১০:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

রূপগঞ্জে অর্ধশতাধিক দুস্থ নারীদের টাকা নিয়ে লাপাত্তা মহিলালীগ নেত্রী সাথী

মো. নুর আলম, রূপগঞ্জ :
  • আপডেট সময় : ০৭:৪৫:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪
  • / ১৪৪

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মো. নুর আলম, রূপগঞ্জ :

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সমাজসেবা কার্যালয় থেকে বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের সরকারী সহায়তা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে অর্ধশতাধিক দুস্থ নারীর কাছ থেকে ঘুষ আদায় করেছে রূপগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী মহিলালীগ নেত্রী সাথী ও তার সহযোগীরা। শুধু তাই নয় প্রায় ৩ লাখ টাকা আদায় শেষে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে ওই নারী।
রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মুশুরী এলাকার দুস্থ নারী সেলিনা আক্তার বলেন, আমিসহ আমরা রূপগঞ্জ ইউনিয়নের ৮নং ও ৭নং ওয়ার্ড থেকে ৩১ জন বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সরকারি অনুদান ও সহায়তা পাওয়ার জন্য উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ( বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) ফেরদৌসী আলম নীলার পূর্বাচলের বাসায় যাই। কিন্তু সেখানে চেয়ারম্যানের দেখা না পেয়ে চলে আসার সময় মহিলালীগ নেত্রী সাথী আক্তারের সাথে দেখা হয়। সে জানায়, বিধবা ভাতা পেতে ২ হাজার, ক্যান্সার আক্রান্তের জন্য ১০ হাজার, গর্ভবতী ও বয়স্ক ভাতা পেতে জনপ্রতি ৩ হাজার করে দিলে ১ মাস পর থেকে তারা ভাতা পাবে। পরে আমরা তার কথায় রাজি হয়ে গত ২ বছর পূর্বে তার হাতে দাবীকৃত টাকা দেই। কিন্তু গত ২ বছরেও কেউ কোন ভাতা পায়নি। এতে আমরা আতঙ্কিত হয়ে যাই। আবার সাথী নীলা চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করতে বাঁধা দেয়। আর বারবারই ভাতা পাওয়ার আশ্বাস দিয়ে আমাদের ধমক দিয়ে ফিরিয়ে দেয়। সবশেষ গত ২ মাস পূর্বে বাধ্য হয়ে স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানকে লিখিত অভিযোগ জানাই। কিন্তু আমাদের টাকা আর ফেরত পাইনি। অভিযুক্ত সাথীও তার বাসায় থাকে না বলে জানিয়েছে তার পরিবারের লোকজন।
অভিযোগ করেও টাকা ফেরত না পাওয়া অন্য দুস্থ নারীরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। ভুক্তভোগী পিতলগঞ্জের শাহানাজের ২ হাজার, আকাশী, আমেনা, রিমাদের কাছ থেকে ১ হাজার করে, ফাতেমা, ফিরোজা, হাসনারাদের কাছ থেকে ৫ হাজার করে ভাতা পাইয়ে দেয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নেয়। এভাবে ৬৫ জনের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় সাথী ও তার সহযোগীরা।
এসব বিষয়ে সাথীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তার ব্যবহৃত নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়৷ তবে উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফেরদৌসী আলম নীলা সাথীর ভাই ওসমান গনি খোকনের নাম্বারে সাংবাদিকদের সামনে যোগাযোগ করলে সাথী বলেন, আমি সমাজসেবা কার্যালয় থেকে সুবিধা পাইয়ে দিতে কিছু মহিলার কাছ থেকে খরচ বাবদ টাকা নিয়েছিলাম। তবে আমি একা না। লাকী ও রাসেলও নিয়েছে। আমার টাকা চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন ভাই ফেরত চাইলে লাকীর বিকাশে টাকা দিয়ে দিয়েছি। আমার এটা নেয়া ঠিক হয়নি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফেরদৌসী আলম নীলা বলেন,সাথী বা কোন নেত্রী আমার নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা আদায় করেছে এমন কিছু জানা নাই। তবে যেদিন জেনেছি সেদিনই প্রতিবাদ করেছি। ওই সাথীকে সতর্ক করেছি। টাকা ফেরতের কথাও বলেছিলাম। এখনো দেয়নি কেন তা জানি না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছালাউদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, এ ধরনের একটি অভিযোগ পেয়ে সাথী,রাসেলসহ একটি চক্রকে পরিষদে নোটিশ করেছি। তাদের কাছ থেকে কিছু টাকা ফেরত হিসেবে আদায় করে দিয়েছি। কিছু মনে হয় বাকি আছে। গরীব অসহায়দের এভাবে ঠকানো অন্যায়। সবার টাকা ফেরত দেয়ার জন্য যা যা করা লাগে আইনমতে করবো।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ইশরত জাহান ভুঁইয়া বলেন, বিধিমতে সরকারী সুবিধা পাইয়ে দিতে দালাল চক্রের কোন কাজ নেই এ দপ্তরে। কেউ সত্যিকারের সরকারী সুবিধা পাওয়ার যোগ্য কিনা তার প্রাথমিক তালিকা করবেন ইউপি সদস্য। তারপর ওই তালিকা পাঠাবে ইউপি চেয়ারম্যান। অতঃপর আমরা ইউএনও মহোদয়ের যাচাইপূর্বক তা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে পাঠাই। তা বিভিন্ন মাধ্যমে যাচাই বাচাই করে একজন ব্যক্তি এ ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকেন। সুতরাং কোন দালালের মাধ্যমে এ সুবিধা আমরা দেইনা। সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত নারী সাথী বা কারো সাথে অফিসের যোগাযোগ নাই।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

রূপগঞ্জে অর্ধশতাধিক দুস্থ নারীদের টাকা নিয়ে লাপাত্তা মহিলালীগ নেত্রী সাথী

আপডেট সময় : ০৭:৪৫:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মো. নুর আলম, রূপগঞ্জ :

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সমাজসেবা কার্যালয় থেকে বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের সরকারী সহায়তা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে অর্ধশতাধিক দুস্থ নারীর কাছ থেকে ঘুষ আদায় করেছে রূপগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী মহিলালীগ নেত্রী সাথী ও তার সহযোগীরা। শুধু তাই নয় প্রায় ৩ লাখ টাকা আদায় শেষে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে ওই নারী।
রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মুশুরী এলাকার দুস্থ নারী সেলিনা আক্তার বলেন, আমিসহ আমরা রূপগঞ্জ ইউনিয়নের ৮নং ও ৭নং ওয়ার্ড থেকে ৩১ জন বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সরকারি অনুদান ও সহায়তা পাওয়ার জন্য উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ( বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) ফেরদৌসী আলম নীলার পূর্বাচলের বাসায় যাই। কিন্তু সেখানে চেয়ারম্যানের দেখা না পেয়ে চলে আসার সময় মহিলালীগ নেত্রী সাথী আক্তারের সাথে দেখা হয়। সে জানায়, বিধবা ভাতা পেতে ২ হাজার, ক্যান্সার আক্রান্তের জন্য ১০ হাজার, গর্ভবতী ও বয়স্ক ভাতা পেতে জনপ্রতি ৩ হাজার করে দিলে ১ মাস পর থেকে তারা ভাতা পাবে। পরে আমরা তার কথায় রাজি হয়ে গত ২ বছর পূর্বে তার হাতে দাবীকৃত টাকা দেই। কিন্তু গত ২ বছরেও কেউ কোন ভাতা পায়নি। এতে আমরা আতঙ্কিত হয়ে যাই। আবার সাথী নীলা চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করতে বাঁধা দেয়। আর বারবারই ভাতা পাওয়ার আশ্বাস দিয়ে আমাদের ধমক দিয়ে ফিরিয়ে দেয়। সবশেষ গত ২ মাস পূর্বে বাধ্য হয়ে স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানকে লিখিত অভিযোগ জানাই। কিন্তু আমাদের টাকা আর ফেরত পাইনি। অভিযুক্ত সাথীও তার বাসায় থাকে না বলে জানিয়েছে তার পরিবারের লোকজন।
অভিযোগ করেও টাকা ফেরত না পাওয়া অন্য দুস্থ নারীরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। ভুক্তভোগী পিতলগঞ্জের শাহানাজের ২ হাজার, আকাশী, আমেনা, রিমাদের কাছ থেকে ১ হাজার করে, ফাতেমা, ফিরোজা, হাসনারাদের কাছ থেকে ৫ হাজার করে ভাতা পাইয়ে দেয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নেয়। এভাবে ৬৫ জনের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় সাথী ও তার সহযোগীরা।
এসব বিষয়ে সাথীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তার ব্যবহৃত নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়৷ তবে উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফেরদৌসী আলম নীলা সাথীর ভাই ওসমান গনি খোকনের নাম্বারে সাংবাদিকদের সামনে যোগাযোগ করলে সাথী বলেন, আমি সমাজসেবা কার্যালয় থেকে সুবিধা পাইয়ে দিতে কিছু মহিলার কাছ থেকে খরচ বাবদ টাকা নিয়েছিলাম। তবে আমি একা না। লাকী ও রাসেলও নিয়েছে। আমার টাকা চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন ভাই ফেরত চাইলে লাকীর বিকাশে টাকা দিয়ে দিয়েছি। আমার এটা নেয়া ঠিক হয়নি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফেরদৌসী আলম নীলা বলেন,সাথী বা কোন নেত্রী আমার নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা আদায় করেছে এমন কিছু জানা নাই। তবে যেদিন জেনেছি সেদিনই প্রতিবাদ করেছি। ওই সাথীকে সতর্ক করেছি। টাকা ফেরতের কথাও বলেছিলাম। এখনো দেয়নি কেন তা জানি না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছালাউদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, এ ধরনের একটি অভিযোগ পেয়ে সাথী,রাসেলসহ একটি চক্রকে পরিষদে নোটিশ করেছি। তাদের কাছ থেকে কিছু টাকা ফেরত হিসেবে আদায় করে দিয়েছি। কিছু মনে হয় বাকি আছে। গরীব অসহায়দের এভাবে ঠকানো অন্যায়। সবার টাকা ফেরত দেয়ার জন্য যা যা করা লাগে আইনমতে করবো।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ইশরত জাহান ভুঁইয়া বলেন, বিধিমতে সরকারী সুবিধা পাইয়ে দিতে দালাল চক্রের কোন কাজ নেই এ দপ্তরে। কেউ সত্যিকারের সরকারী সুবিধা পাওয়ার যোগ্য কিনা তার প্রাথমিক তালিকা করবেন ইউপি সদস্য। তারপর ওই তালিকা পাঠাবে ইউপি চেয়ারম্যান। অতঃপর আমরা ইউএনও মহোদয়ের যাচাইপূর্বক তা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে পাঠাই। তা বিভিন্ন মাধ্যমে যাচাই বাচাই করে একজন ব্যক্তি এ ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকেন। সুতরাং কোন দালালের মাধ্যমে এ সুবিধা আমরা দেইনা। সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত নারী সাথী বা কারো সাথে অফিসের যোগাযোগ নাই।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন