সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অষ্টমী স্নান অনুষ্ঠিত
- আপডেট সময় : ০৩:২৮:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩
- / ৫৬
রিপন রিপন কান্ত গুণ
হে মহা ভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্য, তুমি আমার ও জগতের সকল পাপ হরণ করো’- এই মঙ্গল মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে ব্রহ্মার কৃপা চেয়ে জগতের যাবতীয় সংকীর্ণতা ও পঙ্কিলতার আবরণ থেকে মুক্তির বাসনায় ও সকল পাপ মোচনের জন্য ব্রহ্মপুত্র নদে মহা অষ্টমী তিথিতে স্নান সম্পন্ন করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এসম সনাতনধর্মালম্বীরা: বেলপাতা, ধান-দুর্বা, ফল ও ফুল নদের জলে তর্পণ করে: বেল পাতা, ধানদুর্বা,ফল ও ফুল নদের জলে তর্পণ।
বিগত প্রায় ৪শত বছর ধরে প্রতি বছর সনাতন ধর্মাবলম্বীরা চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে এ পুণ্যস্নান সম্পন্ন করেন। ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্রের দুই তীরে অনুষ্ঠিত স্থানটিকে তারা তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচনা করেন। ভক্তগণের বিশ্বাস এ সময় ব্রক্ষপুত্র নদে স্নান করলে খুবই পুন্যের, এ স্নানে ব্রক্ষার সন্তুষ্টি লাভ করে পাপমোচন হয়। এ স্নানটিই অষ্টমী স্নান নামেই পরিচিত।
সনাতনধর্মালম্বীদের মতে, মহাঅষ্টমী স্নান একটি পুণ্যকর্ম এবং এই স্নানের মাধ্যমে তাদের পাপমোচন ঘটে। এই পাপমোচনের অভিপ্রায়ে লাখো পুণ্যার্থী সমবেত হন ব্রহ্মপুত্র তীরে। মহাঅষ্টমী স্নান উপলক্ষে ময়মনসিংহের ব্রক্ষপুত্রের তীরে বুধবার ভোর ৪টা থেকে শুরু হয়ে ভোর সাড়ে ১০টা পর্যন্ত (অমৃত যোগে)স্নানের উত্তম লগ্ন ধার্য হয়েছিল। তবে এরপরও দিনব্যাপী স্নান চলে।
প্রতি বছরের মতো এ বছরও স্নান উদযাপনে স্থানীয় ও জেলার বাইরে নেত্রকোনা, শ্যামগঞ্জ, ভাটি অঞ্চল মোহনগঞ্জ, গৌরীপুরসহ বিভিন্ন উপজেলা ও প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আগেরদিন রাত থেকে পুণ্যার্থীরা শত কষ্টের মাঝেও ব্রহ্মপুত্রের পবিত্র জলে স্নান পূণ্য লাভের আশায় দলবেঁধে ব্রক্ষপুত্রের তীরে পুণ্যার্থীরা আসতে শুরু করেন। লাখো পুণ্যার্থীর পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে ময়মনসিংহের ব্রক্ষপুত্র তীর। ভীড় ঠেলে সামর্থ্য অনুযায়ী হাজার হাজার পুণ্যার্থী স্নানঘাটের আশেপাশে অবস্থান নেন। বিভাগী সদরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং বিভিন্ন মন্দির, সেবাশ্রমে তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়।
স্নানের সুবিধার্থে ব্রহ্মপুত্রর দুই তীর এবং কালীবাড়ি ঘাট থেকে শুরু করকাচারি ঘাট পর্য়ন্ত বিশেষ ব্যবস্থাগ্রহন করেছে পুলিশবাহিনীসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কমিটি। ময়মনসিংহ পুলিশের পক্ষ থেকে মেলা পাঙ্গনে বিশেষ সিকিউরিটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। স্নান উপলক্ষে ঘাট এলাকায় দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়। স্নানঘাট ইজারা গ্রহণকারীকে মেলার স্থানে সামিয়ানা টাঙানোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। স্নানের লগ্ন শুরুর পরপরই রাতেই স্নান করতে নদে নামেন সনাতনধর্মী হাজারো নারী-পুরুষ। ঘাটে থাকা পুরোহিতদের কাছ থেকে মন্ত্র জেনে তা পাঠ করে পুণ্যার্থীরা নদে স্নান করেন।
কাচারিঘাটে গিয়ে পুণ্যার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ ভোর থেকেই ময়মনসিংহ ও এর আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীরা ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে আসতে শুরু করেন।
নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার গড়মা গ্রাম থেকে ব্রহ্মপুত্র নদে অষ্টমী স্নানে এসেছেন শিউলি সরকার ও তার স্বামী তপন সরকার। এবার কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি তাই ভক্তির সহিত স্নান করতে পেরে তারা আনন্দিত। এখানে আসার পর অনেক স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গেও দেখা হচ্ছে। মহিলাদের জন্য কাপড় পরিবর্নে বিশেষ ব্যবস্থা থাকায় তারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
অষ্টমী স্থানে আসা মানবেন্দ্র দও(বাবু) অষ্টমী স্নানের এসে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, বরাবরের তুলনায় এবার স্বস্তিতে অষ্টমী স্নান করতে পেরে আমি আনন্দিত। করোনার নিষেধাজ্ঞার কারণে গত দুই বছর অষ্টমী স্নানে তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। তবে এবার অষ্টমী স্নান আবার আগের রূপে ফিরেছে দেখে ভালো লাগছে। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও পুণ্যার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুবিধা রাখা হয়েছে। নিরাপত্তাব্যবস্থাও ভালো। বিশেষ করে মহিলাদের কাপড় পাল্টানো ঝামেলামুক্তভাবে নিদৃষ্ট স্থানে করায় আমি সন্তোষ প্রকাশ করছি। প্রতিবারই যেন এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তবেই, পুণ্যার্থীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধ পাবে।