মোরেলগঞ্জে ঘুর্ণিঝড় রেমালে কাঁচা-পাকা রাস্তা ভেঙে চরম দুর্ভোগে মানুষ
- আপডেট সময় : ০৮:৩৮:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ জুন ২০২৪
- / ১৬৬
এনায়েত করিম রাজিব :
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তান্ডবে ক্ষত বিক্ষত জনপদ। ৮-১০ ফুট জ্বলোচ্ছাসে কার্পেটিং, কাঁচা-পাকা রাস্তা ভেঙ্গে বড় বড় খানাখন্দে পরিনত। ভেঙ্গে যাওয়া পাকা রাস্তার একাধীক স্থানে চলাচলে স্থানীয়দের স্বেচ্ছা শ্রম ও অর্থায়নে দেয়া হচ্ছে বাঁশ ও কাঠের সাকো। কাঠের ও আয়রণ পুল ভাসিয়ে নিয়েছে জলের স্রোতে। এ উপকুলীয় অঞ্চলের ৪ লাখ মানুষের এখন যোগযোগ ব্যবস্থায় অভবনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এতে ১৪০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি। চরমভাবে বিধস্ত এ উপজেলাবাসীর জন্য খাদ্য সহায়তারা পাশাপাশি “চাই ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তাঘাট মেরামত ও টেকসই বেড়িবাঁধ” এলাকাবাসীর দাবি।
সরেজমিনে ও সংশ্লীষ্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, দু’দিনের ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ও জ¦লোচ্ছাসে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নসহ ১টি পৌরসভায় প্রত্যন্ত গ্রামের কার্পেটিং ও কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট ভেঙ্গে ভাসিয়ে নিয়িছে। ব্যপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নদীর তীরবর্তী ৬টি ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা। বারইখালী ফেরীঘাট থেকে বহরবুনিয়া অভিমূখী ১০ কিলোমিটারের কার্পেটিং, এসবিবি ও কাঁচা রাস্তাটি ৮০ ভাগ ভেঙ্গে গিয়ে ১৫ থেকে ২০টি স্থানে বড় বড় খানা খন্দে পরিনত হয়েছে। রাস্তার ইট ভাসিয়ে নিয়েছে নদীতে। এতে বারইখালী, সুতালড়ী, কাশ্মির তুলাতলা, বহরবুনিয়া, ফুলহাতা ও ঘষিয়াখালীসহ ৬টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষের চলাচলে দূর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের সহযোগীতায় বড় বড় খানাগুলোতে বাঁশ ও শুপারী গাছ দিয়ে সাকো তৈরি করে চলাচল করতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। বৃদ্ধ ও শিশুরা রাস্তা পাড় হতে দূর্ভোগের আর সীমা নেই। এলাকাবাসীর দাবি, “চাই ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তাঘাট মেরামত ও টেকসই বেড়িবাঁধ”।
অনুরুপ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের পাঠামারা, বদনীভাঙ্গা ও সানকীভাংগা গ্রামের কাঁচা-পাকা ৮ থেকে ১০টি কাঁচা-পাকা রাস্তা, খাউলিয়া ইউনিয়নের খাউলিয়া, চালিতাবুনিয়া, সন্যাসী, পশুরবুনিয়া, ফাঁসিয়াতলা ও পূর্ব বরিশাল গ্রামের ৬ থেকে ৭টি ইটসোলিং, কাঁচা রাস্তা ও খাউলিয়া বাজার সংলগ্ন বড় কাঠের পুলটি ভেঙ্গে স্থানীয় বাজার, স্কুল, মাদ্রসা ও দুই গ্রামের জনসাধারনের পাড়াপাড়ে ভোগান্তি হচ্ছে। এছাড়া খাউলিয়া-মোরেলগঞ্জ সংযোগ ঢালাই ব্রীজটির এ্যাপ্রোজ ধ্বসে ঝুকিপূর্ন অবস্থায় রয়েছে। মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের কাঠালতলা-গাবতলা কার্পেটিং সংযোগ সড়কটি একাংশ ভেঙ্গে গিয়ে বড় খাদে পরিনত হয়েছে। বলইবুনিয়া ইউনিয়নের শ্রেণিখালীর ৩’শ মিটার অস্থায়ী বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। পঞ্চকরনের দেবরাজে ৮’শ মিটার ওয়াবদা বেড়িবাঁধ বিভিন্ন স্থান থেকে ভেঙ্গে পড়েছে।
এছাড়াও চিংড়াখালী, খাউলিয়া, বহরবুনিয়া ও হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের ৭/৮টি ব্রীজের (এ্যাপ্রোজ) সংযোগ সড়ক বিধস্ত হেয়েছে। ১২টি কাঠের পুল ও আয়রণ ব্রীজ ভেঙ্গে গেছে। ৪ থেকে ৫টি কাঠের পুল পানির স্রোতে ভাসিয়ে নিয়েছে।
উপজেলা এলজিইডি দপ্তরের তথ্যমতে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ১২০ কিলোমিটার কার্পেটিং রাস্তা, ২৭০ কিলোমিটার এসবিবি পাকা রাস্তা, ৭/৮টি ব্রীজের এ্যাপ্রোজ, ১২টি পুল ও আয়রণ ব্রীজ বিধস্ত হয়ে ১৪০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এ সম্পর্কে উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রথমিক তথ্য বিবরনী তাদের সেন্টার সফটাওয়ারে এ্যাসেসমেন্ট তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ছোটখাটো আকারে সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাস্তাগুলো মেবাইল মেইনটেনেন্স এমারজেন্সি কর্মীদের মাধ্যমে শীগ্রই মেরামত করে জনচলাচল সুগাম করা হবে। বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্থ সড়কগুলোতে কাজ করতে সময় লাগবে।
এ বিষয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস,এম তারেক সুলতান বলেন, রিমালে ক্ষতিগ্রস্থ ইউনিয়ন পর্যায়ের রাস্তা ঘাটগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত করে জনচলাচল উপযোগী করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসকের দপ্তরে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির একটি তথ্য বিবরণী প্রেরণ করা হয়েছে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসক ও এলজিইডি দপ্তরের উর্ধ্বতণ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করারও কথা রয়েছে।