একজন জনবান্ধব উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন সরকার
- আপডেট সময় : ০১:০৭:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
- / ৮২
আরিফ রববানী ময়মনসিংহ;
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার একজন সৎ, নিষ্ঠাবান ও সফল জনবান্ধব উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল মতিন সরকার । অনেক বাধা ও প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে একজন সফল ব্যক্তি হিসেবে সকল শ্রেনী পেশার মানুষের কাছে অন্তরে স্থান করে নিয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক ছাত্রনেতা ও ত্রিশাল আসনের জাতীয় সংসদীয় আসনের সাবেক সফল সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আব্দুল মতিন সরকার।
অক্লান্ত পরিশ্রম, সাহস, ইচ্ছাশক্তি, একাগ্রতা আর প্রতিভার সমন্বয়ে সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য দেশরত্ন শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের যে স্বপ্ন রয়েছে সেই স্বপ্ন বুকে ধারণ করে তা বাস্তবায়নের জন্য বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
গত ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রেখে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন তিনি। এলাকার হতদরিদ্র মানুষের উন্নয়নে তাঁর নিরন্তর প্রয়াস সব মহলেই প্রশংসা কুঁড়িয়েছে। রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবায় বিশেষ অবদান, সামাজিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়নে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে এলাকায় নিজের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। তাঁর সাথে দলের ভাবমূর্তির উন্নয়ন হয়েছে বলে জানান বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারীরা এবং সুশীল সমাজের বিশিষ্টজনেরা। ব্যক্তি জীবনে তিনি অত্যন্ত সৎ ও সময়নিষ্ঠ, সদা হাস্যোজ্জ্বল ও সাদা মনের মানুষ। তাঁর মাঝে কোনো অহংকার নেই। নিরহংকারী এই মানুষটি দলমত নির্বিশেষে আজ সকলের কাছে প্রিয়। কাজ করছেন মানবকল্যানের জন্য। সর্বোপরি ভূমিকা রাখছেন সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনর জন্য।
এই সফল মানুষটি দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে প্রতিটি মানুষের বিপদ আপদে ছুটে যান। এলাকায় তিনি একজন সাদা মনের উদার মানসিকতার মানুষ হিসেবে ইতিমধ্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। সকল দু:খ দুর্দশায় তাঁকে সহজেই পাশে পাওয়া যায় বলে ত্রিশালের সর্বস্তরের জনসাধারণ জানান।
ইতোমধ্যে তিনি সমাজের সকল মতাদর্শের মানুষের কাছে একজন দক্ষ,পরিশ্রমী জনপ্রতিনিধি হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। নির্বাচনকালীন সময়ে সাধারণ জনগনকে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে একজন সফল ও জনপ্রিয় উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে সবশ্রেনীর মানুষের অন্তরে স্থান করে নিয়েছেন।
উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করা আব্দুল মতিন সরকার তাঁর মেধা,কর্ম প্রয়াস শ্রম ও অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা অর্জনের মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে গড়েছেন পরিশীলিতভাবে, নিয়ে গেছেন এক উজ্জ্বল অধ্যায়ে যা উপজেলার অতীতের সকল উন্নয়নের রেকর্ড টপকে দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলছেন। এলাকার গরীব দুঃখী মানুষের পাশে থেকে তিনি সব সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সর্বোপরি গরীব মেহনতী মানুষের প্রকৃত জনদরদী হিসেবে তিনি শুধু তাঁর উপজেলাই নয় বরং পুরো জেলা জুড়ে ব্যাপক পরিচিত ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী ছোট বেলা থেকেই একজন সহজ-সরল-সৎ মনের অধিকারী, শিক্ষিত ও সৃজনশীল মেধাবী মানুষ। যার ফলে উপজেলাবাসী তাকে প্রথমবার বিপুল ভোটে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছিলেন।
উপজেলার প্রতিটি সেক্টরে উন্নয়ন ছাড়াও সামাজিক সচেতনতা এবং মানবিক সেবার অনন্য উদ্যোগ তাকে একজন মানবদরদী ও মহতী মানুষের উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করেছে।
তিনি এ পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন রাস্তার উন্নয়ন, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, সংস্কার করে গরীব দু:খী মানুষের মাঝে বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা সঠিকভাবে বিতরণ করেছেন এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করে গ্রাম্য শালিসের মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে যাচ্ছেন।
এছাড়াও তিনি নিয়মিত অফিস করছেন এবং তাঁর প্রিয় উপজেলা বাসীর জন্য দিন রাত নিরলস ভাবে পরিশ্রম করে চলেছেন এবং স্থানীয় প্রশাসনের সার্বিক তত্বাবধানে প্রতিটি উন্নয়নমূলক কাজ অতি দক্ষতার সাথে সফলভাবে করেছেন যা এখনও চলমান রয়েছে।
আগামী দিনে চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন সরকার তাঁর সততা ও কর্মদক্ষতার সাথে উপজেলার উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ত্রিশাল উপজেলারকে জেলার মধ্যে একটি আধুনিক মডেল হিসেবে গড়ে তুলে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
আব্দুল মতিন সরকার গত ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রেখেছেন।তার ছেলে জাহিদুল ইসলাম সরকার জুয়েল উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসাবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে বর্তমানে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি হিসাবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে দলীয় কার্যক্রমকে তরান্বিত করছেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আলহাজ্ব আব্দুল মতিন সরকার ত্রিশাল ছাত্রলীগের সভাপতি ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ছিলেন এবং সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। ৪ঠা মার্চ, ৭১ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অনুকরনে ত্রিশাল থানার ছাত্রলীগ এক জনসভার আয়োজন করে। বিশাল জনসভায় সভাপতি হিসেবে আব্দুল মতিন সরকার পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে ফেলেন। সে সময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন মরহুম আব্দুল ওয়াদুদ সরকার (সাধারণ সম্পাদক, ত্রিশাল থানা ছাত্রলীগ)। উল্লেখ থাকে যে সে সময় তিনি নজরুল কলেজের জিএস ছিলেন। নজরুল কলেজের ভিপি মরহুম ছাইফুল ইসলাম, আবু তাহের তরফদার, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মৃত আব্দুর রউফ. সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, ফজলুল হক ফকির ও আব্দুল কাদের মেম্বার প্রমূখ।
৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ রেডিওতে প্রচার না করায় সারা দেশের মত ত্রিশালের জনগনও বিক্ষুব্ধ হয়ে মাঠে নেমে আসে। পরদিন বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে ত্রিশালের ছাত্রলীগের উদ্যোগে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। থানা, কলেজ ও বিভিন্ন ইউনিয়নের ছাত্র নেতৃবৃন্দ নিয়ে ছাত্র সংসদ গঠিত হয়। এ সময় বঙ্গবন্ধুর ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহবানে সাড়া দিয়ে এমএনএ নজরুল ইসলাম, এমপিএ আবুল মনসুর আহমদ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি জৈমত আলী, সাধারন সম্পাদক ওয়াহিদুল আলম, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেন চেয়ারম্যান, তমিজ উদ্দিন চেয়ারম্যান ও মাহতাব উদ্দিন সরকার ও অন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বে প্রতিরোধ ট্রেনিং সেন্টার গঠিত হয়। এসব ট্রেনিং নজরুল একাডেমি মাঠ, ধানীখোলা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, কালীর বাজার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, কাজীর সিমলা নজরুল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্থাপিত হয়। সেখানে ডামি বন্দুক দিয়ে রণ কৌশল শেখানো হয়। এতে প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন মরহুম সুবেদার আব্দুল হালিম, নজরুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধা প্রমুখ। আব্দুল মতিন সরকার থানা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে প্রতিরোধ ট্রেনিং এ উদ্ধুদ্ধকরন কর্মকান্ডে যুক্ত ছিলেন।
ছাত্রলীগ ২৩ মার্চ ১৯৭১ পাকিস্তান দিবসে ত্রিশাল থানার উদ্যোগে পাকিস্তানের পতাকার পরিবর্তে ত্রিশাল থানা সদরে বাংলাদেশের মানচিত্রে গঠিত বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ২৫ মার্চ ভয়াবহ গণহত্যার খবর ত্রিশালে আসার পর জনগনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় জনগন স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে যে যা পায়, দা, ছল, বল্লম, বর্শা, দিয়ে পাক বাহিনীকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ তখন জনগনের পাশে থেকে তাদেরকে সাহস শক্তি যোগান। সকল ধর্মের সকল বর্ণের সকল স্তরের জনগনকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। মুক্তিযোদ্ধোদের সহযোগিতা করার জন্য বাড়ি বাড়ি থেকে চাল, ডাল সংগ্রহ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের তহবিল সংগ্রহ শুরু করেন।
২৩ এপ্রিল ময়মনসিংহ শহর থেকে পাকিস্তানি বাহিনী ও পাক বাহিনী এসে নজরুল একাডেমী মাঠে ক্যাম্প স্থাপন করে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। আব্দুল মতিন সরকার তখন কান্দানিয়া হাইস্কুলে আশ্রয় গ্রহন করেন। কান্দানিয়া এলাকাটি মূলত ফুলবাড়িয়া ও ভালুকা থানা মাঝামাঝি দুর্গম এলাকায় অবস্থিত। এলাকাটি উঁচু-নিচু টিলা বিশিষ্ট খাল-বিল থাকায় সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে অবস্থান করতেন। কান্দানিয়া হাইস্কুলে মুক্তিযোদ্ধারা ঘাঁটি করে। তখন আব্দুল মতিন সরকার মুক্তিকামী জনতাকে সাহস-শক্তি যোগানের জন্য কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুর রউফ, ছাত্রলীগ সেক্রেটারি (মৃত) ওয়াদুদ সরকার ও ছাত্রলীগ নেতা ফজলুল হক ফকিরকে সাথে নিয়ে বক্তৃতা করতেন। এসব ক্যাম্প বিভিন্ন সময় থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি জৈমত আলী, সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল আলম, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হোসেন চেয়ারম্যান, তমিজ উদ্দিন চেয়ারম্যান, আব্দুল মতিন মাস্টার মাঝে-মধ্যে পরিদর্শন করতেন। এ ক্যাম্পগুলোতে ফুলবাড়িয়া ও ভালুকার আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ পরিদর্শন করেন। আগষ্ট মাস পর্যন্ত আব্দুল মতিন সরকার তার সঙ্গিসহ এসব এলাকায় অবস্থান করেন। তারপর ভালুকায় আলিফ আধিনায়ক মেজর আফসার উদ্দিনের কাছে চলে যান এবং ভালুকার আঙ্গারগারায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সমর অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রত্যক্ষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন।
আব্দুল মতিন সরকার ২১ দিন প্রশিক্ষন গ্রহন করার পর কমান্ডার বারেক মাস্টারের সাথে যোগ দেন। যুদ্ধকালীন সময়ে বিভিন্ন সময় অপারেশনে যোগ দেন। তাছাড়া বারেক মাস্টারের নেতৃত্বে চেলেরঘাটে যে যুদ্ধ হয়, সেই যুদ্ধে তিনি স্বশরীরে অংশগ্রহন করেন। পাকবাহিনী ও রাজাকার ক্যাম্প আক্রমন করার জন্য ৮ই ডিসেম্বর রাতে পূর্ন প্রস্তুতি নিয়ে বারেক মাস্টার তার কোম্পানি নিয়ে থানার দক্ষিণ পাশে অবস্থান করেন কিন্তু পাকবাহিনী থানা ছেড়ে ময়মনসিংহের হেড কোয়ার্টাওে চলে যেতে বাধ্য হয়। রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের ভারী অস্ত্রের আক্রমনের সম্মুখে বেশিক্ষন টিকতে পারেনি। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনে কেউ কেউ অস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায় এবং বাকিরা আত্মসমর্পন করে। এই যুদ্ধে আব্দুল মতিন সরকারের সক্রিয় অংশগ্রহন ছিল। পরদিন সূর্যোদ্বয়ের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি জৈমত আলী, সাধারন সম্পাদক ওয়াহিদুল আলমসহ অন্য নেতৃবৃন্দেও সাথে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বারেক মাষ্টার ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আব্দুল মতিন সরকার পতাকা উত্তোলনের সময় উপস্থিত ছিলেন। আব্দুল মতিন সরকার বিজয়ের সেই অবিস্মরণীয় মুহুর্তে নিজেও স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনকালের স্বাক্ষী হয়ে আছেন।