১২:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

সিদ্ধিরগঞ্জে রাজউকের অভিযান ক্ষুব্ধ ভবন মালিকরা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় : ০৫:৩০:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ মে ২০২৪
  • / ৫৮
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ১২ তলা বিশিষ্ট সিটি টাওয়ার নামে একটি বহুতল ভবনের বর্ধিত অংশ ভেঙে ভবনটি সিলগালা করে দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। একই সময় অপর দুটি ভবন মালিককে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

রবিবার (৫ মে) দুপুর দেড়টায় সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর এলাকায় রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মনির হোসেন হাওলাদারের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। তবে ভবন মালিকদের অভিযোগ রাজউক কর্মকর্তাদের দাবিকৃত উৎকোচ না দেয়ায় বিনা নোটিশে অভিযান চালিয়ে ভাঙচুর ও জরিমানা করা হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরেই চলছে রাজউক কর্মকর্তাদের এসব বাণিজ্য। ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন ভবন মালিকরা।

অভিযানে উপস্থিত রাজউকের জোন-৬ এর ৩ এর অথরাইজড অফিসার মো. রাজিবুল ইসলাম বলেন, সিটি টাওয়ারটি আবাসিক ভবন করার অনুমতি নিয়ে বাণিজ্যিক করা হয়েছে। তাছাড়া নকশা বহির্ভুত ভাবে ভবনের সামনের অংশ বর্ধিত করা হয়েছে। ফলে বর্ধিত অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভবনটি সিলগালা করা হয়েছে।

রাজউকের জোন-৭ এর পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মনির হোসেন হাওলাদার বলেন, নকশা বহির্ভূতভাবে ভবন নির্মাণ করা সিটি টাওয়ারের বার্ধিত অংশ উচ্ছেদ করা হয়েছে। একই অভিযোগে জাকির হোসেন নামে একজন বাড়ির মালিককে ১ লাখ ও নূরুল ইসলাম নামে আরেকজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বর্ধিত অংশ বাড়ির মালিক নিজ উদ্যোগে ভেঙে ফেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

অভিযান বিষয়ে বাড়ির মালিকরা বলেছেন ভিন্ন কথা। সিটি টাওয়ারের একাধিক মালিকদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনুচ্ছিক দুজন বলেন, রাজউকের অনুমতি নিয়েই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখনো কাজ চলমান রয়েছে।

রাজউক কর্মকর্তারা তাদের অফিসে ডেকে নিয়ে মোটা অংকের অর্থ দাবি করেন। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে অপারাগতা প্রকাশ করায় এ অভিযান চালিয়ে ভবনের আংশিক ভাঙচুর ও সিলগালা করে অফিসে গিয়ে দেখা করতে বলেছেন। ভবনটি নির্মাণ কাজ শুরু করার পর থেকে এপর্যন্ত তিনবার অভিযান চালিয়েছে রাজউক। প্রতিবারই অভিযান চালানোর আগে তাদের
সাইনবোর্ডস্থ অফিসে ডেকে নিয়ে অর্থ দাবি করে। অর্থ দিতে রাজি না হওয়ায় অভিযান চালিয়ে আংশিক ভাঙচুর করে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে অফিসে গিয়ে তাদের দাবিকৃত টাকা দিয়ে ভাঙা অংশ মেরামত করা হয়। এবারও একই কৌশল করেছেন রাজউক কর্মকর্তারা।

একই অভিযোগ জানান নূরুল ইসলামের বাড়ির ভাড়াটিয়া শিবলু। তিনি বলেন, বাড়ির মালিক নূরুল ইসলাম ব্রাহ্মনবাড়িয়া থাকেন। গত শনিবার রাজউকের ৩ জন কর্মকর্তা এসে বাড়ির মালিকের নাম্বার নিয়ে ফোন করে অফিসে গিয়ে দেখা করতে বলেন। তিনি দেখা না করায় বিনা নোটিশে অভিযান চালিয়ে অর্ধেক সিঁড়ি ভেঙে দিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।

অপর বাড়ির মালিক জাকির হোসেন কোন কথা বলতে রাজি না হলেও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জরিমানার ১ লাখ টাকা দিয়ে দিয়েছে। তাদের সঙ্গে ঝামেলা করলে বিপদ আরো বাড়বে। শুধু তারাই নয় এমন অভিযোগ বহু ভবন মালিকের। টাকা না দিলেই অভিযান চালিয়ে ভবন ভাঙচুর। পরে টাকা দিয়ে করতে হয় মেরামত।

গত ৬ মাসে অন্তত ২ শতাধিক ভবনে আংশিক ভাঙচুর অভিযান চালিয়েছে রাজউক। সবগুলো ভবনই পরে আগের অবস্থান ঠিক রেখেই মেরামত করা হয়েছে রাজউককে ম্যানেজ করে।

রাজউকের অথরাইজড অফিসার মো. রাজিবুল ইসলাম বাড়ির মালিকদের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করলেও বিগত দিনে যেসব ভবনে অভিযান চালিয়ে বর্ধিত অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছিল, তা আবার কি করে পুন:নির্মাণ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

সিদ্ধিরগঞ্জে রাজউকের অভিযান ক্ষুব্ধ ভবন মালিকরা

আপডেট সময় : ০৫:৩০:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ মে ২০২৪
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ১২ তলা বিশিষ্ট সিটি টাওয়ার নামে একটি বহুতল ভবনের বর্ধিত অংশ ভেঙে ভবনটি সিলগালা করে দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। একই সময় অপর দুটি ভবন মালিককে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

রবিবার (৫ মে) দুপুর দেড়টায় সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর এলাকায় রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মনির হোসেন হাওলাদারের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। তবে ভবন মালিকদের অভিযোগ রাজউক কর্মকর্তাদের দাবিকৃত উৎকোচ না দেয়ায় বিনা নোটিশে অভিযান চালিয়ে ভাঙচুর ও জরিমানা করা হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরেই চলছে রাজউক কর্মকর্তাদের এসব বাণিজ্য। ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন ভবন মালিকরা।

অভিযানে উপস্থিত রাজউকের জোন-৬ এর ৩ এর অথরাইজড অফিসার মো. রাজিবুল ইসলাম বলেন, সিটি টাওয়ারটি আবাসিক ভবন করার অনুমতি নিয়ে বাণিজ্যিক করা হয়েছে। তাছাড়া নকশা বহির্ভুত ভাবে ভবনের সামনের অংশ বর্ধিত করা হয়েছে। ফলে বর্ধিত অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভবনটি সিলগালা করা হয়েছে।

রাজউকের জোন-৭ এর পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মনির হোসেন হাওলাদার বলেন, নকশা বহির্ভূতভাবে ভবন নির্মাণ করা সিটি টাওয়ারের বার্ধিত অংশ উচ্ছেদ করা হয়েছে। একই অভিযোগে জাকির হোসেন নামে একজন বাড়ির মালিককে ১ লাখ ও নূরুল ইসলাম নামে আরেকজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বর্ধিত অংশ বাড়ির মালিক নিজ উদ্যোগে ভেঙে ফেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

অভিযান বিষয়ে বাড়ির মালিকরা বলেছেন ভিন্ন কথা। সিটি টাওয়ারের একাধিক মালিকদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনুচ্ছিক দুজন বলেন, রাজউকের অনুমতি নিয়েই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখনো কাজ চলমান রয়েছে।

রাজউক কর্মকর্তারা তাদের অফিসে ডেকে নিয়ে মোটা অংকের অর্থ দাবি করেন। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে অপারাগতা প্রকাশ করায় এ অভিযান চালিয়ে ভবনের আংশিক ভাঙচুর ও সিলগালা করে অফিসে গিয়ে দেখা করতে বলেছেন। ভবনটি নির্মাণ কাজ শুরু করার পর থেকে এপর্যন্ত তিনবার অভিযান চালিয়েছে রাজউক। প্রতিবারই অভিযান চালানোর আগে তাদের
সাইনবোর্ডস্থ অফিসে ডেকে নিয়ে অর্থ দাবি করে। অর্থ দিতে রাজি না হওয়ায় অভিযান চালিয়ে আংশিক ভাঙচুর করে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে অফিসে গিয়ে তাদের দাবিকৃত টাকা দিয়ে ভাঙা অংশ মেরামত করা হয়। এবারও একই কৌশল করেছেন রাজউক কর্মকর্তারা।

একই অভিযোগ জানান নূরুল ইসলামের বাড়ির ভাড়াটিয়া শিবলু। তিনি বলেন, বাড়ির মালিক নূরুল ইসলাম ব্রাহ্মনবাড়িয়া থাকেন। গত শনিবার রাজউকের ৩ জন কর্মকর্তা এসে বাড়ির মালিকের নাম্বার নিয়ে ফোন করে অফিসে গিয়ে দেখা করতে বলেন। তিনি দেখা না করায় বিনা নোটিশে অভিযান চালিয়ে অর্ধেক সিঁড়ি ভেঙে দিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।

অপর বাড়ির মালিক জাকির হোসেন কোন কথা বলতে রাজি না হলেও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জরিমানার ১ লাখ টাকা দিয়ে দিয়েছে। তাদের সঙ্গে ঝামেলা করলে বিপদ আরো বাড়বে। শুধু তারাই নয় এমন অভিযোগ বহু ভবন মালিকের। টাকা না দিলেই অভিযান চালিয়ে ভবন ভাঙচুর। পরে টাকা দিয়ে করতে হয় মেরামত।

গত ৬ মাসে অন্তত ২ শতাধিক ভবনে আংশিক ভাঙচুর অভিযান চালিয়েছে রাজউক। সবগুলো ভবনই পরে আগের অবস্থান ঠিক রেখেই মেরামত করা হয়েছে রাজউককে ম্যানেজ করে।

রাজউকের অথরাইজড অফিসার মো. রাজিবুল ইসলাম বাড়ির মালিকদের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করলেও বিগত দিনে যেসব ভবনে অভিযান চালিয়ে বর্ধিত অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছিল, তা আবার কি করে পুন:নির্মাণ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন