মুন্সীগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে সরিষার আবাদ
- আপডেট সময় : ০১:৩৯:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৩
- / ৭৭
লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) সংবাদদাতা:
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কলমা ইউনিয়নের পদ্মার চরে এ বছর বিপুল পরিমাণে সরিষার আবাদ করেছেন কৃষকেরা। ফলনও হয়েছে বাম্পার। দেশে ভোজ্যতেলের মোট চাহিদার সিংহভাগই আমদানিনির্ভর। এতে বছরে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। আমদানিতে এগিয়ে সয়াবিন ও পাম অয়েল। দেশে উৎপাদিত তেলের মধ্যে শীর্ষে সরিষা। এছাড়া সয়াবিন, সূর্যমুখীসহ দু-একটি অপ্রচলিত তেলবীজের চাষ হয় সামান্য। বোরো, আমন চাষের মাঝের সময়ে বড় অংশ জমি পতিত থাকে।
এ পতিত জমি ব্যবহারসহ দেশে তেলবীজের উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানিনির্ভরতা অর্ধেকে আনতে তিন বছর মেয়াদি রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করছে সরকার।
রোডম্যাপ বাস্তবায়নে এরই মধ্যে উপজেলায় ফসলের সঙ্গে সরিষার আবাদ ব্যাপকভাবে বাড়ানোর প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। মিলতে শুরু করেছে তার সুফলও। এ বছর সারাদেশে ব্যাপকভাবে বেড়েছে সরিষার চাষাবাদ।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে উপর্যুপরি কয়েক বছর ধরে আলু চাষ করে লোকসান দিচ্ছিলেন তাঁরা। চলতি বছর ৩৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ৪ হাজার কৃষককে দেওয়া হয়েছে প্রণোদনাও। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০ হেক্টর বেশি অর্থাৎ মোট ৪৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে কলমার ৩০০ হেক্টর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলেই সরিষার আবাদ হয়েছে। সর্ষের খেতগুলোকে দেখলে মনে হয় হলুদের বন। চোখ ফেরানো দায়। কিছু কিছু জমির সরিষা গাছের হলদে ফুল ঝরে দানায় পরিণত হয়েছে। সেখানে আবার হলুদের সর্ষে বন সবুজ বনে রূপ নিয়েছে। দানা বেঁধে রূপ নেওয়া সবুজ রঙের সর্ষে বনের দিকে তাকালে চোখ ও মন দুটোই জড়িয়ে যায়। কৃষকেরা সরিষার এমন আবাদে মহাখুশি। তাঁরা এখন দিন গুনছেন পাকা সরিষা ঘরে তোলার।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ৪ হাজার সরিষাচাষিকে প্রণোদনা হিসেবে ১ কেজি করে বীজ, ১০ কেজি এমওপি ও ১০ কেজি ডিএপি সার দেওয়া হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল বারি ১৪ ও বারি ১৭ এবং বিনা ৪ ও বিনা ৯ জাতের সরিষা আবাদ করে চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। ফলন বাড়াতে মাঠ সহকারীরা তাঁদের প্রয়োজনীয় পরামর্শও দিচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলনও হয়েছে ভালো।
লৌহজং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলার কৃষকেরা মূলত আলুর আবাদ করে থাকেন। কিন্তু আলুর চাহিদা ও দাম দিন দিন কমে যাওয়ায় এবং বিপরীতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ক্রমাগত কয়েক বছর ধরে তাঁরা লোকসান গুনছেন। বিষয়টি অনুধাবন করে আমরা কৃষকদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। কারণ, এতে খরচ কম লাভ বেশি। উৎপাদনের ৮০ দিনের মাথায় খেত থেকে ঘরে সরিষা তোলা যায়। প্রতি বিঘা সরিষা আবাদে কৃষকদের ৪-৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিঘা প্রতি জমিতে ৬-৭ মণ সরিষা উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। ৪ হাজার টাকা মণ হিসেবে খরচ বাদে কৃষকদের প্রতি বিঘায় ২০-২৫ হাজার টাকা লাভ হবে। তিনি আরও জানান, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে এ উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। কিন্তু চলতি বছরে আবাদ হয়েছে ৪৫০ হেক্টর অর্থাৎ আগের চেয়ে তিন গুণ। লৌহজংয়ের পদ্মার চরে ৩শ হেক্টর জমিতে প্রায় ৪৫০ মেট্রিক টন সরিষার উৎপাদন হবে এবং তা থেকে ১৫০ মেট্রিক টন খাঁটি সরিষার তেল পাওয়া যাবে। এর বাজারমূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
সরিষার ব্যাপক চাষাবাদ ও ফলন দেখতে মঙ্গলবার কলমা ইউনিয়নের পদ্মার চর পূর্ব বান্দেগাঁও, কসাই ও আটংয়ে ছুটে যান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওসমান গণি তালুকদার, ভাইস চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন তপন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিনা ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুল আউয়াল, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. ওয়াহিদুর রহমান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুবুল আলম মনিরসহ বিশিষ্ট জনেরা। তাঁরা স্পিডবোটে করে উপজেলার ভূমি অফিসের সামনে থেকে দুপুর ১২টার দিকে রওয়ানা দেন। ৭/৮ কিলোমিটার দূরত্বের কলমা ইউনিয়নের পদ্মার শাখা নদীর চর তিনটি আধা ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যান অতিথিরা। সেখানে তাঁদের স্বাগত জানান কলমা ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব শেখসহ অন্যরা। বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে রোপণ করা সরিষার ক্ষেত দেখে বিস্মিত হন তাঁরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা ঘুরে, ছবি তুলে, কৃষকদের সাথে কথা বলে সরিষার বনে সময় কাটান। পরে কলমা ইউনিয়নের ভরাকর গ্রামে কৃষকদের সঙ্গে মাঠ দিবসেও অংশ নেন অতিথিরা।