মতলব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবার মান ভেঙ্গে পড়েছে, সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ
- আপডেট সময় : ০৫:২৪:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৩৬
মমিনুল ইসলাম:
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা ভেঙ্গে পড়েছে বিভিন্ন কারনে। ফলে গত বছরের তুলনায় এবছর সেবা গ্রহনকারী রোগীর সংখ্যাও কমেছে। দায়িত্ব অবহেলা আর বহুপদ শূন্য থাকায় ৩১ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি এখন খুড়ে খুড়ে চলছে।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, আগের মত রোগীর তেমন ভীড় নেই। জরুরী বিভাগেও কোন কোলাহল নেই। কারণ জানতে চাইলে কয়েকজন সেবা গ্রহীতা জানান, আগের মত সেবা এখন আর পাওয়া যায় না। ডাক্তাররা যেসব ওষুধ লিখে এরমধ্যে ৯০ শতাংশ ওষুধই সাপ্লাই নেই। ১০-১২ কিলোমিটার দুর থেকে চিকিৎসা নিতে এসে উল্টো বিপরীত হয়। তাছাড়া জরুরী সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ থাকায় সকল রোগীরা প্রাইভেট হসপিটালে চলে যায়। এছাড়াও রয়েছে পর্যাপ্ত ডাক্তারের অভাব। তাই এই হাসপাতালে আর আগের মত রোগী চিকিৎসা নিতে আসে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শীতের পাদুর্ভাব বাড়ায় মানুষের জ্বরসহ ঠান্ডা জনতি রোগের প্রকোপ বেড়েছে। নিয়মিত এই রোগে আক্রান্ত রোগী আসলেও পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই। তাছাড়া রোগী ভর্তি থাকলে যে খাবার দেওয়া হয় এই খাবার একেবারেই মানহীন। এসব বিষয়টি কর্তৃপক্ষ একেবারেই উদাসীন। গাইনী ডাক্তার না থাকায় গত ৮ মাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে জরুরি সিজারিয়ান অপারেশন। ফলে গর্ভবতী মায়েরাও আগের মত সেবা নিতে আসেন না এই হসপিটালে। মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবল নিয়োগ নেই। যার ফলে অব্যবহৃত চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হিসেবে ডাক্তার সার্জন মিলিয়ে ২৪ জন থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১১ জন। ৩৫ জন নার্সের বিপরীতে আছেন ৩১ জন। স্যাকমো, টেকনোলজিস্ট সহ অন্যান্য পদ শূন্য রয়েছে প্রায় ৩৩ টি। এদিকে ৭৫ জন স্বাস্থ্য সহকারী থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ৪৫ জন।
এমন জনবল সংকটের মধ্যে রয়েছে দায়িত্ব অবহেলা। নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকা, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা অফিস টাইমে অযথা ভীড় জমানো সহ নানান অবহেলায় চলে হাসপাতালের কার্যক্রম। রয়েছে নিয়মিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করার অভিযোগও।
ছেংগারচর পৌরসভা থেকে সেবা নিতে আসা মফিজুল ইসলাম ও নারগিস বেগম সহ একাদিক রোগীরা জানান, আমাদেরকে যা যা ওষুধ লিখে দিছে এরমধ্যে প্যারাসিটামল ছাড়া বাকি সব ওষুধই বাহির থেকে কিনতে হয়। কোন টেস্ট দিলেও বাহির থেকে করাতে হয়। তাহলে আর এই হাসপাতালে এসে কি লাভ? ভর্তি রোগীদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ডাক্তাররা যেসব ওষুধ দেন লিখে, এরমধ্যে ৯০ শতাংশ ওষুধই সাপ্লাই নেই। যেই খাবার দেয় এসব খাবার খাওয়ার কোন উপযোগী নয়। এমনভাবে চলতে থাকলে একসময় রোগী শূন্য হয়ে যাবে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।
মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. একেএম আবু সাইদ বলেন, গাইনী ডাক্তার না থাকায় জরুরি সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা একাধিকবার কতৃপক্ষের নিকট চিঠি লিখেছি। আর আমাদের চিকিৎসা সেবা ভালোই চলছে, তবে একাধিক পদ শূন্য থাকায় আগের মত সেবা দিতে পারছি না। রোগীদের খাবারের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি খোঁজ খবর নিব এবং নিজে ওয়ার্ডে গিয়ে খাবার দেখবো। কোন সমস্যা হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। জাতীয় পতাকার বিষয়ে তিনি বলেন, পতাকা টানাতে মাঝে মধ্যে ভুল হতে পারে।