শেখ রাসেল শিশু কিশোরের সভাপতি পানি আক্তারের বিরুদ্ধে নয় মামলা
- আপডেট সময় : ০৬:১২:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২
- / ৬৪
সিদ্ধিরগঞ্জ সংবাদদাতা:
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা শাখা কমিটির সভাপতি আক্তার হোসেন ওরফে পানি আক্তারের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা চেষ্টা সহ নয়টি মামলা দায়ের হয়েছে থানায়।
আদমজী শিমুলপাড়া রেললাইন এলাকার মৃত করিম কসাইয়ের ছেলে আক্তার হোসেন ওরফে পানি আক্তার। নিজের পূর্ব পুরুষ ধরে বসবাস করেন এখানে। বর্তমানে আদমজী এলাকায় ত্রাসের অপর নামে রুপান্তিত হয়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই।চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক, মারামারিসহ যেকোনো ধরণের অপরাধ তার কাছে তুচ্ছ বিষয়। তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ বা মুখ খুললেই মানুষকে শিকার হতে হয় বিভিন্ন অত্যাচারের।
অনুসন্ধান করে জানা যায়, একসময়ে কষ্টের জীবনযাপন করতেন আক্তার হোসেন। আদমজী ইপিজেডের বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে পানির ব্যবসা করতেন তিনি। তবে আলোচিত-সমালোচিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির ঘনিষ্ঠ কর্মী ক্যাশিয়ার বাবুর হাত ধরে যোগদান করেন কাউন্সিলরের গ্রুপে। একপর্যায়ে মতিউর রহমানের নাতনিকে বিয়ে করেন আক্তার। বিয়ে করেই যেন কপাল খুলে যায় তার।
আদমজী ইপিজেডটি কাউন্সিলর মতির ওয়ার্ডে পড়ায় নিজের নানা শশুরের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে নিজে কোটিপতি বনে গেছেন।
একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইপিক সেভেন, সিম্বা ১,২,৩, টেক্স জিপারসহ আরো কয়েকটি ফ্যাক্টরিতে ব্যবসা রয়েছে তার পানি আক্তারের। এভাবেই বর্তমানে রয়েছে কয়েক কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স ও সম্পত্তি। তার সবধরনের বেপরোয়া কর্মকান্ডের রয়েছে বিশাল বাহিনী। যাদের ধারা নির্যাতন করা হয় ব্যবসায়ী এবং জনসাধারণকে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেড। প্রায় ৫৬টি ফ্যাক্টরি রয়েছে সংরক্ষিত এ এলাকাটিতে। এখানকার বেশিরভাগ ফ্যাক্টরি বিদেশী মালিকানায় পরিচালিত হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে এখানে নানান ব্যবসা করেন লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীগণ। ২০১৪ সালে সিদ্ধিরগঞ্জে আলোচিত সাত খুন ঘটনার পর থেকে একক আধিপত্য বিস্তার করে নিজের রাজত্ব কায়েম করেছেন পানি আক্তার ।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী যুবলীগ সভাপতি ও নাসিক কাউন্সিলর মতির আধিপত্য বিস্তারে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের ঠাই নেই বললেও চলে। তেমনি দীর্ঘদিন যাবত মতিউর রহমান মতির ছায়াতলে থেকে বেপরোয়া হয়ে যান পানি আক্তার। গড়ে তুলেন নিজের বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। তার বাহিনীর হামলার শিকার হয়েছে একাধিক নিরীহ মানুষ।
এদিকে রাজনৈতিক পদের অপব্যবহার করে নানান অপকর্ম করায় মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক প্রকার চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
নাম না প্রকাশ করা শর্তে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ হলে তারা জানান, আমাদের এ থানায় শুধু আওয়ামী লীগ মতির সঙ্গে থাকা মানুষজনই করে বাকিরা অন্য দলের নেতাকর্মী। পানি আক্তারের নামে পত্রিকার শিরোনাম প্রায় সময়ই দেখা যায়। তারপরও নিজেকে দলের নেতা বলে দাবী করে এটা কিভাবে হয়? এদিকে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা আন্দোলন সংগ্রামে থেকেও দলের মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হয়।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ৪ই আগষ্ট হত্যা চেষ্টা মামলা, ২৪ আগষ্ট হত্যাচেষ্টা, ২০২১ সালের ৩০ই জানুয়ারি হত্যা চেষ্টা, একই সালের ১২ই জুলাই হত্যা চেষ্টা, ২০২২ এর জানুয়ারিতে হত্যা চেষ্টা, একই সালের ২৬ এপ্রিল হত্যা চেষ্টা, একই সালের ৩ আগষ্ট মারামারি এবং ডিসেম্বরের ১৩ তারিখ ২৫ লক্ষ টাকার মালামাল চুরির মামলা দায়েরসহ মোট ৯টি মামলা রয়েছে। এরই মধ্যে নানা সময়ে জাতীয় দৈনিকসহ স্থানীয় অনেক পত্রপত্রিকার নিউজের প্রধান শিরোনাম হয়েছে পানি আক্তার। সর্বশেষ আদমজী ইপিজেড এর ভিতরের নির্মাণাধীন একটি ফ্যাক্টিরীর মালমাল ছিনতাই করেন আক্তার বাহিনী। লুণ্ঠিত মালমাল উদ্ধার করা হলেও আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত পানি আক্তারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
পদের বিষয়ে জানতে চাওয়ায় শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোঃ হিরা জানান, আক্তার হোসেনের এসব মামলার বিষয় আমরা জানতাম না। আসলে থানা কমিটির ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সুপারিশ ক্রমে তাকে কমিটির সভাপতি করা হয়েছিল।এবং কমিটিটা দেওয়া হয়েছে তিন থেকে চার বছর পূর্বে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান পিপিএম বার জানান, পানি আক্তার বিরুদ্ধে আমাদের থানায় কোনো পেন্ডিং মামলা নেই তদন্তধীন। যেগুলো আগে ছিলো সেগুলো কোর্টে আছে। গত কয়েকদিন আগে আমাদের থানায় একটি মামলা রেকর্ড হয়েছে সেটা শিল্প পুলিশ তদন্ত করবে। এ একটাই আমাদের কাছে আছে।