লালমনিরহাটে সোনার বাংলা বহুমুখী সমবায় সমিতি’র আড়ালে চলছে রমরমা দাদন ব্যবসা
- আপডেট সময় : ০৪:৪৯:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
- / ৬৮
লালমনিরহাট সংবাদদাতা:
লালমনিরহাটে সমবায়ের রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে সোনার বাংলা বহুমুখী সমবায় সমিতি’র আড়ালে চলছে রমরমা দাদন ব্যবসা। যা সমবায় নীতিমালার বহিভুর্ত কাজ। সমবায় কর্মকর্তারা নিরব ভূমিকায়। একই ধরনের পেশায় নিয়োজিত কয়েকজন ব্যক্তি একত্রিত হয়ে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করাই হলো সমবায় সমিতি’র লক্ষ্য। সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার মূল শক্তি থাকে পারস্পারিক সমঝোতা সহযোগিতা ও সমতা বিধান। এর প্রধান উদ্দেশ্য পারস্পারিক কল্যাণ সাধন, মুনাফা অর্জন নয়। লালমনিরহাট সদর উপজেলার রেল স্টেশন সংলগ্ন মায়ের দোয়া ডেকোরেটর দোকানের পেছন অংশে
সোনার বাংলা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে একটি সমিতি রয়েছে। সেটি মূলত দাদন ব্যবসা (ঋণ বিতরণই) উক্ত সমিতি’র মূল কাজ। সেখান থেকে ঋন নিয়ে নিশ্ব হয়েছেন অনেকে।
যে কোন ব্যাংকের দুইটি সাদা (ব্লাঙ্ক) চেক নিয়ে প্রতিদিন কিস্তিতে পরিশোদের শর্তে অর্থ ঋণ বা দাদন দেয়া হয়। ১৫ শতাংশ মুনাফার শর্তে ঋণ দেয়া হলেও কিস্তিতে পরিশোদের সময় নেয়া হচ্ছে ৩৬/৪০ শতাংশ হারে। শুধু তাই নয় বিলম্ব ফি ২০ শতাংশ এবং প্রসেস ফি ২০ শতাংশ হিসাবে আরো অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ হারে আদায় করা হচ্ছে সেই অর্থ। হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। ফলে ঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পরিবর্তে সমিতির সদস্যরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদনহীন সমিতি’র আড়ালে চলছে উচ্চহারে সুদের রমরমা ব্যবসা। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতারণা করে চালানো হচ্ছে সুদের কারবার। এতে ছোট-খাটো ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নিম্ন পর্যায়ের দিনমজুরদের গুনতে হচ্ছে বড় অংকের সুদ। আর প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে রাতারাতি আঙুল ফলে কলা গাছে পরিণত হয়েছে দাদন ব্যবসায়ি জাসদ নেতা হাসমত আলী।
এক সদস্য’র বই থেকে জানা যায়, তিনি ঋন গ্রহণ করেছেন (১০,০০০) দশ হাজার টাকা, লভ্যাংশ-সহ পরিশোদ যোগ্য (১১,৫০০) এগারো হাজার পাঁচশত টাকা (৮০) দিনে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋন পরিশোধ না হলে অবশিষ্ট টাকার ওপর আরো (২০%) লভ্যাংশ যোগ করা হয়। সব মিলে হিসেব করে দেখা যায়, এক হাজার টাকায় ৮০ দিনে লভ্যাংশ দিতে হয় প্রায় ৪ শত টাকা। আবার ক্ষেত্র বিশেষে তার চেয়ে কয়েক গুন বেশি নেয়া হয়। এভাবে দির্ঘদিন থেকে চলছে চড়া সুদের ব্যবসা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সমিতির কয়েকজন সদস্য বলেন, জাসদ নেতা হাসমত আলী সমবায় সমিতি’র সাইন-বোর্ড ব্যবহার করে ও ডেকোরেটর ব্যবসার আড়ালে এভাবে প্রায় “এক কোটি” টাকা সুদের ওপর দিয়েছে। সময় মত টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে পরবর্তীতে তাকে ধরে এনে তিনগুন টাকা আদায় করাসহ বাসা বাড়ি পর্যন্ত লেখে নেওয়া হয়। সমবায় কর্মকর্তাদেরকে প্রতিমাসে মাসোহারার বিনিময় চলছে এটি।
নীতিমালা অনুযায়ী জানা যায়, কার্যকারী সদস্য ১৪জন বা ২১জন তাদের মধ্যে জমাকৃত সঞ্চয়ের টাকা সল্প পরিসরে আদান-প্রদান করা যাবে স্বাবলম্বী করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু কার্যকারী সদস্যদের বাহিরে সাধারণ সদস্যদের মাঝে ঋন কার্যক্রম চালানো নীতিমালা ভর্হিভূর্ত কাজ। সমবায়ের রেজিষ্ট্রেশন করে সাধারণ সদস্যদের মাঝে ঋন কার্যক্রম চলা বেআইনি।
সোনার বাংলা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারন সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫ শত জন। সেই দাদনের টাকা প্রতিদিন উত্তলনের জন্য রয়েছে ৫ জন কর্মী। অবৈধভাবে চলছে সমবায় সমিতি’র অফিসটি।
ওই সমিতির মালিক জাসদ নেতা হাসমত আলীকে কয়েক বার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেনি।
সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রেজাউল করিম এ বিষয়ে বলেন, গত জানুয়ারি মাসে সমিতির রেজিষ্ট্রেশন হয়েছে, রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার জানতে চাইলে তিনি বলতে পারেন নি। সমবায়ের আড়ালে দাদন ব্যবসার কথা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, সবাই করে তাই ওনারাও করে।
জেলা সমবায় কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন সরকার এ বিষয়ে বলেন, শুধু সমিতি’র শেয়ার সদস্যদের মাঝে সল্প হারে ঋন কার্যক্রম করা যাবে। শেয়ার সদস্য ব্যতিত অন্য কোন সদস্যদের মাঝে ঋন কার্যক্রম করা যাবে না। সমিতি’র আড়ালে দাদন ব্যবসার বিষয়টি আমার জানা নেই এ রকম হলে বিষটি আমরা দেখবো।