০২:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

সিদ্ধিরগঞ্জে মাদকের ছোবলে যুবসমাজ, প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবৃদ্ধ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৬:৪১:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৫২

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সহজলভ্য হওয়ায় মাদকে ঝুঁকছে যুবসমাজ। দীর্ঘদিন যাবত মুড়ি-মোয়ার মতো বিক্রি হচ্ছে নেশাজাতক এসব মাদকদ্রব্য। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদকের অভিযানে মাথা ব্যাথা নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।

বাংলাদেশের শিল্পনগরীর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা নারায়ণগঞ্জ। এ জেলার অধীনে থাকা গুরুত্বপূর্ণ থানা হচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জ। এই থানা এলাকাতেই আদমজী ইপিজেড, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ডিপিডিসি, র‌্যাব-১১ এর সদর দপ্তর, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও সরকারি-বেসরকারীর মতো অসংখ্য প্রতিষ্ঠান অবস্থিত।

একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান ও স্কুল-কলেজ থাকায় ঘনবসতিপূর্ণ এরিয়ায় পরিণত হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ। সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, ২ লাখ ৫৬ হাজারের মতো জনসংখ্যা থাকলেও তার চেয়ে অধিক জনসংখ্যা রয়েছেন এ থানা এলাকায়।

সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেখানে মাদকের উপর জিরো টলারেন্স চালু রেখেছে। সেখানে এ থানার অলিগলিতে প্রকাশ্যে মাদকের রমরমা কারবার করে যাচ্ছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। মাদকের ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে উদীয়মান শিক্ষার্থীরা। অলিগলিতে হাতের নাগালেই মিলছে সমাজ নষ্টের এইসব অস্ত্র।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদকের হট স্পটগুলো হলো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) ১নং ওয়ার্ডের হীরাঝিল পচারখ্যাত মাঠ ও পুরোনো পট্টি, মিজমিজি টিসি রোডস্থ হোসেনের বাড়ির আশপাশ, পাগলাবাড়ি, বাতানপাড়া ক্যানেলপাড়, মজিববাগ, সিআইখোলা ও পাইনাদী নতুন মহল্লা কলশি বিল্ডিংয়ের খালপার। ২নং ওয়ার্ডের মিজমিজি দক্ষিণপাড়া, পশ্চিমপাড়া বিল, দশপাইপ শহীদ নগর ডাম্পিং ও হাজেরা মার্কেট। ৩নং ওয়ার্ডের রসূলবাগ, বিক্রমপুর বোডিং এর আশপাশ, গ্রীন গার্ডেন রেস্টুরেন্টের পেছনে, বায়তুল সালাম জামে মসজিদ পাশস্থ চান্দু মিয়ার বাড়ির সামনে এবং আদর্শ নগরের রিকশার গ্যারেজ। ৪নং ওয়ার্ডস্থ আটি হাউজিং, বাগানবাড়ি, শিমরাইল মোড় ট্রাক স্ট্যান্ড, পরিত্যক্ত টাইগার মিল, মনোয়ার জুট মিল ও তাজ জুট মিল। ৫নং ওয়ার্ডের শীতলক্ষ্যা নদীরপাড়, সাইলোগেট ট্রাকস্ট্যান্ড, আজীবপুর এবং কলাবাগ এলাকা। ৬নং ওয়ার্ডের বিহারী ক্যাম্প, চর-সুমিলপাড়া, নতুন বাজার, মুনলাইট এবং সাত ঘোড়া সিমেন্ট কোম্পানির আশেপাশের এলাকা। ৭নং ওয়ার্ডের কদমতলী ১০ তলা সংলগ্ন এম.ডব্লিউ কলেজের পিছনের অংশ, কদমতলী মধ্যপাড়ার মনিরের মাঠ। ৮নং ওয়ার্ড এনায়েত নগরের মেম্বার বাড়ির পেছনে এবং ক্যানেলপাড় এলাকা।

সিদ্ধিরগঞ্জ বাজার এলাকার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র আমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এক সময় আমাদের এলাকার ছেলে-মেয়ে ফুটবল ক্রিকেটে মগ্ন ছিল। আর এখন তারা মাদকে আসক্ত। এর জন্য দিন দিন সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখনই যদি মাদক নিয়ন্ত্রণে না আনা হয়, তাহলে সামনে আরো ভয়াবহ দিন আসবে।

মিজমিজি বাতানপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবু বকর সিদ্দিক সিয়াম জানান, আমাদের ঘর থেকে বের হলেই দেখি মাদক কেনা-বেচা। দিবা-রাত্রি সার্বক্ষণিক চলে এর রমরমা ব্যবসা। তবে নাম পরিচয় বললে হয়তো আমাকেই নানান ক্ষতির শিকার হওয়া লাগবে।

নাসিক ৩নং ওয়ার্ডের গ্রীন গার্ডেনের পাশস্থ বাসিন্দা মো. জীবন মিয়া বলেন, আমাদের যুবসমাজ ধ্বংসের মুখে। আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা জানান, প্রশাসন সবসময় মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স চালু রেখেছে। আমরা ইতিমধ্যে মাদকের অভিযানের জন্য মিটিং করেছি। মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকা কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে মাদক সেবন ও কারবারিদের গ্রেফতার করা হবে। আমি এ থানায় সদ্য যোগদান করেছি। তাই ইতিমধ্যে এখানকার কারবারিদের তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করেছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

সিদ্ধিরগঞ্জে মাদকের ছোবলে যুবসমাজ, প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবৃদ্ধ

আপডেট সময় : ০৬:৪১:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৩
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সহজলভ্য হওয়ায় মাদকে ঝুঁকছে যুবসমাজ। দীর্ঘদিন যাবত মুড়ি-মোয়ার মতো বিক্রি হচ্ছে নেশাজাতক এসব মাদকদ্রব্য। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদকের অভিযানে মাথা ব্যাথা নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।

বাংলাদেশের শিল্পনগরীর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা নারায়ণগঞ্জ। এ জেলার অধীনে থাকা গুরুত্বপূর্ণ থানা হচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জ। এই থানা এলাকাতেই আদমজী ইপিজেড, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ডিপিডিসি, র‌্যাব-১১ এর সদর দপ্তর, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও সরকারি-বেসরকারীর মতো অসংখ্য প্রতিষ্ঠান অবস্থিত।

একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান ও স্কুল-কলেজ থাকায় ঘনবসতিপূর্ণ এরিয়ায় পরিণত হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ। সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, ২ লাখ ৫৬ হাজারের মতো জনসংখ্যা থাকলেও তার চেয়ে অধিক জনসংখ্যা রয়েছেন এ থানা এলাকায়।

সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেখানে মাদকের উপর জিরো টলারেন্স চালু রেখেছে। সেখানে এ থানার অলিগলিতে প্রকাশ্যে মাদকের রমরমা কারবার করে যাচ্ছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। মাদকের ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে উদীয়মান শিক্ষার্থীরা। অলিগলিতে হাতের নাগালেই মিলছে সমাজ নষ্টের এইসব অস্ত্র।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদকের হট স্পটগুলো হলো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) ১নং ওয়ার্ডের হীরাঝিল পচারখ্যাত মাঠ ও পুরোনো পট্টি, মিজমিজি টিসি রোডস্থ হোসেনের বাড়ির আশপাশ, পাগলাবাড়ি, বাতানপাড়া ক্যানেলপাড়, মজিববাগ, সিআইখোলা ও পাইনাদী নতুন মহল্লা কলশি বিল্ডিংয়ের খালপার। ২নং ওয়ার্ডের মিজমিজি দক্ষিণপাড়া, পশ্চিমপাড়া বিল, দশপাইপ শহীদ নগর ডাম্পিং ও হাজেরা মার্কেট। ৩নং ওয়ার্ডের রসূলবাগ, বিক্রমপুর বোডিং এর আশপাশ, গ্রীন গার্ডেন রেস্টুরেন্টের পেছনে, বায়তুল সালাম জামে মসজিদ পাশস্থ চান্দু মিয়ার বাড়ির সামনে এবং আদর্শ নগরের রিকশার গ্যারেজ। ৪নং ওয়ার্ডস্থ আটি হাউজিং, বাগানবাড়ি, শিমরাইল মোড় ট্রাক স্ট্যান্ড, পরিত্যক্ত টাইগার মিল, মনোয়ার জুট মিল ও তাজ জুট মিল। ৫নং ওয়ার্ডের শীতলক্ষ্যা নদীরপাড়, সাইলোগেট ট্রাকস্ট্যান্ড, আজীবপুর এবং কলাবাগ এলাকা। ৬নং ওয়ার্ডের বিহারী ক্যাম্প, চর-সুমিলপাড়া, নতুন বাজার, মুনলাইট এবং সাত ঘোড়া সিমেন্ট কোম্পানির আশেপাশের এলাকা। ৭নং ওয়ার্ডের কদমতলী ১০ তলা সংলগ্ন এম.ডব্লিউ কলেজের পিছনের অংশ, কদমতলী মধ্যপাড়ার মনিরের মাঠ। ৮নং ওয়ার্ড এনায়েত নগরের মেম্বার বাড়ির পেছনে এবং ক্যানেলপাড় এলাকা।

সিদ্ধিরগঞ্জ বাজার এলাকার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র আমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এক সময় আমাদের এলাকার ছেলে-মেয়ে ফুটবল ক্রিকেটে মগ্ন ছিল। আর এখন তারা মাদকে আসক্ত। এর জন্য দিন দিন সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখনই যদি মাদক নিয়ন্ত্রণে না আনা হয়, তাহলে সামনে আরো ভয়াবহ দিন আসবে।

মিজমিজি বাতানপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবু বকর সিদ্দিক সিয়াম জানান, আমাদের ঘর থেকে বের হলেই দেখি মাদক কেনা-বেচা। দিবা-রাত্রি সার্বক্ষণিক চলে এর রমরমা ব্যবসা। তবে নাম পরিচয় বললে হয়তো আমাকেই নানান ক্ষতির শিকার হওয়া লাগবে।

নাসিক ৩নং ওয়ার্ডের গ্রীন গার্ডেনের পাশস্থ বাসিন্দা মো. জীবন মিয়া বলেন, আমাদের যুবসমাজ ধ্বংসের মুখে। আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা জানান, প্রশাসন সবসময় মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স চালু রেখেছে। আমরা ইতিমধ্যে মাদকের অভিযানের জন্য মিটিং করেছি। মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকা কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে মাদক সেবন ও কারবারিদের গ্রেফতার করা হবে। আমি এ থানায় সদ্য যোগদান করেছি। তাই ইতিমধ্যে এখানকার কারবারিদের তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করেছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন