০৩:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

ঝুঁকিপূর্ণ রেল সেতু দিয়েই চলছে ট্রেন, আতঙ্কে যাত্রীরা

রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা :
  • আপডেট সময় : ০৮:২৩:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪
  • / ৩২
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা :

ঢাকা-মোহনগঞ্জ রেলপথের ঠাকুরাকোনা এলাকায় ধনাইখালী নদীর উপর নির্মিত রেল সেতুটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
জেলার ঠাকুরোকোনা এলাকায় ধনাইখালী নদীর উপর নির্মিত এই রেলসেতুটি দিয়ে মোহনগঞ্জ-ময়মনসিংহ-ঢাকা লাইনে ২টি আন্তনগর (হাওর ও মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস), ১টি কমিউটার (মহুয়া কমিউটার) এবং মোহনগঞ্জ-বারহাট্টা-ময়মনসিংহ লাইনে দুটি লোকাল ট্রেন চলাচল করে।
স্বাধীনতার পর রেল সেতুটি সংস্কার করে রেল চলাচল স্বাভাবিক করা হলেও স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও সেতুটির যথাযথ সংস্কার না করায় তা হয়ে পড়েছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সেতুর পিলারের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। খসে পড়ছে পিলারের ইট। বর্তমানে সেতুটির উপর দিয়ে কোন সংস্কার ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন। ফলে যে কোনো মুর্হুতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন যাত্রীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।
জানা গেছে, ১৯২৭ সালে বৃটিশ আমলে ঠাকুরাকোণার রেল সেতু নির্মিত হয়। ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিধ্বস্ত হওয়ায় সে সময় সেতুটির আংশিক মেরামত করা হয়। এর পর থেকে জোড়া তালি দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে চলছে ট্রেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুটির বিভিন্ন স্থানে নষ্ট হয়ে গেছে স্লিপার, নেই বিভিন্ন জয়েন্টের নাট, লাইনে নেই ক্লিপ-হুক ও ফিশপ্লেটও। সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রেলসেতুটির ১২৮টি স্লিপারের মধ্যে অধিকাংশ স্লিপার জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। অনেক স্লিপার ভেঙে নষ্ট হয়ে খসে পড়ছে। স্লিপারের নাটবল্টু নেই বহু জায়গায়। লাইন ধরে রাখার জন্য অনেক জায়গায় স্লিপারগুলোর হুকও নেই। শতবর্ষী রেলসেতুটি সংস্কারে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর।
ঠাকুরাকোণা এলাকার রেল সেতুটির পিলারে ফাটল দেখা দেওয়ায় যেকোনো সময় ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। বর্তমানে রেল পারাপারের সময় সেতুতে কম্পনের সৃষ্টি হওয়ায় আতংকে রয়েছেন আশপাশের লোকজন।
মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী হাওর এক্সপ্রেসের যাত্রী হাফিজুর ইসলাম বলেন, ‘এই রেল ব্রিজের ওপর আসা মাত্রই সব যাত্রী আতঙ্কে থাকেন, সাথে সৃষ্টিকর্তার দোয়া চান যেন কোনো রকম দুর্ঘটনা ছাড়াই এই ব্রিজটি পার হওয়া যায়। যাত্রীদের এ আতঙ্ক দূর করার জন্য দ্রুত ব্রিজটি সংস্কার প্রয়োজন।’

মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের যাত্রী রাবেয়া আক্তার বলেন, ‘সব যাত্রী এ রেল ব্রিজটি ভয়ের মধ্যে পাড়ি দেন। দেশে অনেক ব্রিজ সংষ্কার হলেও কেবল এ ব্রিজটিই অবহেলিত রয়ে গেছে এমনকি সংষ্কার পর্যন্ত হয়নি।’
দত্তগ্রাম এলাকার বাসিন্দা সজল সরকার জানান, রেল সেতুটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কিছুদিন পর পর রেল লাইন সংস্কার হলেও রেল সেতুটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে যেকোনো দিন বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দা রহিজ উদ্দিন বলেন, ‘১৯৫২ সালে ঠাকুরোকোনা স্টেশন থেকে এই সেতু দিয়ে নানাবাড়ি মোহনগঞ্জ যেতাম। তখন বাস-ট্রাকের কোন রাস্তা ছিল না। তাই রেলই ছিল একমাত্র ভরসা, কিন্তু এখন সেতুটির জরাজীর্ণ অবস্থা দেখলে কষ্ট লাগে। তাই দ্রুত সেতুটির প্রয়োজনীয় সংস্কার করার দাবি জানাই।’
নেত্রকোনা বড় স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো: রফিক উদ্দিন, সেতু নিমার্ণ ও সংস্কার করার বিষয়টি দেখার দায়িত্ব রেলের প্রকৌশল বিভাগের। আমরা শুধু পরিবহন সেক্টর দেখি। এবিষয়ে আমাদের কিছুই করার নেই।
এ ব্যাপারে বারহাট্টা রেল স্টেশন মাস্টার গোলাম রব্বানীর সাথে কথা বললে তিনি তিনি বলেন, রেলসেতু সংস্কার ও নিমার্ণ করার বিষয়টি দেখার দায়িত্ব রেলের প্রকৌশল বিভাগের। দ্রুত সেতুটির সংস্কার না হলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
বাংলাদেশ রেলওয়ের ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রকৌশলীরা বলছেন, ময়মনসিংহ-বারহাট্টা-মোহনগঞ্জ রেললাইনের ঠাকুরোকোণা এলাকার রেলসেতুটি ঝুঁকিতে থাকায় এর সংস্কার করা প্রয়োজন। তবে চলতি বছর ঠিকাদার দিয়ে সংস্কার করার মতো সুযোগ নেই। আগামী অর্থ বছরে সংস্কার করা যেতে পারে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

ঝুঁকিপূর্ণ রেল সেতু দিয়েই চলছে ট্রেন, আতঙ্কে যাত্রীরা

আপডেট সময় : ০৮:২৩:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা :

ঢাকা-মোহনগঞ্জ রেলপথের ঠাকুরাকোনা এলাকায় ধনাইখালী নদীর উপর নির্মিত রেল সেতুটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
জেলার ঠাকুরোকোনা এলাকায় ধনাইখালী নদীর উপর নির্মিত এই রেলসেতুটি দিয়ে মোহনগঞ্জ-ময়মনসিংহ-ঢাকা লাইনে ২টি আন্তনগর (হাওর ও মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস), ১টি কমিউটার (মহুয়া কমিউটার) এবং মোহনগঞ্জ-বারহাট্টা-ময়মনসিংহ লাইনে দুটি লোকাল ট্রেন চলাচল করে।
স্বাধীনতার পর রেল সেতুটি সংস্কার করে রেল চলাচল স্বাভাবিক করা হলেও স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও সেতুটির যথাযথ সংস্কার না করায় তা হয়ে পড়েছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সেতুর পিলারের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। খসে পড়ছে পিলারের ইট। বর্তমানে সেতুটির উপর দিয়ে কোন সংস্কার ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন। ফলে যে কোনো মুর্হুতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন যাত্রীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।
জানা গেছে, ১৯২৭ সালে বৃটিশ আমলে ঠাকুরাকোণার রেল সেতু নির্মিত হয়। ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিধ্বস্ত হওয়ায় সে সময় সেতুটির আংশিক মেরামত করা হয়। এর পর থেকে জোড়া তালি দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে চলছে ট্রেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুটির বিভিন্ন স্থানে নষ্ট হয়ে গেছে স্লিপার, নেই বিভিন্ন জয়েন্টের নাট, লাইনে নেই ক্লিপ-হুক ও ফিশপ্লেটও। সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রেলসেতুটির ১২৮টি স্লিপারের মধ্যে অধিকাংশ স্লিপার জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। অনেক স্লিপার ভেঙে নষ্ট হয়ে খসে পড়ছে। স্লিপারের নাটবল্টু নেই বহু জায়গায়। লাইন ধরে রাখার জন্য অনেক জায়গায় স্লিপারগুলোর হুকও নেই। শতবর্ষী রেলসেতুটি সংস্কারে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর।
ঠাকুরাকোণা এলাকার রেল সেতুটির পিলারে ফাটল দেখা দেওয়ায় যেকোনো সময় ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। বর্তমানে রেল পারাপারের সময় সেতুতে কম্পনের সৃষ্টি হওয়ায় আতংকে রয়েছেন আশপাশের লোকজন।
মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী হাওর এক্সপ্রেসের যাত্রী হাফিজুর ইসলাম বলেন, ‘এই রেল ব্রিজের ওপর আসা মাত্রই সব যাত্রী আতঙ্কে থাকেন, সাথে সৃষ্টিকর্তার দোয়া চান যেন কোনো রকম দুর্ঘটনা ছাড়াই এই ব্রিজটি পার হওয়া যায়। যাত্রীদের এ আতঙ্ক দূর করার জন্য দ্রুত ব্রিজটি সংস্কার প্রয়োজন।’

মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের যাত্রী রাবেয়া আক্তার বলেন, ‘সব যাত্রী এ রেল ব্রিজটি ভয়ের মধ্যে পাড়ি দেন। দেশে অনেক ব্রিজ সংষ্কার হলেও কেবল এ ব্রিজটিই অবহেলিত রয়ে গেছে এমনকি সংষ্কার পর্যন্ত হয়নি।’
দত্তগ্রাম এলাকার বাসিন্দা সজল সরকার জানান, রেল সেতুটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কিছুদিন পর পর রেল লাইন সংস্কার হলেও রেল সেতুটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে যেকোনো দিন বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দা রহিজ উদ্দিন বলেন, ‘১৯৫২ সালে ঠাকুরোকোনা স্টেশন থেকে এই সেতু দিয়ে নানাবাড়ি মোহনগঞ্জ যেতাম। তখন বাস-ট্রাকের কোন রাস্তা ছিল না। তাই রেলই ছিল একমাত্র ভরসা, কিন্তু এখন সেতুটির জরাজীর্ণ অবস্থা দেখলে কষ্ট লাগে। তাই দ্রুত সেতুটির প্রয়োজনীয় সংস্কার করার দাবি জানাই।’
নেত্রকোনা বড় স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো: রফিক উদ্দিন, সেতু নিমার্ণ ও সংস্কার করার বিষয়টি দেখার দায়িত্ব রেলের প্রকৌশল বিভাগের। আমরা শুধু পরিবহন সেক্টর দেখি। এবিষয়ে আমাদের কিছুই করার নেই।
এ ব্যাপারে বারহাট্টা রেল স্টেশন মাস্টার গোলাম রব্বানীর সাথে কথা বললে তিনি তিনি বলেন, রেলসেতু সংস্কার ও নিমার্ণ করার বিষয়টি দেখার দায়িত্ব রেলের প্রকৌশল বিভাগের। দ্রুত সেতুটির সংস্কার না হলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
বাংলাদেশ রেলওয়ের ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রকৌশলীরা বলছেন, ময়মনসিংহ-বারহাট্টা-মোহনগঞ্জ রেললাইনের ঠাকুরোকোণা এলাকার রেলসেতুটি ঝুঁকিতে থাকায় এর সংস্কার করা প্রয়োজন। তবে চলতি বছর ঠিকাদার দিয়ে সংস্কার করার মতো সুযোগ নেই। আগামী অর্থ বছরে সংস্কার করা যেতে পারে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন