বাঁশখালীতে ২৬ বছর পর আ’লীগের সম্মেলন
- আপডেট সময় : ০৭:২২:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২২
- / ৬০
বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা
দীর্ঘ ২৬ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সম্মেলনকে ঘিরে বাঁশখালীতে বইছে উৎসবের হাওয়া। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে যেন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। অন্যদিকে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদ কারা পাচ্ছেন, তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। তবে অধিকাংশ নেতা-কর্মীই দলীয় কার্যক্রমে গতি ফিরিয়ে আনতে নতুন নেতৃত্বের দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে বাঁশখালী উপজেলা সদর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হবে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন। পরদিন বুধবার চট্টগ্রাম প্রেস-ক্লাব বঙ্গবন্ধু হলে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের পরবর্তী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন, তা জানতে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের বৈঠকে জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতারা বাঁশখালী আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার জন্য নির্দেশনা দেন। এরপর নির্দেশনা পেয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৬ ডিসেম্বর সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এতে সম্মেলন হওয়ার নির্দেশনা আসার পরই সরব হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। সম্মেলনকে ঘিরে দলীয় পদ প্রত্যাশীরা নানা রকম প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন নিয়মিত। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ কে পাচ্ছেন, তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা, চলছে চুলছাঁটা বিশ্লেষণ। এদিকে দল ক্ষমতায় থাকায় এবং বেশি নেতা হওয়ায় তীব্র প্রতিযোগিতা হবে বলে ধারণা করছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে বাঁশখালী উপজেলার নাপোড়ায় সর্বশেষ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে (বর্তমান এমপি) সভাপতি ও খোরশেদ আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এরপর কিছু সময় পার হলে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রণতোষ ও সাংগঠনিক সম্পাদক রেহানকে কমিটি থেকে বহিষ্কার করে ৫১ সদস্য নতুন কমিঠি ঘোষণা করে তৎকালীন সময়ের বাঁশখালীর সাংসদ সুলতান উল কবির চৌধুরী। এতে নতুন কমিটিতে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে সভাপতি, আব্দুল গফুরকে সাধারণ সম্পাদক, মহিউদ্দিন চৌধুরী খোকাকে সাংগঠনিক সম্পাদক, শ্যামল দাশকে দপ্তর সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। এরপর দীর্ঘ ২৬ বছর হয়ে গেলেও আর কোন কমিটির মুখ দেখেনি বাঁশখালী আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে ৫১ সদস্যের সেই কমিটির অনেকে মারা গেছেন। কেউ আবার রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। যার ফলে দলে নানা বিশৃঙ্খলা ও অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। তবে এই অচলাবস্থার মধ্যেও জাতীয় ও স্থানীয় সব কর্মসূচি পালন করে নিজেদের জানান দিয়ে গেছেন বলে দাবি বর্তমান নেতাদের।
সম্মেলন নিয়ে তৃনমূল নেতাকর্মীরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাঁশখালীতে কোন কমিটি না হওয়ায় দলের অচল অবস্থা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও ২৬ বছর আগের কমিটির অনেকে মারা গেছেন, কেউ রাজনীতি থেকে সরে দাড়িয়েছেন। যারা আছেন তাদেরও এখন দলীয় কর্মসুচীতে তেমন দেখা যায় না। এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুরের মধ্যে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। ব্যানারে একসাথে নাম দেখা গেলেও প্রকাশ্যে তাদের কখনো দেখা যায় না। দলের নানা কর্মসুচীতে ঢালাও ভাবে এই দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়ছে। শুধুই কি তাই? দলে এখন এক চেটিয়া রাজত্ব চলে বলে শুনা যায়। অন্যদিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও নানা সমস্যার কারণে সম্মেলনকে ঘিরে নিরাপত্তার সংশয় রয়েছে বলেও জানান তারা।
সম্মেলন সুত্রে জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ প্রত্যাশী হিসেবে বর্তমান সভাপতি সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোসলেহ উদ্দীন মনছুর, জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম-বিষয়ক সম্পাদক খোরশেদ আলম, জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী মুহাম্মদ গালিব এবং জেলা দপ্তর সম্পাদক আবু জাফরের নাম শুনা যাচ্ছে। এছাড়াও সভাপতি পদে চমক হিসেবে থাকতে পারেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান সিআইপি ও জেলা সদস্য আব্দুল্লাহ কবির লিটন।
অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল গফুর, উপজেলা চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি, কালীপুর ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আ.ন.ম শাহাদাত আলম, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি অধ্যাপক তাজুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দীন চৌধুরী খোকা, দপ্তর সম্পাদক শ্যামল দাশ, চাম্বল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুল হক চৌধুরী, উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক সিকদার, সাধনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমান উল্লাহ’র নাম শুনা যাচ্ছে।
তৃণমূল নেতা কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সম্মেলনে এবারও সভাপতি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান সভাপতি ও সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, যদি কোন কারণে তিনি সভাপতি না হন তাহলে এ ক্ষেত্রে চমক হিসেবে আসতে পারেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোসলেহ উদ্দীন মনছুর ও বাঁশখালীর বীর খ্যাত সাবেক সংসদ সদস্য সুলতানুল কবির চৌধুরীর পুত্র চৌধুরী মুহাম্মদ গালিব সাদলী। জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে ইতিমধ্যে যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন এ তরুণ তুর্কি। এছাড়াও সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান সিআইপি ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল্লাহ কবির লিটন সভাপতি পদে আসীন হলে অবাক হওয়ার কিছু নাই।
এদিকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আবারও একই পদ ফিরে পেতে দলের সভাপতি সাংসদ মোস্তাফিজের সাথে বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করছেন বলে জানা যায়। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক হতে চান বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দীন চৌধুরী খোকা, তবে গত ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে শোচনীয় পরাজয় বরণ করেন তিনি। এটি তার জন্য বাধা হয়ে দাড়াতে পারে। এদিকে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি, কালীপুর ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাড. আ.ন.ম শাহাদত আলম। তিনি সাবেক মন্ত্রী বিএনপি নেতা জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর চাচাতো ভাই আমিনুর রহমানকে দুই দুইবার পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এছাড়া তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রথম পছন্দ হওয়ায় এ পদে ভালো ভাবেই এগিয়ে রয়েছেন তিনি। অন্যদিকে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি, সাংসদ পিএস তাজুল ইসলামও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। এতে সাংসদ মোস্তাফিজুরও প্রথম পছন্দ বলে সুত্রে জানা যায়।
অন্যদিকে এ পদে আসীন হতে চায় ইভিএম নিয়ে সারাদেশে ভাইরাল হওয়া চাম্বল আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী। দেশব্যাপী সমালোচিত হওয়া এই নেতা এ পদে আসীন হলে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। এদিকে ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে পরিচিত উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক শিলকূপের সাবেক চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক সিকদারও এগিয়ে রয়েছেন সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল্লাহ চৌধুরীর বড় ছেলে আমান উল্লাহ আমানও এ পদে আসীন হতে চায় বলে শুনা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী এ্যাড. আ.ন.ম শাহাদত আলম বলেন, দীর্ঘদিন পর সন্মেলন হওয়াতে একজন তৃণমূল কর্মী হিসাবে আমি অত্যন্ত খুশি। এতে নেতৃত্বে কে আসবে তা জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ঠিক করবেন। তবে আমরা এমন একটা কমিটি চাই, যারা বিগত সময়ে বাঁশখালী আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে কাজ করেছেন। এছাড়াও তৃণমূল নেতাকর্মী চায় ক্লিন ইমেজের একজন দক্ষ এবং যোগ্য সংগঠক সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন হউক। যার যোগ্যতা নিয়ে যেন কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে। আমরা এমন একটা পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রত্যাশা করি যেখানে যোগ্য নেতারা স্থান পাবে, যাতে একটা সংঘবদ্ধ টিম ওয়ার্ক হিসেবে কাজ করতে পারে।
এ বিষয়ে সভাপতি পদপ্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোসলেহ উদ্দীন মনছুর বলেন, দীর্ঘ সময় পর সম্মেলন পেয়ে বাঁশখালীর তৃনমূল নেতা কর্মীদের মনে উৎসবের হাওয়া বইছে। সম্মেলনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বের কাণ্ডারীদের হাতে দায়িত্ব অর্পন করা হোক। দলীয় সব কোন্দল মিটিয়ে সকলে কাধে কাঁধ রেখে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার মত যোগ্য নেতারা কমিটিতে আসুক। সব মিলিয়ে একটি সুন্দর সম্মেলন কামনা করি।
এ বিষয়ে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, নির্ধারিত তারিখ ও নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম অধিবেশন হবে বাঁশখালীতে, দ্বিতীয় অধিবেশন চট্টগ্রাম শহরে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের মাধ্যমে বাঁশখালীতে একদল নতুন নেতৃত্ব উপহার দেওয়া হবে। সম্মেলনে তৃনমূলসহ সবার মতামত নেওয়া হবে। সকলের মতামতের ভিত্তিতে নতুন একটি কমিটি ঘোষণা করা হবে।