০৯:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

দেড় বছরেই বেহাল ১০ কোটি টাকার সড়ক

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৪:১৪:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২২
  • / ৭৩

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

অতিরিক্ত পরিমাণে ভারী যানবাহন চলাচলের ফলে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক ক্যানেলপাড় থেকে লিংক রোড পর্যন্ত সড়কটিতে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে চালক, পথচারী ও যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া চলাচল করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় ছোট যানবাহনগুলো নানা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। মৌচাক ক্যানেলপাড়-লিংক রোডে সরেজমিনে গিয়ে এমনই চিত্র লক্ষ্য করা যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটির বিভিন্ন অংশে কার্পেটিং উঠে গিয়ে সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে। বর্তমানে যানবাহনগুলোকে এ সড়ক দিয়ে অনেক ঝুকিঁ নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে করে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। অনেক যাত্রী অটোরিকশা থেকে পড়ে গিয়ে আহত হচ্ছেন। বৃষ্টি হলে এ সড়ক দিয়ে চলাচলরত যাত্রীদের দুর্ভোগের পরিমাণ বেড়ে যায় আরো কয়েকগুণ।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মৌচাক ক্যানেলপাড়-লিংক রোড পর্যন্ত “মুক্তিযোদ্ধা সড়ক” নির্মাণ করা হয়। ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী সড়কটির উদ্বোধন করেন। এই সড়কটি নির্মাণের পূর্বে সিদ্ধিরগঞ্জের বাসিন্দারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে নারায়ণগঞ্জ যেত। মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় মুক্তিযোদ্ধা সড়কটি নির্মাণ হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জগামী বেশিরভাগ যানবাহনগুলো এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে থাকে। এর ফলে ছোট-মাঝারি যানবাহন ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভারী যানবাহন চলাচল ও যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করে সড়কটি দখল করে রাখায় নির্মাণের ১ বছর পর পরই সড়কটি বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে।

রফিক মিয়া নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, সড়কটি নির্মাণ হওয়ার পর আমরা অনেক উপকৃত হই। আমরা এই সড়কটি ব্যবহার করে খুব সহজেই মৌচাক থেকে নারায়ণগঞ্জ পৌঁছে যেতে পারি। কিন্তু রাস্তার বেহাল দশার কারণে এখন এই সড়কটি ব্যবহার করি না। অতি দ্রুত এই সড়কটি সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি আমরা। এদিকে সড়কটি নির্মাণে ঠিকাদারের গাফিলতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ঠিকমতো সড়ক নির্মাণ করলে এতো তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যেতো না।

কথা হয় ইসমাইল হোসেন নামের এক রিকশাচালকের সঙ্গে। তিনি জানান, সড়কটির অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় এবং সড়কের দুপাশে সবসময় বড় বড় গাড়ি পার্কিং করে রাখায় আমাদের এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বড় যানবাহনগুলো সড়কটি দিয়ে চলাচল করতে পারলেও ছোট যানবাহনগুলো চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি ডা. আল ওয়াজেদুর রহমান বলেন, আমাদের যে মুক্তিযোদ্ধা সড়ক রয়েছে সেটি উদ্বোধন করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। উদ্বোধনের পর এই সড়কটি বাইপাস সড়ক হিসেবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের মতো কাজ করছে। কিন্তু এই সড়কে নিয়ন্ত্রণের শৃঙ্খলা নেই। প্রচুর পরিমাণে ভারী যানবাহন এ সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। এর ফলে রাস্তাটি অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে। গত বর্ষাতে রাস্তার প্রায় ৬০% অংশই ভেঙ্গে গেছে। ফলে প্রায়ই এই সড়কে নানা দুর্ঘটনা ঘটছে । আমরা এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি তারা যেনো দ্রুত এ রাস্তাটি মেরামত করেন। আমরা প্রায়ই দেখি বিকেল থেকে এই সড়কটিতে বিভিন্ন ভারী যানবাহন রেখে সড়কটি দখল করে রাখেন। এ বিষয়ে আমরা পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যেনো তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে এ সড়কটি যান চলাচলের জন্য উপযোগী করে তোলেন।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন জানান, এ সড়কটি নির্মাণ করার পর এলাকাবাসী অনেক উপকৃত হয়েছিলেন। কিন্তু মহাসড়কের ভারী যানবাহনগুলো এ সড়ক দিয়ে চলাচল করার ফলে সড়কের অনেক অংশতেই কার্পেটিং উঠে গিয়ে সড়কটি যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত এ সড়কটির সংস্কার করার। ফান্ড এলেই আমরা কাজ শুরু করে দিবো।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আজগর হোসেন জানান, আমাদের ফান্ড স্বল্পতার কারণে এই সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু করতে একটি দেরী হচ্ছে। তবে চেষ্টা করছি খুব দ্রুত কাজ শুরু করার। গাড়ি পার্কিং ও ভারী যানবাহন চলাচলের বিষয়ে তিনি বলেন, সড়ক তো সবসময় আমরা নিয়ন্ত্রণ করি না। আমাদের তেমন লোকবলও নেই। এ বিষয়ে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন থাকতে হবে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

দেড় বছরেই বেহাল ১০ কোটি টাকার সড়ক

আপডেট সময় : ০৪:১৪:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২২
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

অতিরিক্ত পরিমাণে ভারী যানবাহন চলাচলের ফলে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক ক্যানেলপাড় থেকে লিংক রোড পর্যন্ত সড়কটিতে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে চালক, পথচারী ও যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া চলাচল করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় ছোট যানবাহনগুলো নানা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। মৌচাক ক্যানেলপাড়-লিংক রোডে সরেজমিনে গিয়ে এমনই চিত্র লক্ষ্য করা যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটির বিভিন্ন অংশে কার্পেটিং উঠে গিয়ে সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে। বর্তমানে যানবাহনগুলোকে এ সড়ক দিয়ে অনেক ঝুকিঁ নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে করে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। অনেক যাত্রী অটোরিকশা থেকে পড়ে গিয়ে আহত হচ্ছেন। বৃষ্টি হলে এ সড়ক দিয়ে চলাচলরত যাত্রীদের দুর্ভোগের পরিমাণ বেড়ে যায় আরো কয়েকগুণ।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মৌচাক ক্যানেলপাড়-লিংক রোড পর্যন্ত “মুক্তিযোদ্ধা সড়ক” নির্মাণ করা হয়। ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী সড়কটির উদ্বোধন করেন। এই সড়কটি নির্মাণের পূর্বে সিদ্ধিরগঞ্জের বাসিন্দারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে নারায়ণগঞ্জ যেত। মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় মুক্তিযোদ্ধা সড়কটি নির্মাণ হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জগামী বেশিরভাগ যানবাহনগুলো এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে থাকে। এর ফলে ছোট-মাঝারি যানবাহন ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভারী যানবাহন চলাচল ও যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করে সড়কটি দখল করে রাখায় নির্মাণের ১ বছর পর পরই সড়কটি বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে।

রফিক মিয়া নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, সড়কটি নির্মাণ হওয়ার পর আমরা অনেক উপকৃত হই। আমরা এই সড়কটি ব্যবহার করে খুব সহজেই মৌচাক থেকে নারায়ণগঞ্জ পৌঁছে যেতে পারি। কিন্তু রাস্তার বেহাল দশার কারণে এখন এই সড়কটি ব্যবহার করি না। অতি দ্রুত এই সড়কটি সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি আমরা। এদিকে সড়কটি নির্মাণে ঠিকাদারের গাফিলতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ঠিকমতো সড়ক নির্মাণ করলে এতো তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যেতো না।

কথা হয় ইসমাইল হোসেন নামের এক রিকশাচালকের সঙ্গে। তিনি জানান, সড়কটির অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় এবং সড়কের দুপাশে সবসময় বড় বড় গাড়ি পার্কিং করে রাখায় আমাদের এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বড় যানবাহনগুলো সড়কটি দিয়ে চলাচল করতে পারলেও ছোট যানবাহনগুলো চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি ডা. আল ওয়াজেদুর রহমান বলেন, আমাদের যে মুক্তিযোদ্ধা সড়ক রয়েছে সেটি উদ্বোধন করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। উদ্বোধনের পর এই সড়কটি বাইপাস সড়ক হিসেবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের মতো কাজ করছে। কিন্তু এই সড়কে নিয়ন্ত্রণের শৃঙ্খলা নেই। প্রচুর পরিমাণে ভারী যানবাহন এ সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। এর ফলে রাস্তাটি অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে। গত বর্ষাতে রাস্তার প্রায় ৬০% অংশই ভেঙ্গে গেছে। ফলে প্রায়ই এই সড়কে নানা দুর্ঘটনা ঘটছে । আমরা এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি তারা যেনো দ্রুত এ রাস্তাটি মেরামত করেন। আমরা প্রায়ই দেখি বিকেল থেকে এই সড়কটিতে বিভিন্ন ভারী যানবাহন রেখে সড়কটি দখল করে রাখেন। এ বিষয়ে আমরা পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যেনো তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে এ সড়কটি যান চলাচলের জন্য উপযোগী করে তোলেন।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন জানান, এ সড়কটি নির্মাণ করার পর এলাকাবাসী অনেক উপকৃত হয়েছিলেন। কিন্তু মহাসড়কের ভারী যানবাহনগুলো এ সড়ক দিয়ে চলাচল করার ফলে সড়কের অনেক অংশতেই কার্পেটিং উঠে গিয়ে সড়কটি যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত এ সড়কটির সংস্কার করার। ফান্ড এলেই আমরা কাজ শুরু করে দিবো।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আজগর হোসেন জানান, আমাদের ফান্ড স্বল্পতার কারণে এই সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু করতে একটি দেরী হচ্ছে। তবে চেষ্টা করছি খুব দ্রুত কাজ শুরু করার। গাড়ি পার্কিং ও ভারী যানবাহন চলাচলের বিষয়ে তিনি বলেন, সড়ক তো সবসময় আমরা নিয়ন্ত্রণ করি না। আমাদের তেমন লোকবলও নেই। এ বিষয়ে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন থাকতে হবে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন