শিক্ষক যখন চিত্রশিল্পী
- আপডেট সময় : ০৭:২২:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ নভেম্বর ২০২২
- / ৮৭
রিপন কান্তি গুণ:
“কামরুল হাসান” নামটি শুনলেই জাতীয় পতাকা ডিজাইনার ও স্বাধীনতা পুরুষ্কারপ্রাপ্ত বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর কথা মনেপড়ে যায়। কিন্তু এ চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান নেত্রকোনা সরকারি মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি শখের বশে ছবি আঁকেন। ছবি আঁকায় তার প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই। শিক্ষক কামরুল হাসানের আঁকা ১৬টি ছবি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, কাতারসহ বিভিন্ন দেশে বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া তাঁর আঁকা ছবি নিজের দেশে বিভিন্ন অফিস, বন্ধু–স্বজনদের বাসার দেয়ালেও ঝুলছে। তিনি শখে আঁকা শুরু করলেও গত বছর থেকে বানিজ্যিক ভাবে ছবি থেকে আয় শুরু করেছেন। ছবি বিক্রি করে গত বছর আয় করেছেন, প্রায় দেড় লাখ টাকা।
কামরুল হাসান বলেন, ‘নিজের শখের বশে আঁকা শুরু করলেও এখন আঁকাআঁকি নেশা হয়ে গেছে। একেকটি ছবিতে মেধার পাশাপাশি শিল্পীকে প্রচুর শ্রম দিতে হয়। তবে আমরা শিল্পীরা শ্রম ও মেধার মূল্যায়ন পাই না।’ ছবি আঁকার ব্যাকরণ আমার জানা নেই। যতটুকু করছি, নিজের চেষ্টা ও চর্চার মাধ্যমেই করেছি। ছবি আঁকার প্রতি আমার নেশা ছোটবেলা থেকেই। খাতার কোনায় বা বইয়ের কোনায় মন চাইলেই একটা না একটা কিছু কলম দিয়ে এঁকে রাখতাম।
তিনি আরও বলেন, স্কুল–কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় অনেকেই চারুকলা ইনস্টিটিউটে ভর্তির কথা বলেছিলেন, কিন্তু শখকে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মন চায়নি বলেই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই। ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকার সময় প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে গিয়ে বসে থাকতাম। ছাত্রছাত্রীদের চিত্রকর্ম দেখতাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে কামরুল হাসান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে শিক্ষা ক্যাডারে যোগ দেন। ২০১৬ সালে রংপুর সরকারি কলেজে বদলি হওয়ায় তাকে পরিবার ছেড়ে থাকতে হয়। তখন একাকিত্ব ভর করে। তখন সময় কাটানোর জন্য রংতুলি আর ক্যানভাসের কথা মাথায় আসে। ঢাকা থেকে ছবি আঁকার বিভিন্ন সামগ্রী কিনে ছবি আঁকা শুরু করেন। এখন তা নিয়মিত চর্চায় পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৭০০টি ছবি এঁকেছেন, ছবি বিক্রির টাকা দিয়ে আঁকার সামগ্রী কেনার খরচ অনেকটাই সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। বন্ধুদের বাসা ও অফিসে তার আঁকা প্রায় ১৫০টি ছবি আছে। বন্ধুরা দেশে বা বিদেশে অফিস বা বাসায় দেয়ালে ছবি টাঙিয়ে সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন। কামরুল হাসানের স্ত্রী তাহমিনা খান নেত্রকোনায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তাদের দুই ছেলের একজন পড়ছে সপ্তম শ্রেণিতে, অন্যজন দ্বিতীয় শ্রেণিতে।
কামরুল হাসান তার পরিবারের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যেকোনো সৃষ্টিশীল কাজের পেছনে সবচেয়ে বড় ত্যাগ স্বীকার করে পরিবার। আমার এ শিল্পচর্চার পেছনে আমার স্ত্রী, দুই সন্তানের ভূমিকা অপরিসীম। তারা আমাকে সুযোগ দিচ্ছে বলেই আমি আমার শিল্পচর্চা চালিয়ে যেতে পারছি। নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের সদস্য ও নেত্রকোনা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কবি সরোজ মোস্তফা বলেন, কামরুল হাসানের আঁকা ছবির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো প্রকৃতি। তাঁর প্রতিটি ছবিতেই একধরনের সরলতা আছে। ছবিগুলো দেশ, মাটির ও জীবনের কথা বলে।
অনেক স্বপ্ন হৃদয়ে এঁকে বলেন, তিনি তার চিত্রকর্ম আমৃত্যু চালিয়ে যেতে চান। ভবিষ্যতে কোনো এক দিন হয়তো নিজের চিত্রকর্মের প্রদর্শনী হবে। শিশুদের শেখানোর জন্য একটি ইনস্টিটিউট গড়ে তুলবেন, যেখানে শিশুরা মনের আনন্দে বিনা মূল্যে ছবি আঁকবে।