০৮:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

লাখাইয়ে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ শুরু

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৪:৫২:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৭৪

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

হবিগঞ্জ সংবাদদাতা:

লাখাইয়ে মুড়িয়াউক ইউনিয়নের সাতাউক গ্রামের মৌচাষী ছুরত আলীর ২৯ মৌবাক্স থেকে মধু সংগ্রহ শুরু হয়েছে। শুক্রবার (১৩ জানুয়ারী) সকালে দেখা গেছে চলতি মৌসুমে প্রথম বারের মতো মধু সংগ্রহ করেন মৌচাষী ছুরত আলী। শীতের তীব্রতা উৎপাদন কম হওয়া সত্বেও এক সপ্তাহে ২৯ টি মৌবাক্স থেকে প্রায় ৬০লিটার মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। এদিকে সরিষা নির্ভর মধু চাষ লাখাইর অন্যকোন মাঠে করা হয়নি। তা করতে পারলে উৎপাদন বহুগুন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। প্রতি বছরের ন্যায় চলতি মৌসুমে লাখাইয়ে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে হলুদের সমারোহ। যে দিকে চোখ যায় শুধু হলুদের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। মৃদুমন্দ বাতাসে দোলছে সরিষার ফুল। লাখাইর মুড়িয়াউক, সাতাউক,মোড়াকরি, গুনিপুর,সিংহগ্রাম, বামৈ,করাব,মৌবাড়ি সহ প্রতিটি মাঠে এ দৃশ্য নজরকাড়ার মত দৃশ্য।
লাখাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, চলতি মৌসুমে লাখাইয়ে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ হাজার ১২০ হেক্টর কিন্তু চাষ হয়েছে ২ হাজার ৪ শত হেক্টরেরও বেশী জমি।বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যা কোন কোন জমিতে ফুল ফুটেছে, আবার কোনটিতে ফুল ফোটার উপক্রম। সরজমিন উপজেলার বিভিন্ন মাঠ পরিদর্শন কালে সাতাউক ও মুড়িয়াউক গ্রামের কয়েকজন সরিষা চাষির সাথে আলাপকালে জানান এবছর সরিষার ফলন আশানুরূপ হওয়ায় তারা প্রত্যাশিত মুনাফা অর্জন করতে পারবেন বলে আশাবাদী।
সাতাউক গ্রামের সাজু মিয় া(৫৫) জানান আমি ২ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। সমুদয় খরচ হয়েছে ৩ হাজার টাকার মতো। আমি আশাবাদী যে ফলন হয়েছে তাতে ২ বিঘায় ৬-৭ মন সরিষা পাব। এতে আমার খরচ বাদে ২০-২৫ হাজার টাকার মতো মুনাফা হবে।
মুড়িয়াউক গ্রামের মাঠে আলাপ হয় এ গ্রামের চাষী আব্দুল কবির (৬০) এর সাথে। তিনি জানান আমি এ বছর আমার ৪ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। এতে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকার মতো। আশাকরি আমার জমিতে যে ফলন হয়েছে তাতে ২২-২৪ মন সরিষা পাব। এতে আমার ৭০-৮০ হাজার টাকার মতো মুনাফা হবে। তিনি আরোও জানান আমাদের মাঠে বোরোধান আবাদ হয়না যেহেতু এ মাঠে এখনো ডিপটিউবওয়েল বসেনি বা এর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তাই আমরা শুধু বোনা আমনের উপর নির্ভরশীল। আর বোনা আমনের ফলন খুব কম। প্রতি বিঘায় বড়জোর ৬ মন। এতে খরচ বাদে মুনাফা হয়না।তাই আমরা রবিশস্য সরিষার উপর মূলত নির্ভর করে আসছি। এ সরিষা থেকে নিজেদের তেলের চাহিদা মিটে এবং বাড়তি যে অর্থ পাই তাতে সংসারের খরচ মেটাতে সমর্থ হই।
মুড়িয়াউক গ্রামের আলকাছ মিয়া, রুবেল মিয়া জানান আমাদের ধান চাষে তেমন কোন লাভ হয়না তাই আমরা সরিষা, গম,ধনিয়ার মতো ফসল যখন যেটা সুবিধাজনক মনে হয় তা আবাদ করে আসছি। এ বছর সরিষা বেশ লাভজনক হওয়ার আশাবাদী। এদিকে সরিষার আবাদ বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে হবিগঞ্জ থেকে মৌচাষী ছুরত আলী উপজেলার সাতাউক মাঠ মৌবাক্স স্থাপন করেছেন। তিনি ২০১৫ সাল থেকে লাখাইয়ের কোন না কোন মাঠে মধু সংগ্রহ করে আসছেন।এ বছর সাতাউক মাঠে মৌবাক্স নিয়ে আসা মৌচাষী জানান লাখাইয়ে সরিষা নির্ভর মধু আহরনের সম্ভাবনাময় অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও অন্য কোন মৌচাষী আসেন না কারন এ এলাকার কৃষকেরা বুঝে না বুঝে সরিষার জমিতে কীট নাশক ছিটিয়ে দিয়ে দেয়।এতে মৌমাছি মারা পড়ে। তবে দিন দিন অনেক কৃষকের মাঝে সচেনতা সৃষ্টি হওয়ায় তারা আমাকে সহযোগিতা করছে।তাছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও আমাকে সহযোগিতা করছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাকিল খন্দকার বলেন, লাখাইয়ে সরিষা নির্ভর মধু সংগ্রহ করতে আমরা মৌচাষীদের সহযোগিতা করে আসছি। লাখাই উপজেলার প্রতিটি সরিষার মাঠ থেকে যাতে মধু আহরিত হয় সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। মৌচাষীদের সাথে যোগাযোগ করে আসছি। তিনি আরোও জানান মৌমাছি সরিষার পরাগায়নে সহায়তা করে থাকে এবং সরিষায় রোগ-বালাই কম হয়ে থাকে। এতে ফলন ১৫-২০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

লাখাইয়ে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ শুরু

আপডেট সময় : ০৪:৫২:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৩
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

হবিগঞ্জ সংবাদদাতা:

লাখাইয়ে মুড়িয়াউক ইউনিয়নের সাতাউক গ্রামের মৌচাষী ছুরত আলীর ২৯ মৌবাক্স থেকে মধু সংগ্রহ শুরু হয়েছে। শুক্রবার (১৩ জানুয়ারী) সকালে দেখা গেছে চলতি মৌসুমে প্রথম বারের মতো মধু সংগ্রহ করেন মৌচাষী ছুরত আলী। শীতের তীব্রতা উৎপাদন কম হওয়া সত্বেও এক সপ্তাহে ২৯ টি মৌবাক্স থেকে প্রায় ৬০লিটার মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। এদিকে সরিষা নির্ভর মধু চাষ লাখাইর অন্যকোন মাঠে করা হয়নি। তা করতে পারলে উৎপাদন বহুগুন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। প্রতি বছরের ন্যায় চলতি মৌসুমে লাখাইয়ে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে হলুদের সমারোহ। যে দিকে চোখ যায় শুধু হলুদের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। মৃদুমন্দ বাতাসে দোলছে সরিষার ফুল। লাখাইর মুড়িয়াউক, সাতাউক,মোড়াকরি, গুনিপুর,সিংহগ্রাম, বামৈ,করাব,মৌবাড়ি সহ প্রতিটি মাঠে এ দৃশ্য নজরকাড়ার মত দৃশ্য।
লাখাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, চলতি মৌসুমে লাখাইয়ে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ হাজার ১২০ হেক্টর কিন্তু চাষ হয়েছে ২ হাজার ৪ শত হেক্টরেরও বেশী জমি।বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যা কোন কোন জমিতে ফুল ফুটেছে, আবার কোনটিতে ফুল ফোটার উপক্রম। সরজমিন উপজেলার বিভিন্ন মাঠ পরিদর্শন কালে সাতাউক ও মুড়িয়াউক গ্রামের কয়েকজন সরিষা চাষির সাথে আলাপকালে জানান এবছর সরিষার ফলন আশানুরূপ হওয়ায় তারা প্রত্যাশিত মুনাফা অর্জন করতে পারবেন বলে আশাবাদী।
সাতাউক গ্রামের সাজু মিয় া(৫৫) জানান আমি ২ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। সমুদয় খরচ হয়েছে ৩ হাজার টাকার মতো। আমি আশাবাদী যে ফলন হয়েছে তাতে ২ বিঘায় ৬-৭ মন সরিষা পাব। এতে আমার খরচ বাদে ২০-২৫ হাজার টাকার মতো মুনাফা হবে।
মুড়িয়াউক গ্রামের মাঠে আলাপ হয় এ গ্রামের চাষী আব্দুল কবির (৬০) এর সাথে। তিনি জানান আমি এ বছর আমার ৪ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। এতে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকার মতো। আশাকরি আমার জমিতে যে ফলন হয়েছে তাতে ২২-২৪ মন সরিষা পাব। এতে আমার ৭০-৮০ হাজার টাকার মতো মুনাফা হবে। তিনি আরোও জানান আমাদের মাঠে বোরোধান আবাদ হয়না যেহেতু এ মাঠে এখনো ডিপটিউবওয়েল বসেনি বা এর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তাই আমরা শুধু বোনা আমনের উপর নির্ভরশীল। আর বোনা আমনের ফলন খুব কম। প্রতি বিঘায় বড়জোর ৬ মন। এতে খরচ বাদে মুনাফা হয়না।তাই আমরা রবিশস্য সরিষার উপর মূলত নির্ভর করে আসছি। এ সরিষা থেকে নিজেদের তেলের চাহিদা মিটে এবং বাড়তি যে অর্থ পাই তাতে সংসারের খরচ মেটাতে সমর্থ হই।
মুড়িয়াউক গ্রামের আলকাছ মিয়া, রুবেল মিয়া জানান আমাদের ধান চাষে তেমন কোন লাভ হয়না তাই আমরা সরিষা, গম,ধনিয়ার মতো ফসল যখন যেটা সুবিধাজনক মনে হয় তা আবাদ করে আসছি। এ বছর সরিষা বেশ লাভজনক হওয়ার আশাবাদী। এদিকে সরিষার আবাদ বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে হবিগঞ্জ থেকে মৌচাষী ছুরত আলী উপজেলার সাতাউক মাঠ মৌবাক্স স্থাপন করেছেন। তিনি ২০১৫ সাল থেকে লাখাইয়ের কোন না কোন মাঠে মধু সংগ্রহ করে আসছেন।এ বছর সাতাউক মাঠে মৌবাক্স নিয়ে আসা মৌচাষী জানান লাখাইয়ে সরিষা নির্ভর মধু আহরনের সম্ভাবনাময় অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও অন্য কোন মৌচাষী আসেন না কারন এ এলাকার কৃষকেরা বুঝে না বুঝে সরিষার জমিতে কীট নাশক ছিটিয়ে দিয়ে দেয়।এতে মৌমাছি মারা পড়ে। তবে দিন দিন অনেক কৃষকের মাঝে সচেনতা সৃষ্টি হওয়ায় তারা আমাকে সহযোগিতা করছে।তাছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও আমাকে সহযোগিতা করছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাকিল খন্দকার বলেন, লাখাইয়ে সরিষা নির্ভর মধু সংগ্রহ করতে আমরা মৌচাষীদের সহযোগিতা করে আসছি। লাখাই উপজেলার প্রতিটি সরিষার মাঠ থেকে যাতে মধু আহরিত হয় সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। মৌচাষীদের সাথে যোগাযোগ করে আসছি। তিনি আরোও জানান মৌমাছি সরিষার পরাগায়নে সহায়তা করে থাকে এবং সরিষায় রোগ-বালাই কম হয়ে থাকে। এতে ফলন ১৫-২০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন