১০:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

লালমনিরহাটে অবাধে বিক্রি হচ্ছে অসুস্থ গরু’র মাংস, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে সাধারণ মানুষ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ১২:০২:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর ২০২২
  • / ৬৮

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

প্রতিদিনের নিউজ

লালমনিরহাটের সদর উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে অবাধে জবাই করা হচ্ছে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত গরু-ছাগল। সেগুলো পরিক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই মাংস বিক্রি করছে বিক্রেতারা।

জানা যায়, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় গরু-ছাগলের ল্যাম্পি স্কিন ভাইরাসজনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ল্যাম্পি স্কিন মূলত এক প্রকার পক্স ভাইরাস বা এলএস-ডি ভাইরাসের সংক্রমণ। গবাদি পশুতে এই রোগ দেখা দেয় এবং এক গরু থেকে আরেক গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। ল্যাম্পি স্কিন আক্রান্ত গরুর মাংস খাওয়া বিপদজনক। অধিক সিদ্ধ করে খেতে হয়, তা না হলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি।

সদর উপজেলার হাট-বাজারে যেসব গরু জবাই করা হয় তার অধিকাংশ রোগে আক্রান্ত। এমনকি পৌর-শহরে কিছু কিছু জায়গায় গরু-ছাগল জবাই হয় চুপিসারে, রাতের আধারে এবং বসত বাড়ির ভিতরে। গরু-ছাগল জবাই করার নির্ধারিত কশাইখানা থাকার পরও সেখানে হয়না গরু-ছাগল জবাই। রাতের আধারে গরু জবাই করে ফ্রিজজাত হচ্ছে মাংস। সেই সব মাংস পরের দিন বিক্রি হয় হোটেল, রেস্তরাঁসহ সাধারণ মানুষের কাছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কশাই বলেন, আমরা মাঝে মাঝে দুই একটি অসুস্থ গরু-ছাগল কম দামে কিনে জবাই করি অধিক লাভের আশায়। এসব কাজ হয় বেশি সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর বাজার, সাপ্টিবাড়ী বাজার ও শহরের আলোরুপা মোড়ে। একটি অসুস্থ গরু’র মাংস বিক্রি করলে প্রায় ৩০-৪০ হাজার টাকা লাভ হয়।

পশু জবাইখানা ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১১-তে বলা আছে, জবাইখানার বাইরে পশু জবাই করা যাবে না। জবাইয়ের পরিবেশ হতে হবে মানসম্মত। থাকতে হবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। পশু জবাই কর্মীদের সংক্রামক রোগ থাকা যাবে না। আর এ বিষয়গুলো প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা পরিদর্শন করবেন।

আইন অনুযায়ী পশু জবাই, মাংস প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্মী সংক্রামক অথবা ছোঁয়াচে রোগমুক্ত কি না, তা উপযুক্ত চিকিৎসক কর্তৃক প্রত্যায়িত হতে হবে এবং উপযুক্ত চিকিৎসক কর্তৃক প্রদত্ত সনদপত্র জবাইখানা, মাংস বিক্রয় স্থাপনা, মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানার মালিক, ব্যবস্থাপক বা অন্য কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি সংরক্ষণ করবেন এবং প্রয়োজনে ভেটেরিনারি কর্মকর্তা বা ভেটেরিনারিয়ানকে প্রদর্শন করতে বাধ্য থাকবেন।
সদরের আলোরুপা মোড়ের স্থায়ী বাসিন্দা মজিবর রহমান বলেন, আমারা ইতিপূর্বে দেখেছিলাম নির্ধারিত কশাই খানায় ডাক্তারি পরিক্ষা করে গরু-ছাগল জবাই হতো। কিন্তু প্রায় ১৫ বছর থেকে দেখতেছি কশাইখানায় কোন গরু জবাই হয়না। গরু জবাই হয় এখন বসত বাড়ির ভিতরে। ডাক্তারি পরিক্ষা ছাড়াই হচ্ছে গরু জবাই।
অনেক দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসে মাংস কিনে, অথচ আজ অবদি কোন প্রাণী সম্পদ অফিসের লোককে দেখলাম না মাংস পরিক্ষা করার জন্য এসেছে। তারা আমাদের ট্যাক্সের টাকায় বেতন নিয়ে আরাম-আয়শে দিন কাটাচ্ছে। আমি এ ব্যাপারে গত ২৮ সেপ্টেম্বর পৌরসভার মেয়র জানাব রেজাউল করিম স্বপনকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন বিষয়টা দেখবেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সামাধান পাইনি।

আলোরুপা মোড়ের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও সচেতন মহল জানান, গরু-ছাগল জবাই করার জন্য সরকার নির্ধারিত কশাইখানা তৈরি করে দিয়েছে। কিন্তু কশাইরা সেখানে গরু-ছাগল জবাই করে না। কেন জবাই করে না তা আমাদের বোধগম্য নয়। বিগত-সময় গুলোতে আমরা দেখেছি গরু জবাইয়ের পূর্বে প্রাণী সম্পদ অফিসের লোক বা পৌরসভার লোক এসে পরিক্ষা করত। কিন্তু এখন সেটা নেই। তাই কশাইরা ভালো মাংসের সাথে ভেজাল মাংস বিক্রি করার সাহস পাচ্ছে। তাই মেয়র মহোদয়ের নিকট আমাদের দাবি, দ্রুত এই সবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন।

অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে পৌর মেয়র রেজাউল করিম স্বপন বলেন, আমি কয়েকদিন আগে শহরের কশাইদের নিয়ে মিটিং করেছি এবং তাদেরকে জায়গা নির্ধারন করার কথাও বলেছি। অল্প সময়ের মধ্যে তাদের অন্য জায়গায় অপসারণ করা হবে। মাংস পরিক্ষা করার বিষয়ে তিনি বলেন, সেটি পৌরসভার কাজ নয় প্রাণী সম্পদ অফিসের কাজ।

এ বিষয়ে জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন আগে আমরা মিটিংও করেছি, পৌরসভার সেনেটারি অফিসার এটি দেখভাল করবে। তাছাড়াও মাঝে মাঝে আমি নিজেও যাই। মুলত জনবল সংকট থাকার কারণে সঠিকভাবে মনিটরিং হচ্ছে না।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

লালমনিরহাটে অবাধে বিক্রি হচ্ছে অসুস্থ গরু’র মাংস, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে সাধারণ মানুষ

আপডেট সময় : ১২:০২:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর ২০২২
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

প্রতিদিনের নিউজ

লালমনিরহাটের সদর উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে অবাধে জবাই করা হচ্ছে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত গরু-ছাগল। সেগুলো পরিক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই মাংস বিক্রি করছে বিক্রেতারা।

জানা যায়, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় গরু-ছাগলের ল্যাম্পি স্কিন ভাইরাসজনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ল্যাম্পি স্কিন মূলত এক প্রকার পক্স ভাইরাস বা এলএস-ডি ভাইরাসের সংক্রমণ। গবাদি পশুতে এই রোগ দেখা দেয় এবং এক গরু থেকে আরেক গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। ল্যাম্পি স্কিন আক্রান্ত গরুর মাংস খাওয়া বিপদজনক। অধিক সিদ্ধ করে খেতে হয়, তা না হলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি।

সদর উপজেলার হাট-বাজারে যেসব গরু জবাই করা হয় তার অধিকাংশ রোগে আক্রান্ত। এমনকি পৌর-শহরে কিছু কিছু জায়গায় গরু-ছাগল জবাই হয় চুপিসারে, রাতের আধারে এবং বসত বাড়ির ভিতরে। গরু-ছাগল জবাই করার নির্ধারিত কশাইখানা থাকার পরও সেখানে হয়না গরু-ছাগল জবাই। রাতের আধারে গরু জবাই করে ফ্রিজজাত হচ্ছে মাংস। সেই সব মাংস পরের দিন বিক্রি হয় হোটেল, রেস্তরাঁসহ সাধারণ মানুষের কাছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কশাই বলেন, আমরা মাঝে মাঝে দুই একটি অসুস্থ গরু-ছাগল কম দামে কিনে জবাই করি অধিক লাভের আশায়। এসব কাজ হয় বেশি সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর বাজার, সাপ্টিবাড়ী বাজার ও শহরের আলোরুপা মোড়ে। একটি অসুস্থ গরু’র মাংস বিক্রি করলে প্রায় ৩০-৪০ হাজার টাকা লাভ হয়।

পশু জবাইখানা ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১১-তে বলা আছে, জবাইখানার বাইরে পশু জবাই করা যাবে না। জবাইয়ের পরিবেশ হতে হবে মানসম্মত। থাকতে হবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। পশু জবাই কর্মীদের সংক্রামক রোগ থাকা যাবে না। আর এ বিষয়গুলো প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা পরিদর্শন করবেন।

আইন অনুযায়ী পশু জবাই, মাংস প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্মী সংক্রামক অথবা ছোঁয়াচে রোগমুক্ত কি না, তা উপযুক্ত চিকিৎসক কর্তৃক প্রত্যায়িত হতে হবে এবং উপযুক্ত চিকিৎসক কর্তৃক প্রদত্ত সনদপত্র জবাইখানা, মাংস বিক্রয় স্থাপনা, মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানার মালিক, ব্যবস্থাপক বা অন্য কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি সংরক্ষণ করবেন এবং প্রয়োজনে ভেটেরিনারি কর্মকর্তা বা ভেটেরিনারিয়ানকে প্রদর্শন করতে বাধ্য থাকবেন।
সদরের আলোরুপা মোড়ের স্থায়ী বাসিন্দা মজিবর রহমান বলেন, আমারা ইতিপূর্বে দেখেছিলাম নির্ধারিত কশাই খানায় ডাক্তারি পরিক্ষা করে গরু-ছাগল জবাই হতো। কিন্তু প্রায় ১৫ বছর থেকে দেখতেছি কশাইখানায় কোন গরু জবাই হয়না। গরু জবাই হয় এখন বসত বাড়ির ভিতরে। ডাক্তারি পরিক্ষা ছাড়াই হচ্ছে গরু জবাই।
অনেক দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসে মাংস কিনে, অথচ আজ অবদি কোন প্রাণী সম্পদ অফিসের লোককে দেখলাম না মাংস পরিক্ষা করার জন্য এসেছে। তারা আমাদের ট্যাক্সের টাকায় বেতন নিয়ে আরাম-আয়শে দিন কাটাচ্ছে। আমি এ ব্যাপারে গত ২৮ সেপ্টেম্বর পৌরসভার মেয়র জানাব রেজাউল করিম স্বপনকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন বিষয়টা দেখবেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সামাধান পাইনি।

আলোরুপা মোড়ের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও সচেতন মহল জানান, গরু-ছাগল জবাই করার জন্য সরকার নির্ধারিত কশাইখানা তৈরি করে দিয়েছে। কিন্তু কশাইরা সেখানে গরু-ছাগল জবাই করে না। কেন জবাই করে না তা আমাদের বোধগম্য নয়। বিগত-সময় গুলোতে আমরা দেখেছি গরু জবাইয়ের পূর্বে প্রাণী সম্পদ অফিসের লোক বা পৌরসভার লোক এসে পরিক্ষা করত। কিন্তু এখন সেটা নেই। তাই কশাইরা ভালো মাংসের সাথে ভেজাল মাংস বিক্রি করার সাহস পাচ্ছে। তাই মেয়র মহোদয়ের নিকট আমাদের দাবি, দ্রুত এই সবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন।

অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে পৌর মেয়র রেজাউল করিম স্বপন বলেন, আমি কয়েকদিন আগে শহরের কশাইদের নিয়ে মিটিং করেছি এবং তাদেরকে জায়গা নির্ধারন করার কথাও বলেছি। অল্প সময়ের মধ্যে তাদের অন্য জায়গায় অপসারণ করা হবে। মাংস পরিক্ষা করার বিষয়ে তিনি বলেন, সেটি পৌরসভার কাজ নয় প্রাণী সম্পদ অফিসের কাজ।

এ বিষয়ে জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন আগে আমরা মিটিংও করেছি, পৌরসভার সেনেটারি অফিসার এটি দেখভাল করবে। তাছাড়াও মাঝে মাঝে আমি নিজেও যাই। মুলত জনবল সংকট থাকার কারণে সঠিকভাবে মনিটরিং হচ্ছে না।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন