০৫:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নৈশপ্রহরী‘র কোটি টাকার আলিশান রাজকীয় বাড়ি

মিজানুর রহমান :
  • আপডেট সময় : ০৮:৪৭:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪
  • / ৩২৮

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

সারাদেশে আবেদ আলীকে নিয়ে যখন তোলপাড় চলছে ঠিক সেই সময়ে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপেজলার সাব-রেজিস্টি অফিসের মাস্টার রোলে চাকরিরত জাহাঙ্গীর আলমের কোটি টাকার আলিশান বাড়ি, গরুর খামার ও বিভিন্ন স্থানে জায়গা জমি নিয়ে নানা তোলপাড় চলছে।

জানা গেছে, জাহাঙ্গীর আলম মাদারগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নৈশপ্রহরী মাস্টার রোলে চাকরি করেন ১৭০০ টাকা বেতনে। অথচ তিনি বর্তমানে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক। মাদারগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্সের কাছে কোটি টাকার জমিতে কয়েক কোটি টাকায় তৈরি করেছেন রাজপ্রাসাদ। এ ছাড়া গরুর খামার, আবাদি জমি, রাজকীয় বাড়ি, একাধিক বাসা বাড়ি, পুকুর কোনো কিছুর অভাব নেই তার। অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। সরকারি খাস জমি দখল করে গরুর খামারসহ একাধিক পাকা বাড়ি করার অভিযোগও রয়েছে। সবকিছু হয়েছে মাদারগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের বদৌলতে।

কয়েক বছর আগে দিনমজুরের কাজ করেছেন জাহাঙ্গীর আলম। এখন কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। ১২ বছর আগে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অফিসারের খাবার রান্নার কাজ করতে গিয়ে তিনি মাস্টার রোলে চাকরি পেয়ে যান। এখানেই তার ভাগ্য খুলে যায়। রাতারাতি তিনি অফিসের গোপন কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন।
গোপন সূত্রে জানা গেছে, রাতের অফিসে গোপন কাজগুলো তার হুকুমেই চলে। যত অনৈতিক অবৈধ কাজ হয় সবটার ভাগ যায় তার হাতে। জমি রেজিস্ট্রি, দলিল রেজেস্ট্রি কমিশন, নকল উত্তোলনসহ সব অবৈধ কাজের তার হাত ছাড়া হয় না। এক কথায় তিনি দ্বিতীয় সাব-রেজিস্টার বলে জানান অফিসের লোকজন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন দলিল লেখক ও অফিসের কর্মচারী জানান, এই অফিসে জাহাঙ্গীরের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। তার সুপারিশে আরো কয়েকজন ছেলেদের নকল নবিশের চাকরি দিয়ে তার হাত শক্তিশালী করেছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তারা হুমকি ও ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে দেন। তার সিন্ডিকেটের কয়েকজনের কাছে পুরো সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয় জিম্মি হয়ে পড়েছে।

এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি উপজেলার সুখনগরী গ্রামে, নদী ভাঙনের পর তিনি উপজেলা সদরে পালপাড়ায় আশ্রয় নেন। একসময় দিনমজুরিতে কামলা খাটতেন। এছাড়াও তিনি অন্যের বাড়িতে বছর চুক্তিতে কামলা হিসেবে কাজ করতেন।

একসময় কাজ রেখে উপজেলার বিভিন্ন অফিসে দালালি করতেন। একপর্যায়ে তার স্থিতি হয় উপজেলা সাব-রেজেস্ট্রি অফিসে। সেখানে ব্যাচেলর অফিসারদের রান্না ও ঘর মোছার কাজ করতেন। তৎকালীন জনৈক সাব-রেজিস্ট্রার তাকে অফিসের ছোটোখাটো কাজ করানো শুরু করেন। একসময় তিনি মাস্টার রোলে ওই অফিসের নৈশপ্রহরীর কাজ পান ৩০০ টাকার বেতনে। যা বর্তমানে তার বেতন ১৭০০ টাকা। বেতনকে তোয়াক্কা না করে নেমে পড়েন অবৈধ সম্পদ আয়ের সন্ধানে। এক এক করে সব কাজ তিনি হাতিয়ে নেন। দিনকে রাত, রাতকে দিন বানিয়ে ফেলেন তিনি। আস্তে আস্তে তার সম্পদের পরিমাণ বাড়তে থাকে। গরুর খামার, জমি, বাসাবাড়ি, কৃষিজমি, পুকুর, প্রজেক্ট এবং নিজ ও আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও নানান নামে সম্পদ গড়েছেন তিনি। সুখনগরীতে সরকারি খাস জমি দখল করে এখানে খামার গড়ে তুলেছেন।

কয়েক বছর আগে স্থানীয় ব্যবসায়ী আতাউর রহমান আবু তালুকদারের কাছ থেকে উপজেলা কমপ্লেক্সের কাছে কোটি টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করেন এই জাহাঙ্গীর আলম। এখানেও তার জমির দাম কম ও ভুয়া শ্রেণি বসিয়ে কম মূল্যে জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই দলিলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। এই জমিতে পাঁচতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে একটি প্রাসাদ তৈরি করছে। তার কাজ এখনো শেষ হয়নি। দুতলা পর্যন্ত করেছেন।

এছাড়া পালপাড়ায় একটি দুতলা সুরমা একটি বাড়ি রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে রয়েছে একাধিক ঘর, বাগান, গরুর খামার, পুকুর, এক একর আবাদি জমি। এসব দেখে গ্রামবাসী হতবাক।

উপজেলা কমপ্লেক্স এলাকায় তার প্রাসাদের খোঁজ নিতে গেলে ভয়ে কেউ মুখ খুলেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, তার অফিসের একদল সন্ত্রাসীর ভয়ে কেউ কথা বলথে চান না। আবার কেউ কথা বললেই হুমকি দেওয়া হয়।

তারা জানান, জাহাঙ্গীর আলমের হাতে আলাদিনের চেরাগ আছে। রাতারাতি তাকে কোটিপতি বানিয়েছে। সাব রেজেস্ট্রি অফিস তার কথায় চলে।

সুখনগরী গ্রামে খোঁজ নিলে একাধিক গ্রামবাসী জানান, তিনি অল্প দিনে এতো টাকার মালিক হয়েছে। তার অবৈধ টাকায় এসব কেনা।

জাহাঙ্গীর আলমের দাবি, মাদারগঞ্জে তিনি মোট দুই একর জমির মালিক। কিভাবে এতো জমি ক্রয় করলেন তার সঠিক কোনো জবাব মেলেনি। বাসার কথা বললে তিনি বলেন, ‘আমার বাসা সম্পর্কে বলা হয়েছে রাজপ্রসাদ। কিন্তু আপনেরা গিয়ে দেখেন, টাকার জন্য রং করতে পারছি না। এছাড়াও বাসার ছবি দেখিয়ে বাসাটি তার কি-না জানতে চাইলে তিনি পাশ কাটিয়ে যান।

মাদারগঞ্জ উপজেলায় স্থায়ী সাব-রেজিস্টার না থাকায় বর্তমান সাব-রেজিস্টার কথা বলতে রাজি হননি।

জেলা রেজিস্টার মো. শাহজাহান বলেন, এটা মাদারগঞ্জ সাব-রেজেস্ট্রি অফিসের আওতায়, তাদের সঙ্গে কথা বলুন।

এদিকে নৈশপ্রহরীর এতো সম্পদ নিয়ে মিডিয়া চাউর হলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তিনি ওই ভিডিও নানা প্রশ্নের উত্তর দিলেও তিনি উল্টাপাল্টা করতে থাকেন। এ নিয়ে জামালপুর জেলাজুড়েই সমালোচনার ঝড় বইছে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

নৈশপ্রহরী‘র কোটি টাকার আলিশান রাজকীয় বাড়ি

আপডেট সময় : ০৮:৪৭:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

সারাদেশে আবেদ আলীকে নিয়ে যখন তোলপাড় চলছে ঠিক সেই সময়ে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপেজলার সাব-রেজিস্টি অফিসের মাস্টার রোলে চাকরিরত জাহাঙ্গীর আলমের কোটি টাকার আলিশান বাড়ি, গরুর খামার ও বিভিন্ন স্থানে জায়গা জমি নিয়ে নানা তোলপাড় চলছে।

জানা গেছে, জাহাঙ্গীর আলম মাদারগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নৈশপ্রহরী মাস্টার রোলে চাকরি করেন ১৭০০ টাকা বেতনে। অথচ তিনি বর্তমানে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক। মাদারগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্সের কাছে কোটি টাকার জমিতে কয়েক কোটি টাকায় তৈরি করেছেন রাজপ্রাসাদ। এ ছাড়া গরুর খামার, আবাদি জমি, রাজকীয় বাড়ি, একাধিক বাসা বাড়ি, পুকুর কোনো কিছুর অভাব নেই তার। অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। সরকারি খাস জমি দখল করে গরুর খামারসহ একাধিক পাকা বাড়ি করার অভিযোগও রয়েছে। সবকিছু হয়েছে মাদারগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের বদৌলতে।

কয়েক বছর আগে দিনমজুরের কাজ করেছেন জাহাঙ্গীর আলম। এখন কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। ১২ বছর আগে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অফিসারের খাবার রান্নার কাজ করতে গিয়ে তিনি মাস্টার রোলে চাকরি পেয়ে যান। এখানেই তার ভাগ্য খুলে যায়। রাতারাতি তিনি অফিসের গোপন কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন।
গোপন সূত্রে জানা গেছে, রাতের অফিসে গোপন কাজগুলো তার হুকুমেই চলে। যত অনৈতিক অবৈধ কাজ হয় সবটার ভাগ যায় তার হাতে। জমি রেজিস্ট্রি, দলিল রেজেস্ট্রি কমিশন, নকল উত্তোলনসহ সব অবৈধ কাজের তার হাত ছাড়া হয় না। এক কথায় তিনি দ্বিতীয় সাব-রেজিস্টার বলে জানান অফিসের লোকজন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন দলিল লেখক ও অফিসের কর্মচারী জানান, এই অফিসে জাহাঙ্গীরের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। তার সুপারিশে আরো কয়েকজন ছেলেদের নকল নবিশের চাকরি দিয়ে তার হাত শক্তিশালী করেছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তারা হুমকি ও ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে দেন। তার সিন্ডিকেটের কয়েকজনের কাছে পুরো সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয় জিম্মি হয়ে পড়েছে।

এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি উপজেলার সুখনগরী গ্রামে, নদী ভাঙনের পর তিনি উপজেলা সদরে পালপাড়ায় আশ্রয় নেন। একসময় দিনমজুরিতে কামলা খাটতেন। এছাড়াও তিনি অন্যের বাড়িতে বছর চুক্তিতে কামলা হিসেবে কাজ করতেন।

একসময় কাজ রেখে উপজেলার বিভিন্ন অফিসে দালালি করতেন। একপর্যায়ে তার স্থিতি হয় উপজেলা সাব-রেজেস্ট্রি অফিসে। সেখানে ব্যাচেলর অফিসারদের রান্না ও ঘর মোছার কাজ করতেন। তৎকালীন জনৈক সাব-রেজিস্ট্রার তাকে অফিসের ছোটোখাটো কাজ করানো শুরু করেন। একসময় তিনি মাস্টার রোলে ওই অফিসের নৈশপ্রহরীর কাজ পান ৩০০ টাকার বেতনে। যা বর্তমানে তার বেতন ১৭০০ টাকা। বেতনকে তোয়াক্কা না করে নেমে পড়েন অবৈধ সম্পদ আয়ের সন্ধানে। এক এক করে সব কাজ তিনি হাতিয়ে নেন। দিনকে রাত, রাতকে দিন বানিয়ে ফেলেন তিনি। আস্তে আস্তে তার সম্পদের পরিমাণ বাড়তে থাকে। গরুর খামার, জমি, বাসাবাড়ি, কৃষিজমি, পুকুর, প্রজেক্ট এবং নিজ ও আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও নানান নামে সম্পদ গড়েছেন তিনি। সুখনগরীতে সরকারি খাস জমি দখল করে এখানে খামার গড়ে তুলেছেন।

কয়েক বছর আগে স্থানীয় ব্যবসায়ী আতাউর রহমান আবু তালুকদারের কাছ থেকে উপজেলা কমপ্লেক্সের কাছে কোটি টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করেন এই জাহাঙ্গীর আলম। এখানেও তার জমির দাম কম ও ভুয়া শ্রেণি বসিয়ে কম মূল্যে জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই দলিলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। এই জমিতে পাঁচতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে একটি প্রাসাদ তৈরি করছে। তার কাজ এখনো শেষ হয়নি। দুতলা পর্যন্ত করেছেন।

এছাড়া পালপাড়ায় একটি দুতলা সুরমা একটি বাড়ি রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে রয়েছে একাধিক ঘর, বাগান, গরুর খামার, পুকুর, এক একর আবাদি জমি। এসব দেখে গ্রামবাসী হতবাক।

উপজেলা কমপ্লেক্স এলাকায় তার প্রাসাদের খোঁজ নিতে গেলে ভয়ে কেউ মুখ খুলেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, তার অফিসের একদল সন্ত্রাসীর ভয়ে কেউ কথা বলথে চান না। আবার কেউ কথা বললেই হুমকি দেওয়া হয়।

তারা জানান, জাহাঙ্গীর আলমের হাতে আলাদিনের চেরাগ আছে। রাতারাতি তাকে কোটিপতি বানিয়েছে। সাব রেজেস্ট্রি অফিস তার কথায় চলে।

সুখনগরী গ্রামে খোঁজ নিলে একাধিক গ্রামবাসী জানান, তিনি অল্প দিনে এতো টাকার মালিক হয়েছে। তার অবৈধ টাকায় এসব কেনা।

জাহাঙ্গীর আলমের দাবি, মাদারগঞ্জে তিনি মোট দুই একর জমির মালিক। কিভাবে এতো জমি ক্রয় করলেন তার সঠিক কোনো জবাব মেলেনি। বাসার কথা বললে তিনি বলেন, ‘আমার বাসা সম্পর্কে বলা হয়েছে রাজপ্রসাদ। কিন্তু আপনেরা গিয়ে দেখেন, টাকার জন্য রং করতে পারছি না। এছাড়াও বাসার ছবি দেখিয়ে বাসাটি তার কি-না জানতে চাইলে তিনি পাশ কাটিয়ে যান।

মাদারগঞ্জ উপজেলায় স্থায়ী সাব-রেজিস্টার না থাকায় বর্তমান সাব-রেজিস্টার কথা বলতে রাজি হননি।

জেলা রেজিস্টার মো. শাহজাহান বলেন, এটা মাদারগঞ্জ সাব-রেজেস্ট্রি অফিসের আওতায়, তাদের সঙ্গে কথা বলুন।

এদিকে নৈশপ্রহরীর এতো সম্পদ নিয়ে মিডিয়া চাউর হলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তিনি ওই ভিডিও নানা প্রশ্নের উত্তর দিলেও তিনি উল্টাপাল্টা করতে থাকেন। এ নিয়ে জামালপুর জেলাজুড়েই সমালোচনার ঝড় বইছে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন