মোরেলগঞ্জে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তান্ডব,পানিবন্দি প্রায় ৩লাখ মানুষ, ১ শিশুর মৃত্যু
- আপডেট সময় : ০৯:০৬:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪
- / ১৪৭
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তান্ডবে লন্ড ভন্ড, পানিবন্দি প্রায় ৩ লাখ মানুষ , প্রায় ২০০ কিলোমিটার কাঁচাপাকা রাস্তাঘাট ভেঙ্গে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। উত্তর সুতালড়ী গ্রামের ইয়াছিন নামের আড়াই বছরের এক শিশু পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। জ্বলোচ্ছাস ও ঝড়ের তান্ডবে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে জনা গেছে প্রায় ৩শ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, দুদিন ধরে বিদ্দ্ৎু বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন গোটা উপজেলা।
বাগেরহাট-৪ মোরেলগঞ্জ- শরণখোলা আসনের সংসদ সদস্য এইচ, এম বদিউজ্জামাল সোহাগ, বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো.খালিদ হাসান, পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ৬ হাজার মানুষের মাঝে শুকনা খাবার, চাল, বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেটসহ খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছেন।
এ ঘূর্নিঝড়ে মোরেলগঞ্জ সুন্দরবন সংলগ্ন এ উপজেলাটির প্রায় ৪ লাখ মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
রবিবার রাত ১১টা থেকে সোমবার সন্ধা ৭টা পর্যন্ত চলতে থাকা একটানা ঝড়, বৃষ্টি ও ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাসে গোটা উপজেলা তছনছ হয়ে গেছে। পানিবন্দি পরিবারগুলো চরম খাদ্য সংকটে পড়েছেন। পর্যাপ্ত পরিমানে শুকনো খাবার মজুদ না থাকা ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে আশ্রয় নেওয়া লোকজনদেরকেও প্রয়োজন মাফিক খাবার সরবরাহ সম্ভব হয়নি। এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার লোককে খাবার দেওয়া সম্ভব হয়েছে। কমপক্ষে দুই লাখ মানুষ অভূক্ত রয়েছেন বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সরকারি হিসেব মতে এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন ২ লাখ ৮০ হাজার ৯শ ৫০ জন মানুষ ও ৬০ হাজার গবাদিপশু। ডুবে গেছে ছোট বড় ১১ হাজার ৪শ ১৫টি মৎস্যঘের। বিধ্বস্ত হয়েছে আড়াই হাজার বসতবাড়ি। ১৬ হাজার বসতবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ১৬০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত হয়েছে। এখনো হাটুপানি জ্বলাবদ্ধতায় রয়েছে অর্ধ শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৫০ কিলোমিটার কাঁচা পাকা রাস্তা ধসে গেছে। বিদ্যুতের ১৫টি খুটি উপড়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে দুই শতাধিক গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ তার ছিড়ে গিয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ৩৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। সদর বাজারসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডুবে গেছে। সরকারি হিসেবে সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৩০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে উপজেলা কন্ট্রোল রুম থেকে প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছেন। তবে ক্ষতির পরিমান আরও বাড়বে বলেও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার ৩৫৮ হেক্টর সব্জি ফসল, ১শ হেক্টর আউস ফসলের বীজতলা ও ৫০ হেক্টর কলাক্ষেত বিনষ্ট হয়ছে। এতে ৩ হাজার ৬শ চাষীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি সেক্টরে ২৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তাছলিম হাসান জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম তারেক সুলতান বলেন, এ পর্যন্ত ৩০ হাজার লোককে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। অভূক্ত রয়েছে আরও প্রায় ২লাখ মানুষ। প্রাথমিকভাবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষয় ক্ষতির হিসেব পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক মহোদয় ১০ টন চাল বরাদ্দ দিয়ে প্রতিটি ইউনিয়নসহ পৌরসভায় চেয়ারম্যানদের বিতরণ করা হবে।ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আরও বাড়বে। প্রকৃত হিসেব পেতে আরও ২দিন সময় লাগবে।