মতলবে সূর্যমুখীর হাসিতে স্বপ্ন দেখছেন কৃষক জসীমউদ্দিন
- আপডেট সময় : ০৬:২৯:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ মার্চ ২০২৩
- / ৭১
মমিনুল ইসমাইল, মতলব:
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় সূর্যমুখীর হাসিতে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছেন চাষীরা। উপজেলার ছেংগারচর পৌর এলাকায় প্রথমবারের মতো চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী ফুল। ভোজ্যতেলের সংকটকালে এই তেলজাতীয় উদ্ভিদ সূযমুখী চাষ কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রকৃতির এক অসাধারণ রূপবান উদ্ভিদ সূর্যমুখী। কেউ কিনেন, কেউ চাষ করেন, আবার কেউ ফুলের সৌন্দর্য দেখেন। এ জন্য সবাই ফুলের কাছে ছুটে যান। আর এ ফুল যদি হয় শস্য ক্ষেতের সুন্দর হলুদ সূর্যমুখী, তাহলে তো কথাই নেই। এমনই চিত্র দেওয়ানজিকান্দি এলাকায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, দেওয়ানজিকান্দি গ্রামের কৃষক জসীমউদ্দিনের জমিতে সূর্যের ঝলকানিতে হলুদ রঙে ঝলমল করছে চারপাশ। সূর্যের দিকে মুখ করে আছে ফুল, সকালে পূর্ব দিকে তাকিয়ে হাসলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের আবর্তনে তার দিক পরিবর্তন হয়। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এ যেন সবুজের মাঝে হলুদের সমাহার। সূর্যের দিকে মুখ করে হাসছে সূর্যমুখী। আর এমন মনোরম দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই অনেক মানুষ ভিড় করছেন সূর্যমুখী বাগানের সৌন্দর্য দেখতে।
মনোরম সুন্দর পরিবেশ, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা ও উপজেলা সদরের নিকটবর্তী হওয়ায় এমন দৃশ্য দেখাকে হাতছাড়া করতে চাইছেন না অনেকেই। সেইসঙ্গে সেলফি ও গ্রুপ ছবি তো আছেই। সবুজ মাঠের এই হলুদ রঙ ছবিতে এনে দিচ্ছে নতুন মাত্রা। একগুচ্ছ ফুলের সঙ্গে দর্শনার্থীরা সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে যেন হাসছেন। দৃষ্টিকাড়া ফুলের মধ্যে মুঠোফোনে বন্দী করছেন প্রিয় মুহূর্তগুলো। সূর্যমুখী ওই ফুলের বাগানের আশেপাশের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পুরো দিনই বাড়ছে মানুষের সমাগম। ফুলে ফুলে ভরে গেছে সূর্যমুখী ক্ষেত। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এই ফুলকে সূর্যমুখী বলা হয়। সূর্যমুখীর ক্ষেতে একবার চোখ পড়লে তা ফেরানো কঠিন। বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় উদ্ভাবিত এই ফুলের তেলজাতীয় ফসল সূর্যমুখী হাইসেন জাতের ফুল চাষ করে আশার আলো দেখছেন কৃষক মো. জসীমউদ্দিন।
উপজেলা কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশীয় ঘানি ব্যবহার করে পরিপক্ক সূর্যমুখী ফুলের বীজ থকে তেল ভাঙানো যায়। স্বাস্থ্য ঝুঁকিও কম এই তেলে। চলতি মৌসুমে মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এই তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় দেওয়ানজিকান্দি গ্রামে ৩৮ শতাংশ জমিতে কৃষক জসিমউদ্দিন পরীক্ষামূলকভাবে তেলজাতীয় ফসল সূর্যমূখী হাইসেন জাতের চাষ করেছেন। এতে বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা। বাস্পার ফলনের ফুল ফোঁটায় সফলতার আলো দেখছেন তারা। প্রথম বছরেই ফুলের চাষ করে সফলতার সম্ভাবনা দেখায় তাদের মুখে সূর্যমুখী ফুলের হাসি ফুটেছে।
সূর্যমুখী ফুলের চাষ এই এলাকার ফুল প্রেমিদের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণসহ হইচই ফেলে দিয়েছে। ফুল ফোঁটার পর প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা সূর্যমুখী বাগানে ভিড় করছেন। বিশলা সূর্যমুখী ফুল বাগানের খবর শুনে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ফুলবাগানটি দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। সেলফি তুলছেন উৎসুখ মানুষ। সূর্যমুখী ফুলের চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ এলাকাবাসীর অনেকেই এই ফুল চাষ করারও কথা বলছেন।
দর্শনার্থী ইমরান হোসেন বলেন, প্রকৃতির ঘ্রাণ নিতেই পরিবারকে নিয়ে সূর্যসুখী ফুলের বাগানে এসেছি। ফুলের গন্ধে মন নেচে উঠেছে। সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থী বলেন, ঘরবন্দী অবস্থা থেকে একটু মুক্ত হাওয়ায় বেড়াতে ও বাগান ভরা ফুল দেখতে এখানে আসা। এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব সুন্দর লাগছে। তাই সবাই মিলে এ মনোরম দৃশ্য ফেমে বন্দী করছি।
ঘুরতে আসা শিক্ষার্থী মো. মেহেদী হাসান বলেন, বাসাবাড়িতে বিভিন্ন রকমের ফুলের বাগান করা যায়। কিন্তু সূর্যমুখী ফুলের বাগান করা খুব একটা হয়ে উঠে না। এছাড়া একসঙ্গে অনেক সূর্যমুখী ফুল দেখে মনটা ভরে যায়।
কৃষক মো. জসীমউদ্দিন জানান, চলতি মৌসুমে কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে তিনি সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। সফলতার মুখও দেখছেন। আগামী দিনে এই চাষ আরও বাড়াবেন বলে তিনি জানান।
কৃষক মো. জসীমউদ্দিন আরো বলেন, অনেকটাই শখের বশে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। বাম্পার ফলনের আশা করছি। আগামী দিনে আরও বেশি জমিতে সূর্যমুখী ফুল চাষ করবো।
মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালাউউদ্দিন বলেন, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামী দিনে উপজেলার অন্যান্য এলাকায় যাতে এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা যায়, সে জন্য কৃষকদের বীজ, সারসহ প্রযুক্তিগত সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। অন্যান্য তেলের তুলনায় সূর্যমুখী ফুলের তেলের চাহিদা বেশি। তাই আমরা এই তেলজাতীয় ফসল চাষে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।