দৌড়ে চ্যাম্পিয়ান হতে চায় জিন্নাত, স্বপ্নপূরণে পদে পদে বাঁধা
- আপডেট সময় : ০৪:২৫:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৩
- / ৭৪
মোক্তার হোসেন,কয়রা:
সময়টা করোনা মহামারীর আগে ২০১৮ সাল, প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে দৌড় প্রতিযোগিতায় জাতীয় চ্যাম্পিয়ান হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে স্কুল পর্যায়ে সেরা দৌড়বিদের পুরুস্কার পায় জিন্নাত। ছোট বেলা স্কুলে দৌড়ে সবার আগে যেত আবার ছুটি হলেও এক দৌড়ে সবার আগে বাড়ি পৌঁছে যেত। এভাবেই প্রাথমিক পর্যায়ে খেলাধুলায়ও সবসময়ই প্রথম হওয়া সেই মেয়েটি জাতীয় পর্যায়ে দৌড়ে চ্যাম্পিয়ান হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এলাকার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সে দৌড়ে বারবার প্রথম হয়েছে।
খুলনার সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের মেয়ে জিন্নাত ফাতেমা আক্তার মিম। ছয় বোনের মধ্যে সেই সবার ছোট। বাবা মো.মফিজুল ইসলাম মোল্লা একজন ক্ষুদ্র কাঁচামাল ব্যবসায়ী। মা আয়শা খাতুন গৃহিণী। জিন্নাত লেখাপড়ার প্রাথমিক পর্ব শেষ করে ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অভাবে সংসারে জিন্নাত এখনো দৌড়ানোটা ধরে রেখেছে। মাধ্যমিক পর্যায়েও দৌড়ে আঞ্চলিক পর্যায়ে রানার্সআপ হয়।
ছোটবেলা হতে স্বপ্ন দেখত উসেইন বোল্টের মত দৌড়বিদ হয়ে অলিম্পিকে অংশ নিয়ে দেশের জন্য স্বর্ণপদক জিতে আনতে। তাই পড়াশুনার পাশাপাশি দৌড়ানোটা ধরে রেখেছে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে গ্রামের রাস্তায় দৌড়ায়। গ্রামের রাস্তায় তার দৌড়ানোর প্র্যাকটিস এলাকার লোকজন স্বাভাবিক ভাবে না নিলেও তাঁর মা ও পরিবারের অন্যদের সহযোগিতায় সে স্বপ্ন দেখে একদিন চ্যাম্পিয়ান হবেই।সেই সঙ্গে বিদ্যালয়ে ছুটির পরে দৌড় প্রতিযোগিতার সব কলাকৌশল রপ্ত করার প্র্যাকটিস করতে থাকে। এখন সে কয়রার আমাদী জায়গীর মহল তকিমউদ্দীন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত দৌড়,উচ্চলাফ প্রতিযোগিতায় সবসময় প্রথম হয়ে থাকে জিন্নাত।
স্বপ্নপূরণে সে খুলনায় বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করেন, প্রথমবার এক সপ্তাহের জন্য ঢাকাতে ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার সুযোগ পায় কিন্তু দুইবার অংশ নিয়েও তাকে বিকেএসপিতে নেওয়া হয়নি। জিন্নাতের ভাষায় তার থেকে কম উচ্চতায় বিকেএসপিতে নেওয়া হয়েছে অথচ তার উচ্চতা ৪ ফিট ১১ ইঞ্চি হওয়ার পরও তাকে নেওয়া হয়নি। বারবার স্বপ্ন পূরণ করতে প্রতিবার লক্ষ্যে পৌছে জয়ী হতে পারছে না মেধাবী জিন্নাত।
দৌড়বিদ জিন্নাত ফাতিমা আক্তার মিম ২০১৮ সালে আন্তঃপ্রাথমিক বিদ্যালয় ক্রিয়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ান, ৪৯ তম বাংলাদেশ জাতীয় স্কুল, মাদ্ররাসা, কারিগরি শিক্ষা শীতকালীন পর্যায়ে খুলনা জেলা চ্যাম্পিয়ান এবং ২০২০ সালে উপআঞ্চলিক স্কুল,মাদ্ররাসা ও কারিগরি ক্রিয়া সমিতির প্রতিযোগিতায় অসুস্থ থাকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে জিন্নাত ফাতিমা আক্তার মিম বলেন, জাতীয় পর্যায় ও সব জায়গায় ভাল ফলাফল হওয়া স্বত্ত্বেও আমি বিকেএসপিতে চান্স পাচ্ছিনে। গরীব ঘরের সন্তান হওয়ায় ও যোগাযোগ না থাকায় আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে উচ্চতা কম অভিযোগে। কিন্তু আমার জায়গায় যাকে নেওয়া হয়েছে সে আমার চেয়েও উচ্চতায় কম ছিল। বিকেএসপিতে খেলার সুযোগ পেলে আমি দৌড়ে চ্যাম্পিয়ান হতে পারবো, অলিম্পিকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করে স্বর্ণ পদক অর্জন করতে চাই। আমি দৌড়াতে চাই এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রথম হয়ে এদেশের মুখ উজ্জ্বল করতে চাই। আমার স্বপ্ন ও যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও আমার লক্ষ্যে পৌছাতে পারছিনা। যা আমার জন্য অনেক কষ্টের, বার বার লক্ষ্যে পৌঁছেও দ্বারপ্রান্ত থেকে হতাশ হয়ে একবুক কষ্ট নিয়ে ফিরতে হচ্ছে ঘরে।