১১:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪

কালের স্বাক্ষী ১৪শ’ বছর আগে নির্মিত এশিয়া মহাদেশে সর্ব প্রথম মসজিদ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৫:২২:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই ২০২৩
  • / ২২
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আশরাফুল হক:

লালমনিরহাটে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে ১৪শ’ বছর আগে নির্মিত এশিয়া মহাদেশে সর্ব প্রথম মসজিদ “হারানো মসজিদ”। ঐতিহাসিক ”হারানো মসজিদ” প্রাচীনতম মসজিদ গুলোর মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে যার নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘জামেয়’-আস্ সাহাবা জামে মসজিদ।
বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের প্রাচীনতম নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম লালমনিরহাটের জামেয়-আস্ সাহাবা জামে মসজিদটি প্রায় ১৪শ’ বছর আগে নির্মিত মসজিদ হিসাবে এশিয়া মহাদেশের সর্বপ্রথম মসজিদ হিসেবে মনে করা হয়। কালের বিবর্তনে এই মসজিদটি হারিয়ে যায়।
১৯৮৬ সালের দিকে আশ্চর্যজনক ভাবে লালমনিরহাটে পাওয়া যায় এই প্রাচীনতম মসজিদটি। স্থানীয় লোকজন ১৯৮৩-৮৪ সালে জঙ্গলের আড়া নামে একটি পরিত্যক্ত স্থান পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেয় চাষাবাদের জন্য। এখানকার এই জায়গার নাম মোস্তের আড়া বা মজদের আড়া নামে পরিচিত ছিলো। উঁচু টিলার মতো জায়গাটির স্থানীয়দের ভাষায় ‘আড়া’ নামের অর্থ জঙ্গলাকীর্ণ স্থান। বন্য প্রাণী সাপ-বিচ্ছুর ভয়ে এখানে মানুষের আনাগোনা তেমন ছিল না। স্থানীয় লোকজন ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে গিয়ে তারা দেখে একটি জায়গা সমতল জমি থেকে উঁচু এবং সেখানে রয়েছে প্রায় সাত-আটটির মতো মাটির উঁচু টিলা। জায়গাটি সমতল করার জন্য খোঁড়া শুরু হলে সেখানে প্রাচীনকালের তৈরি প্রচুর ইট পাওয়া যেতে থাকে। যে ইটগুলোতে “অঙ্কিত” সবাই ভেবে নিয়েছিল পুরনো কোনো জমিদার কিংবা রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ হতে পারে এটি। পরে আবার ১৯৮৬ সালের ১০ মহররমের দিনে একটি ঘটনা তাদেরকে অবাক করে দেয়। স্থানীয় বাসিন্দার আইয়ুব আলী অন্যান্যদের মতো ইটের স্তূপ থেকে ইট কুড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে এসেছিল। পড়ে হঠাৎ একটি ইটের ওপর কিছু একটা লেখা দেখতে পায় পরে লেখা স্পষ্ট দেখার জন্য টিউবওয়েলের পানিতে ভালোমতো ধুয়ে তিনি দেখতে পান, এই ইটে কোনো প্রাচীন শিলালিপি লেখা আছে। পরে স্থানীয় একজন মাওলানাকে দেখালে তিনি বলেন এখানে লেখা আছে। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ, হিজরি সন ৬৯’। তখনেই স্থানীয় লোকদের মনে ধারনা জন্মে এটি-একটি প্রাচীন মসজিদের ধ্বংসাবশেষ।
রামদাস এলাকায় বর্তমানে যারা বসবাস করছেন তাদের পূর্বপুরুষেরা এই অঞ্চলে আগমন করেন প্রায় ২০০ বছর আগে। এই মজদের আড়ার পূর্ব মালিক ছিলেন পচা দালাল নামের এক ব্যক্তি। পরে ইয়াকুব আলী তার কাছ থেকে এই জায়গাটি কিনে নিলে উত্তরাধিকার সূত্রে মালিক হয় নবাব আলী। মসজিদ আবিষ্কারের পর তিনি জায়গাটি মসজিদের নামে দিয়ে দেন।
ঠিক তখন ওই জায়গায় নামাজ পড়া হতো না। আবার নতুন করে নামাজ পড়া শুরু নিয়ে আছে এক অলৌকিক কাহিনী। এক রাতে স্থানীয় আফছার আলী শুনতে পান একজন বলছেন, চলো মজদের আড়ায় নামাজ পড়ি। ‘কণ্ঠটা ঠিক তাঁর ভায়রা নওয়াব আলীর মতোই। নামাজ পড়ার জন্য তিনি বেড়িয়ে পড়েন। পড়ে পৌঁছে যান ভায়রার বাড়িতে। বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে গেলেও নওয়াব আলী বের না হলে তিনি ডাকাডাকি শুরু করেন এবং বলেন, নামাজ পড়ার জন্য ডেকে নিয়ে এসে তুই আর বেরাচ্ছিস না কেন? এ কথা শুনে নওয়াব আলী অবাক হয়ে যায়। ঘটনাটা এলাকায় জানাজানি হলে, সবাই মিলে ওই দিন থেকেই নামাজ পড়া শুরু করেন।
এলাকাবাসীর মতে, সেটা ’৮৬ সালের মহররমের ১০ বা ১১ তারিখ। প্রথাগত ইতিহাস অনুযায়ী চট্টগ্রাম অঞ্চলে সুফিদের প্রথম আগমন ঘটে ১০০০ শতকে। সুফিদের মাধ্যমে পূর্ববাংলায় ইসলামের প্রচার ও প্রসার শুরু হয় ১১০০ থেকে ১২০০ শতকে। এই অঞ্চলে প্রথম মসজিদ নির্মাণ হয় তাঁদের হাতেই। কিন্তু সুফিদের আগমনের আগে এখানে এই মসজিদ নির্মাণের বিষয়টি অনেকের কাছেই আশ্চর্যজনক। খুঁজে পাওয়া শিলালিপিটি বর্তমানে রংপুরের তাজহাট জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এই মসজিদটি লালমনিহাটের সদরের বড়বাড়ি ইউনিয়ন বাজারের ভিতর দিয়ে রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়ক থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস মৌজায় অবস্থিত। যা বাংলাদেশে মুসলমানদের আগমনের ইতিহাসের রাজসাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল প্রায় এক হাজার ৩৫০ বছর আগে অর্থাৎ ৬৯ হিজরিতে।
মসজিদটি পূর্ণরায় পাওয়ার পর দেশীয় মাধ্যমসহ ইন্টারন্যাশনাল জনপ্রিয় কাতার ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরা ও ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের সংবাদ মাধ্যম গুলো এই মসজিদটি সম্পর্কে নানান তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশ করেন একের পর এক। ঠিক তারেই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন স্থানের ধর্মপ্রেমী মানুষদের আগমন ঘটে থাকে এই মসজিদটিতে।
দেশের ও স্থানীয় ইসলামিক চিন্তাবিদগণ ধারণা করেন যে, আবিষ্কৃত ধ্বংসাবশেষটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্রু ৬০ বছর পরে আরবি ৬৯ হিজরিতে এই এলাকায় মসজিদটি গড়ে তোলা হয়। ধারণা করা হয়, মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালামের নিকট বংশধর বা হজরত আবু ওয়াক্কাস (রা.) নির্মাণ করেছেন এই মসজিদটি। কেননা এ অঞ্চল দিয়েই চীনে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে চীনের বিস্মৃত কোয়াংটা নদীর ধারে কোয়াংটা শহরে তাঁর নির্মিত মসজিদ ও তাঁর সমাধি রয়েছে। ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক টিম স্টিল দাবি করে এমনটি জানিয়েছেন।

টিম স্টিল নিজ উদ্যোগে ১৯৯৮ সাল থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস অনুসন্ধান শুরু করেন। পড়ে লালমনিরহাটে দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীন মসজিদের খোঁজ পেয়ে এই অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে তাদের জানার ইচ্ছা জাগে প্রচন্ড। পরে তারা ভাবেন এই প্রাচীন মসজিদের নির্মাণের ইতিহাস খুঁজে পেলে হয়তো বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ইতিহাসের সঙ্গে বিশ্ব সভ্যতার সম্পর্কের আরেক ইতিহাস জানার পথ খুলে যাবে এমনটি ভেবেছিলেন তারা। টিম স্টিলের গবেষণায় দেখা গেছে এই মসজিদটি এক হাজার তিন শ চৌষট্টি বছর আগের মসজিদ ।
নবীজির বংশধরদের খ্রিস্টপূর্ব সময় থেকে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পার ধরে সিকিম হয়ে চীনের মধ্য দিয়ে আরব ও রোমান বণিকদের বাণিজ্যবহরের যাতায়াতের অনেক প্রমাণ রয়েছে তাঁদের কাছে। পরবর্তী সময়ে এই স্থানটিতে নির্মাণ করা হয় হারানো মসজিদ কমপ্লেক্স যার নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘জামেয়’-আস্ সাহাবা জামে মসজিদ এবং একটি নূরানী মাদ্রাসা।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

কালের স্বাক্ষী ১৪শ’ বছর আগে নির্মিত এশিয়া মহাদেশে সর্ব প্রথম মসজিদ

আপডেট সময় : ০৫:২২:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই ২০২৩
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আশরাফুল হক:

লালমনিরহাটে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে ১৪শ’ বছর আগে নির্মিত এশিয়া মহাদেশে সর্ব প্রথম মসজিদ “হারানো মসজিদ”। ঐতিহাসিক ”হারানো মসজিদ” প্রাচীনতম মসজিদ গুলোর মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে যার নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘জামেয়’-আস্ সাহাবা জামে মসজিদ।
বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের প্রাচীনতম নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম লালমনিরহাটের জামেয়-আস্ সাহাবা জামে মসজিদটি প্রায় ১৪শ’ বছর আগে নির্মিত মসজিদ হিসাবে এশিয়া মহাদেশের সর্বপ্রথম মসজিদ হিসেবে মনে করা হয়। কালের বিবর্তনে এই মসজিদটি হারিয়ে যায়।
১৯৮৬ সালের দিকে আশ্চর্যজনক ভাবে লালমনিরহাটে পাওয়া যায় এই প্রাচীনতম মসজিদটি। স্থানীয় লোকজন ১৯৮৩-৮৪ সালে জঙ্গলের আড়া নামে একটি পরিত্যক্ত স্থান পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেয় চাষাবাদের জন্য। এখানকার এই জায়গার নাম মোস্তের আড়া বা মজদের আড়া নামে পরিচিত ছিলো। উঁচু টিলার মতো জায়গাটির স্থানীয়দের ভাষায় ‘আড়া’ নামের অর্থ জঙ্গলাকীর্ণ স্থান। বন্য প্রাণী সাপ-বিচ্ছুর ভয়ে এখানে মানুষের আনাগোনা তেমন ছিল না। স্থানীয় লোকজন ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে গিয়ে তারা দেখে একটি জায়গা সমতল জমি থেকে উঁচু এবং সেখানে রয়েছে প্রায় সাত-আটটির মতো মাটির উঁচু টিলা। জায়গাটি সমতল করার জন্য খোঁড়া শুরু হলে সেখানে প্রাচীনকালের তৈরি প্রচুর ইট পাওয়া যেতে থাকে। যে ইটগুলোতে “অঙ্কিত” সবাই ভেবে নিয়েছিল পুরনো কোনো জমিদার কিংবা রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ হতে পারে এটি। পরে আবার ১৯৮৬ সালের ১০ মহররমের দিনে একটি ঘটনা তাদেরকে অবাক করে দেয়। স্থানীয় বাসিন্দার আইয়ুব আলী অন্যান্যদের মতো ইটের স্তূপ থেকে ইট কুড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে এসেছিল। পড়ে হঠাৎ একটি ইটের ওপর কিছু একটা লেখা দেখতে পায় পরে লেখা স্পষ্ট দেখার জন্য টিউবওয়েলের পানিতে ভালোমতো ধুয়ে তিনি দেখতে পান, এই ইটে কোনো প্রাচীন শিলালিপি লেখা আছে। পরে স্থানীয় একজন মাওলানাকে দেখালে তিনি বলেন এখানে লেখা আছে। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ, হিজরি সন ৬৯’। তখনেই স্থানীয় লোকদের মনে ধারনা জন্মে এটি-একটি প্রাচীন মসজিদের ধ্বংসাবশেষ।
রামদাস এলাকায় বর্তমানে যারা বসবাস করছেন তাদের পূর্বপুরুষেরা এই অঞ্চলে আগমন করেন প্রায় ২০০ বছর আগে। এই মজদের আড়ার পূর্ব মালিক ছিলেন পচা দালাল নামের এক ব্যক্তি। পরে ইয়াকুব আলী তার কাছ থেকে এই জায়গাটি কিনে নিলে উত্তরাধিকার সূত্রে মালিক হয় নবাব আলী। মসজিদ আবিষ্কারের পর তিনি জায়গাটি মসজিদের নামে দিয়ে দেন।
ঠিক তখন ওই জায়গায় নামাজ পড়া হতো না। আবার নতুন করে নামাজ পড়া শুরু নিয়ে আছে এক অলৌকিক কাহিনী। এক রাতে স্থানীয় আফছার আলী শুনতে পান একজন বলছেন, চলো মজদের আড়ায় নামাজ পড়ি। ‘কণ্ঠটা ঠিক তাঁর ভায়রা নওয়াব আলীর মতোই। নামাজ পড়ার জন্য তিনি বেড়িয়ে পড়েন। পড়ে পৌঁছে যান ভায়রার বাড়িতে। বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে গেলেও নওয়াব আলী বের না হলে তিনি ডাকাডাকি শুরু করেন এবং বলেন, নামাজ পড়ার জন্য ডেকে নিয়ে এসে তুই আর বেরাচ্ছিস না কেন? এ কথা শুনে নওয়াব আলী অবাক হয়ে যায়। ঘটনাটা এলাকায় জানাজানি হলে, সবাই মিলে ওই দিন থেকেই নামাজ পড়া শুরু করেন।
এলাকাবাসীর মতে, সেটা ’৮৬ সালের মহররমের ১০ বা ১১ তারিখ। প্রথাগত ইতিহাস অনুযায়ী চট্টগ্রাম অঞ্চলে সুফিদের প্রথম আগমন ঘটে ১০০০ শতকে। সুফিদের মাধ্যমে পূর্ববাংলায় ইসলামের প্রচার ও প্রসার শুরু হয় ১১০০ থেকে ১২০০ শতকে। এই অঞ্চলে প্রথম মসজিদ নির্মাণ হয় তাঁদের হাতেই। কিন্তু সুফিদের আগমনের আগে এখানে এই মসজিদ নির্মাণের বিষয়টি অনেকের কাছেই আশ্চর্যজনক। খুঁজে পাওয়া শিলালিপিটি বর্তমানে রংপুরের তাজহাট জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এই মসজিদটি লালমনিহাটের সদরের বড়বাড়ি ইউনিয়ন বাজারের ভিতর দিয়ে রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়ক থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস মৌজায় অবস্থিত। যা বাংলাদেশে মুসলমানদের আগমনের ইতিহাসের রাজসাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল প্রায় এক হাজার ৩৫০ বছর আগে অর্থাৎ ৬৯ হিজরিতে।
মসজিদটি পূর্ণরায় পাওয়ার পর দেশীয় মাধ্যমসহ ইন্টারন্যাশনাল জনপ্রিয় কাতার ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরা ও ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের সংবাদ মাধ্যম গুলো এই মসজিদটি সম্পর্কে নানান তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশ করেন একের পর এক। ঠিক তারেই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন স্থানের ধর্মপ্রেমী মানুষদের আগমন ঘটে থাকে এই মসজিদটিতে।
দেশের ও স্থানীয় ইসলামিক চিন্তাবিদগণ ধারণা করেন যে, আবিষ্কৃত ধ্বংসাবশেষটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্রু ৬০ বছর পরে আরবি ৬৯ হিজরিতে এই এলাকায় মসজিদটি গড়ে তোলা হয়। ধারণা করা হয়, মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালামের নিকট বংশধর বা হজরত আবু ওয়াক্কাস (রা.) নির্মাণ করেছেন এই মসজিদটি। কেননা এ অঞ্চল দিয়েই চীনে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে চীনের বিস্মৃত কোয়াংটা নদীর ধারে কোয়াংটা শহরে তাঁর নির্মিত মসজিদ ও তাঁর সমাধি রয়েছে। ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক টিম স্টিল দাবি করে এমনটি জানিয়েছেন।

টিম স্টিল নিজ উদ্যোগে ১৯৯৮ সাল থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস অনুসন্ধান শুরু করেন। পড়ে লালমনিরহাটে দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীন মসজিদের খোঁজ পেয়ে এই অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে তাদের জানার ইচ্ছা জাগে প্রচন্ড। পরে তারা ভাবেন এই প্রাচীন মসজিদের নির্মাণের ইতিহাস খুঁজে পেলে হয়তো বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ইতিহাসের সঙ্গে বিশ্ব সভ্যতার সম্পর্কের আরেক ইতিহাস জানার পথ খুলে যাবে এমনটি ভেবেছিলেন তারা। টিম স্টিলের গবেষণায় দেখা গেছে এই মসজিদটি এক হাজার তিন শ চৌষট্টি বছর আগের মসজিদ ।
নবীজির বংশধরদের খ্রিস্টপূর্ব সময় থেকে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পার ধরে সিকিম হয়ে চীনের মধ্য দিয়ে আরব ও রোমান বণিকদের বাণিজ্যবহরের যাতায়াতের অনেক প্রমাণ রয়েছে তাঁদের কাছে। পরবর্তী সময়ে এই স্থানটিতে নির্মাণ করা হয় হারানো মসজিদ কমপ্লেক্স যার নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘জামেয়’-আস্ সাহাবা জামে মসজিদ এবং একটি নূরানী মাদ্রাসা।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন