রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে সুস্থ করার কেউ নেই?
- আপডেট সময় : ০১:৫৪:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৩
- / ৬৭
মাটি মামুন, রংপুর:
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে সুস্থ করার কেউ নেই? মাস তিনেক আগে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। গুরুতর অসুস্থ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রধান ফটক রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অসাধু ব্যক্তিদের দৌরাত্মোয় অতিষ্ঠ রোগী ও স্বজনেরা। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকও যদি রোগী হন কিংবা রোগীর স্বজন হন, তাঁরাও অসহায় দুর্বৃত্ত চক্রের কাছে। অবস্থা এমন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
এদিকে হাসাপাতালের পরিচালক শরিফুল হাসান প্রশাসনিক কার্যালয়ে অফিস চলাকালীন সময় তালা ঝুলিয়ে ভিতরে বসে থাকেন সকাল ১০ থেকে দুপুর আড়াইটা প্রযর্ন্ত বাহিরে পাহাড়ায় রাখেন আনসার বাহিনীর সদস্য দের। অফিসে কোনো কাজ করতে হলে আগে তার অনুমতি নিতে হবে। অনেকেরই অভিযোগ,সরকারদলীয়দের যোগসাজশে বহাল তবিয়তে আছে হাসপাতালের সিন্ডিকেট।
সব সময় সরকার দলীয়দের ছত্রচ্ছায়ায় দুর্নীতি এখানে দীর্ঘতর হয়েছে। আজকের এ অবস্থায় আসার নেপথ্যে যে পরিচালকদের তোষণনীতি ছিল না, তা নয়। কোনো পরিচালককে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। অসাধুদের মাথায় তুলে রাখায় অবস্থা এমন হয়েছে যে তারা এখন দায়িত্বশীলদের কান ধরে টানছে।
এই কান ধরে টানাটানি আর গোপনে নেই, প্রকাশ্যেই টানছে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তবে এই দাঁড়ানো ঢের বিলম্ব হয়েছে। শিকড় এদের অনেক গভীরে। অসাধুদের দুর্বৃত্তায়ন ভেঙে ফেলতে হলে এখন অনেক বড় কাজ করতে হবে। লোকদেখানো দু–চারজন ব্যক্তির বদলি আর সাময়িক বরখাস্ত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে সুস্থ করে তুলতে পারবে না।
হাসপাতালে কেউ-ই শখ করে যান না। খুব না ঠেকলে কেউ অন্তত সরকারি হাসপাতালের দিকে মুখ করেন না। যখন রোগী ভর্তি করাতে যান, তখন রোগীর সঙ্গে থাকা মানুষের মানসিক অবস্থা ভালো থাকে না। এমন অবস্থায় তাদের বিপদে ফেলে পদে পদে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মতো জঘন্য কাজ চলে এ হাসপাতালে। সম্প্রতি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক রাসেদুর আমির এর মায়ের চিকিৎসার সময়ও এসব দালাল ছাড় দেয়নি।
তিনি লিখিত অভিযোগ করলে হাসপাতালের পরিচালক দুজন কর্মচারীকে বরখাস্ত করেন সেটাও চুক্তি ভিত্তিক কর্মচারী। গত ২৬ সেপ্টেম্বর হাসপাতালটিতে সম্মিলিত চিকিৎসক সমাজ একটি মানববন্ধন করে। ব্যানারে লেখা ছিল ‘অসাধু চক্রের দৌরাত্ম্য, অব্যবস্থাপনা ও জনদুর্ভোগের প্রতিবাদে মানববন্ধন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ মানববন্ধন ইতিহাস হয়ে থাকবে। যাঁরা হাসপাতালের নিয়ম প্রতিষ্ঠা করবেন, দৌরাত্ম্য বন্ধ করবেন, জনদুর্ভোগ বন্ধ করবেন, তাঁরাই মানববন্ধন করেছেন। তার মানে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কতটা ভয়াবহ হলে চিকিৎসকেরাও এমন নিরুপায় হন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ মানববন্ধনকে আমলে নিয়েছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ১৬ জন কর্মচারীকে, ২ অক্টোবর উপপরিচালক, সহকারী পরিচাললকসহ ৩ কর্মকর্তাকে বদলি করেছে। উপপরিচালক এবং সহকারী পরিচালকেরা চিকিৎসক। তাহলে শুধু যে অসাধু কর্মচারীর দৌরাত্ম্য নয়, এর নেপথ্যে কর্তাব্যক্তিরাও আছেন, তা দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। আমরা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুস্থতা চাই।যেকোনো সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষও যেন গিয়ে সঠিক সেবা পায়,সেটা আমাদের প্রত্যাশা। আমরা জানি, সরকারি হাসপাতাল ভালো চললে প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক স্বাস্থ্য ব্যবসায়ীদের জন্য তা সুখের হবে না। সরকারি হাসপাতালকে অকার্যকর করার ক্ষেত্রে এসব ব্যবসায়ী চিকিৎসকের হাত আছে কি না, তা–ও খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে বলে আমি মাটি মামুন মনে করি। দেশে কি এমন একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে পাওয়া যাবে না, যিনি উদ্যোগ নিয়ে এ হাসপাতালকে সুস্থ করে তুলবেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসচিব, রংপুরের যেকোনো মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, মেয়রসহ এমন কি কাউকে পাওয়া যাবে না, যিনি এ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে পারেন। বদলি, সাময়িক বরখাস্ত করে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মান নিশ্চিত করা যাবে না। আমরা অপেক্ষায় আছি, কেউ না কেউ রংপুর বিভাগের দুই কোটি মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার পরিবেশ ফিরিয়ে আনবেন।