দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর পর এসিল্যান্ডের অভিযানে দখলমুক্ত হলো শেরপুর পুকুর
- আপডেট সময় : ০৭:৩৫:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪
- / ৫১
দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ বছর পর অবৈধ দখলমুক্ত হয়েছে ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহ্যবাহী ‘শেরপুকুর। ময়মনসিংহ নগরীর প্রাণকেন্দ্র আমলাপাড়ায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের ২৫ শতক জমির ঐতিহ্যবাহী পুকুরটিঅবৈধ দখলমুক্ত হওয়ায় জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
সুত্র মতে জানা গেছে, আমলাপাড়ায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের ২৫ শতক জমির ঐতিহ্যবাহী পুকুরটি বিগত ৪০বছর যাবৎ এক প্রভাবশালীর জবরদখল থেকে গত বুধবার বিকেলে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফতেখার ইউনুস এর সার্বিক সহযোগীতায় অভিযান চালিয়ে ডোজার দিয়ে জবরদখল করা অবৈধ স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দেন সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামান রনি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সরকারের অর্পিত সম্পত্তিভুক্ত ২৫ শতাংশ জমিতে ‘শেরপুকুর’টি ময়মনসিংহ টাউন মৌজায় খতিয়ানভুক্ত। গত ১৯৮৪ সালে পুকুরটি মাছ চাষের জন্য জনৈক আলফাজ উদ্দিন বাচ্চু ব্যক্তি খাতে লিজ নিলেও তিনি মাছ চাষ করেননি। ২০১২ সালে মাছ চাষের জন্য লিজ গ্রহীতা শর্ত ভঙ্গ করায় জেলা প্রশাসন ওই লিজ বাতিল করে দেয়। এর পর একই বছরের ১৫ এপ্রিল ওই জমি ব্যবসায়ী মো: রেজাউল করিমকে বার্ষিক মাত্র ৯৩০ টাকায় লিজ দেয়া হয়। লিজ নেয়া জমি আগের মতোই দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় ছিল।
সরেজমিনে দেখা যায়, জমির তিন দিকেই বহুতল ভবন। একদিকে সিটি করপোরেশনের পাকা সড়ক। ভরাট করা পুকুরের জমিতে ইট, পাথর, মাটি, ময়লার স্তূপ, কিছু গাছসহ কয়েকটি ঝুপড়ি ঘর ছিল। শেরপুর শাহের আমলে পুকুরটি খনন করা হয়েছিল বলে নগরবাসীর কাছে পুকুরটি ‘শেরপুর’ নামে সমধিক পরিচিত ছিল।
স্থানীয়রা জানান, পুকুরটির প্রকৃত আয়তন বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ ছিল। পুকুরের উত্তর-পূর্বাংশে মাটি ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ভূমি কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই এসব বহুতল ভবন নির্মিত হয়। পুকুরটি দখলমুক্ত করতে বিভিন্ন মিডিয়ায় সচিত্র খবর প্রকাশিত হলেও প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উচ্ছেদ অভিযানে সন্তুষ্ট হয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা এখানে পুনরায় পুকুর খননের দাবিও জানান।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জানান, নজরদারির অভাবে মূল্যবান সরকারি এই জমি বেহাতের আশঙ্কা ছিল। এ জন্য অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের মাধ্যমে জমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। জমির সদ্ব্যবহারে পরিকল্পনা নেয়া হবে এবং অন্যান্য খাসজমি পুনরুদ্ধারে জেলা প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান রনি বলেন, ২৫ শতকের পুকুরটি ২০১২ সাল পর্যন্ত ইজারা দেওয়া ছিল। সর্বশেষ ইজারাগ্রহীতা ছিলেন রেজাউল করিম নামের এক ব্যক্তি। এরপর কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। পুকুর হিসেবে একসনা বন্দোবস্ত দিলেও সেটি ভরাট করা হয়। তিনি বলেন, আগে জমিটি অর্পিত সম্পত্তি থাকলেও এখন ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে জমিটির মালিক জেলা প্রশাসন। এসএ ও বিআরএস রেকর্ডে পুকুর উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে সেটি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করে মেস হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়। গিনি আরও বলেন, এক সপ্তাহ আগে সরকারের মালিকানাসংক্রান্ত নোটিশ স্থাপন করা হয়। যাঁদের দখলে ছিল তাঁদের মালামাল সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল কিন্তু তাঁরা সরাননি। উচ্ছেদ শুরুর পর মালামাল সরাতে শুরু করেন তাঁরা।
ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নূরুল আমিন কালাম বলেন, পুকুরটি ইজারা নিয়ে ভরাট করে ফেলা হয়। শেরপুকুরসহ অন্য সরকারি পুকুরগুলো দখলমুক্ত করতে তাঁদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। পুকুরটি যেহেতু উদ্ধার করা হয়েছে, সেখানে আবার পুকুর কাটার দাবি জানান তিনি