১২:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

কয়রায় উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভবনটি বেহাল অবস্থা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৮:২২:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ৪৭

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মোক্তার হোসেন, খুলনা:

দক্ষিণ উপকূলীয় সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রার বেদকাশী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভবনটি দীর্ঘদিন বেহাল অবস্থায় রয়েছে। নেই ডাক্তার, নেই ঔষধ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার দাবি করেও এ ব্যাপারে পাচ্ছেন না কোন ইতিবাচক সাড়া।

কয়রা সদর ইউনিয়নে দুই নম্বর কয়রার উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ১৯৮২ সালে মোংলাই শেখের ওয়ারেশ গনের দান করা ৩৩ শতাংশ জমিতে নির্মিত হয়। শুরুতেই পাকা দেয়াল ও উপরের টিনসেড দিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি তৈরি করা হয়। ১৯৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ঘরটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তৎকালীন আংশিক মেরামত করা হয়। ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলায় আবারো ক্ষতিগ্রস্ত সহ দীর্ঘদিন লবণ পানিতে ডুবে থাকে। স্থানীয়ভাবে সাধারণ মানুষের প্রচেষ্টায় তৎকালীন চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সরকারি একটি টিআর বরাদ্দ পেয়ে ভবনটি সংস্কার করে।

এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সহ কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এলাকাবাসী বারবার জানালে এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ইতিপূর্বে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিদর্শন করলেও অদ্যবধি ভবনটি মেরামত বা নতুন কোন ভবন নির্মাণের জন্য কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে জরাজীর্ণ অবস্থায় যেন অভিভাবকহীন অবস্থায় উপ-স্বাস্হ্য কেন্দ্রটি চলছে। আশে পাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা গরীব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত রোগী এখানে গড়ে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ জন চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। এখানে একজন মেডিকেল অফিসারের একজন সহকারী মেডিকেল অফিসারের একজন ফার্মাসিস্ট একজন পিয়ন একজন নার্স এর পদ থাকলেও দীর্ঘ ২০ বছরের ও বেশি সময় নেই কোন ডাক্তার। একজন ফার্মাসিস্ট উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ নামে মাত্র চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিল কিন্তু মাসখানিক আগে সেও বদলি হয়ে অন্যথায় চলে গেছে।

ইতিপূর্বে এখানে দায়িত্ব নিয়ে যেসব মেডিকেল অফিসার এসেছিলেন তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল কেন কোন কারনে এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোন মেডিকেল অফিসার আসতে চান না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইতিপূর্বে এখানে দায়িত্ব পালন করা একজন মেডিকেল অফিসার বলেন, এখানে ডিউটি করে থাকবো কোথায় ঘরের যা অবস্থা বসে রোগী দেখতেই ভয় লাগে কখন ঘরের চাল ভেঙ্গে মাথায় পড়ে।

উত্তর বেদকাশি গ্রামের বাসিন্দা শেখ দিদারুল ইসলাম বলেন, এ হাসপাতালটি ভালোভাবে চালু থাকলে আমাদেরকে কষ্ট করে আর চিকিৎসা নিতে প্রায় ২০ কিলো দুরে জায়গীরমহল সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হতো না। কয়রায় যেসব প্রাইভেট হাসপাতালে আছে সেখানে চিকিৎসা নিতে গেলে আমাদের সামর্থই কুলায় না। নিরূপায় হয়ে গ্রামের হাতুড়ি ডাক্তার দিয়ে আমাদের চিকিৎসা নিতে হয়। অনেক সময় রোগীর হিতে বিপরীত ঘটে। এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে আকবর হোসেন নামের একজন অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে কোন রকম চালু করে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, এলাকার মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা ভেবে টি এইচ সি স্যারের অনুমতি নিয়ে বিনা বেতনে আমি এখানে মানুষের স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছি। কিন্তু হাসপাতালের ঘরটির যে অবস্থা এখানে বসতে তো ভয় লাগে ।এখানে বসে রোগী দেখার মত কোন পরিবেশ নাই তারপরও দেখছি এখানে প্রচুর গরীব রোগে আসে যাদের ফিস দিয়ে ডাক্তার দেখানোর সামর্থ্য নাই।

এ এলাকার সাধারণ মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা জানতে পেরে কয়রা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম সরজমিনে হাসপাতালটি দেখতে আসেন। এখানকার শত শত মানুষ তার কাছে দাবি রেখে বলেন, আমাদের হাসপাতাল টা একটু মেরামত করার ব্যবস্থা করেন। একজন ডাক্তারের ব্যবস্থা করেন, স্থানীয় মানুষের আবেগ ভরা দাবির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে হাসপাতালটি নতুন ভবনের বাজেটে আনার জন্য আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।

এ ব্যাপারে কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম (টি এইচ ই) বলেন, বেদকাশি স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির অবস্থা খুবই নাজুক। উপর মহলে আমরা বারবার অভিহিত করছি,কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন কাজ হয়নি, এখানে বর্তমান ডাক্তার শুন্য ।একজন অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মী দিয়ে কেন্দ্রটি চালু রাখা হয়েছে।উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির পুরাতন ভবন মেরামত বা নতুন করে ভবন তৈরির ব্যাপারে সরকারিভাবে কোন বাজেট হয়েছে কিনা আমি জানিনা, কতদিন নাগাদ হতে পারে সেটাও সঠিক ভাবে বলতে পারিনা।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

কয়রায় উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভবনটি বেহাল অবস্থা

আপডেট সময় : ০৮:২২:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মোক্তার হোসেন, খুলনা:

দক্ষিণ উপকূলীয় সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রার বেদকাশী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভবনটি দীর্ঘদিন বেহাল অবস্থায় রয়েছে। নেই ডাক্তার, নেই ঔষধ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার দাবি করেও এ ব্যাপারে পাচ্ছেন না কোন ইতিবাচক সাড়া।

কয়রা সদর ইউনিয়নে দুই নম্বর কয়রার উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ১৯৮২ সালে মোংলাই শেখের ওয়ারেশ গনের দান করা ৩৩ শতাংশ জমিতে নির্মিত হয়। শুরুতেই পাকা দেয়াল ও উপরের টিনসেড দিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি তৈরি করা হয়। ১৯৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ঘরটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তৎকালীন আংশিক মেরামত করা হয়। ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলায় আবারো ক্ষতিগ্রস্ত সহ দীর্ঘদিন লবণ পানিতে ডুবে থাকে। স্থানীয়ভাবে সাধারণ মানুষের প্রচেষ্টায় তৎকালীন চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সরকারি একটি টিআর বরাদ্দ পেয়ে ভবনটি সংস্কার করে।

এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সহ কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এলাকাবাসী বারবার জানালে এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ইতিপূর্বে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিদর্শন করলেও অদ্যবধি ভবনটি মেরামত বা নতুন কোন ভবন নির্মাণের জন্য কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে জরাজীর্ণ অবস্থায় যেন অভিভাবকহীন অবস্থায় উপ-স্বাস্হ্য কেন্দ্রটি চলছে। আশে পাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা গরীব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত রোগী এখানে গড়ে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ জন চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। এখানে একজন মেডিকেল অফিসারের একজন সহকারী মেডিকেল অফিসারের একজন ফার্মাসিস্ট একজন পিয়ন একজন নার্স এর পদ থাকলেও দীর্ঘ ২০ বছরের ও বেশি সময় নেই কোন ডাক্তার। একজন ফার্মাসিস্ট উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ নামে মাত্র চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিল কিন্তু মাসখানিক আগে সেও বদলি হয়ে অন্যথায় চলে গেছে।

ইতিপূর্বে এখানে দায়িত্ব নিয়ে যেসব মেডিকেল অফিসার এসেছিলেন তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল কেন কোন কারনে এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোন মেডিকেল অফিসার আসতে চান না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইতিপূর্বে এখানে দায়িত্ব পালন করা একজন মেডিকেল অফিসার বলেন, এখানে ডিউটি করে থাকবো কোথায় ঘরের যা অবস্থা বসে রোগী দেখতেই ভয় লাগে কখন ঘরের চাল ভেঙ্গে মাথায় পড়ে।

উত্তর বেদকাশি গ্রামের বাসিন্দা শেখ দিদারুল ইসলাম বলেন, এ হাসপাতালটি ভালোভাবে চালু থাকলে আমাদেরকে কষ্ট করে আর চিকিৎসা নিতে প্রায় ২০ কিলো দুরে জায়গীরমহল সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হতো না। কয়রায় যেসব প্রাইভেট হাসপাতালে আছে সেখানে চিকিৎসা নিতে গেলে আমাদের সামর্থই কুলায় না। নিরূপায় হয়ে গ্রামের হাতুড়ি ডাক্তার দিয়ে আমাদের চিকিৎসা নিতে হয়। অনেক সময় রোগীর হিতে বিপরীত ঘটে। এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে আকবর হোসেন নামের একজন অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে কোন রকম চালু করে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, এলাকার মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা ভেবে টি এইচ সি স্যারের অনুমতি নিয়ে বিনা বেতনে আমি এখানে মানুষের স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছি। কিন্তু হাসপাতালের ঘরটির যে অবস্থা এখানে বসতে তো ভয় লাগে ।এখানে বসে রোগী দেখার মত কোন পরিবেশ নাই তারপরও দেখছি এখানে প্রচুর গরীব রোগে আসে যাদের ফিস দিয়ে ডাক্তার দেখানোর সামর্থ্য নাই।

এ এলাকার সাধারণ মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা জানতে পেরে কয়রা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম সরজমিনে হাসপাতালটি দেখতে আসেন। এখানকার শত শত মানুষ তার কাছে দাবি রেখে বলেন, আমাদের হাসপাতাল টা একটু মেরামত করার ব্যবস্থা করেন। একজন ডাক্তারের ব্যবস্থা করেন, স্থানীয় মানুষের আবেগ ভরা দাবির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে হাসপাতালটি নতুন ভবনের বাজেটে আনার জন্য আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।

এ ব্যাপারে কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম (টি এইচ ই) বলেন, বেদকাশি স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির অবস্থা খুবই নাজুক। উপর মহলে আমরা বারবার অভিহিত করছি,কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন কাজ হয়নি, এখানে বর্তমান ডাক্তার শুন্য ।একজন অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মী দিয়ে কেন্দ্রটি চালু রাখা হয়েছে।উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির পুরাতন ভবন মেরামত বা নতুন করে ভবন তৈরির ব্যাপারে সরকারিভাবে কোন বাজেট হয়েছে কিনা আমি জানিনা, কতদিন নাগাদ হতে পারে সেটাও সঠিক ভাবে বলতে পারিনা।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন