পূবাইলে আবুল খায়েরর ক্ষমতায় চলে চাঁদা আদায় ও সরকারি সম্পত্তি জবর দখল
- আপডেট সময় : ০৬:২০:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৪
- / ৭৬
গাজীপুর মহানগরীরপূবাইলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম দুর্নীতি ও সরকারি সম্পত্তি নিজের দখলে এনে রাতারাতি কোটিপতি বনে যান আবুল খায়ের নামে এক ব্যক্তি। জানা যায়, স্থানীয় নৈপাড়া এলাকায় সুনির্মল নামে এক সংখ্যা লঘু দীর্ঘ দিন খায়ের বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ট। এবিষয়ে সুনির্মল স্থানীয় থানা কাউন্সিলর বরাবর একাধিক অভিযোগ দায়ের করেন। পরিচয় নিয়ে জানা গেছে তিনি খোদ সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তা। গত দুই দিন আগে ও আবুল খায়ের এর নির্দেশে পূবাইল থানার মিরের বাজারে বিএনপির কর্মী পরিচয়ে ফুটপাতসহ নিয়মবহির্ভূত চাঁদাবাজির সময় জনতার হাতে ধরা খেয়ে মারধরের শিকার হন বিএনপির ৩ কর্মী।খাস আদায়ের লাইসেন্স দিয়েছেন খোদ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা আবুল খায়ের।
পরে পূবাইল থানায় মিরের বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে ওই সম্পত্তি কর্মকর্তাসহ ৪ জনের নামে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। অন্যরা হলেন, বিএনপি কর্মী মো. হেমায়েত, শারফিন আলম ও আনোয়ার।
গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের আগে মিরের বাজারে খাস আদায় করতেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুদ। পটপরিবর্তনে বুধবার সকাল থেকে সম্পত্তি কর্মকর্তা বিএনপি নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করে চাঁদাবাজি শুরু করেন মিরের বাজারে। আওয়ামী লীগ আর চাঁদাবাজিতে মাঠে আসতে পারবে না বুঝতে পেরে এই সম্পত্তি কর্মকর্তা বিএনপি নেতাকর্মীদের ভুলতথ্য দিয়ে খাজনা আদায়ে নামান; কিন্তু তারা অস্থায়ী বাজারে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে দোকানীদের চাপে পড়ে মারধরের শিকার হন। কোনরকমে প্রাণে রক্ষা পান চাঁদাবাজরা
জানা যায়, সম্পত্তি কর্মকর্তা আবুল খায়েরের যোগসাজশে বিএনপির কর্মী সমর্থকদের হাতে খাস আদায়ের চিঠি দিয়ে চাঁদাবাজির আদেশ দেন তিনি। ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ব্যবহার করে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন সময় খাস পুকুর ভরাট করে গরুর খামার, খ্রিস্টানদের বাড়ি ভেঙে দিয়ে নামমাত্র মূল্যে জমি দখল, নামে বেনামে মিরের বাজার তালটিয়া এলাকায় আলিশান বাড়িসহ অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে যাওয়ার গল্প আছে তার বিরুদ্ধে। অনিয়ম-দুর্নীতি করতে নামফলক সাইনবোর্ড বদলাতে বেশ পারদর্শী তিনি। ইতোমধ্যে ৪১ নং ওয়ার্ডের নৈবাড়ি মৌজায় খাস পুকুর ভরাট করে প্রাচীর নির্মাণ করে গরুর খামার করেন তিনি। এক সময় স্থানীয় কাউন্সিলরের অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ করতে গেলে ৭ দিনের সময় নিয়ে ৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে বহাল তবিয়তে আছেন তিনি।
গাজীপুর মহানগরের মিরের বাজার এলাকার স্থানীয় কাউন্সিলর সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপির নাম দিয়ে চাঁদাবাজি মেনে নেয়া হবে না। আর যেখানে সিটির মেয়র জায়েদা খাতুনকে অপসারণ করা হয়েছে, সেহেতু নবাগত প্রশাসকের অনুমোদন ছাড়া সম্পত্তি কর্মকর্তা আবুল খায়ের অস্থায়ী বাজার থেকে খাস আদায় করতে পারেন না।
ফুটপাত দোকানি আবুল কালাম, হাফিজ, নারায়ণ জানান, ২টি লাউ, ৩ কেজি কালো বেগুন বিক্রি করতে এলেও তাদের চাঁদা দিতে হয়। আমাদের কোনো মা-বাপ নাই। আমরা চাঁদামুক্ত মিরের বাজার চাই।
আবুল খায়ের জানান, আগে মাসুদের নামে মিরের বাজারের স্থায়ী কাঁচাবাজার ছিল। মাসুদ খেলাপি ছিল। তাই এখন সিটি করপোরেশনের পূবাইল ২ জোনের দায়িত্ব আমাকে দিয়েছে। বিএনপির লোকজন দিয়ে অস্থায়ী দোকান থেকে চাঁদা উঠানো হয় না। তবে আনোয়ার নামে একজন আছে তাকে বলেছি খাস আদায় করতে।
মঙ্গলবারের ইস্যু করা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তা মো. আবুল খায়েরের খাস আদায়ের চিঠি দেখান ধৃতরা। সেই চিঠিতে লেখা ছিল পূবাইল অঞ্চল-২ এর স্থায়ী কাঁচাবাজারে খাস আদায় করবেন মো. আবুল খায়ের। চিঠিদাতা গ্রহীতা দুজনই পূবাইলের বাসিন্দা।
মঙ্গলবার সারাদিনই সিটির নবাগত প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলামের দায়িত্ব গ্রহণ উপলক্ষে নানা কর্মতৎপরতা ছিল দৃশ্যমান। যার ফলে চিঠির বিষয়ে সন্দিহান ছিল বাজার কমিটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটির সচিব ও ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল হান্নান বলেন, খাস আদায়ে কোনো চিঠি ইস্যু হয়েছে বিষয়টি আমার জানা নেই। যেকোনো বিষয় জানতে হলে সরাসরি নগর ভবনে আসবেন।