০২:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

দুর্গাপূজা উপলক্ষে মতলব উত্তরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৬:২৩:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৯৩

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মতলব উত্তর প্রতিনিধি :

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে প্রতিমা তৈরির ধুম পড়েছে। কারিগরদের দম ফেলার ফুসরত নেই। কয়েক দিন বাদেই প্রতিমার গায়ে পড়বে রঙের আঁচড়।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর বাজারে শত বছরের পুরোনো শ্রী শ্রী কালাচান বিগ্রহ মন্দির। এই মন্দিরের ভেতরে এখন শোভা পাচ্ছে ছোট-বড় প্রতিমা। বাঁশ-কাঠ আর কাঁদা মাটি দিয়ে তৈরি প্রতিমাগুলো দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন সনাতন ধর্মের লোকজন। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারনে ব্যয় বেড়েছে প্রতিটি পূজা মণ্ডপের।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ওই মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত মৃৎশিল্পী (কারিগর) সত্যরঞ্জন ।

আগামী (৯ অক্টোবর) বুধবার মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপুজা এবং (১৩ অক্টোবর) রবিবার বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গাপূজা। এর আগে আগামী (২ অক্টোবর) বুধবার মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের শুরু।

সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি মন্দিরে ঘুরে দেখাগেছে, মন্দিরে কারিগরা প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। একনিষ্ঠ চিত্তে নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় মাটি লাগানোর কাজে ব্যস্ত শিল্পীরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেউ কাদা তৈরি করছেন, কেউ আবার কাদা দিয়ে হাত-পা বানাচ্ছেন। বেশিরভাগ এলাকাতেই প্রতিমাতে কাদামাটি লাগানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এরপর শুরু হবে প্রতিমাতে রংতুলির ছোঁয়া ও সাজসজ্জার কাজ।

ছেংগারচর পৌরসভার শ্রী শ্রী কালাচান বিগ্রহ মন্দিরে পূজার প্রতিমা শিল্পী শ্রী সঞ্জয় দাস বলেন, আমি দীর্ঘ ১৮ বছরের বেশি সময় যাবত প্রতিমা তৈরি করে আসছি। দুর্গা প্রতিমা ছাড়াও সকল ধরনের প্রতিমা আমরা তৈরি করি। এবার ১১টি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছি। তবে দ্রব্যমূল্যের সাথে তাল মিলিয়ে রং, তুলি ও সাজসজ্জার দাম বেশি হওয়ায় এবং প্রতিমা তৈরির মজুরি কম পাওয়ায় কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে শিল্পীদের। তবে চলতি বছর প্রতিমার চাহিদা গত বছরের তুলনায় একটু কম।

মৃৎশিল্পী নারায়ণ চক্রবর্তী বলেন, প্রতিবছর দুর্গা প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম ও চাহিদা বাড়লেও বাড়েনি প্রতিমার দাম। তবে চলতি বছর প্রতিমার চাহিদা গত বছরের তুলনায় বেশি। এবার কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবেন তারা।

প্রতিমা তৈরির কারিগর মানিক চন্দ্র দাস বলেন, অতীতে যেভাবে মানুষ মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করত, সেই চাহিদা না থাকায় আমাদের প্রায় সারা বছরই অলস সময় কাটাতে হয়। তবে দুর্গাপূজা চলাকালে প্রতিমা তৈরি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে কোনোমতে সারা বছর সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। আবার চলতি বছর প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতারা প্রতিমার দাম বাড়াচ্ছে না। এতে আমাদের যে টাকা আয় হওয়ার কথা, তা আর হচ্ছে না।

মতলব উত্তর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অজিত বিশ্বাস বলেন, উপজেলার ১ টি পৌরসভার ও ১৪টি ইউনিয়নে ৩৪ মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গোৎসবের যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ চলছে দুর্গোৎসব নির্বিঘ্ন করতে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ধর্মীয় সম্প্রতির মতলব উত্তরে প্রতি বছরের মতো এ বছরও যেন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে এমনটাই দাবি পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্যরা।

মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.ছানোয়ার হোসেন জানান, উপজেলার ৩৪টি পূজামন্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।

মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একি মিত্র চাকমা বলেন, প্রতিটি পূজামন্ডপে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। সব পূজামন্ডপে পুলিশ, আনসার নিয়োগের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর টহল দিবেন। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ পূজামন্ডপে বিশেষ নজর রাখা হবে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

দুর্গাপূজা উপলক্ষে মতলব উত্তরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

আপডেট সময় : ০৬:২৩:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মতলব উত্তর প্রতিনিধি :

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে প্রতিমা তৈরির ধুম পড়েছে। কারিগরদের দম ফেলার ফুসরত নেই। কয়েক দিন বাদেই প্রতিমার গায়ে পড়বে রঙের আঁচড়।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর বাজারে শত বছরের পুরোনো শ্রী শ্রী কালাচান বিগ্রহ মন্দির। এই মন্দিরের ভেতরে এখন শোভা পাচ্ছে ছোট-বড় প্রতিমা। বাঁশ-কাঠ আর কাঁদা মাটি দিয়ে তৈরি প্রতিমাগুলো দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন সনাতন ধর্মের লোকজন। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারনে ব্যয় বেড়েছে প্রতিটি পূজা মণ্ডপের।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ওই মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত মৃৎশিল্পী (কারিগর) সত্যরঞ্জন ।

আগামী (৯ অক্টোবর) বুধবার মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপুজা এবং (১৩ অক্টোবর) রবিবার বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গাপূজা। এর আগে আগামী (২ অক্টোবর) বুধবার মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের শুরু।

সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি মন্দিরে ঘুরে দেখাগেছে, মন্দিরে কারিগরা প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। একনিষ্ঠ চিত্তে নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় মাটি লাগানোর কাজে ব্যস্ত শিল্পীরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেউ কাদা তৈরি করছেন, কেউ আবার কাদা দিয়ে হাত-পা বানাচ্ছেন। বেশিরভাগ এলাকাতেই প্রতিমাতে কাদামাটি লাগানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এরপর শুরু হবে প্রতিমাতে রংতুলির ছোঁয়া ও সাজসজ্জার কাজ।

ছেংগারচর পৌরসভার শ্রী শ্রী কালাচান বিগ্রহ মন্দিরে পূজার প্রতিমা শিল্পী শ্রী সঞ্জয় দাস বলেন, আমি দীর্ঘ ১৮ বছরের বেশি সময় যাবত প্রতিমা তৈরি করে আসছি। দুর্গা প্রতিমা ছাড়াও সকল ধরনের প্রতিমা আমরা তৈরি করি। এবার ১১টি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছি। তবে দ্রব্যমূল্যের সাথে তাল মিলিয়ে রং, তুলি ও সাজসজ্জার দাম বেশি হওয়ায় এবং প্রতিমা তৈরির মজুরি কম পাওয়ায় কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে শিল্পীদের। তবে চলতি বছর প্রতিমার চাহিদা গত বছরের তুলনায় একটু কম।

মৃৎশিল্পী নারায়ণ চক্রবর্তী বলেন, প্রতিবছর দুর্গা প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম ও চাহিদা বাড়লেও বাড়েনি প্রতিমার দাম। তবে চলতি বছর প্রতিমার চাহিদা গত বছরের তুলনায় বেশি। এবার কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবেন তারা।

প্রতিমা তৈরির কারিগর মানিক চন্দ্র দাস বলেন, অতীতে যেভাবে মানুষ মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করত, সেই চাহিদা না থাকায় আমাদের প্রায় সারা বছরই অলস সময় কাটাতে হয়। তবে দুর্গাপূজা চলাকালে প্রতিমা তৈরি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে কোনোমতে সারা বছর সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। আবার চলতি বছর প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতারা প্রতিমার দাম বাড়াচ্ছে না। এতে আমাদের যে টাকা আয় হওয়ার কথা, তা আর হচ্ছে না।

মতলব উত্তর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অজিত বিশ্বাস বলেন, উপজেলার ১ টি পৌরসভার ও ১৪টি ইউনিয়নে ৩৪ মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গোৎসবের যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ চলছে দুর্গোৎসব নির্বিঘ্ন করতে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ধর্মীয় সম্প্রতির মতলব উত্তরে প্রতি বছরের মতো এ বছরও যেন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে এমনটাই দাবি পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্যরা।

মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.ছানোয়ার হোসেন জানান, উপজেলার ৩৪টি পূজামন্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।

মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একি মিত্র চাকমা বলেন, প্রতিটি পূজামন্ডপে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। সব পূজামন্ডপে পুলিশ, আনসার নিয়োগের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর টহল দিবেন। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ পূজামন্ডপে বিশেষ নজর রাখা হবে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন