১১:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

সোনারগাঁ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জ্বরের রোগী নিয়ন্ত্রণে ৭২ ঘন্টায় ব্যর্থ অবশেষে রেফার

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৫:৫০:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ১১৫

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

এন এম সুজন:

নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনিয়ম যেন কিছুতেই থামছে না। দিনের পর দিন অনিয়ম চললেও কোন ভাবে এর প্রতিকার হচ্ছে না। এই নিয়ে ভুক্তভোগীদের হয়রানি বেড়েই চলছে। বিভিন্ন সময় এই অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হলেও তেমন কেউ আমলে নেয়নি। এই ব্যাপারে বরাবরই নিশ্চুপ থেকে যাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। এতে করে অনিয়মে জড়িত হাসপাতালের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা বহাল তবিয়তে থেকে দেদাঁরসে অনিয়ম করে যাচ্ছেন। তাই অনিয়ম-দুর্নীতিতে জর্জরিত ৫০ শয্যার এই হাসপাতালের প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে রোগীসহ সাধারণ সেবাপ্রার্থীরা।
এই হাসপাতাল নিয়ে এক দীর্ঘ অনুসন্ধানে এমন চিত্র ফুটে উঠেছে। ভুক্তভোগীরাও দিয়েছেন এমন তথ্য। উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষের নির্ভরযোগ্য একমাত্র চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বছরের পর বছর ধরে সিন্ডিকেট ভিত্তিক দুর্নীতির ভূতের কাছে নিমজ্জিত এই সরকারী প্রতিষ্ঠানটি। দৈনিক অর্ধসহস্রাধিক রোগির একমাত্র নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটির ধারণক্ষমতা রয়েছে ৫০ শয্যার। কিন্তু এই রোগীদের অজুহাতে বরাদ্ধকৃত ঔষধ পত্রগুলোর মধ্যে নয় ছয় করে লুটেপুটে খাচ্ছে একটি চক্র।
জানা গেছে, হাসপাতালের ওয়ার্ড পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, ঔষধে নয় ছয়, নানা অব্যবস্থাপনা, এনজিওদের দখল, শিক্ষানবীশ ডাক্তার নির্ভরতা, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অশুভ আচরণ, প্রতিবাদ করলেই নাজেহাল, অভিজ্ঞ ডাক্তার সংকট, খাবারে ব্যাপক অনিয়ম, রোগিদের তদারকির অভাব। সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভোগান্তির আরেক নাম জ্বরের রোগী ।
রোগীর পরিবার থেকে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারী) মোগরাপাড়া থেকে ৩২ বছরের জ্বরে আক্রান্ত রোগী ফাহাদুল ইসলাম কে সকাল ৮ সময় চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন তার পরিবার। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পরও তার জ্বর নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন চিকিৎসক না আসায় রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হতে লাগে। পরিবারের লোকজন অবস্থা গুরুত্ব দেখে জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করলে তারা জানান দশটা থেকে ১১ঃ০০ টার মধ্যে ডাক্তার আসবে চিকিৎসা করবে, তার আগে কোন ব্যবস্থা নাই। তারমানে রোগী এই অবস্থায় থাকবে, তারা উত্তরে বলল হ্যাঁ আমাদের কিছু করার নাই। চিকিৎসার নামে হয়রানি দেখে ৭২ ঘন্টা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা দিন থাকা অবস্থায় কোন ধরনের রোগীর উন্নতি না দেখে বরং দিন দিন রোগীর অবস্থা অবনতি হওয়ায় তাৎক্ষণিক পরিবারের লোকজনের পরামর্শে অন্য হসপিটালে রেফার করার অনুরোধ করলে তারা ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। ঢাকা মেডিকেলের অনুমতি পেয়ে শনিবার ১৩ই জানুয়ারি রাত ১১ টার সময় অবস্থার ও অবনতি হলে জরুরী ভিত্তিতে এম্বুলেন্সের মাধ্যমে বন্দর থানা আওতাধীন বারাকা হসপিটালে ভর্তি করানো হয়।
সেখানে জরুরী বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে ৩০ মিনিটের মধ্যে তারা জ্বর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। আর তাদের চিকিৎসার মধ্যে খামখেয়ালি ও ভুল চিকিৎসা বলে রোগীর অবস্থা অবনতি হয়েছে এমনই মন্তব্য করেন বারাকা হসপিটালের জরুরি বিভাগ।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো ৭২ ঘন্টায় সোনারগাঁও উপজেলা হসপিটালের কোন ডাক্তার ওই রোগীর জ্বর নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয় নাই। অথচ একটি প্রাইভেট হসপিটালে ৩০ মিনিটে সেই রোগীর জ্বর নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। এ হল সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবার অবস্থা।
এছাড়াও সরেজমিনে বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, রোগিদের তীব্র হাহাকার। সরকারিভাবে সরবরাহকৃত প্যারসিটামলই যেনো একমাত্র ভরসা। অবশ্য কিছু কিছু রোগিদের ক্ষেত্রে ব্যাথার ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে। এর বাহিরে কোনো ঔষধ রোগিদের দেওয়া হচ্ছে না। ফার্মেসীতে মিলছেও না প্রয়োজনীয় সব ঔষধ।
হাসপাতালের ২য় তলার পুরুষ ওয়ার্ডে গেলে দেখা যায়, নাজেহাল অবস্থা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব ডাক্তার ও নার্সদের অশুভ আচরণ, দুর্ব্যবহার সহ রোগীদের যত্নের ও খোঁজ খবরের কোন তোয়াক্কাই নেই। ডাক্তার ও নার্সদের খামখেয়ালিতে এরকম শত শত রোগী চিকিৎসার অভাবে এখান থেকে বিমুখ হওয়ার নজির রয়েছে অহরহ। শুধু তাই নয় তাদের এই অব্যবস্থার ও মানহীন চিকিৎসার কারণে দিন দিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুর্নাম ছড়িয়ে পড়েছে সারা সোনারগাঁয়ে।
এ বিষয়ে সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর (আরএমও) মোশারফ হোসেন এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, বিষয়টি আমি অবগত না, যদি কোন রোগী হয়রানির শিকার হয়ে থাকে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়াও তিনি আরো বলেন, একটি হসপিটালের সীমাবদ্ধতা আছে সেই সীমাবদ্ধতার মধ্যেই আমাদের চিকিৎসা করতে হয় আমরা চাইলেই যেকোনো রোগের যে কোন চিকিৎসা করতে পারি না তাই রোগী সহ সাথে নিয়ে আসার কথা তিনি জানান।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

সোনারগাঁ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জ্বরের রোগী নিয়ন্ত্রণে ৭২ ঘন্টায় ব্যর্থ অবশেষে রেফার

আপডেট সময় : ০৫:৫০:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৪
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

এন এম সুজন:

নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনিয়ম যেন কিছুতেই থামছে না। দিনের পর দিন অনিয়ম চললেও কোন ভাবে এর প্রতিকার হচ্ছে না। এই নিয়ে ভুক্তভোগীদের হয়রানি বেড়েই চলছে। বিভিন্ন সময় এই অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হলেও তেমন কেউ আমলে নেয়নি। এই ব্যাপারে বরাবরই নিশ্চুপ থেকে যাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। এতে করে অনিয়মে জড়িত হাসপাতালের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা বহাল তবিয়তে থেকে দেদাঁরসে অনিয়ম করে যাচ্ছেন। তাই অনিয়ম-দুর্নীতিতে জর্জরিত ৫০ শয্যার এই হাসপাতালের প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে রোগীসহ সাধারণ সেবাপ্রার্থীরা।
এই হাসপাতাল নিয়ে এক দীর্ঘ অনুসন্ধানে এমন চিত্র ফুটে উঠেছে। ভুক্তভোগীরাও দিয়েছেন এমন তথ্য। উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষের নির্ভরযোগ্য একমাত্র চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বছরের পর বছর ধরে সিন্ডিকেট ভিত্তিক দুর্নীতির ভূতের কাছে নিমজ্জিত এই সরকারী প্রতিষ্ঠানটি। দৈনিক অর্ধসহস্রাধিক রোগির একমাত্র নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটির ধারণক্ষমতা রয়েছে ৫০ শয্যার। কিন্তু এই রোগীদের অজুহাতে বরাদ্ধকৃত ঔষধ পত্রগুলোর মধ্যে নয় ছয় করে লুটেপুটে খাচ্ছে একটি চক্র।
জানা গেছে, হাসপাতালের ওয়ার্ড পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, ঔষধে নয় ছয়, নানা অব্যবস্থাপনা, এনজিওদের দখল, শিক্ষানবীশ ডাক্তার নির্ভরতা, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অশুভ আচরণ, প্রতিবাদ করলেই নাজেহাল, অভিজ্ঞ ডাক্তার সংকট, খাবারে ব্যাপক অনিয়ম, রোগিদের তদারকির অভাব। সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভোগান্তির আরেক নাম জ্বরের রোগী ।
রোগীর পরিবার থেকে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারী) মোগরাপাড়া থেকে ৩২ বছরের জ্বরে আক্রান্ত রোগী ফাহাদুল ইসলাম কে সকাল ৮ সময় চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন তার পরিবার। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পরও তার জ্বর নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন চিকিৎসক না আসায় রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হতে লাগে। পরিবারের লোকজন অবস্থা গুরুত্ব দেখে জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করলে তারা জানান দশটা থেকে ১১ঃ০০ টার মধ্যে ডাক্তার আসবে চিকিৎসা করবে, তার আগে কোন ব্যবস্থা নাই। তারমানে রোগী এই অবস্থায় থাকবে, তারা উত্তরে বলল হ্যাঁ আমাদের কিছু করার নাই। চিকিৎসার নামে হয়রানি দেখে ৭২ ঘন্টা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা দিন থাকা অবস্থায় কোন ধরনের রোগীর উন্নতি না দেখে বরং দিন দিন রোগীর অবস্থা অবনতি হওয়ায় তাৎক্ষণিক পরিবারের লোকজনের পরামর্শে অন্য হসপিটালে রেফার করার অনুরোধ করলে তারা ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। ঢাকা মেডিকেলের অনুমতি পেয়ে শনিবার ১৩ই জানুয়ারি রাত ১১ টার সময় অবস্থার ও অবনতি হলে জরুরী ভিত্তিতে এম্বুলেন্সের মাধ্যমে বন্দর থানা আওতাধীন বারাকা হসপিটালে ভর্তি করানো হয়।
সেখানে জরুরী বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে ৩০ মিনিটের মধ্যে তারা জ্বর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। আর তাদের চিকিৎসার মধ্যে খামখেয়ালি ও ভুল চিকিৎসা বলে রোগীর অবস্থা অবনতি হয়েছে এমনই মন্তব্য করেন বারাকা হসপিটালের জরুরি বিভাগ।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো ৭২ ঘন্টায় সোনারগাঁও উপজেলা হসপিটালের কোন ডাক্তার ওই রোগীর জ্বর নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয় নাই। অথচ একটি প্রাইভেট হসপিটালে ৩০ মিনিটে সেই রোগীর জ্বর নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। এ হল সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবার অবস্থা।
এছাড়াও সরেজমিনে বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, রোগিদের তীব্র হাহাকার। সরকারিভাবে সরবরাহকৃত প্যারসিটামলই যেনো একমাত্র ভরসা। অবশ্য কিছু কিছু রোগিদের ক্ষেত্রে ব্যাথার ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে। এর বাহিরে কোনো ঔষধ রোগিদের দেওয়া হচ্ছে না। ফার্মেসীতে মিলছেও না প্রয়োজনীয় সব ঔষধ।
হাসপাতালের ২য় তলার পুরুষ ওয়ার্ডে গেলে দেখা যায়, নাজেহাল অবস্থা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব ডাক্তার ও নার্সদের অশুভ আচরণ, দুর্ব্যবহার সহ রোগীদের যত্নের ও খোঁজ খবরের কোন তোয়াক্কাই নেই। ডাক্তার ও নার্সদের খামখেয়ালিতে এরকম শত শত রোগী চিকিৎসার অভাবে এখান থেকে বিমুখ হওয়ার নজির রয়েছে অহরহ। শুধু তাই নয় তাদের এই অব্যবস্থার ও মানহীন চিকিৎসার কারণে দিন দিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুর্নাম ছড়িয়ে পড়েছে সারা সোনারগাঁয়ে।
এ বিষয়ে সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর (আরএমও) মোশারফ হোসেন এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, বিষয়টি আমি অবগত না, যদি কোন রোগী হয়রানির শিকার হয়ে থাকে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়াও তিনি আরো বলেন, একটি হসপিটালের সীমাবদ্ধতা আছে সেই সীমাবদ্ধতার মধ্যেই আমাদের চিকিৎসা করতে হয় আমরা চাইলেই যেকোনো রোগের যে কোন চিকিৎসা করতে পারি না তাই রোগী সহ সাথে নিয়ে আসার কথা তিনি জানান।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন