লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল ডা.তপন কুমারের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
- আপডেট সময় : ১১:১৭:১৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
- / ৭০
আশরাফুল হক, লালমনিরহাট:
উত্তরের সীমান্তবর্তী একটি জেলা নাম লালমনিরহাট। ৫টি উপজেলা, ২টি পৌরসভা,৪৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ জেলা। প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস। এসব মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য লালমনিরহাট জেলা সদর হাসপাতাল রয়েছে। ধাপে ধাপে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যা, এরপর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল উন্নীতকরণ করা হলেও সেবারমান মোটেই বাড়েনি। শয্যা সংকটের কারনে ভবনের বারান্দা, সিঁড়ি ও মেঝেতে থাকতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। প্রয়োজনীয় ওষুধ সরকার সরবরাহ করলেও তা কালোবাজারে বিক্রি’র অভিযোগ অনেক দিন থেকে। অন্যদিকে রাতে কিংবা গভীর রাতে কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েই তাঁকে রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে (রেফার্ড) করা হয়।
কথায় কথায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীর স্বজনদের ভয়ভীতি দেখিয়ে রেফার্ড করা হয় রংপুরে। তাই রোগীরা ক্ষোভের সাথে জেলা সদর হাসপাতাল এর নাম রেখেছেন, এখন রেফার্ড হাসপাতাল।
জানা গেছে, ২৫০ শয্যার অবকাঠামো তৈরি হলেও ১০০ শয্যার অবকাঠামো ও জনবল দিয়ে চালানো হচ্ছে জেলা সদর হাসপাতালের নিয়মিত কার্যক্রম। ১০০ শয্যার জন্য অনুমোদিত চিকিৎসকের পদ সংখ্যা ৪১ জন। কিন্তু হাসপাতালে কর্মরত রয়েছে ২২ জন এবং শূন্য রয়েছে ১৯টি পদ। এ ছাড়াও নার্সদের মন্জুরীকৃত পদ আছে ৭৩ টি। কর্মরত আছেন ৬৫ জন। শূন্য রয়েছে ৮টি পদ। মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ফিজিও) মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (রেডিও) ফার্মাসিষ্ট, টিকিট ক্লার্ক, ওয়ার্ড মাষ্টার, ল্যাব অ্যাটেন্ডেন্ট, বাবুর্চি, ডোম, অফিস সহায়ক, স্টেচার বেয়ারার, সুইপার এবং ওয়ার্ড বয় সহ তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির পদগুলোর বেশির-ভাগই এখনো শূন্য রয়েছে। অথচ পর্যায়ক্রমে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যা থেকে বর্তমান ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। রোগীদের দুর্ভোগ কমাতে ২০১৭ সালে নভেম্বর মাসে প্রায় ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল নতুন ভবনটির নির্মান কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালে জুন মাসে ভবনটির কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কয়েকবার সময় বাড়ানোয় এখনো পুরো কাজ শেষ হয়নি। তবে চলতি বছরের জুন মাসে ভবনটির কাজ শেষে হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে।
অভিযোগ উঠেছে, মেডিকেল জুড়ে ডাক্তারের সংখ্যা কম থাকায় ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে না অন্য চিকিৎসকরাও। কেউ বেসরকারি ক্লিনিক নিয়ে ব্যস্থ, কেউ আবার নিজস্ব ক্লিনিকের রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে ব্যস্থ। জেলা হাসপাতালে জটিল কোন অপারেশন তো হচ্ছেই না, ছোট কোন অপারেশনেও হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের কাছে শুনতে হয় নানা অজুহাত। তাহলে মেডিকেলের রোগীদের কি হবে, প্রশ্ন থেকেই যায়। রোগীদের দুর্ভোগ, চিকিৎসক ও নার্সদের ব্যবহার
খারাপ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নোংরা, দুর্গন্ধের যেন কোন বালাই নেই।
সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের দীঘলটারী গ্রামের মিঠু মিয়া (২৮) বলেন, আমার স্ত্রী মোর্শেদা বেগম সন্তান প্রসবের ব্যর্থা অনুভাব হলে সদর হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে ভর্তি করি। কিন্তু ওই হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. তপন কুমার রায় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা দায়িত্বে থাকলেও রোগীকে দেখতে আসেন না। বার বার ডাকতে গেলেও খারাপ ব্যবহার করেন। রোগী ব্যর্থায় কাতরাচ্ছে আর নার্সরা মোবাইল নিয়ে ব্যস্থ আছেন। অনেক বার বলার পরে ডা. তপন কুমার রায় এসে বলেন, রোগীর অবস্থা খারাপ দ্রুত ক্লিনিকে ভর্তি করতে হবে। তার কথা মতে, আমার স্ত্রীকে ক্লিনিকে ভর্তি করার পর ছেলে সন্তান প্রসব হয়।
পৌরসভার নবীনগরের বাসিন্দা রাশেদা বেগম (৩৪) জানান, গত ১৫ ডিসেম্বর হঠাৎ তার ছেলের পা কেটে যাওয়ায় গুরুতর আহত হয়। সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ডাক্তার বলেছে, এই হাসপাতালে অর্থবেটিক ডাক্তার নেই। রোগীকে রংপুরে নিয়ে যান, অন্য এক চিকিৎসক বলেছে, ক্লিনিকে থেকে চিকিৎসা নিলেই তারাতারি সুস্থ হয়ে যাবে। পরবর্তী সময়ে বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার ও পরামর্শ দেন চিকিৎসা হবে, কিন্তু এই মহুর্তে অপারেশন করতে ব্যয় হবে ৩৫ হাজার টাকা। মা রাশেদা অসহায় হয়ে ভাবতে ভাবতে এক পর্যায়ে রাত ১২ টায় ছেলেকে নিয়ে রংপুর মেডিকেল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
পৌরসভার ওয়াললেস কলোনির বাসিন্দা এম.এ হান্নান (৪৫) নামে এক অভিভাবক ক্ষোভ নিয়ে বলেন, গত মাসের ১৪ তারিখে আমার ১৫ দিন বয়সের নাতনি অসুস্থ হলে নিবীর পর্যবেক্ষেনে রাখা হয়েছিলো। সেখানে ডাক্তার নার্সদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। নার্সদের ব্যবহার অত্যন্ত খারাপ। শিশু ওয়ার্ডে ডাক্তার তপন কুমার রায় রোগীদের ঠিকমত চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে না। রোগীদের দেখাশোনা না করে নিজস্ব বেসরকারি ক্লিনিকে সময় দেওয়ায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শত শত শিশু। হান্নান কাঁদতে কাঁদতে আরো বলেন, আমার ১৫ দিনের নাতনি সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে ২৯ নভেম্বর মেডিকেলে মারা গেছে।
নিজের ক্লিনিকে কতটা সময় দেয় এমন প্রশ্নে ডা. তপন কুমার রায় বলেন, আমার কোন ক্লিনিক নেই। এটি আমার নামে মিথ্যা রটানো হচ্ছে। ঠিকমত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন না এমন প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে শিশু ডাক্তার সংকট, আমি একাই। এখন শীতকালীন সময়ে রোগীদের চাপ অনেকটা বেশি। যার কারনে চিকিৎসা সেবা দিতে একটু সমস্যা হচ্ছে।