০৪:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে আলম

ইয়াছিন আলী ইমন :
  • আপডেট সময় : ০৫:৪১:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ ২০২৪
  • / ৪৯
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ইয়াছিন আলী ইমন :

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার আলম মিয়া (১৬)। পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে পরীক্ষা শুরুর এক সপ্তাহ আগে মাঝেমধ্যেই তার মাথায় সমস্যা দেখা দিলে ব্যবস্থা নেয় তার পরিবার। আলম মিয়া উপজেলার তিলাই ইউনিয়নের পশ্চিমছাট গোপালপুর গ্রামের আব্দুল আলিমের ছেলে।
সে তিলাই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। নেহাল উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। অথচ কিছু দিন আগেও সে ছিল একজন সুস্থ স্বাভাবিক কিশোর। সবকিছুই ছিল ঠিক ঠাক নিয়মিত স্কুলে যাওয়ার পাশাপাশি আটোরিকশা চালিয়ে পরিবারকে সহযোগিতা করতেন সে।
এসএসসি পরিক্ষার্থী আলম মিয়ার দাদা জসীম উদ্দিন জানান, এসএসসি পরীক্ষা শুরুর এক সপ্তাহ আগে তার বাবা আব্দুল আলিম আটো চালিয়ে ঘটনার দিন দুপুরে খাবারের জন্য বাড়িতে আসেন। পরে নাতি আলম মিয়া ধামের হাট বাজার থেকে যাত্রী নিয়ে ভুরুঙ্গামারী বাসস্ট্যান্ডে যায়। সেখানে যাত্রী নামিয়ে অন্য যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করার সময় অপরিচিত ৪ ব্যক্তি এসে সোনাহাট স্থলবন্দর যাবার জন্য ৪০০ টাকায় ভাড়া চুক্তি করে। এ সময় ওই ৪ ব্যক্তি কৌশলে অটোচালক আলম মিয়াকে একটি সমুচা খেতে দেয়। সমুচা খাবার একটু পরেই সে অসংলগ্ন আচরণ করতে থাকে। এ অবস্থা দেখে অন্যান্য আটোচালকরা এগিয়ে এলে চক্রটি কৌশলে পালিয়ে যায়। পরে একজন অটোচালক অটোসহ আলমকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। ওই অটো চালকের কাছে তিনি এই ঘটনা শুনেছেন বলে জানান আলম মিয়ার দাদা। তবে ধারণা করা হচ্ছে, অটো চোর চক্রের সদস্যরা অটোরিকশাটি চুরি করার উদ্দেশ্যে সমুচার মধ্যে অজ্ঞান করার কোন মেডিসিন মিশিয়ে তাকে খাইয়েছে। কিন্তু মেডিসিনের পরিমাণ অতিরিক্ত হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার পর থেকে আলম মিয়ার মস্তিস্ক বিকৃতি দেখা দেয়। মাঝে মাঝে স্মৃতি শক্তি ফিরে পেলেও এবং স্বাভাবিক আচরণ করলেও অধিকাংশ সময় সে পাগলামি করছে। এছাড়াও বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলে আর বাড়িতে ফিরে না। বিভিন্ন জায়গায় রাত্রি যাপন করে। এ কারণেই তার পরিবার পায়ে শিকল বেঁধে আটকে রাখছে তাকে।
আলম মিয়ার বাবা আব্দুল আলিম জানান, দিনের বেলা এক পায়ে শিকল বেঁধে রাখা হয়। রাতে হাতে ও পায়ে শিকল বেঁধে বিছানায় শুইয়ে রাখা হয়। এর মধ্যে একবার রংপুরে নিয়েছি, ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খাচ্ছে। কিন্তু তারপরও পাগলামিটা কমছে না।
তিনি আরও বলেন, টাকার জন্য উন্নত চিকিৎসা দিতে পারছি না। আমাকে ও ওর মাকে আলম কোনভাবেই সহ্য করতে পারে না। তাই সবসময় দাদুকেই তার সঙ্গ দিতে হয়।
ওই পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব হারুন উর রশীদ জানান, ছেলেটি অসুস্থ হবার কারণে তাকে একটি আলাদা কক্ষে বসিয়ে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। খাতায় লিখলেও মাঝে মাঝে চিল্লাচিল্লি করে, অশান্ত হয়ে যায় এবং লিখতে চায় না।
এ বিষয়ে ভুরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এএসএম সায়েম জানান, ছেলেটির সঙ্গে কথা বলেছি, আমার মনে হয় সে মানসিক সমস্যায় ভুগছে। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় সে ভালো হতে পারে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে আলম

আপডেট সময় : ০৫:৪১:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ ২০২৪
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ইয়াছিন আলী ইমন :

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার আলম মিয়া (১৬)। পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে পরীক্ষা শুরুর এক সপ্তাহ আগে মাঝেমধ্যেই তার মাথায় সমস্যা দেখা দিলে ব্যবস্থা নেয় তার পরিবার। আলম মিয়া উপজেলার তিলাই ইউনিয়নের পশ্চিমছাট গোপালপুর গ্রামের আব্দুল আলিমের ছেলে।
সে তিলাই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। নেহাল উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। অথচ কিছু দিন আগেও সে ছিল একজন সুস্থ স্বাভাবিক কিশোর। সবকিছুই ছিল ঠিক ঠাক নিয়মিত স্কুলে যাওয়ার পাশাপাশি আটোরিকশা চালিয়ে পরিবারকে সহযোগিতা করতেন সে।
এসএসসি পরিক্ষার্থী আলম মিয়ার দাদা জসীম উদ্দিন জানান, এসএসসি পরীক্ষা শুরুর এক সপ্তাহ আগে তার বাবা আব্দুল আলিম আটো চালিয়ে ঘটনার দিন দুপুরে খাবারের জন্য বাড়িতে আসেন। পরে নাতি আলম মিয়া ধামের হাট বাজার থেকে যাত্রী নিয়ে ভুরুঙ্গামারী বাসস্ট্যান্ডে যায়। সেখানে যাত্রী নামিয়ে অন্য যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করার সময় অপরিচিত ৪ ব্যক্তি এসে সোনাহাট স্থলবন্দর যাবার জন্য ৪০০ টাকায় ভাড়া চুক্তি করে। এ সময় ওই ৪ ব্যক্তি কৌশলে অটোচালক আলম মিয়াকে একটি সমুচা খেতে দেয়। সমুচা খাবার একটু পরেই সে অসংলগ্ন আচরণ করতে থাকে। এ অবস্থা দেখে অন্যান্য আটোচালকরা এগিয়ে এলে চক্রটি কৌশলে পালিয়ে যায়। পরে একজন অটোচালক অটোসহ আলমকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। ওই অটো চালকের কাছে তিনি এই ঘটনা শুনেছেন বলে জানান আলম মিয়ার দাদা। তবে ধারণা করা হচ্ছে, অটো চোর চক্রের সদস্যরা অটোরিকশাটি চুরি করার উদ্দেশ্যে সমুচার মধ্যে অজ্ঞান করার কোন মেডিসিন মিশিয়ে তাকে খাইয়েছে। কিন্তু মেডিসিনের পরিমাণ অতিরিক্ত হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার পর থেকে আলম মিয়ার মস্তিস্ক বিকৃতি দেখা দেয়। মাঝে মাঝে স্মৃতি শক্তি ফিরে পেলেও এবং স্বাভাবিক আচরণ করলেও অধিকাংশ সময় সে পাগলামি করছে। এছাড়াও বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলে আর বাড়িতে ফিরে না। বিভিন্ন জায়গায় রাত্রি যাপন করে। এ কারণেই তার পরিবার পায়ে শিকল বেঁধে আটকে রাখছে তাকে।
আলম মিয়ার বাবা আব্দুল আলিম জানান, দিনের বেলা এক পায়ে শিকল বেঁধে রাখা হয়। রাতে হাতে ও পায়ে শিকল বেঁধে বিছানায় শুইয়ে রাখা হয়। এর মধ্যে একবার রংপুরে নিয়েছি, ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খাচ্ছে। কিন্তু তারপরও পাগলামিটা কমছে না।
তিনি আরও বলেন, টাকার জন্য উন্নত চিকিৎসা দিতে পারছি না। আমাকে ও ওর মাকে আলম কোনভাবেই সহ্য করতে পারে না। তাই সবসময় দাদুকেই তার সঙ্গ দিতে হয়।
ওই পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব হারুন উর রশীদ জানান, ছেলেটি অসুস্থ হবার কারণে তাকে একটি আলাদা কক্ষে বসিয়ে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। খাতায় লিখলেও মাঝে মাঝে চিল্লাচিল্লি করে, অশান্ত হয়ে যায় এবং লিখতে চায় না।
এ বিষয়ে ভুরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এএসএম সায়েম জানান, ছেলেটির সঙ্গে কথা বলেছি, আমার মনে হয় সে মানসিক সমস্যায় ভুগছে। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় সে ভালো হতে পারে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন