ইজারা’র আইনলঙ্ঘন পরিবেশ বিধ্বংসী অবৈধ ড্রেজার দিয়ে যাদুকাটায় বালু উত্তোলন
- আপডেট সময় : ০৮:০০:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ মে ২০২৩
- / ৬৫
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীতে ফাজিলপুর বালু মিশ্রিত পাথর মহালে অবৈধ ড্রেজার দ্বারা খনিজ বালু উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়াগেছে যাদুকাটা-১ ও যাদুটাকাটা-২ বালু মহাল ইজারাদারদের বিরুদ্ধে। ইজারা বর্হিভূত ফাজিলপুর বালু মিশ্রিত পাথর মহাল হতে বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো’র (বিএমডি) গেজেটভুক্ত ফাজিলপুর বালু মিশ্রিত পাথরের কোয়ারী দিনে ওই এলাকা থেকে অবাধে পাথর লুট করা হচ্ছে।
প্রতিদিন ফাজিলপুর বালু মিশ্রিত পাথরের কোয়ারী থেকে ছোট ছোট বার কি নৌকা থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে বর্তমান ইজারাদার। এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয়ভাবে।
অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে খনিজ সম্পদ পাথরও বালু উত্তোলন করায় নদী তীরবর্তী ৪০টি গ্রাম, হাট বাজার, ব্রীজ ও সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা নদী ভাঙ্গনের হুমকিতে পড়ার পাশাপাশি অবৈধ ড্রেজারের সাহায্যে বালু পাথর তোলার কারনে উপজেলার হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হাড়ানোর শংকায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এদিকে পরিবেশ রক্ষায় পাথর মিশ্রিত বালু মহালে অবৈধ ড্রেজার বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে এলাকাবাসীর পক্ষে অভিযোগ করেছেন তাহিরপুর বাদাঘাট এলাকার গোলাপ মিয়া নামের এক বাসিন্দা।
তিনি তাঁর লিখিত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর ফাজিলপুর বালু মিশ্রিত পাথর মহালের সোহালা ও কোনাট মৌজা এবং গ্রাম সংলগ্ন লামাশ্রম ও চালিয়ারঘাট মৌজায় যাদুকাটা-১ ও যাদুকাটা-২ বালু মহালের ইজারাদারগণ বে-আইনীভাবে প্রতিদিন রাতে পরিবেশ বিধ্বংশী ড্রেজার মেশিন দ্বারা অবাধে খনিজ বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। এতে করে আশে পাশের প্রায় ৪০টি গ্রাম নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে এবং যাদুকাটা নদীর উপর প্রায় শত কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত শাহ আরফিন অদ্বৈত্য মৈত্রী সেতুটি, বিখ্যাত শিমুল বাগান, লাউড়েরগড় বিজিবি ক্যাম্প, লাউড়েরগড় বাজার, বিন্নাকুলি বাজার, কোনাট-বাজার, মিয়ারচর বাজার নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার শংকা সৃষ্টি হয়েছে। লিখিত আবেদনে তিনি আরও উল্লেখ করেন যাদুকাটা নদীতে শত বছর যাবত হাজার হাজার নারী-পুরুষ শ্রমিক প্রাকৃতিক উপায়ে বালু, নুরীপাথর ও লাকড়ী উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছে। এতে করে হাজার হাজার শ্রমিক কর্মসংস্থান হারিয়ে বেকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অবৈধ ড্রেজার দ্বারা অবৈধভাবে খনিজ বালু উত্তোলন করে এলাকার প্রায় ৪০টি গ্রাম, হাট বাজার, ব্রীজ ও সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা নদীর গর্ভে বিলীন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা এবং হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হাড়ানোর শংকা হতে বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন রাত ৯ টা থেকে সকাল ৯ টায় পর্যন্ত অসংখ্য অবৈধ ড্রেজার দ্বারা বালুমিশ্রিত পাথর উত্তোলন করছেন একটি চক্র। কারা ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছেন জানতে চাইলে একাধিক শ্রমিক জানান,তারা বালু মহালের ইজারাদারদের লোক। দিনে সনাতন পদ্ধতিতে নদীতে বালি তোলা হলেও তারা কেবল রাতে ড্রেজার চালান বলে জানান নাম প্রশকাশে অনিচ্ছুক শ্রমিকরা।
অভিযোগকারী গোলাপ মিয়া জানান, যাদুকাটা নদীর কোনাট লামাশ্রম ও রাজারগাও পর্যন্ত খনিজ সম্পদের অধীন এবং গেল তিন বছর ধরে কোন ইজারা দেয়া হয়নি। কোনাট, লামাশ্রম ও রাজারগাও এলাকায় ড্রেজার বসিয়ে রাতের আধারে বালূ পাথর লুট করে নেয়ায় আমরা হুমকির মুখে আছি। যাদুকাটা নদীর উপর সদ্য নির্মিতব্য সেতুটিও হুমকির মুখে। আমরা চাই চুক্তির বিধি মোতাবেক ইজারাদাররা বালু উত্তোলন করুক। প্রয়োজনে আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাইব। এমপি রতন এর নির্দেশেই অবৈধ কাজ কাম হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ড্রেজার মেশিন বন্ধ করা হউক। ড্রেজারে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে যাদুকাটা-১ ও যাদুকাটা-২ এর ইজারাদার খন্দকার মঞ্জুর ও রতন মিয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও মোবাইল রিসিভি না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
অভিযোগের ব্যাপারে জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। সম্ভবত রাতের বেলা ড্রেজার চালানো হয় দিনে সনাতন পদ্ধিতে বালু উত্তোলন হয়। অভিযোগ পেয়ে সংশ্লিষ্ট ইউএনওকে বলে দেয়া হয়েছে বিষয়টি দেখার জন্যে। ইজারাদারদের নিষেধ করা হয়েছে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা যাবে না।