১১:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

বাবা, সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবাসি

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৯:৫১:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ মার্চ ২০২৩
  • / ১৫৭

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

লেখক : মো. মামুন হাসান

বাবা একটি শব্দ ও দুটি বর্ণের হৃদয়ের স্পন্দন। বাবাকে নিয়ে যত কথা, যত স্মৃতি, সেটি কয়েক কোটি শব্দ দিয়েও পূরণ করার নয়। আমার বাবা গত ২৩ ফেব্রুয়ারি (১০ ফাল্গুন) সাকালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে আমাদের কাঁদিয়ে গেলেন। দেখতে দেখতে কিছুদিন অতিবাহিত হল। বারবার মনে পড়ছে বাবার সাথে অনেক স্মৃতি, এখন স্মৃতিগুলো আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকতে হচ্ছে।
আমি গর্ব করি বাবাকে নিয়ে। আমার বাবা মরহুম মতিউর রহমান সারকার ছিলেন একজন সৎ, প্রজ্ঞাবান ও বিচক্ষণ ব্যক্তি। অল্প বয়সেই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ইউনিয়নের যত রাস্তা সব আমার বাবার সময়ে করা,অবশ্য সেসময়ে কোন রাস্তা ছিল না বললেই চলে। ইউনিয়ন ভূমি অফিস, হাসপাতালসহ অনেক উন্নয়নমূলক কাজ বাবার হাত ধরেই সম্প্রসারিত হয়েছে। আমার বাবা সিরাজগন্জ উল্লাপাড়া উপজেলার হাওড়া গ্রামে ১৯৫৭ সালের ৩০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ছোট্ট বেলা থেকেই দেখতাম বাবা আমাদের লেখাপড়ার প্রতি ভীষণ যত্নবান ছিলেন, আত্নীয়-স্বজনদের পড়ালেখাতে বাবার অবদান অনস্বীকার্য। বাবাকে সবাই খুবই শ্রদ্ধা করতেন বাবাও তাদের প্রতি হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা উজাড় করে দিতেন। বাবার সঙ্গে একটি ঘটনা আজও আমার মনকে নাড়া দেয়। সবেমাত্র যষ্ঠ শ্রেণিতে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি আমি। তখন বাবার কাছে বায়না করেছিলাম একটি বাইসাইকেল কিনে দেয়ার জন্য। কিন্তু আবদারের ধরনটি ছিল ভিন্ন রকম। বাবা লাল রংয়ের ইন্ডিয়ান হিরো জেট বাইসাইকেল কিনে দিলেন তা ছিলো তখনকার সময়ে দৃষ্টিনন্দন বাইসাইকেল। কখনও বাবাকে মিথ্যা বলে টাকা নিয়ে বন্ধুদের সাথে সিনেমা দেখতাম-এরকম হাজারো স্মৃতি মনের মণিকোঠায় উঁকি দিচ্ছে।
মনে পড়ছে ‘৯৪ সালের ফুটবল বিশ্বাকাপের কথা, তখন বাড়িতে টেলিভিশন ছিলনা। খুবই ভোরে প্রাইভেট ফাঁকি দিয়ে গয়হাট্টা বাজারে খেলা দেখা শেষে বাড়ি ফিরছি, পথিমধ্যেই বাবার সাথে দেখা। সবুজ রঙের জাপানি হোন্ডা মটরসাইকেল নিয়ে আসার পথেই দেখা বুঝতে আর বাবার বাকী রইলোনা শুধু বললেন ঠিকমত পড়ালেখা করো। পরের সপ্তাহেই ঢাকা থেকে সাদাকালো ন্যাশনাল টিভি বাড়ি নিয়ে আসলেন। তখন সাদাকালো টিভি দুষ্প্রাপ্য ছিলো, আশেপাশের গ্রামেও ছিলোনা।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে ওনার বলিষ্ঠ ভূমিকা সব সময় মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এখনো তাঁর সহযোদ্ধারা তাঁকে নিয়ে গল্প করেন, একজন সন্তান হিসেবে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু হতে পারে না। আমার কাছে আমার বাবা পুরো পৃথিবীর সেরা বাবা। কোনো দিবসে নয়, যত দিন বেঁচে আছি, বাবাকে নিয়ে আমার প্রতিটি ক্ষণ মধুময় হয়ে থাকবে।”বাবা, সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আর মিস করি প্রতিনিয়ত”।
জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখে এসেছি বাবাই সংসারের মূল হালটি চালনা করেন। তিনিই যেন সংসারের ‘ক্যাপ্টেন’। পরিবারের সদস্যদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, আমোদ-আহ্লাদ, বিয়ে সবকিছুর দায়িত্ব সাধারণত বাবাকেই বহন করতে হয়েছে। যে কারণে বাবার উপস্থিতির বিষয়টা ভালবাসার চেয়েও প্রয়োজনের তাগিদেই বেশি ছিল।
দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে বাবার কোনো তুলনা ছিল না। বাবা ছিলেন সাত ভাই ও তিন বোনের মাঝে সবার বড়। বাবা বড় ছেলে হিসেবে সবসময় ছোট ভাই-বোনদের আগলে রেখেছিলেন। কখনো কারো মনে এতটুকু আঁচ লাগতে দেননি। নিজেকে বিপন্ন করে হলেও, তার মায়ের কাছে দেয়া কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। আমার কাছে আমার বাবা পুরো পৃথিবীর সেরা বাবা।
২১ ফ্রেব্রুয়ারি আমার বড় সন্তান মালিহার জন্মদিন, সেদিন বিকালে আমার ছোট ভাই মাসুদ ফোন করে বাবার খুবই অসুস্থতার খবর জানালো। পরবর্তী একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে ভর্তি করানো হলো।
উন্নত চিকিৎসা চলছিল ডাক্তার প্রায়ই বলতে লাগলেন, আপনার বাবার খুবই খারাপ অবস্হা আল্লাহকে ডাকেন। হাসপাতালের করিডোরে মা, ছোট ভাই-বোনসহ আত্নীয়রা আশাবাদী ছিলেন তারা বারংবার আল্লাহকে স্মরণ করছে আমি বড় সন্তান হিসেবে মাকে বলতে পারিনি বাবার শারীরিক অবস্হা চরম অবনতির দিকে। আমি আল্লাহকে স্মরণ করছি আর ঢুকরে ঢুকরে কান্না করছি। আমাকে নিয়ে বাবার গর্বের শেষ ছিলো না। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে মা, ভাই-বোনকে আমার হাতে তুলে দিলেন। বাবা মৃত্যুর পূর্বেও ইশারায় নামাজ আদায় করলেন, আমি তাইয়ামুম করে দিলাম। এরকম ঈমানদার হাজি মানুষ ছিলেন আমার বাবা।

ভাবছি কত বড় ভরসা আমাদের ছেড়ে চলে গেল, যা প্রভাব চলে যাওয়ার সাথে সাথেই টের পাচ্ছি। যিনি অসুস্থ অবস্থায়ও বটবৃক্ষের মতো রোদ, বৃষ্টি, ঝড় থেকে আগলে রেখেছিলেন। আমাদের পরিবার ছিল সম্পূর্ণ বাবার আয়ের উপর নির্ভরশীল। অথচ একজন আধুনিক মানুষ হিসেবে বাবাকে দেখিনি কখনো তার কর্তৃত্ব আমাদের উপরে চাপিয়ে দিয়েছেন বা সিংহ পুরুষ হিসেবে আম্মার প্রতি অসদাচরণ করছেন। বাবা একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ হওয়া সত্ত্বেও খুব বেশি কিছু চাইতে পারতেন না। কিন্তু বাবা যা চাইতেন, তা এখন অনেকেই চান না বা চাইতে পারেন না। তিনি চাইতেন পরিবারের ও তার আশেপাশের সবাই যেন সুখে থাকে, আনন্দে থাকে, ভাল থাকে।
জীবনের অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে সন্তানদের নিরাপদে দাঁড়িয়ে থাকা, পুরো পরিবারের বেঁচে থাকা, তা সম্ভব হয় একজন ভালো বাবার জন্যই। বাবারা সন্তানের জীবনের ছায়া শক্তি। একজন আধুনিক ও প্রগতিশীল বাবা তার সন্তানদের শেখাবেন মানুষকে ভালবাসার কথা। শেখাবেন ভালবাসা খুব মূল্যবান জিনিস, তা পেতে চাইলে আগে মানুষকে ভালবাসতে হবে। আর কীভাবে মানুষকে ভালবাসতে হয়, কীভাবে দুঃখ-কষ্টকে জয় করতে হয়, সৎ থেকে বাঁচা যায়, সেটাও বাবারাই সন্তানকে শেখান।
সন্তানের জন্য বাবার ভালোবাসা অসীম, অকৃত্রিম, স্বার্থহীন। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবর সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আছেন। মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে একটি ঘটনা সবাইকে হতচকিত করে। বাবরপুত্র হুমায়ুন জটিল রোগে আক্রান্ত হলেন। বাঁচার কোনো আশা রইল না। সম্রাট বাবর রোগগ্রস্ত পুত্রকে বাঁচাতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন তাঁর নিজের জীবনের বিনিময়ে পুত্রের জীবন। হুমায়ুন সুস্থ হয়ে ওঠেন আর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বাবর। এমন স্বার্থহীন যাঁর ভালোবাসা, সেই বাবাকে সন্তানের খুশির জন্য জীবনের অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয়।
জানি না আমার মনের এই আর্তি, আকুতি , আমার কষ্ট বোধ, আমার ভালবাসা বাবা ওপারে থেকে শুনতে পারছেন কী না বা বুঝতে পারছেন কী না! তবুও বলবো, বাবা অনেক ভালোবাসি তোমায়!! মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের কাছে প্রার্থনা করি, “তিনি যেন আমার বাবাকে মাফ করে দেন এবং জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন ”।

 

                                         লেখক : মো. মামুন হাসান
মাননীয় বিরোধীদলীয় নেতার সহকারী একান্ত সচিব, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

বাবা, সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবাসি

আপডেট সময় : ০৯:৫১:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ মার্চ ২০২৩
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

লেখক : মো. মামুন হাসান

বাবা একটি শব্দ ও দুটি বর্ণের হৃদয়ের স্পন্দন। বাবাকে নিয়ে যত কথা, যত স্মৃতি, সেটি কয়েক কোটি শব্দ দিয়েও পূরণ করার নয়। আমার বাবা গত ২৩ ফেব্রুয়ারি (১০ ফাল্গুন) সাকালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে আমাদের কাঁদিয়ে গেলেন। দেখতে দেখতে কিছুদিন অতিবাহিত হল। বারবার মনে পড়ছে বাবার সাথে অনেক স্মৃতি, এখন স্মৃতিগুলো আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকতে হচ্ছে।
আমি গর্ব করি বাবাকে নিয়ে। আমার বাবা মরহুম মতিউর রহমান সারকার ছিলেন একজন সৎ, প্রজ্ঞাবান ও বিচক্ষণ ব্যক্তি। অল্প বয়সেই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ইউনিয়নের যত রাস্তা সব আমার বাবার সময়ে করা,অবশ্য সেসময়ে কোন রাস্তা ছিল না বললেই চলে। ইউনিয়ন ভূমি অফিস, হাসপাতালসহ অনেক উন্নয়নমূলক কাজ বাবার হাত ধরেই সম্প্রসারিত হয়েছে। আমার বাবা সিরাজগন্জ উল্লাপাড়া উপজেলার হাওড়া গ্রামে ১৯৫৭ সালের ৩০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ছোট্ট বেলা থেকেই দেখতাম বাবা আমাদের লেখাপড়ার প্রতি ভীষণ যত্নবান ছিলেন, আত্নীয়-স্বজনদের পড়ালেখাতে বাবার অবদান অনস্বীকার্য। বাবাকে সবাই খুবই শ্রদ্ধা করতেন বাবাও তাদের প্রতি হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা উজাড় করে দিতেন। বাবার সঙ্গে একটি ঘটনা আজও আমার মনকে নাড়া দেয়। সবেমাত্র যষ্ঠ শ্রেণিতে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি আমি। তখন বাবার কাছে বায়না করেছিলাম একটি বাইসাইকেল কিনে দেয়ার জন্য। কিন্তু আবদারের ধরনটি ছিল ভিন্ন রকম। বাবা লাল রংয়ের ইন্ডিয়ান হিরো জেট বাইসাইকেল কিনে দিলেন তা ছিলো তখনকার সময়ে দৃষ্টিনন্দন বাইসাইকেল। কখনও বাবাকে মিথ্যা বলে টাকা নিয়ে বন্ধুদের সাথে সিনেমা দেখতাম-এরকম হাজারো স্মৃতি মনের মণিকোঠায় উঁকি দিচ্ছে।
মনে পড়ছে ‘৯৪ সালের ফুটবল বিশ্বাকাপের কথা, তখন বাড়িতে টেলিভিশন ছিলনা। খুবই ভোরে প্রাইভেট ফাঁকি দিয়ে গয়হাট্টা বাজারে খেলা দেখা শেষে বাড়ি ফিরছি, পথিমধ্যেই বাবার সাথে দেখা। সবুজ রঙের জাপানি হোন্ডা মটরসাইকেল নিয়ে আসার পথেই দেখা বুঝতে আর বাবার বাকী রইলোনা শুধু বললেন ঠিকমত পড়ালেখা করো। পরের সপ্তাহেই ঢাকা থেকে সাদাকালো ন্যাশনাল টিভি বাড়ি নিয়ে আসলেন। তখন সাদাকালো টিভি দুষ্প্রাপ্য ছিলো, আশেপাশের গ্রামেও ছিলোনা।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে ওনার বলিষ্ঠ ভূমিকা সব সময় মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এখনো তাঁর সহযোদ্ধারা তাঁকে নিয়ে গল্প করেন, একজন সন্তান হিসেবে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু হতে পারে না। আমার কাছে আমার বাবা পুরো পৃথিবীর সেরা বাবা। কোনো দিবসে নয়, যত দিন বেঁচে আছি, বাবাকে নিয়ে আমার প্রতিটি ক্ষণ মধুময় হয়ে থাকবে।”বাবা, সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আর মিস করি প্রতিনিয়ত”।
জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখে এসেছি বাবাই সংসারের মূল হালটি চালনা করেন। তিনিই যেন সংসারের ‘ক্যাপ্টেন’। পরিবারের সদস্যদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, আমোদ-আহ্লাদ, বিয়ে সবকিছুর দায়িত্ব সাধারণত বাবাকেই বহন করতে হয়েছে। যে কারণে বাবার উপস্থিতির বিষয়টা ভালবাসার চেয়েও প্রয়োজনের তাগিদেই বেশি ছিল।
দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে বাবার কোনো তুলনা ছিল না। বাবা ছিলেন সাত ভাই ও তিন বোনের মাঝে সবার বড়। বাবা বড় ছেলে হিসেবে সবসময় ছোট ভাই-বোনদের আগলে রেখেছিলেন। কখনো কারো মনে এতটুকু আঁচ লাগতে দেননি। নিজেকে বিপন্ন করে হলেও, তার মায়ের কাছে দেয়া কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। আমার কাছে আমার বাবা পুরো পৃথিবীর সেরা বাবা।
২১ ফ্রেব্রুয়ারি আমার বড় সন্তান মালিহার জন্মদিন, সেদিন বিকালে আমার ছোট ভাই মাসুদ ফোন করে বাবার খুবই অসুস্থতার খবর জানালো। পরবর্তী একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে ভর্তি করানো হলো।
উন্নত চিকিৎসা চলছিল ডাক্তার প্রায়ই বলতে লাগলেন, আপনার বাবার খুবই খারাপ অবস্হা আল্লাহকে ডাকেন। হাসপাতালের করিডোরে মা, ছোট ভাই-বোনসহ আত্নীয়রা আশাবাদী ছিলেন তারা বারংবার আল্লাহকে স্মরণ করছে আমি বড় সন্তান হিসেবে মাকে বলতে পারিনি বাবার শারীরিক অবস্হা চরম অবনতির দিকে। আমি আল্লাহকে স্মরণ করছি আর ঢুকরে ঢুকরে কান্না করছি। আমাকে নিয়ে বাবার গর্বের শেষ ছিলো না। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে মা, ভাই-বোনকে আমার হাতে তুলে দিলেন। বাবা মৃত্যুর পূর্বেও ইশারায় নামাজ আদায় করলেন, আমি তাইয়ামুম করে দিলাম। এরকম ঈমানদার হাজি মানুষ ছিলেন আমার বাবা।

ভাবছি কত বড় ভরসা আমাদের ছেড়ে চলে গেল, যা প্রভাব চলে যাওয়ার সাথে সাথেই টের পাচ্ছি। যিনি অসুস্থ অবস্থায়ও বটবৃক্ষের মতো রোদ, বৃষ্টি, ঝড় থেকে আগলে রেখেছিলেন। আমাদের পরিবার ছিল সম্পূর্ণ বাবার আয়ের উপর নির্ভরশীল। অথচ একজন আধুনিক মানুষ হিসেবে বাবাকে দেখিনি কখনো তার কর্তৃত্ব আমাদের উপরে চাপিয়ে দিয়েছেন বা সিংহ পুরুষ হিসেবে আম্মার প্রতি অসদাচরণ করছেন। বাবা একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ হওয়া সত্ত্বেও খুব বেশি কিছু চাইতে পারতেন না। কিন্তু বাবা যা চাইতেন, তা এখন অনেকেই চান না বা চাইতে পারেন না। তিনি চাইতেন পরিবারের ও তার আশেপাশের সবাই যেন সুখে থাকে, আনন্দে থাকে, ভাল থাকে।
জীবনের অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে সন্তানদের নিরাপদে দাঁড়িয়ে থাকা, পুরো পরিবারের বেঁচে থাকা, তা সম্ভব হয় একজন ভালো বাবার জন্যই। বাবারা সন্তানের জীবনের ছায়া শক্তি। একজন আধুনিক ও প্রগতিশীল বাবা তার সন্তানদের শেখাবেন মানুষকে ভালবাসার কথা। শেখাবেন ভালবাসা খুব মূল্যবান জিনিস, তা পেতে চাইলে আগে মানুষকে ভালবাসতে হবে। আর কীভাবে মানুষকে ভালবাসতে হয়, কীভাবে দুঃখ-কষ্টকে জয় করতে হয়, সৎ থেকে বাঁচা যায়, সেটাও বাবারাই সন্তানকে শেখান।
সন্তানের জন্য বাবার ভালোবাসা অসীম, অকৃত্রিম, স্বার্থহীন। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবর সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আছেন। মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে একটি ঘটনা সবাইকে হতচকিত করে। বাবরপুত্র হুমায়ুন জটিল রোগে আক্রান্ত হলেন। বাঁচার কোনো আশা রইল না। সম্রাট বাবর রোগগ্রস্ত পুত্রকে বাঁচাতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন তাঁর নিজের জীবনের বিনিময়ে পুত্রের জীবন। হুমায়ুন সুস্থ হয়ে ওঠেন আর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বাবর। এমন স্বার্থহীন যাঁর ভালোবাসা, সেই বাবাকে সন্তানের খুশির জন্য জীবনের অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয়।
জানি না আমার মনের এই আর্তি, আকুতি , আমার কষ্ট বোধ, আমার ভালবাসা বাবা ওপারে থেকে শুনতে পারছেন কী না বা বুঝতে পারছেন কী না! তবুও বলবো, বাবা অনেক ভালোবাসি তোমায়!! মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের কাছে প্রার্থনা করি, “তিনি যেন আমার বাবাকে মাফ করে দেন এবং জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন ”।

 

                                         লেখক : মো. মামুন হাসান
মাননীয় বিরোধীদলীয় নেতার সহকারী একান্ত সচিব, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন