মানবতার সেবক মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন নান্দনিকতা
- আপডেট সময় : ০২:০৩:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪
- / ২২২
হাফিজ আব্দুল্লাহ :
দক্ষিণ চট্টগ্রাম চন্দনাইশের ছেলে মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন পাঁচ ভাই বোনদের সবার ছোট।ঐতিহ্যবাহী আলেম পরিবারে জন্ম তাঁর। সেহের অটিজম সেন্টার, চট্টগ্রামের উদ্যোগে রান ফর অটিজম এক ইভেন্টে ইমাদ ভাইয়ের সাথে সরাসরি আমার পরিচয়। এর আগে দেখা না হলেও তার সামাজিক কর্মকান্ডের জন্য আমার হৃদয়ে তার প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি হয়। তার সাথে আমার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। তার মধ্যে কোনো ভাব কিংবা কাজ নিয়ে ভাগাভাগি কখনো দেখতে পায়নি। ইমাদ ভাই একজন রক্তযোদ্ধা ও সামাজিক সংগঠক হিসেবে পরিচিতি হলেও বর্তমান সময়ে একজন তরুণ কবি ও কলামিস্ট হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।
দেয়ালিখায় দিয়ে কিশোরকাল থেকে লেখালেখি শুরু করেন।বিভিন্ন ম্যাগাজিন, পাক্ষিক পত্রিকা, মাসিক পত্রিকা ও বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকায় তার প্রবন্ধ-নিবন্ধ, গবেষণা ধর্মী লেখা, ছড়া ও কবিতা নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে আসছে। এমন কি ওপার বাংলা (কলকাতা)’র বিভিন্ন অনলাইন ব্লগও লেখা পাবলিশ হয়ে আসছে। লেখালেখিতে বেশ সুনাম অর্জন করেন। সংগঠক, প্রাবন্ধিক ও কবি মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন বাংলাদেশ ভারত নেপাল ইতিহাস মঞ্চ’র উদ্যোগে বঙ্গ-ইতিহাস ও ঐতিহ্য আন্তর্জাতিক সম্মিলন ১৪২৯ উপলক্ষে “একুশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্মাননা স্মারক” লাভ করেন। তিনি গোলাম মোস্তফা সাহিত্য পদক-২০২২ অর্জন করেন। তিনি মাসিক দিগন্তপত্র এর উদ্যোগে “দিগন্তপত্র লিখিয়ে পুরস্কার-২০২২” লাভ করেন।তিনি চিরকুটে সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ’র কতৃক “পল্লী কবি জসীমউদ্দিন সাহিত্য পদক-২০২২” অর্জন করেন। এর আগেও তিনি মাসিক চিরকুটে সাহিত্য পত্রিকা এবং চিরকুটে সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ’র উদ্যোগে “স্বপ্নছোঁয়া সাহিত্য সম্মাননা ২০২১” লাভ করেন। এমনকি তিনি ওপার বাংলা (কলকাতা)’র মহাবঙ্গ সাহিত্য পরিষদ থেকে ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ “মহাবঙ্গ কলম-সৈনিক সম্মাননা” অর্জন করেন। তিনি ছোট কাগজ মাসিক টুনটুনি থেকে “টুনটুনি শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৮” লাভ করেন।
লেখালেখির পাশাপাশি মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন অসংখ্য সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত, তবে সচেতনভাবে কোনো রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত নয়। তিনি একজন রক্তযোদ্ধা ও সামাজিক সংগঠক হিসেবে বেশ কিছু সাফল্য অর্জন করেন। তিনি “কণিকা- একটি রক্তদাতা সংগঠন” হতে ২০১৬ সাল ও ২০১৭ সালে যথাক্রমে সুপার ডোনার সম্মাননা স্মারক লাভ করেন। আর ২০১৭ সালে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন থেকে আজীবন রক্তদাতা সম্মাননা স্মারক অর্জন করেন। তাছাড়া তাকে ২০১৫ সালে ওয়ার্কস ফর গ্রীণ বাংলাদেশ (ডব্লিউ জি বি) সংগঠন হতে বেস্ট ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১৩ সালে “জীবনবাতি” সংগঠন থেকে বেস্ট অর্গানাইজার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
২০১৪ সালে মে মাসে চট্টগ্রাম মুসলিম হলে “চিলড্রেন কমনিউকেশন বাংলাদেশ (সিসিবি) সংগঠনের উদ্যোগে সম্ভবত তিনদিন ব্যাপী “সেকেন্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যানিমেশন কার্টুন ফেস্টিভাল বাংলাদেশ ২০১৪ একটি ইভেন্টে ইমাদ ভাইয়ের সাথে ভলান্টিয়ার করার সুযোগ হয়েছে। সম্ভবত শেষের দিন শেষ বিকেলে ইমাদ ভাইয়ের মোবাইলে কোনো এক ব্লাড সংগঠন থেকে একটা ফোন আসে একজন মুমূর্ষু রোগীকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে রাতে ব্লাড দেয়ার জন্য। তিনি তাৎক্ষণিক রাজি হয়ে গেলেন। সেদিন ইন্টারন্যাশনাল অ্যানিমেশন কার্টুন ফেস্টিভাল এর ইভেন্ট শেষ করার পর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিই। এরপর আমি ইমাদ ভাইয়ের সাথে চট্টগ্রাম মেডিকেলে যায়। তিনি রক্ত দেয়ার পর তার জন্য রোগীর আত্মীয় (সম্ভবত মেয়ের জামাই) ডাবের পানি আনলে তা খেতে প্রথমে আপত্তি করলেও বহু জোরাজুরির করার পর তা খেতে বাধ্য হন। তিনি রোগীকে দেখতে যান এবং দোয়াও করেন। সবার কাছ বিদায় নেয়ার পর সম্ভবত তাকে গাড়ী ভাড়া বলে ৫০০ টাকার নোট দিতে চাইলে তিনি ভীষণ রেগে যান। আর বলেন, আমি (ইমাদ) ব্লাড ব্যবসায়ী নই। আমি টাকার বিনিময়ে ব্লাড দিই না…..। আর সাথে সাথে তিনি যার মাধ্যমে ব্লাড দিয়েছেন তাকে ফোন করে এই সব কথা বলে। আর বলে আগামীতে ব্লাড দেয়ার আগে রোগীর আত্মীয়দেরকে এই সব না করতে সরাসরি বারণ করবেন। আমরা মেডিকেল থেকে আসার সময় রোগীর আত্মীয়রা তাকে জড়িয়ে ধরে অনুতপ্ত হয় এবং তার জন্য দোয়াও করেন। ইমাদ ভাই আজীবন বেঁচে থাকবেন না। কিন্ত তার রেখে যাওয়া কিছু কর্মকান্ড ও স্মৃতি থাকবে। যা মানুষের হৃদয়ে আজীবন গেঁথে থাকবে।
মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন আজীবন অবহেলিত মানুষদের পাশে থাকতে চাই। আর সংগঠন ও লেখালেখির মাধ্যমে একটি সুন্দর সমৃদ্ধ দেশ গড়া এবং সবাইকে নিয়ে সচেতনতমূলক কাজ করার স্বপ্ন দেখেন।