এশিয়া নেটওয়ার্ক এনসিডিসির উদ্যোগে, কয়রায় অসংক্রামক রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ বিষয়ক ওরিয়েন্টেশন
- আপডেট সময় : ০৮:৪৮:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
- / ১২৫
বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগের সঙ্গে মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাত্রার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের অভ্যাস, ধূমপান, তামাক সেবন, শারীরিক ব্যায়াম বা কায়িক পরিশ্রম না করা, মাদক গ্রহণ এবং মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা বিষণতা, অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের কারণে ঝুঁকি আরো বাড়ছে। বাংলাদেশে ৭০ দশমিক নয় শতাংশ মানুষ এই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কেবলমাত্র তিন শতাংশ মানুষ এই ঝুঁকির মধ্যে নেই।
বর্তমানে বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৭০% এর কারণ অসংক্রামক রোগ। যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, ক্যান্সার, জটিল কিডনি রোগ। আর এই সমস্ত অসংক্রামক রোগের ঝুকি কমানো এবং এর প্রতিকার ও প্রতিরোধ করাই ওরিয়েন্টেশানের লক্ষ্য।
“সকালে পর্যাপ্ত, দুপুরে স্বাভাবিক, রাতে ৭–৮, মধ্যে কম খাবার” এই “স্লোগানকে’ সামনে রেখে এশিয়া আর্সেনিক নেটওয়ার্ক ও সিভিল সার্জন অফিস খুলনা এর আয়োজনে এনসিডিসি প্রোগ্রাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহায়তায় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাপানের অর্থায়নে খুলনার কয়রা উপজেলার বেজপাড়া হায়াতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসার মিলনায়তন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে সংক্রামক রোগের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং প্রতিরোধের মাধ্যমে সুন্দর প্রজন্ম তৈরি করা শিক্ষক, কিশোর- কিশোরী ভূমিকা স্বাস্হ্য বিষয়ক ওরিয়েন্টেশন ।
আজ সকাল ১১ টায় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্যে দিয়ে ,প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক কর্মচারী ও ছাত্রীদের উপস্থিতিতে অসংক্রামক রোগ ও প্রতিরোধের উপায় জানিয়ে এবং ঝুঁকি নির্ণয় ক্যাম্পেইনে শারীরিক ওজন, রক্তচাপ পরীক্ষা, উচ্চতা নির্নয় করেন স্বাস্হ্য কর্মী সকিনা খাতুন ও প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন, প্রতিষ্ঠানের সুপার এ কে এম আজহারুল ইসলাম। তিনি অসংক্রামক রোগের প্রতিকার , সচেতনতা অবলম্বন ও স্বাস্হ্যকর জীবন যাপনের জন্য নানা দিক নিয়ে পরামর্শ দেন।
তিনি আরো বলেন, সুস্থ সাবলীল জীবন যাপনের জন্য এক মাত্র কায়িক পরিশ্রম, নিয়মিত শারীরিক চর্চা এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সকলকে পরামর্শ দেন।
কয়রা, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া এই ৩ উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপারভাইজার আব্দুল হালিমের পরিচালনায় ওরিয়েন্টেশন এর কার্যক্রম শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হয়। সুপারভাইজার তার আলোচনায় বলেন, বয়সন্ধিকালেই কিশোর কিশোরীরা প্রজনন ক্ষমতা লাভ করে তাই এ সময় থেকেই প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষার প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে পারলে সুস্থ ভাবে নিজেদের যত্ন নিতে পারবে এবং শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় চতুর্থাংশ কিশোর- কিশোরী। আর এই কিশোর- কিশোরীদের শিক্ষা জীবন দক্ষতা ও স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করছে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ। দেশের এই কিশোর-কিশোরীদের সঠিক সেবা মান নিশ্চিত করতে আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। আগামী দিনে যদি সুস্থ সবল জাতি পেতে হয় তাহলে আমাদের কিশোর-কিশোরীদের সচেতনতার পাশাপাশি তাদের পুষ্টির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
নিরাপদ পানি ব্যবহার এবং আর্সেনিক মুক্ত নিরাপদ পানি ব্যবহার সংক্রান্ত সচেতনতামূলক দিক নির্দেশনা দিতে যেয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অঞ্চলে খাবার পানিতে আর্সেনিকের মাত্রাতিক্ত হার যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আর্সেনিক মূলত একপ্রকার রাসায়নিক উপাদান পানিতে থাকে। স্বল্পমাত্রায় আর্সেনিক থাকলে তেমন সমস্যা না হলেও কিছুদিন পর এর মাত্রা যখন বেশি হয় তখনই পানকারীর শরীরের নানা রকম রোগের উপসর্গ তৈরি করে এবং পরবর্তীতে সেই সকল রোগীকে মারাত্মক পর্যায়ে নিয়ে যায় ।
তিনি আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীর পরীক্ষা নিরীক্ষা করার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে এবং নানান ধরনের রোগের প্রাদূর্ভাব থেকে মুক্ত থাকতে পরামর্শ দেন। উপজেলা সুপারভাইজার রক্তচাপ প্রতিরোধের উপায়, ডায়াবেটিস প্রতিরোধের উপায়, হাঁপানি প্রতিরোধের উপায়, আর্সেনিকস প্রতিরোধের উপায়, হার্ট অ্যাটাক এর প্রতিরোধের উপায় নিয়ে এবং বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগের ভয়াবহতার জন্য চারটি ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের কথা বলেন। যেমন অতিরিক্ত তেল চর্বি বা তেলে ভাজা খাবার খাওয়া ,ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করা কম কায়িক পরিশ্রম করা ও আর্সেনিক দূষিত পানি পান করা নিয়ে চমৎকার স্বাস্হ্য সচেতনতা মূলক নানা দিক অনুষ্ঠিত অংশগ্রহণকারিদের মাঝে তুলে ধরেন। অল্প সময় অল্প পরিসরে মাংসপেশীর নমনীয়তা বাড়াতে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি জন্য আর মাজা ও কোমর সহ বিভিন্ন স্থানের ব্যাথা উপশমের সহায়ক হিসেবে সকলের জন্য ব্যায়াম নির্দেশিকাটি তুলে দেন এবং অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারিদের মেনে চলার পরামর্শ দেন।