১১:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

বাঁধের কাজে অনিময় দুর্নীতি প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৬:৩৮:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ মার্চ ২০২৩
  • / ৫৪

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:

২০২২-২৩ অর্থ বছরে সুনামগঞ্জের হাওরের বাঁধের কাজ ধীরগতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ। বুধবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপিটি গ্রহন করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহ দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, কাবিটা নীতিমালা ২০১৭ অনুযায়ী ২০২২ সনের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করার কথা। কিন্তু প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদনে অব্যবস্থাপনা ও অনৈতিকতার আশ্রয় নেওয়ায় প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদনে বিলম্ব হয়। ফলে কাজ শুরু করতেও বিলম্ব হয়। আমরা সরেজমিন ঘুরে দেখেছি এখনো অর্ধেক কাজ বাকি। তাই এবারও ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কোনো কোনো বাঁধই সম্পন্ন করা হয়নি প্রকল্পের সময় বর্ধিত করা হলেও, তবে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙ্গে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। যথা সময়ে কাজ শুরু করতে না পারা এবং কাজ শেষ করতে না পারায় কাজও টেকসই হবেনা । যার ফলে বাধগুলো বন্যাঝুঁকিতে থেকে যাচ্ছে।
স্মারক লিপিতে আরও বলা হয়, হাওরে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের কারণে প্রকৃত কৃষকরা কার্যকরী বাঁধের সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বানানো কৃষক দিয়ে প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কৃষক নয় এমন ব্যক্তিও নানাভাবে পেয়ে যাচ্ছেন পিআইসি। চলতি বছর বন্যার দোহাই দিয়ে বাঁধের বরাদ্দ, প্রকল্পের পরিমাণ, পিআইসি গঠনে অনিয়ম, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প, অক্ষত ও অল্প ক্ষতিস্তস্থ প্রকল্পে বিপুল বরাদ্দ দিয়ে সরকারি টাকা অপচয়ের মহোৎসব চলছে।
আমার ঘুরে দেখেছি এখনো জেলার ১২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজারে মাটি ফেলা হয়নি। দুর্বাঘাস লাগানো ও কমপেকশন বাকি রয়ে গেছে। আমাদের সংগঠনের জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন নেতা ও উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ১২ উপজেলার অন্তত পাঁচ শতাধিক পিআইসির কাজ পরিদর্শন করেছেন। কিছু কিছু বাঁধের কাজের গতি সন্তোষজনক হলেও বেশিরভাগ বাঁধের কাজের গতি মন্তর। বাধের কাজে নীতিমালা মানা হচ্ছেনা কোথাও। বাঁধের প্রকল্প এলাকার সাইনবোর্ডের সাথে তথ্যের মিল পাওয়া যাচ্ছেনা।
এসময় হাওর আন্দোলনের নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হাওর ফসল রক্ষা ও বাঁধ নির্মাণে অনিময় ঠেকাতে ১০ টি দাবি পেশ করা হয়, যার মধ্যে হাওরের নদ নদী খাল বিল খননের বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। খননের চলমান প্রকল্পগুলো কঠোর নজরদারিতে নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মনিটরিং বাড়াতে হবে।প্রকল্প জলমহাল বাধ্যতামূলক খননের আইন থাকলেও ইজারাদাররা তা মানেনা। তাদেরকে মানাতে বাধ্য করতে হবে। এতে হাওরে আগাম বন্যার পানিধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। হাওর এলাকায় বিএডিসি, মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের খনন কার্যক্রমে দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধ করতে হবে। হাওরে অপ্রয়োজনীয় ও হাওরের প্রাণ-প্রকৃতি বিরোধী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবেনা। কাবিটা নীতিমালা ২০১৭ যথাযথভাবে মানতে হবে, অকৃষকদের পিআইসিতে যুক্ত করা যাবেনা এবং সবার সামনে গণশুনানী করে গণশুনানী স্থলেই পিআইসি ঘোষণা করতে হবে। ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। বাধের কাজে দুর্নীতি ও অনিয়মে যুক্ত এবং নীতিমালাবিরোধী কাজ অনুমোদনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যম ও কৃষক পর্যায়ের অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। হাওরের বাঁধের কাজে প্রকৃত কৃষকদের যুক্ত করে যথা সময়ে অর্থ ছাড় দিতে হবে। প্রকল্পের প্রিওয়ার্ক ও পোস্ট ওয়ার্ক দুর্নীতি থামাতে হবে। দুর্নীতিবাজ চক্রের সঙ্গে আতাত করে প্রিওয়ার্ক ও পোস্ট ওয়ার্কে চরম দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের অর্থ অপচয় ও লোপাট হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা বিকাশ রঞ্জন চৌধুরী, সহ-সভাপতি চিত্ত রঞ্জন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্মল ভট্টাচার্য, বাঁধ বিষয়ক সম্পাদক রাজু আহমেদ, প্রচার সম্পাদক আনোয়ারুল হক, হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি ইয়াকুব বখত বাহলুল, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক মিলন, হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সভাপতি স্বপন দাস প্রমুখ।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

বাঁধের কাজে অনিময় দুর্নীতি প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি

আপডেট সময় : ০৬:৩৮:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ মার্চ ২০২৩
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:

২০২২-২৩ অর্থ বছরে সুনামগঞ্জের হাওরের বাঁধের কাজ ধীরগতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ। বুধবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপিটি গ্রহন করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহ দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, কাবিটা নীতিমালা ২০১৭ অনুযায়ী ২০২২ সনের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করার কথা। কিন্তু প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদনে অব্যবস্থাপনা ও অনৈতিকতার আশ্রয় নেওয়ায় প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদনে বিলম্ব হয়। ফলে কাজ শুরু করতেও বিলম্ব হয়। আমরা সরেজমিন ঘুরে দেখেছি এখনো অর্ধেক কাজ বাকি। তাই এবারও ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কোনো কোনো বাঁধই সম্পন্ন করা হয়নি প্রকল্পের সময় বর্ধিত করা হলেও, তবে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙ্গে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। যথা সময়ে কাজ শুরু করতে না পারা এবং কাজ শেষ করতে না পারায় কাজও টেকসই হবেনা । যার ফলে বাধগুলো বন্যাঝুঁকিতে থেকে যাচ্ছে।
স্মারক লিপিতে আরও বলা হয়, হাওরে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের কারণে প্রকৃত কৃষকরা কার্যকরী বাঁধের সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বানানো কৃষক দিয়ে প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কৃষক নয় এমন ব্যক্তিও নানাভাবে পেয়ে যাচ্ছেন পিআইসি। চলতি বছর বন্যার দোহাই দিয়ে বাঁধের বরাদ্দ, প্রকল্পের পরিমাণ, পিআইসি গঠনে অনিয়ম, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প, অক্ষত ও অল্প ক্ষতিস্তস্থ প্রকল্পে বিপুল বরাদ্দ দিয়ে সরকারি টাকা অপচয়ের মহোৎসব চলছে।
আমার ঘুরে দেখেছি এখনো জেলার ১২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজারে মাটি ফেলা হয়নি। দুর্বাঘাস লাগানো ও কমপেকশন বাকি রয়ে গেছে। আমাদের সংগঠনের জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন নেতা ও উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ১২ উপজেলার অন্তত পাঁচ শতাধিক পিআইসির কাজ পরিদর্শন করেছেন। কিছু কিছু বাঁধের কাজের গতি সন্তোষজনক হলেও বেশিরভাগ বাঁধের কাজের গতি মন্তর। বাধের কাজে নীতিমালা মানা হচ্ছেনা কোথাও। বাঁধের প্রকল্প এলাকার সাইনবোর্ডের সাথে তথ্যের মিল পাওয়া যাচ্ছেনা।
এসময় হাওর আন্দোলনের নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হাওর ফসল রক্ষা ও বাঁধ নির্মাণে অনিময় ঠেকাতে ১০ টি দাবি পেশ করা হয়, যার মধ্যে হাওরের নদ নদী খাল বিল খননের বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। খননের চলমান প্রকল্পগুলো কঠোর নজরদারিতে নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মনিটরিং বাড়াতে হবে।প্রকল্প জলমহাল বাধ্যতামূলক খননের আইন থাকলেও ইজারাদাররা তা মানেনা। তাদেরকে মানাতে বাধ্য করতে হবে। এতে হাওরে আগাম বন্যার পানিধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। হাওর এলাকায় বিএডিসি, মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের খনন কার্যক্রমে দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধ করতে হবে। হাওরে অপ্রয়োজনীয় ও হাওরের প্রাণ-প্রকৃতি বিরোধী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবেনা। কাবিটা নীতিমালা ২০১৭ যথাযথভাবে মানতে হবে, অকৃষকদের পিআইসিতে যুক্ত করা যাবেনা এবং সবার সামনে গণশুনানী করে গণশুনানী স্থলেই পিআইসি ঘোষণা করতে হবে। ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। বাধের কাজে দুর্নীতি ও অনিয়মে যুক্ত এবং নীতিমালাবিরোধী কাজ অনুমোদনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যম ও কৃষক পর্যায়ের অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। হাওরের বাঁধের কাজে প্রকৃত কৃষকদের যুক্ত করে যথা সময়ে অর্থ ছাড় দিতে হবে। প্রকল্পের প্রিওয়ার্ক ও পোস্ট ওয়ার্ক দুর্নীতি থামাতে হবে। দুর্নীতিবাজ চক্রের সঙ্গে আতাত করে প্রিওয়ার্ক ও পোস্ট ওয়ার্কে চরম দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের অর্থ অপচয় ও লোপাট হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা বিকাশ রঞ্জন চৌধুরী, সহ-সভাপতি চিত্ত রঞ্জন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্মল ভট্টাচার্য, বাঁধ বিষয়ক সম্পাদক রাজু আহমেদ, প্রচার সম্পাদক আনোয়ারুল হক, হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি ইয়াকুব বখত বাহলুল, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক মিলন, হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সভাপতি স্বপন দাস প্রমুখ।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন