ডিবি-র্যাব পরিচয়ে ডাকাতি, কাউসার বাহিনীর ৪ জন আটক
- আপডেট সময় : ০৭:৪৯:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ নভেম্বর ২০২২
- / ৭৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় ডিবি এবং র্যাব পরিচয়ে ডাকাতি করার সময় কুখ্যাত কাউসার বাহিনীর ৪ জন দুর্ধর্ষ ডাকাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এ সময় তাদের নিকট হতে ২টি ডিবি জ্যাকেট, ১টি র্যাব জ্যাকেট, ২টি ওয়াকিটকি সেট, ১টি হ্যান্ডকাপ, ১টি ভুয়া পুলিশ আইডি কার্ড, ১টি এনআইডি কার্ড, ২টি মানিব্যাগ, ১টি লেজার লাইট, ১টি ব্যাগ, ৬টি মোবাইলফোন এবং নগদ ৩ লক্ষ ৬৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে র্যাব-৩ এর টিকাটুলি সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। গ্রেফতারকৃতরা হলো, সর্দার মো. কাওসার আলী (৩০), মো. আব্দুল্লাহ আল-মামুন (৪০), মো. আলী আকবর (২৪) ও মো. ইমামুল হক (২৭)। উক্ত ডাকাত দলের ৬ জন সদস্য। বাকি ২ জন ডাকাত পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের জন্য র্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মহাসড়কে বেশকিছু ডাকাতির ঘটনা প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলে র্যাব এই সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রদের গ্রেফতারে বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন এলাকায় জাঙ্গাল গ্রামস্থ সুন্দরবন ফিলিং স্টেশনের পার্শ্বে কতিপয় ডাকাত দল কর্তৃক ডাকাতি প্রস্তুতিকালীন সময় র্যাব-৩ এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল বুধবার গভীর রাতে অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ দুর্ধর্ষ ডাকাত দলকে আটক করে।
অধিনায়ক আরো বলেন, ডাকাত দলের সর্দার মো. কাওসার আলী নিজেকে ডিবি পুলিশের এএসপি পদবী, মো. মামুন ডিবি পুলিশের ওসি, মো. আলী আকবর র্যাবের এসআই এবং মো. এনামুল ডিবি পুলিশের কনস্টেবল পরিচয় দিয়ে ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় রাতের আধাঁরে ঘুরে বেড়ায়। আসামীরা জন-সমাগমহীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সুযোগ বুঝে ডিবি ও র্যাবের জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় চলাচলকৃত যাত্রীবাহী বাসকে লেজার লাইটের মাধ্যমে গতিরোধ করে ভুয়া ডিবি ও র্যাব পরিচয় দিয়ে টাকা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল এবং অন্যান্য মূল্যবান দ্রব্য-সামগ্রী লুটপাট করে থাকে।
ডাকাতির প্রাথমিক বিবরণে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় গৃহ ডাকাতি, সড়ক ডাকাতি, গরুবাহী ট্রাক, মালবাহী ট্রাক ও বিভিন্ন মালামালের গুদামে ডিবি ও র্যাবের জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় ডাকাতি করে থাকে। উক্ত চক্র গত ৩-৪ বছর যাবৎ ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তাদের মূল টার্গেট নিউমার্কেট এবং পল্টন এলাকার ব্যাংকের কাস্টমার। যখন কোন এলাকায় ডাকাতির কার্যক্রম পরিচালনা করে তখন ডাকাত দলের সর্দার কাওসার সবাইকে নিয়ে বস্তিতে তাদের ভাড়াকৃত বাসায় সমবেত হয়ে। সেখান থেকে ডাকাতির স্থান রেডি করে।
যখন কোন ব্যাংকের কাস্টমার ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে অন্যত্র গমন করে, তখন ডাকাত দলের গোয়েন্দা সদস্য উক্ত ব্যক্তিকে অনুসরণ করে সুযোগ বুঝে তার টাকা এবং মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে নেয়। এ পর্যন্ত উক্ত চক্র ঢাকা কুমিল্লা মহাসড়ক এবং মাওয়া হাইওয়ে রোডে ১৫-২০ টির অধিক ডাকাতি করেছে।
উক্ত চক্র ডাকাতির দিন ২/৩টি ব্যাংকের উপর তাদের গোয়েন্দা নজরদারী চলমান রাখে। কোন কাস্টমার বেশি অংকের টাকা উত্তোলন করে অন্যত্র গমন করলে তাদের গোয়েন্দা সদস্য উক্ত ব্যক্তির পিছু নেয়। কাস্টমার যখন টাকা নিয়ে কোন যাত্রীবাহী বাসে গমন করে তার সাথে ডাকাত চক্রের গোয়েন্দা সদস্য একই বাসে ওঠে। তারপর ডাকাত দলের গোয়েন্দা সদস্য ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যদেরকে বিভিন্নভাবে পরিবহনের গতিপথ এবং লোকেশন বলে দেয় ও নিয়মিত আপডেট দিতে থাকে।
ডাকাত দলের নির্ধারিত স্থানে বাকি ডাকাত সদস্যগুলো ডিবি ও র্যাবের জ্যাকেট পরে লেজার লাইটের মাধ্যমে বাসটি গতিরোধ করে এবং বাসে থাকা টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে অবৈধ মাদক ব্যবসায়ী অথবা হত্যা মামলার আসামী বলে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে তাদের মাইক্রোতে উঠিয়ে নেয়। পরে তার কাছ থেকে টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে ভিকটিমকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের মধ্যে ডাকাত দলের সর্দার কাওসার এর নামে বিভিন্ন থানায় ৩টি ডাকাতি ও ডাকাতির প্রস্তুতি মামলা রয়েছে। আসামী কাওসার বিভিন্ন সময় বগুড়া থেকে ঢাকায় এসে তার সহযোগীদের সমবেত করে ডাকাতি কার্যক্রম সংগঠিত করে থাকে। সে এবং তার চক্রটি ডাকাতি কার্যক্রম এর সুবিধার্থে যাত্রাবাড়ী এলাকার বস্তিতে ভাড়ায় একটি ঘর নিয়ে সেখান হতে তাদের ডাকাতি পরিকল্পনা এবং রেকি কার্যক্রম করে থাকে। কাওসার ডাকাতি, ছিনতাই ও চুরি মামলায় ২০২০ থেকে ২০২২ সালে ৭ মাস জেল খেটে জামিনে বের হয়। জামিনে বের হয়ে সে পুনঃরায় ডাকাতি পেশাতেই ফিরে যায়। তার দৃশ্যমান কোন পেশা নেই। ডাকাতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়েই সে তার জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
এছাড়াও তার প্রধান সহযোগী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের নামে বিভিন্ন থানায় ১টি ডাকাতি, ২টি অস্ত্র মামলা, ২টি ভূয়া সরকারি কর্মচারী পরিচয় দিয়ে প্রতারণা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সে ২০২০ এবং ২০২১ সালে বিভিন্ন মেয়াদে ২টি মামলায় সর্বমোট ২০ মাস জেল খাটে। জামিনে বের হয়ে বস্তিতে তাদের ভাড়াকৃত বাসা থেকেই সে তার কার্যক্রম চালায়। মূলত ডাকাতিই তার পেশা এবং এই পেশার মাধ্যমেই সে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
গ্রেফতারকৃত আলী আকবর মুন্সীগঞ্জ এলাকা থেকে এবং সহযোগী ইমামুল গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকা থেকে কাওসার বাহিনীর সাথে ঢাকায় বস্তিতে এসে সমবেত হত এবং একসাথে তাদের ডাকাতি কার্যক্রম চালাত। তাদেরও কোন দৃশ্যমান পেশা নেই। ডাকাতি, ছিনতাই, চুরি হতে অর্জিত অর্থের মাধ্যমেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। গ্রেফতারকৃত ইমামুলের বিরুদ্ধে একটি মাদক মামলা রয়েছে।