১১:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

শীত মৌসুমেও দেখা মিলছে না, শীতের ঐতিহ্য খেজুর রস

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৪:৩৪:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ৬৫

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা:

গ্রীষ্ম কালে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু এবং শীতে খেজুরের রস খেতে না পারলে মনেই হয় না মৌসুমের পরিবর্তন এসেছে। শীত এলেই শহর থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের হাট বাজার গুলোতে খেজুর রস বিক্রির ধুম পড়ে যেত।কিন্তু নেত্রকোনায় ভরা শীত মৌসুমেও এবার দেখা মিলছে না খেজুর রসের। পুরো জেলাতেই প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে খেজুর গাছ। কোথাও দেখা মিলছে না খেজুর রস আরোহণকারী গাছিদের। এক সময় মানুষের বাড়িতে, সড়কের পাশে সারি সারি খেজুর গাছ দেখা যেত। শীতের মৌসুম শুরু হতেই রস আহরণকারী গাছিরা গ্রামে গিয়ে রস আহরণের জন্য খেজুর গাছগুলোকে পাইল করতেন। পাইল করার কয়েক দিন পরেই শুরু হয় গাছগুলোতে হাঁড়ি বাঁধা। এখন আর খেজুর গাছ নেই বললেই চলে বৃহস্পতিবার নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে।
এ নিয়ে বারহাট্টা উপজেলার গড়মা, বারঘর ও কাশবন গ্রামের খেজুর গাছি ও এলাকাবাসীরা জানান, খেজুরে রস এখন প্রায় বিলুপ্ত বললেই চলে। এক সময় গ্রামের প্রায় সব মানুষ শীতের সকালে বাজার করতে গিয়ে প্রথমেই এক গ্লাস খেজুরের রস খেয়ে শীতের আমেজকে জানান দিতেন। এখন আর সেই দৃশ্য দেখা যায় না বললেই চলে।
খেজুর গাছি শহীদ মিয়া বলেন, আগে সব এলাকাতেই গাছ ছিল। প্রতি শীত মৌসুমে গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে ভালো মুনাফা অর্জন হতো। বর্তমানে বিভিন্ন ভাবে পরিবেশ দূষণের কারণে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আগের মতো রস সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। মাটির উর্বরতা কমে গেছে তাই, খেজুর গাছের হাঁড়িতে আগের মতো রস আসে না। আগে সকালে হাঁড়ি নামিয়ে রস নিয়ে যাওয়ার পরও গাছে ফোঁটায় ফোঁটায় অবিরত ঝড়তে থাকত দুপুর পর্যন্ত।

সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে দেশের গ্রামাঞ্চলে বেশি বেশি খেজুর গাছ রোপণ করা প্রয়োজন। তাহলে হয়তো আমাদের ছেলেমেয়েদের মাঝে সেই খেজুর রসের পিঠা উৎসব ও শীতকে ঘিরে গ্রামবাংলা থেকে হারিয়ে যাওয়া বাঙালির আনন্দ-উল্লাস আবারো ফিরে আসবে।
বারহাট্টার গোবিন্দপুর গ্রামে লিটন সরকার বলেন, গত বছর অনেক খোঁজাখুঁজি করে বারহাট্টা সদর এলাকায় খেজুর রস খেয়েছিলাম। তবে, এ বছর এখনো দেখা মেলেনি খেজুর রসের। তিনি আরও বলেন, দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুর গাছ। যা আছে সেগুলো থেকে রস পড়ে না। তাই আগ্রহ থাকলেও সহজে মিলছে না রস। এখন যদি সরকারি / বেসরকারি উদ্যোগে দেশের গ্রাম অঞ্চলে বেশী বেশী খেজুর গাছ রোপণ করা হয়। তাহলে হয়তো আমাদের ছেলে মেয়েদের মাঝে সেই খেজুর রসের পিঠা উৎসব ও শীতকে ঘিরে গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাওয়া বাঙালীর আনন্দ-উল্লাস আবারও ফিরে আসবে।
বারহাট্টা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাকিবুল হাসান বলেন, খেজুরের রসের সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতির একটি মিল রয়েছে। নানা কারণেই দিন দিন খেজুর গাছগুলো হারিয়ে যাওয়ায় সেই ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। খেজুর গাছ রোপণে সরকারি কোনো প্রকল্প নেই। তবে কোনো কৃষক যদি খেজুর গাছ রোপণের আগ্রহ প্রকাশ করে তাহলে কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

শীত মৌসুমেও দেখা মিলছে না, শীতের ঐতিহ্য খেজুর রস

আপডেট সময় : ০৪:৩৪:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা:

গ্রীষ্ম কালে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু এবং শীতে খেজুরের রস খেতে না পারলে মনেই হয় না মৌসুমের পরিবর্তন এসেছে। শীত এলেই শহর থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের হাট বাজার গুলোতে খেজুর রস বিক্রির ধুম পড়ে যেত।কিন্তু নেত্রকোনায় ভরা শীত মৌসুমেও এবার দেখা মিলছে না খেজুর রসের। পুরো জেলাতেই প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে খেজুর গাছ। কোথাও দেখা মিলছে না খেজুর রস আরোহণকারী গাছিদের। এক সময় মানুষের বাড়িতে, সড়কের পাশে সারি সারি খেজুর গাছ দেখা যেত। শীতের মৌসুম শুরু হতেই রস আহরণকারী গাছিরা গ্রামে গিয়ে রস আহরণের জন্য খেজুর গাছগুলোকে পাইল করতেন। পাইল করার কয়েক দিন পরেই শুরু হয় গাছগুলোতে হাঁড়ি বাঁধা। এখন আর খেজুর গাছ নেই বললেই চলে বৃহস্পতিবার নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে।
এ নিয়ে বারহাট্টা উপজেলার গড়মা, বারঘর ও কাশবন গ্রামের খেজুর গাছি ও এলাকাবাসীরা জানান, খেজুরে রস এখন প্রায় বিলুপ্ত বললেই চলে। এক সময় গ্রামের প্রায় সব মানুষ শীতের সকালে বাজার করতে গিয়ে প্রথমেই এক গ্লাস খেজুরের রস খেয়ে শীতের আমেজকে জানান দিতেন। এখন আর সেই দৃশ্য দেখা যায় না বললেই চলে।
খেজুর গাছি শহীদ মিয়া বলেন, আগে সব এলাকাতেই গাছ ছিল। প্রতি শীত মৌসুমে গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে ভালো মুনাফা অর্জন হতো। বর্তমানে বিভিন্ন ভাবে পরিবেশ দূষণের কারণে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আগের মতো রস সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। মাটির উর্বরতা কমে গেছে তাই, খেজুর গাছের হাঁড়িতে আগের মতো রস আসে না। আগে সকালে হাঁড়ি নামিয়ে রস নিয়ে যাওয়ার পরও গাছে ফোঁটায় ফোঁটায় অবিরত ঝড়তে থাকত দুপুর পর্যন্ত।

সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে দেশের গ্রামাঞ্চলে বেশি বেশি খেজুর গাছ রোপণ করা প্রয়োজন। তাহলে হয়তো আমাদের ছেলেমেয়েদের মাঝে সেই খেজুর রসের পিঠা উৎসব ও শীতকে ঘিরে গ্রামবাংলা থেকে হারিয়ে যাওয়া বাঙালির আনন্দ-উল্লাস আবারো ফিরে আসবে।
বারহাট্টার গোবিন্দপুর গ্রামে লিটন সরকার বলেন, গত বছর অনেক খোঁজাখুঁজি করে বারহাট্টা সদর এলাকায় খেজুর রস খেয়েছিলাম। তবে, এ বছর এখনো দেখা মেলেনি খেজুর রসের। তিনি আরও বলেন, দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুর গাছ। যা আছে সেগুলো থেকে রস পড়ে না। তাই আগ্রহ থাকলেও সহজে মিলছে না রস। এখন যদি সরকারি / বেসরকারি উদ্যোগে দেশের গ্রাম অঞ্চলে বেশী বেশী খেজুর গাছ রোপণ করা হয়। তাহলে হয়তো আমাদের ছেলে মেয়েদের মাঝে সেই খেজুর রসের পিঠা উৎসব ও শীতকে ঘিরে গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাওয়া বাঙালীর আনন্দ-উল্লাস আবারও ফিরে আসবে।
বারহাট্টা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাকিবুল হাসান বলেন, খেজুরের রসের সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতির একটি মিল রয়েছে। নানা কারণেই দিন দিন খেজুর গাছগুলো হারিয়ে যাওয়ায় সেই ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। খেজুর গাছ রোপণে সরকারি কোনো প্রকল্প নেই। তবে কোনো কৃষক যদি খেজুর গাছ রোপণের আগ্রহ প্রকাশ করে তাহলে কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন