রমজানকে সামনে রেখে সবজি-মাছ-মাংসের বাজারে আগুন
- আপডেট সময় : ০৬:১০:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ মার্চ ২০২৩
- / ৬২
আশরাফুল হক, লালমনিরহাট:
লালমনিরহাটে পবিত্র মাহে রমজানকে সামনে রেখে জেলা শহরের বিভিন্ন হাট-বাজার গুলোতে কাঁচা সবজি-মাছ-মাংস ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশ ছোঁয়া। ব্যবসায়ি সিন্ডিকেটের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
ক্রেতা সাধারণ জানান, প্রত্যেকটি সবজির দামই বেড়েছে। আগে ১০০ টাকা দিয়ে ব্যাগভর্তি বাজার হলেও এখন ১০০ টাকা দিয়ে ১ কেজি ঢেরস কেনা যায় না। আমাদের মতো মধ্যেম আয়ের লোকজন সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে। বাজার গুলোতে সবজি-মাছ ও মাংসের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে এবং তা নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি।
জেলার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজিতে, শিম ৬০ টাকা, বেগুন ৪৫ টাকা, পটল ১০০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ১০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৩০ টাকা, কাঁচা টম্যাটো ৬০ টাকা, পাকা টম্যাটো ৮০ টাকা, গাজর ৬০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, কুমড়া ৪০ টাকা, ধনেপাতা ৬০ টাকা, বড় আলু ৪০ টাকা। এ ছাড়া কাঁচা পেপে কেজি প্রতি ৬০ টাকা, কাঁচা কলা ৪০ টাকা হালি। প্রত্যেকটি সবজি’র দামই বেড়েছে। আগে ১০০ টাকা দিয়ে ব্যাগভর্তি বাজার করা যেতো এখন ১০০ টাকায় ১কেজি ঢেরস কিনতে হয়। ১ কেজি কাতল মাছ ১৮০ থেকে দাম বাড়িয়ে ২৪০টাকা, ১ কেজি সিলভার কার্প মাছ ১৩০ টাকা থেকে ২৩০ টাকা, ১ কেজি রুই মাছ ১৮০ থেকে ২৪০, ১ কেজি গ্রাস কার্প ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, ১ কেজি পাঙ্গাশ ১১০ থেকে ১৬০ টাকা, ১ কেজি তেলাপিয়া ১১০ থেকে ১৭০ টাকা, ১ কেজি ইলিশ ৮০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকায় দাড়িয়েছে। আর দেশি ছোট মাছের বাজার তো আকাশ ছোঁয়া। মাছের পাশাপাশি মাংসেরও দাম অনেকটা বেড়ে গেছে। গরুর মাংস প্রতি কেজি মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়, খাশির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯০০/১১০০ টাকায়, দেশি মুগরী বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকায়, ব্রয়লার মুরগী বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়।
সবজি ও মাছ এবং মাংসের পাশাপাশি দাম বেড়েছে রান্নার বিভিন্ন উপকরণেরও।
এদিকে রবিবার (০৫ ই মার্চ) লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর, বড়বাড়ি ও বিডি আর হাট ঘুরে দেখা গেছে, মাছের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বেড়েছে। বাজার করতে আসা অনেককেই খালি হাতে ফিরতে দেখা গেছে। যারা কিনছেন, তারা জানালেন, বরাদ্দের চেয়ে বেশি খরচ হয়েছে।
মাছ কিনতে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, দাম শুনে মাথা ঘুরাচ্ছে। প্রতি কেজি মাছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মাছের দাম শুনলেই অবাক হতে হয়।
৫০০ টাকায় এক কেজি মাছ আর কিছু তরিতরকারি কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু এই বরাদ্দে বড় মাছ না নিয়ে শিং মাছ হাফ কেজি ২২৫ টাকায় নিতে হলো। আর বাকি টাকা দিয়ে যতটুকু কাঁচা সবজি নেওয়া যায় নিবো।
সদরের বিডি আর হাটে বাজার করতে আসা রুহুল আমিন বলেন, আমি একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাকুরি করি। প্রতি মাসে বেতন পাই ১২ হাজার টাকা। তিন ছেলে-মেয়েসহ ৫ জনের সংসার। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা ও খাবার কিনতে প্রতিমাসে খরচ হয় ৭ হাজার টাকা। এ ছাড়াও বাড়ি ভাড়া, কারেন্ট বিল, কাপর-চোপর, যাতায়াত বাবদ খরচ, টুকি-টাকি কাজে খরচ হয়। আগে প্রতি মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকা মাস শেষে হাতে থাকত। এখন নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব টাকা খরচ হয়ে উল্টো মাঝে-মধ্যে দেনা করতে হচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে তথ ঋনের বোঝা ভারি হচ্ছে। আমরা মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন কষ্টের কথা বলতেও পারি না, সইতেও পারি না।
সদরের নয়ার হাট বাজারে আসা মামুনুর রশিদ মিটু আরেক ক্রেতা বলেন, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করেন। একজন কিছুটা কম দামে বিক্রি করতে চাইলে পাশে থাকা অন্যজন ব্যবসায়ি রাগ করেন। ঠিক যেন পাবলিকের পকেট কেটে টাকা নেয়া হচ্ছে। তাই প্রতিটি বাজারে প্রশাসনের কঠোর মনিটরিং প্রয়োজন।
সদরের সাপ্টিবাড়ী হাটে তরকারি বিক্রেতা বাবুল মিয়া বলেন, সবজি গুলো বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে আনতে হয় আবার অনেক সময় আড়ৎ থেকে পাইকারি কিনতে হয়। তরিতরকারি পাইকারি কিনে এই বাজারে বিক্রি করি। পাইকারি দাম বাড়ায়, বাধ্য হয়ে বেশি দামে আমরাও বিক্রি করছি। বড় বড় ব্যবসায়িরা সিন্ডিকেট তৈরী করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।
সদরের নয়ার হাটের জহুরুল নামের আরেক সবজি বিক্রেতা বলেন, সব বিক্রেতা যে দামে বিক্রি করে আমিও সেই দামে বিক্রি করছি। আমাদের কষ্ট বেশি, লাভও কম। কাঁচা সবজির আড়ৎ থেকে আমরা বেশি দামে কিনে কি ভাবে কম দামে বিক্রি করবো। বাজারে সিন্ডিকেট করে সবজি বিক্রি করা হয় না। সিন্ডিকেট হয় পৌরসভার কাঁচা সবজির আড়ৎ গুলোয়।
চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোরল হুমায়ুন কবির এ বিষয়ে বলেন, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। ব্যবসায়িরা সিন্ডিকেট তৈরী করে বিভিন্ন পণ্যর দান বাড়াচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ দেয়া হবে না। এমন সংবাদ পেলে আমরা তৎক্ষনাৎ ব্যবস্হা গ্রহণ করবো। প্রয়োজনে প্রতিটি হাট-বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। তবে তরিতরকারি ও মাছের দাম অচিরেই কমে আসবে।