০১:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

আখের অভাবে লক্ষ্য মাত্রা হচ্ছেনা, মাঠ পর্যায়ে ব্যবস্থাপনার অভাব

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ১১:৪৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ৭৩

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মাহমুদ হাসান রনি, চুয়াডাঙ্গা:

দর্শনাস্থ কেরু কোম্পানী বছরের পর বছর আখের অভাবে নির্দিষ্ট সময়ে মিল চালাতে পারছে না। নানাবিধ উদ্যোগ নিলেও মাঠ পর্য়ায়ের অব্যবস্থাপনাকে অনেকে দায়ী করছে। চিনিকল আখের অভাবে লক্ষ্যমাত্রায় পৌছাতে পারেনি। তার কারন অনুসন্ধানে জানা গেছে। বেশীর ভাগ মাঠ কর্মীদের আখ চাষের জমি জরীপ সঠিক না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আখ প্রাপ্তি ব্যহত হয়েছে।
এক সময় দেখা যেত প্রতিটি মাঠ কর্মী ( সিডিএ) আখ চাষের জমি ফিতা দিয়ে মেপে রোপন রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতো। আখ রোপন শেষ হলে সাবজোন কর্মকর্তা থেকে নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের দিয়ে সঠিকতা যাচাই করা হতো। পরবর্তীতে সদর দপ্তর টিম পুনরায় সঠিকতা যাচাই করতো। আর জমি জরীপ কাজের জন্য প্রতিটি সিডিএকে মিল থেকে জমি মাপার টেপ প্রদান করা হতো। রোপন রেজিস্টারে জমির দৈর্ঘ্য – প্রস্থ এবং উত্তর সীমানার জমির মালিকের নাম লেখা হতো এ ছাড়াও চাষীকে কি কি সার, কীটনাশক দেয়া হয়েছে তা লিপিবদ্ধ থাকতো। চাষীদের প্রত্যেককে একটি কার্ড দেয়া হতো তাতে কবে কি পরিচর্য্যা করা হয়েছে এবং অংকুরোদগমের হার কেমন এবং পরামর্শ লিখে দিতো সিডিএরা। আর এখন এসব কোন কিছুই করা হয় না। একজন চাষি এক একরের সার, কীটনাশক ঋন নিয়ে এক বিঘা জমিতে আখ রোপন করলে কাগজ পত্রে ঐ চাষীর রোপন এক একর দেখানো হয়। আর যে কারনেই জমি জরীপে ব্যাপক তারতম্য দেখা দেয়। ফলে ফলনের উপর মারাত্নক প্রভাব পড়ে। এক সময় সিডিএদের প্রত্যেককে কমপক্ষে ১’ শ একর কিংবা তারও বেশি করে প্লানটেশনের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হতো। সেখানে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলে সেই সিডিএর বেতন / বোনাস বন্ধ করে রাখা হতো। এমন কি তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্থ করে রাখা হতো। আর এখন নেই কোন জবাব দিহিতা। একজন সিডিএ বছরে প্রায ২/ আড়াই লাখ টাকা বেতন বোনাস সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহন করে থাকে অথচ কেউ কেউ তার ইউনিটে মাত্র ৮/১০ একর আখ রোপন করেই লক্ষ লক্ষ টাকা নিচ্ছে। যেখানে চিনিকল তার দ্বারা কোন লাভ করতে পারছে না সেখানে সিডিএ রেখে লাভ কি?,এক সময় দেখা গেছে এক জন মাঠ কর্মী দিয়ে একটা সেন্টারের সমগ্র গ্রামে ঋন প্রদান, আখ রোপন সহ সামগ্রিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতো সেখানে এখন একটি সেন্টারের অধীন একেকটা গ্রামে একজন করে মাঠ কর্মী নিয়োজিত থেকেও কাজ হচ্ছে না। আবার অনেক সিডিএ আছে যারা মাসে একদিন কর্মস্থলে যায় কি না তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। অনেকে সারাদিন ব্যক্তিগত কাজ নিয়েই কাটিয়ে দেয়। সকালে অফিসে গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। চিনিকলে হযবরল অবস্থার কারনেই চিনি শিল্পে ধস নেমেছে। মাঠ কর্মীদের পরিচালনার জন্য কৃষি বিভাগের যে সকল কর্মকর্তারা আছেন তিনারাও অনেকেই মাঠ মুখি নয়। আবার আগের তুলনায় রিপোর্ট রিটার্ন এতটাই বেড়েছে যে এসব রিপোর্ট লিখতেই একজন মাঠকর্মীকে অধিকাংশ সময় কাগজ কলম নিয়ে বসে থাকতে হয়। ফরে চাষী যোগাযোগ কিংবা মাঠ তদারকি হয়ে ওঠৈ না। সেক্ষেত্রে রিপোর্ট রিটার্ন কমিয়ে মাঠ কর্মীকে চাষী এবং মাঠে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। কর্মকর্তাদের ছুটতে হবে মাঠে। কঠোর হতে হবে। বিশেষ করে মাঠ জরীপ কাজ সঠিক হতে হবে। ঘরে বসে মনগড়া ফলন দেখিয়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরনে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে প্রমাসনিক ব্যবস্থা নেয়া সহ তার আর্থিক সুবিধা কমিয়ে আনতে হবে।
এটা শুধু মাঠ কর্মীদের মধ্যেই নয় সাবজোন কর্মকর্তা (এসএসিডিও / এএম) ডিজিএম (সম্প্র), জিএম( কৃষি),ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও জবাব দিহিতার আওতায় নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করলেই তবে আখ প্রাপ্তি বা ফলন জরীপ সঠিক হবে এমনটাই মনে করেন বিজ্ঞ মহল।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

আখের অভাবে লক্ষ্য মাত্রা হচ্ছেনা, মাঠ পর্যায়ে ব্যবস্থাপনার অভাব

আপডেট সময় : ১১:৪৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মাহমুদ হাসান রনি, চুয়াডাঙ্গা:

দর্শনাস্থ কেরু কোম্পানী বছরের পর বছর আখের অভাবে নির্দিষ্ট সময়ে মিল চালাতে পারছে না। নানাবিধ উদ্যোগ নিলেও মাঠ পর্য়ায়ের অব্যবস্থাপনাকে অনেকে দায়ী করছে। চিনিকল আখের অভাবে লক্ষ্যমাত্রায় পৌছাতে পারেনি। তার কারন অনুসন্ধানে জানা গেছে। বেশীর ভাগ মাঠ কর্মীদের আখ চাষের জমি জরীপ সঠিক না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আখ প্রাপ্তি ব্যহত হয়েছে।
এক সময় দেখা যেত প্রতিটি মাঠ কর্মী ( সিডিএ) আখ চাষের জমি ফিতা দিয়ে মেপে রোপন রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতো। আখ রোপন শেষ হলে সাবজোন কর্মকর্তা থেকে নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের দিয়ে সঠিকতা যাচাই করা হতো। পরবর্তীতে সদর দপ্তর টিম পুনরায় সঠিকতা যাচাই করতো। আর জমি জরীপ কাজের জন্য প্রতিটি সিডিএকে মিল থেকে জমি মাপার টেপ প্রদান করা হতো। রোপন রেজিস্টারে জমির দৈর্ঘ্য – প্রস্থ এবং উত্তর সীমানার জমির মালিকের নাম লেখা হতো এ ছাড়াও চাষীকে কি কি সার, কীটনাশক দেয়া হয়েছে তা লিপিবদ্ধ থাকতো। চাষীদের প্রত্যেককে একটি কার্ড দেয়া হতো তাতে কবে কি পরিচর্য্যা করা হয়েছে এবং অংকুরোদগমের হার কেমন এবং পরামর্শ লিখে দিতো সিডিএরা। আর এখন এসব কোন কিছুই করা হয় না। একজন চাষি এক একরের সার, কীটনাশক ঋন নিয়ে এক বিঘা জমিতে আখ রোপন করলে কাগজ পত্রে ঐ চাষীর রোপন এক একর দেখানো হয়। আর যে কারনেই জমি জরীপে ব্যাপক তারতম্য দেখা দেয়। ফলে ফলনের উপর মারাত্নক প্রভাব পড়ে। এক সময় সিডিএদের প্রত্যেককে কমপক্ষে ১’ শ একর কিংবা তারও বেশি করে প্লানটেশনের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হতো। সেখানে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলে সেই সিডিএর বেতন / বোনাস বন্ধ করে রাখা হতো। এমন কি তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্থ করে রাখা হতো। আর এখন নেই কোন জবাব দিহিতা। একজন সিডিএ বছরে প্রায ২/ আড়াই লাখ টাকা বেতন বোনাস সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহন করে থাকে অথচ কেউ কেউ তার ইউনিটে মাত্র ৮/১০ একর আখ রোপন করেই লক্ষ লক্ষ টাকা নিচ্ছে। যেখানে চিনিকল তার দ্বারা কোন লাভ করতে পারছে না সেখানে সিডিএ রেখে লাভ কি?,এক সময় দেখা গেছে এক জন মাঠ কর্মী দিয়ে একটা সেন্টারের সমগ্র গ্রামে ঋন প্রদান, আখ রোপন সহ সামগ্রিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতো সেখানে এখন একটি সেন্টারের অধীন একেকটা গ্রামে একজন করে মাঠ কর্মী নিয়োজিত থেকেও কাজ হচ্ছে না। আবার অনেক সিডিএ আছে যারা মাসে একদিন কর্মস্থলে যায় কি না তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। অনেকে সারাদিন ব্যক্তিগত কাজ নিয়েই কাটিয়ে দেয়। সকালে অফিসে গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। চিনিকলে হযবরল অবস্থার কারনেই চিনি শিল্পে ধস নেমেছে। মাঠ কর্মীদের পরিচালনার জন্য কৃষি বিভাগের যে সকল কর্মকর্তারা আছেন তিনারাও অনেকেই মাঠ মুখি নয়। আবার আগের তুলনায় রিপোর্ট রিটার্ন এতটাই বেড়েছে যে এসব রিপোর্ট লিখতেই একজন মাঠকর্মীকে অধিকাংশ সময় কাগজ কলম নিয়ে বসে থাকতে হয়। ফরে চাষী যোগাযোগ কিংবা মাঠ তদারকি হয়ে ওঠৈ না। সেক্ষেত্রে রিপোর্ট রিটার্ন কমিয়ে মাঠ কর্মীকে চাষী এবং মাঠে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। কর্মকর্তাদের ছুটতে হবে মাঠে। কঠোর হতে হবে। বিশেষ করে মাঠ জরীপ কাজ সঠিক হতে হবে। ঘরে বসে মনগড়া ফলন দেখিয়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরনে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে প্রমাসনিক ব্যবস্থা নেয়া সহ তার আর্থিক সুবিধা কমিয়ে আনতে হবে।
এটা শুধু মাঠ কর্মীদের মধ্যেই নয় সাবজোন কর্মকর্তা (এসএসিডিও / এএম) ডিজিএম (সম্প্র), জিএম( কৃষি),ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও জবাব দিহিতার আওতায় নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করলেই তবে আখ প্রাপ্তি বা ফলন জরীপ সঠিক হবে এমনটাই মনে করেন বিজ্ঞ মহল।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন