১২:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

নেত্রকোনার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

রিপন কান্তি গুণ :
  • আপডেট সময় : ১২:০১:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ জুন ২০২৪
  • / ১০৫

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ক্রমাগত বাড়ছে। ফলে বন্যার পানিতে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

সরেজমিনে দেখাগেছে, টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার উব্ধাখালি নদীর পানি বেড়ে ৮টি ইউনিয়নের ৬৫টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে কলমাকান্দা সদর, বরখাপন ও পোগলা ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা এবং কৈলাটি, রংছাতি ও খারনৈসহ বাকি পাঁচটি ইউনিয়নের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কাঁচা পাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকার উব্দাখালীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৪৭ সেমি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। পানি ঢুকতে শুরু করেছে সদর ও বারহাট্টা উপজেলার লোকালয়েও।

জেলার কলমাকান্দার মহাদেও, দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী, নেত্রকোনা সদরের মগড়া, বারহাট্টার কংস ও খালিয়াজুরির ধনুসহ বিভিন্ন ছোট-বড় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে বলে জানিয়েছে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড।

কলমাকান্দা উপজেলা সদরের চানপুর এলাকার বাসিন্দা সাজুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ি ঢলে উব্দাখালীর নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলা সদরসহ আশপাশের এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। উপজেলা সদর লাগোয়া গ্রাম রাজাপুর, ভোটপাড়া, মনতলা, ঘোষপাড়া, গোজাকুনিয়া, নোয়াগাও, হরিণতলা, নাগডোরা এলাকায়ও বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে।

নেত্রকোনা সদর উপজেলার তাতিয়র গ্রামের বাসিন্দা হযরত আলী বলেন, আমাদের এলাকাটি তিন নদীর মোহনা হওয়ায় সবদিক থেকেই বিপদে আছি আমরা। এবার ফসলের কোন ক্ষতি না হলেও গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নদীর পানি বেড়ে আমাদের ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে এবং চলাচলের মূল রাস্তাটিও পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন আমরা খুব কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।

কলমাকান্দা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল আলী বিশ্বাস বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের লাগোয়া গ্রাম রাজাপুর, ভোটপাড়া, মনতলা, ঘোষপাড়া, গোজাকুনিয়া, নোয়াগাও, হরিণতলা নাগডোরা সহ কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে গেছে।। আর এক থেকে দেড় ফুট পানি বাড়লে প্রচুর বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাবে।’

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান জানান, গত সোমবার থেকে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ৩৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। একই সময়ে, অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও জারিয়াঝাঞ্জাইল স্টেশনে ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এতে জেলার ছোট-বড় সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরমধ্যে কলমাকান্দা পয়েন্টে উব্ধাখালি নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও ওই উপজেলার মহাদেও, বৈঠাখালী, মঙ্গলেশ্বরী ও গণেশ্বরী নদীর পানি বেড়েই চলেছে। এছাড়া কংশ, ধনু ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বেড়েছে। এদিকে জেলার হাওর উপজেলা মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরীর লোকালয়ে উজানের পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুকনো খাবার, আশ্রয়কেন্দ্র, উদ্ধারকারী দল, মেডিকেল টিমসহ সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজসহ মোট ৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে বিশরপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে পাঁচটি পরিবারের ২০ জনের মতো আশ্রয় নিয়েছেন। সঙ্গে গৃহপালিত প্রাণীগুলোকেও নিরাপ স্থানে নিয়ে আসা হয়েছে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

নেত্রকোনার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

আপডেট সময় : ১২:০১:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ জুন ২০২৪
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ক্রমাগত বাড়ছে। ফলে বন্যার পানিতে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

সরেজমিনে দেখাগেছে, টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার উব্ধাখালি নদীর পানি বেড়ে ৮টি ইউনিয়নের ৬৫টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে কলমাকান্দা সদর, বরখাপন ও পোগলা ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা এবং কৈলাটি, রংছাতি ও খারনৈসহ বাকি পাঁচটি ইউনিয়নের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কাঁচা পাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকার উব্দাখালীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৪৭ সেমি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। পানি ঢুকতে শুরু করেছে সদর ও বারহাট্টা উপজেলার লোকালয়েও।

জেলার কলমাকান্দার মহাদেও, দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী, নেত্রকোনা সদরের মগড়া, বারহাট্টার কংস ও খালিয়াজুরির ধনুসহ বিভিন্ন ছোট-বড় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে বলে জানিয়েছে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড।

কলমাকান্দা উপজেলা সদরের চানপুর এলাকার বাসিন্দা সাজুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ি ঢলে উব্দাখালীর নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলা সদরসহ আশপাশের এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। উপজেলা সদর লাগোয়া গ্রাম রাজাপুর, ভোটপাড়া, মনতলা, ঘোষপাড়া, গোজাকুনিয়া, নোয়াগাও, হরিণতলা, নাগডোরা এলাকায়ও বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে।

নেত্রকোনা সদর উপজেলার তাতিয়র গ্রামের বাসিন্দা হযরত আলী বলেন, আমাদের এলাকাটি তিন নদীর মোহনা হওয়ায় সবদিক থেকেই বিপদে আছি আমরা। এবার ফসলের কোন ক্ষতি না হলেও গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নদীর পানি বেড়ে আমাদের ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে এবং চলাচলের মূল রাস্তাটিও পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন আমরা খুব কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।

কলমাকান্দা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল আলী বিশ্বাস বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের লাগোয়া গ্রাম রাজাপুর, ভোটপাড়া, মনতলা, ঘোষপাড়া, গোজাকুনিয়া, নোয়াগাও, হরিণতলা নাগডোরা সহ কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে গেছে।। আর এক থেকে দেড় ফুট পানি বাড়লে প্রচুর বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাবে।’

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান জানান, গত সোমবার থেকে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ৩৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। একই সময়ে, অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও জারিয়াঝাঞ্জাইল স্টেশনে ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এতে জেলার ছোট-বড় সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরমধ্যে কলমাকান্দা পয়েন্টে উব্ধাখালি নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও ওই উপজেলার মহাদেও, বৈঠাখালী, মঙ্গলেশ্বরী ও গণেশ্বরী নদীর পানি বেড়েই চলেছে। এছাড়া কংশ, ধনু ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বেড়েছে। এদিকে জেলার হাওর উপজেলা মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরীর লোকালয়ে উজানের পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুকনো খাবার, আশ্রয়কেন্দ্র, উদ্ধারকারী দল, মেডিকেল টিমসহ সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজসহ মোট ৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে বিশরপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে পাঁচটি পরিবারের ২০ জনের মতো আশ্রয় নিয়েছেন। সঙ্গে গৃহপালিত প্রাণীগুলোকেও নিরাপ স্থানে নিয়ে আসা হয়েছে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন