০৯:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলে কেওড়ার বাম্পার ফলন

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৫:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৩
  • / ৬৬

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

খুলনা, সংবাদদাতা:

সুন্দরবন সংলগ্ন সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে কেওড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন বাজারে উঠতে শুরু করেছে। কেওড়া মূলত সুন্দরবনের টক জাতীয় বুনো ফল। সুন্দরবনের উপকূলীয় অঞ্চলের অধিবাসীদের মৎস্য ঘের ও চরভরাটের জমিতে ব্যাপক হারে কেওড়া গাছ লাগানো ও চাষ হচ্ছে। চলতি মৌসুমে সুন্দরবন সহ উপকূলীয় অঞ্চলে কেওড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে ভরে গেছে প্রতিটি গাছ। কেওড়া গাছ মূলতো সুন্দরবন কেন্দ্রিক বৃক্ষ হলেও লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় উপকূলীয় খুলনার কয়রায় সুন্দরবন সংলগ্ন বিস্তির্ণ এলাকার নদীর চরভরাটি জমিতে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে অন্যান্য প্রজাতির গাছের সাথে কেওড়া গাছের চারা লাগানো হয়। সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলার শিবসা, বানিয়াখালি, গিলাবাড়ী,ফতেকাটি, ভদ্রা, মিনহাজ, মহেশ্বরীপুর, নদী ও কপোতাক্ষ নদের চরভরাটি জমিতে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে প্রচুর পরিমাণে কেওড়া গাছের চারারোপন করা হয়েছে।
এছাড়া এলাকার বিভিন্ন স্লুইস গেটের ধারে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো বড় বড় কেওড়া গাছ রয়েছে। কেওড়া বর্ধনশীল হওয়ায় গাছে দ্রুত ফল ধরে। ফাগুনে ফুল ফটে, চৈত্র-বৈশাখে ফল ধরে, আর আষাঢ়-শ্রাবণ ও ভাদ্র-আশ্বিন মাস পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এক একটা গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরে। এতো বেশি ফল ধরে যে, ফলের জন্য গাছের পাতা দেখা যায় না। এসময় এলাকার হাট-বাজার গুলোতে কেওড়া ফল কিনতে পাওয়া যায়। প্রতি কেজি কেওড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। গিলাবাড়ির ফরহাদ হোসেন জানান, শিবসা নদীর চরে লাগানো কেওড়া গাছে এ বছর প্রচুর পরিমাণে ফল ধরেছে। কেওড়া ফল এলাকার মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি ফল। এর স্বাদ টক হওয়ায় অনেকেই বলে থাকেন কেওড়ার নাম শুনলে জিহ্বায় পানি এসে যায়। চিংড়ি দিয়ে কেওড়ার টক রান্না (খাট্টা) খুব সুস্বাধু হয়। উপজেলা কৃষি অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, কেওড়া উপকূলীয় অঞ্চলের অতি পরিচিত একটি ফল। ফলটির মধ্যে রয়েছে প্রচুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। কেওড়া ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। যা মানবদেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। কেওড়া ফল রক্তে কোলেস্টেরল ও শরীরের চর্বি (ফ্যাট) কমায় বলে জানান ডাক্তার পরিমল বাবু । এতে কিছু এনজাইম আছে, যা শরীরের হজম শক্তি কমায়। রয়েছে ঔষধী গুনাগুনও, চুলকানি, ও পাঁচড়ার রোগ প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে থাকে। এটি পাকস্থলীর অ্যাসিডিটি কমায়। কেওড়া গাছ ও ফল অত্যান্ত প্রয়োজনীয় ও উপকারী হওয়ায় বাণিজ্যিক ভাবে এর চাষ করলে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার মানুষের জীবন যাত্রায় অর্থনীতির নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষাজ্ঞরা।
বন কর্মকর্তারা বলেন, কেওড়া চাষ অত্যন্ত লাভ জনক। এ গাছ দ্রুতবর্ধনশীল হওয়ায় ৩/৪ বছরের মধ্যে ফল ধরে এবং প্রথম বারই ২০ থেকে ১ মন পর্যন্ত ফল হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে প্রতিবছর ফল বাড়তে থাকে। উপকূলীয় অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে চরভরাটি জমি রয়েছে। জোয়ার-ভাটা হয় এমন চরভরাটি জমিতে যদি বাণিজ্যিকভাবে কেওড়া চাষ করা হয় তাহলে একদিকে বাঁধ ও পরিবেশ এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করার পাশাপাশি এর কাঠ জ্বালানি ও ফল বাজারে বিক্রি করে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। এমনকি কেওড়া বাগানে মধু উৎপাদন করেও প্রচুর টাকা আয় করা সম্ভব। কেওড়া চাষে তেমন কোন পরিচর্যা লাগে না এবং লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় এর উৎপাদন খরচও অনেক কম। এ জন্য অধিক হারে কেওড়া চাষ করার মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন সহ উপকূলীয় সুরক্ষা পাবে বলে জানান ।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমিনুর রহমান বলেন ইতিমধ্যে কয়রা উপজেলার প্রায় ৪ কিলোমিটার ব্যাপি চর ভরাটি জমিতে কেওড়া সহ মিনি সুন্দরবন তৈরি করা হয়েছে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলে কেওড়ার বাম্পার ফলন

আপডেট সময় : ০৮:৩৫:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৩
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

খুলনা, সংবাদদাতা:

সুন্দরবন সংলগ্ন সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে কেওড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন বাজারে উঠতে শুরু করেছে। কেওড়া মূলত সুন্দরবনের টক জাতীয় বুনো ফল। সুন্দরবনের উপকূলীয় অঞ্চলের অধিবাসীদের মৎস্য ঘের ও চরভরাটের জমিতে ব্যাপক হারে কেওড়া গাছ লাগানো ও চাষ হচ্ছে। চলতি মৌসুমে সুন্দরবন সহ উপকূলীয় অঞ্চলে কেওড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে ভরে গেছে প্রতিটি গাছ। কেওড়া গাছ মূলতো সুন্দরবন কেন্দ্রিক বৃক্ষ হলেও লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় উপকূলীয় খুলনার কয়রায় সুন্দরবন সংলগ্ন বিস্তির্ণ এলাকার নদীর চরভরাটি জমিতে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে অন্যান্য প্রজাতির গাছের সাথে কেওড়া গাছের চারা লাগানো হয়। সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলার শিবসা, বানিয়াখালি, গিলাবাড়ী,ফতেকাটি, ভদ্রা, মিনহাজ, মহেশ্বরীপুর, নদী ও কপোতাক্ষ নদের চরভরাটি জমিতে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে প্রচুর পরিমাণে কেওড়া গাছের চারারোপন করা হয়েছে।
এছাড়া এলাকার বিভিন্ন স্লুইস গেটের ধারে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো বড় বড় কেওড়া গাছ রয়েছে। কেওড়া বর্ধনশীল হওয়ায় গাছে দ্রুত ফল ধরে। ফাগুনে ফুল ফটে, চৈত্র-বৈশাখে ফল ধরে, আর আষাঢ়-শ্রাবণ ও ভাদ্র-আশ্বিন মাস পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এক একটা গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরে। এতো বেশি ফল ধরে যে, ফলের জন্য গাছের পাতা দেখা যায় না। এসময় এলাকার হাট-বাজার গুলোতে কেওড়া ফল কিনতে পাওয়া যায়। প্রতি কেজি কেওড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। গিলাবাড়ির ফরহাদ হোসেন জানান, শিবসা নদীর চরে লাগানো কেওড়া গাছে এ বছর প্রচুর পরিমাণে ফল ধরেছে। কেওড়া ফল এলাকার মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি ফল। এর স্বাদ টক হওয়ায় অনেকেই বলে থাকেন কেওড়ার নাম শুনলে জিহ্বায় পানি এসে যায়। চিংড়ি দিয়ে কেওড়ার টক রান্না (খাট্টা) খুব সুস্বাধু হয়। উপজেলা কৃষি অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, কেওড়া উপকূলীয় অঞ্চলের অতি পরিচিত একটি ফল। ফলটির মধ্যে রয়েছে প্রচুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। কেওড়া ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। যা মানবদেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। কেওড়া ফল রক্তে কোলেস্টেরল ও শরীরের চর্বি (ফ্যাট) কমায় বলে জানান ডাক্তার পরিমল বাবু । এতে কিছু এনজাইম আছে, যা শরীরের হজম শক্তি কমায়। রয়েছে ঔষধী গুনাগুনও, চুলকানি, ও পাঁচড়ার রোগ প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে থাকে। এটি পাকস্থলীর অ্যাসিডিটি কমায়। কেওড়া গাছ ও ফল অত্যান্ত প্রয়োজনীয় ও উপকারী হওয়ায় বাণিজ্যিক ভাবে এর চাষ করলে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার মানুষের জীবন যাত্রায় অর্থনীতির নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষাজ্ঞরা।
বন কর্মকর্তারা বলেন, কেওড়া চাষ অত্যন্ত লাভ জনক। এ গাছ দ্রুতবর্ধনশীল হওয়ায় ৩/৪ বছরের মধ্যে ফল ধরে এবং প্রথম বারই ২০ থেকে ১ মন পর্যন্ত ফল হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে প্রতিবছর ফল বাড়তে থাকে। উপকূলীয় অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে চরভরাটি জমি রয়েছে। জোয়ার-ভাটা হয় এমন চরভরাটি জমিতে যদি বাণিজ্যিকভাবে কেওড়া চাষ করা হয় তাহলে একদিকে বাঁধ ও পরিবেশ এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করার পাশাপাশি এর কাঠ জ্বালানি ও ফল বাজারে বিক্রি করে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। এমনকি কেওড়া বাগানে মধু উৎপাদন করেও প্রচুর টাকা আয় করা সম্ভব। কেওড়া চাষে তেমন কোন পরিচর্যা লাগে না এবং লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় এর উৎপাদন খরচও অনেক কম। এ জন্য অধিক হারে কেওড়া চাষ করার মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন সহ উপকূলীয় সুরক্ষা পাবে বলে জানান ।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমিনুর রহমান বলেন ইতিমধ্যে কয়রা উপজেলার প্রায় ৪ কিলোমিটার ব্যাপি চর ভরাটি জমিতে কেওড়া সহ মিনি সুন্দরবন তৈরি করা হয়েছে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন