আ‘লীগ নেতার জমি দখল করতে মরিয়া সিদ্ধিরগঞ্জের সেই মনিরুল হক
- আপডেট সময় : ০৬:৫৮:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ নভেম্বর ২০২২
- / ৬৬
সিদ্ধিরগঞ্জ ( নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা:
দলিলের স্বাক্ষী ছিলেন নিজেই। সেই জমি আবার ওয়ারিশদের কাছ থেকে ৩৪ বছর পর ক্রয় করলেন। বিক্রি হয়ে যাওয়া জমি বিক্রেতার ওয়ারিশদের কাছ থেকে ক্রয় করে চেষ্টা চালাচ্ছেন নিজের দখলে নেয়ার। এমন অভিনব প্রতারণার খবর পাওয়া গেছে সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর এলাকায়। এ প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন সিদ্ধিরঞ্জের বহুল আলোচিত সমালোচিত মনির হোসেন ওরফে মনিরুল ওরফে মনিরুল ইসলাম ওরফে হাজী মনির ওরফে মনিরুল হক। একেক সময় একেক নাম ব্যবহার করা মনিরের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ, ডেমরাসহ বিভিন্ন থানায় মাদক, চাঁদাবাজীসহ অসংখ্য মামলা এবং জমি দখল, চাঁদাবাজী, শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় দখল করায় তিনি এ এলাকায় আলোচিত-সমালোচিত। এবার তিনি প্রতারণা করেছেন নিজের বিরুদ্ধেই। জাতীয় শ্রমিলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন মাষ্টারের ক্রয়কৃত জমির দলিলে তিনি ছিলেন স্বাক্ষী। কিন্তু ৩৪ বছর পর আবার তিনিই ঐ জমি ক্রয় করেন বিক্রেতার ওয়ারিশদের কাছ থেকে। অভিনব এ প্রতারণার খবরে তোলপাড় শুরু চলছে সিদ্ধিরগঞ্জ সচেতন মহল। এডভোকেট এমদাদ হোসেন সোহেলের মতে, একবার বিক্রিত জমি কখনো তার ওয়ারিশরা দাবি করতে পারে না। বিক্রিতো অনেক দুরের ব্যপার। কেউ প্রতারণা করে তার পূর্বপুরুষদের বিক্রিত জমি নিজেদের ওয়ারিশ দাবি করে বিক্রি করা আইনতঃ দন্ডনীয় অপরাধ। জেনে শুনে কেউ ক্রয় করাও আইনতঃ অপরাধ। তাছাড়া একই জমির দলিলে সাক্ষী হয়ে আবার পূর্বপুরুষদের বিক্রিত জমি তাদের ওয়ারিশদের কাছ থেকে ক্রয় করা শতভাগ প্রতারনা করার মামিল।
রেকর্ড থেকে জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জের “সিদ্ধিরগঞ্জ মৌজা’র” এসএ ও আরএস ২০০ ও ২০৯ নং-দাগে শুক্কুর আলী, সুরুজ আলী, রুপবান বিবি, নুর জাহান বিবি ও রজব আলী রেকর্ডভূক্ত মালিক ছিলেন। মালিকানা থাকাবস্থায় নুর জাহান বিবি ২৬/১১/১৯৮০ইং সালে ৩৮২১৩ নং দলিলে তাদের সম্পূর্ণ অংশ তার ভাই শুক্কুর আলী ও সুরুজ আলীর নিকট সাব কাবলা বিক্রি করে দেন। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালের ১৬ এপ্রিল শুক্কুর আলী ৭৫৮২ নং, সুরুজ আলী ৭৫৮৩-নং, রজব আলী ও রুপবান বিবি একই দিনে ৭৫৮৪-নং দলিলের মাধ্যমে আঃ রউফ এর নিকট উক্ত জমি বিক্রি করে দেন। এদিকে গত ১৯৮৫ সালের ১৮ নভেম্বর আঃ রউফ ৮২৭৩ থেকে ৮২৮০-নং পৃথক ৮টি দলিলের মাধ্যমে ৩৫ শতাংশ জমি সাব কাবলা বিক্রি করে দেন ব্রিগ্রেডিয়ার (অবঃ) ডাঃ ইউনুছ দেওয়ান গংদের নিকট। পরবর্তীতে ঐ জমি ১৯৮৯ সালের ৬ আগষ্ট ব্রিগ্রেডিয়ার (অবঃ) ডাঃ ইউনুছ দেওয়ান গংরা ৩৬৭৫-নং থেকে ৩৬৮১-নং দলিলের মাধ্যমে ৩৫ শতাংশ জমি বেগম কামরুন নাহার ও ইফতেখার আহমেদ এর নিকট সাব কাবলা বিক্রি করে দেন। ১৯৯৮ সালের ৯ ডিসেম্বর ৪৪৫০-নং এওয়াজ বিনিময় দলিলের মাধ্যমে বেগম কামরুন নাহার ও ইফতেখার আহমেদ এর নিকট থেকে মালিক হন মোঃ আব্দুল মতিন মাস্টার। উক্ত দলিলের সাক্ষীও ছিলেন মনিরুল হক। কিন্তু শুক্কুর আলী ও নূর জাহান বিবি জমি বিক্রি করার ৩৪ বছর পর অজ্ঞাত কারণে শুক্কুর আলী ও নুর জাহান বিবির ওয়ারিশদের কাছ থেকে ২০১৪ সালে ২০ জুলাই ৪৩১৭ নং দলিলের মাধ্যমে ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ ও একই সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ৫৪৯৯ নং ব্যাপক ক্ষমতাযুক্ত পাওয়ার অব এ্যাটর্নী দলিলের মাধ্যমে ৩ দশমিক ৬০ শতাংশসহ মোট ৮ শতাংশ জমি লিখে নেন। অথচ তিনিই আব্দুল মতিন মাষ্টারের জমির দলিলে স্বাক্ষী ছিলেন। আব্দুল মতিন মাষ্টারের জমির দলিলে স্বাক্ষী হওয়ার পরও তিনি ঐ জমি বিক্রেতাদের ওয়ারিশদের কাছ থেকে পূণঃরায় ক্রয় করায় প্রতারণা করেছেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবি এমদাদ হোসেন সোহেল। তিনি বলেন, একবার বিক্রিত জমি কখনো তার ওয়ারিশরা দাবি করতে পারেনা। বিক্রিতো অনেক দুরের ব্যপার। কেউ প্রতারণা করে তার পূর্বপুরুষদের বিক্রিত জমি নিজেদের ওয়ারিশ দাবি করে বিক্রি করা আইনতঃ দন্ডনীয় অপরাধ। জেনে শুনে কেউ ক্রয় করাও আইনতঃ অপরাধ।
প্রতারণার আশ্রয় নেয়া বহুল বিতর্কিত মনির প্রতারণা করে দলিল করেই ক্ষ্যান্ত হননি তিনি ১৮ নভেম্বর ঐ জমি দখল করতে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ঐ জমিতে যায়। এসময় আব্দুল মতিন মাষ্টারের ঐ জমির বাউন্ডারী ভাংচুর করে মনির ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। একই সময় মনির ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী ঐ জমির কেয়ারটেকারকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এ ঘটনায় গত ১৯ অক্টোবর আব্দুল মতিন মাষ্টারের দায়ের করা সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডাইরীতে (নং-৯৭৬) উল্লেখ করেছেন উপরোক্ত তথ্য।
এ দিকে এ ব্যাপারে বক্তব্য জানার জন্য সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকাস্থ তার বাসভবন ও অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি বাসায় নেই বলে জানান তার বাড়ির লোকজন। মনিরের ফোন কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।