে সবজি বিক্রি করে সচ্ছল হচ্ছে দরিদ্র পরিবারগুলো।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না। সেই লক্ষে ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান’ স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করেছে কৃষি বিভাগ। এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রদর্শনী পর্যায়ক্রমে স্থাপন করার কাজ চলছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, প্রত্যেক পরিবারকে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের সবজির বীজ, সার, ফলের চারা, নেট, বীজ সংরক্ষণের পাত্র, বাগানে পানি দেওয়ার ঝাঝরিসহ অন্য সকল উপকরণ বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। পরিত্যক্ত জমিতে কৃষকরা মৌসুমের শুরুতে মুলা, লালশাক, পাটশাক, পুঁইশাক, লাউ, পালংশাক, শিম, ডাঁটা, ধনিয়া ও গিমা কলমি শাকসহ নানা প্রজাতির সবজি চাষ করছেন।

সরকারের বিনামূল্যে সবজি বীজ পেয়ে কৃষকরা বাড়ির উঠান ও বাড়ির পাশের খালি জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির সবজি চাষ করে পরিবারের প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পরও বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয় করছেন।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার অতনু সরকার বলেন, এক ইঞ্চি জমিও খালি রাখা যাবে না। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যারা আছি, যাতে এক ইঞ্চি জমিও খালি পড়ে না থাকে সেই লক্ষ্যে পারিবারিক পুষ্টি বাগান গড়ে তুলতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

যাদের বাড়িতে এক শতাংশ জমি খালি আছে, সেখানে আমরা সবজি বাগান স্থাপন করে দিচ্ছি। তাদের সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এতে কৃষকের নিজের যে পুষ্টি দরকার, তাদের বাগানে উৎপাদন করে সে পুষ্টি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে অধিক যে শাক-সবজি উৎপাদন করছে, সেটা বিক্রি করে বেশকিছু মুনাফাও পাচ্ছে। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকের পাশে সব সময় আছি।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন