বিয়ের নামে শিক্ষিকা’র প্রতারণা-নিকাহ রেজিষ্টারসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
- আপডেট সময় : ০৯:১০:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৩
- / ৬৪
লালমনিরহাট সংবাদদাত:
বিয়ের নামে প্রবাসীর পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করার অভিযোগে সেই মাদরাসা শিক্ষিকাসহ তিনজনের নামে লালমনিরহাট আদালতে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী নিঃস্ব প্রবাসী কামরুজ্জামান। মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে লালমনিরহাট অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-২ এ মামলাটি দায়ের করেন।
বাদী ভুক্তভোগী কামরুজ্জামান আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বারঘড়িয়া গ্রামের মনির উদ্দিনের ছেলে। বর্তমানে আদিতমারী টিঅ্যান্ডটি পাড়ার বাসিন্দা। তিনি লিবিয়া প্রবাসী। মামলার বিবরণে জানা যায়, জীবন গড়তে লিবিয়ায় পাড়ি জমান কামরুজ্জা- মান। পাঁচ বছর কাজ শেষে দেশে ফেরেন তিনি। একই উপজেলার সারপুকুর মসুর দৈলজোর গ্রামের আব্দুর রউফের মেয়ে কলেজ পড়ুয়া আলেমা খাতুনকে গত ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি বিয়ে করেন। স্বপ্ন পূরণে স্ত্রীকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও বিএড শেষ করান। এরই মাঝে তাদের সংসারে আব্দুল্লাহ বিন জামান নামে এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। লালমনিরহাট নেছারীয়া মাদরাসার ইবতেদায়ী শাখার সহকারী শিক্ষক পদে চাকরিও নিয়ে দেন স্ত্রীকে। চাকরির পরে আচরণ পাল্টে ফেলেন আলেমা খাতুন। নিজের নামে বাড়ি, গাড়ি ও জমি রেজিস্ট্রির দাবি জানান। বৃদ্ধা শাশুড়িকে বাড়ি থেকে সড়াতে বলেন। কিন্তু মাকে ছাড়তে রাজি না হওয়ায় কোলের সন্তান ফেলে প্রবাসী কামরুজ্জামানকে ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তালাক দেন আলেমা খাতুন। এরপর একমাত্র ছেলে সন্তানকে নিয়ে বড় একা হয়ে পড়েন প্রবাসী কামরুজ্জামান। পাঁচ বছরের সন্তানকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করেন।
দীর্ঘ দেড় বছর মাদরাসার পাশে বিভিন্ন বাসায় ভাড়া থেকে চাকরি চালিয়ে যান সহকারী শিক্ষক আলেমা খাতুন। এরপর নতুন কৌশল শুরু করেন। পুনরায় কামরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিয়ের প্রলোভন দেন। পাঁচ বছরের সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আবারও আলেমার প্রতারণার ফাঁদে পা দেন প্রবাসী কামরুজ্জামান। গত ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট আলেমা খাতুন তার মাদরাসার শিক্ষক ও নিকট আত্মীয় সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়ন নিকাহ রেজিস্টার কাজী ফয়সাল আহমেদের বাসায় কামরুজ্জামানকে ডেকে নেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে নতুন করে বিবাহ রেজিস্ট্রি বহিতে এবং একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেন তারা। এরপর ওই নিকাহ রেজিস্টারের বাসায় ছেলে সন্তানকে নিয়ে মাসিক দুই হাজার টাকায় ভাড়ায় থাকা শুরু করেন তারা। ভালোবাসা দেখিয়ে স্বামীর কাছে পুনরায় গহনা কিনে নেন আলেমা খাতুন। এরপর স্বামীকে ব্যাংকে চাকরি নিয়ে দেওয়ার কথা বলে পাঁচ লাখ টাকাও নেন তিনি। এর তিন মাস পরে আবারও ছেলেকে তার বাবার গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে ভাড়া বাসার সব আসবাবপত্র নিয়ে পালিয়ে যান আলেমা খাতুন। এরপর মাদরাসায় দেখা করতে গেলে স্বামীকে গালমন্দ করে তাড়িয়ে দেন।
খোঁজ খবর নিয়ে স্বামী কামরুজ্জমান জানতে পারেন, পুনরায় করা বিয়ের তালাক না দিয়ে লালমনিরহাট পূবালি ব্যাংকের কর্মচারী রেজাউল ইসলামকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেছেন তার স্ত্রী আলেমা খাতুন। তবে আলেমা খাতুন ও তার নতুন স্বামীর সঙ্গে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে গিয়েও দেখা করতে পারেননি তিনি। দ্বিতীয় বিয়ের কাবিননামা উঠাতে গেলে নিকাহ রেজিস্টার কাজী ফয়সাল এফিডেভিটের ফটোকপি দিয়ে বিদায় করেন কামরুজ্জামানকে। তখন তিনি বুঝতে পারেন টাকা হাতিয়ে নিতে নিকাহ রেজিস্টার ফয়সাল, ব্যাংকের কর্মচারী রেজাউলসহ তার স্ত্রী আলেমা পরিকল্পনা করে তার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এমন অভিযোগে গত ১৯ ডিসেম্বর “বিয়ের নামে প্রতারণা মাদরাসার শিক্ষিকা” শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যা মুহূর্তে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয় এবং অনেকেই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এ ঘটনায় নিঃস্ব প্রবাসী কামরুজ্জামান বাদী হয়ে মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) লালমনিরহাট অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-২ এ ওই শিক্ষিকা আলেমা খাতুন, সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়ন নিকাহ রেজিস্ট্রার ফয়সাল আহম্মেদ ও রুপালী ব্যাংক কর্মচারী রেজাউলের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে আদিতমারী থানা পুলিশকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন।
লালমনিরহাট জেলা জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রুমাইনুল ইসলাম রিপন বলেন, আদালত বাদীর আবেদন গ্রহন করে তদন্ত করতে আদিতমারী থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।